একুশের গল্প সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : ‘একুশের গল্প’-শীর্ষক ছোটগল্পটি জহির রায়হানের গল্প-সমগ্র (১৯৭৯) থেকে সংকলন করা হয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত এ গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে প্রাণোচ্ছল ও স্বপ্নবান এক তরুণের আত্মত্যাগ।
গল্পটিতে কথক নিজেও একটি চরিত্র; অর্থাৎ এ গল্পের ঘটনামালা উপস্থাপিত হয়েছে প্রথম পুরুষের বয়ানে। কথকের সমান্তরালে রাহাত ও তপু নামক আরও দুটি চরিত্রকে আমরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে দেখি।
মূলত এই তিন বন্ধুর আন্তরিক সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিবরণের ভেতর দিয়ে উঠে এসেছে ভাষা আন্দোলনকালীন বাংলাদেশের বাস্তবতা। তপু ‘একুশের গল্পে’র প্রধান চরিত্র। সে বিবাহিত; রেণু তার স্ত্রী। বাড়িতে আছেন বৃদ্ধ মা। কিন্তু পারিবারিক সব পিছুটান উপেক্ষা করে প্ল্যাকার্ড হাতে তপু ছুটে যায় মিছিলে।
একুশের গল্প সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন—১ : মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ। করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করা স্বাধীনচেতা, দুরন্ত, টগবগে এক তরুণ। ১৯৭১ সালে যোগ দিলেন ক্রাক প্লাটুনে। সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন উড়িয়ে দেওয়াসহ বেশ কিছু অভিযানে সফলতা দেখালেন। কিন্তু ৩০ আগস্ট ধরা পড়লেন পাকবাহিনীর হাতে।
সহযোদ্ধাদের তথ্য নেওয়ার জন্য তার উপরে চালানো হলো অমানুষিক অত্যাচার-নির্যাতন। কিন্তু মুখ খুললেন না আজাদ, সব কিছু সহ্য করলেন দাঁতে দাঁত কামড়ে। তার মা সাফিয়া বেগম রমনা থানায় তার সাথে দেখা করতে এলে ভাত খেতে চেয়েছিলেন আজাদ। কিন্তু পরের দিন সাফিয়া বেগম ভাত নিয়ে গেলে ছেলেকে আর খুঁজে পাননি। ছেলেকে ভাত খাওয়াতে না পারার কষ্টে আজাদের মা সারা জীবন আর ভাত খাননি।
ক. গল্পকথকের সাথে তপুর শেষ দেখা হয়েছিল কোথায়?
খ. তপু ফিরে আসায় সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল কেন?
গ. উদ্দীপকের আজাদের সাথে ‘একুশের গল্প’ রচনার কোন চরিত্রটি সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. যুগে যুগে আজাদ, তপু, রাহাত, গল্প কথক—এঁরা এক কাতারে দাঁড়িয়ে যায় কেন? উদ্দীপক ও ‘একুশের গল্প’ রচনার আলোকে বিশ্লেষণ কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গল্পকথকের সাথে তপুর চার বছর আগে হাইকোর্টের মোড়ে শেষবারের মতো দেখা হয়েছিল।
খ. তপু ফিরে আসার পর সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল কারণ চার বছর আগে হাইকোর্টের মোড়ে মিছিলে তপু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল, আর তার মৃতদেহ মিলিটারিরা নিয়ে গিয়েছিল। কেউ ভাবেনি তপু আর কখনো ফিরে আসবে।
অথচ এখন তার অবয়ব ও কঙ্কাল ফিরে এসেছে এমন অবস্থায়, যা দেখে সবাই ভীত ও বিস্মিত। বিশেষ করে তার কঙ্কালের কপালে গুলির গর্ত এবং বাঁ পায়ের হাড় ছোট থাকার বিষয়টি দেখে তারা নিশ্চিত হয় যে এটি তপুর দেহাবশেষ। এই অপ্রত্যাশিত ও অদ্ভুত ঘটনার জন্যই তারা শঙ্কিত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল।
গ. উদ্দীপকের মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদের সাথে ‘একুশের গল্প’-এর তপু চরিত্রটির মধ্যে গভীর সাদৃশ্য বিদ্যমান।
আজাদ ছিলেন একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা, যিনি দেশ ও জাতির স্বাধীনতার জন্য অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেও শত্রুর কাছে নিজের আদর্শ ও সহযোদ্ধাদের তথ্য প্রকাশ করেননি। একইভাবে তপু ছিল মাতৃভাষার অধিকারের সংগ্রামী, যে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিল ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য।
আজাদ যেমন নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করেছিলেন, তেমনই তপু নিজের ভবিষ্যৎ, পরিবার এবং ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের চিন্তা না করে মিছিলে যোগ দিয়েছিল এবং মাতৃভাষার অধিকারের দাবিতে প্রাণ দিয়েছে।
উদ্দীপকের আজাদের মায়ের মতো তপুর মাও সন্তানের মৃত্যুর পর গভীর শোক এবং মর্মান্তিক যন্ত্রণায় ভুগেছেন। আজাদের মা যেমন ছেলেকে ভাত খাওয়াতে না পারার বেদনায় জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আর ভাত খাননি, তেমনই তপুর মা-ও তার সন্তানের মৃত্যুর কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।
আজাদ এবং তপুÑউভয়েই ছিলেন নিজের সময়ের সাহসী তরুণ, যারা দেশের স্বাধীনতা এবং মানুষের অধিকারের জন্য চরম ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের জীবন আমাদের কাছে আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম এবং আদর্শের প্রতি অটল থাকার উদাহরণ।
ঘ. যুগে যুগে আজাদ, তপু, রাহাত ও গল্প কথকের মতো চরিত্ররা এক কাতারে দাঁড়িয়ে যায় কারণ তাদের ত্যাগ, আদর্শ ও দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা একসূত্রে গাঁথা।
উদ্দীপকের মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ মুক্তিযুদ্ধের একজন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন, যিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন তুচ্ছ করেছেন। তিনি অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেও নিজের আদর্শ এবং সহযোদ্ধাদের রক্ষা করেছিলেন। একইভাবে, ‘একুশের গল্প’-এর তপু মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে। তার এই আত্মত্যাগ দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি এক গভীর ভালোবাসার প্রতীক।
রাহাত এবং গল্প কথকও একই সংগ্রামী চেতনা ও দেশপ্রেম ধারণ করেন। রাহাত, তপুর বন্ধু, তপুর মৃত্যুতে শোকাহত হলেও ভাষার অধিকারের জন্য নিজের সংকল্পকে দৃঢ় করে। গল্প কথকও তপু ও রাহাতের মতো যুবকদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের সংগ্রামকে মূল্যায়ন করেন।
আজাদ, তপু, রাহাত ও গল্প কথকের মতো ব্যক্তিরা সময় ও পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও আদর্শিকভাবে এক কাতারে দাঁড়ায়, কারণ তাদের আত্মত্যাগ মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা ও মর্যাদার জন্য। তাদের ত্যাগ প্রমাণ করে যে দেশের জন্য প্রাণ দেওয়ার মতো মহান কাজ অন্য কোনো স্বার্থ দ্বারা পরিমাপ করা যায় না।
আজাদ মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, তপু মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আত্মদান করেছে, আর রাহাত ও গল্প কথক তাদের আদর্শকে পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছেন। এভাবে, তারা সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে যায়, কারণ তাদের সংগ্রাম, ত্যাগ ও দেশপ্রেম একই ধরণের মানবিক মূল্যবোধের প্রকাশ।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে একুশের গল্প সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post