২১শে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস। সারাবিশ্বব্যপী এ দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। এদিনে একুশে ফেব্রুয়ারির বক্তব্য pdf দেওয়া হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। আজ কোর্সটিকায় আমরা এমনই একটি ভাষণ দেখব। যা আপনি মহান শহীদ দিবসে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রদান করতে পারবেন।
এছাড়াও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলা ২য় পত্র ভাষণ লিখন অংশে এই ভাষণটি লিখতে পারবে। এই লেখাটির শেষে ভাষণটি পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করার লিংক পাওয়া যাবে। তাহলে চলুন, শুরু করি।
একুশে ফেব্রুয়ারির বক্তব্য pdf
৫. আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভার প্রধান অতিথির একটি ভাষণ তৈরি কর।
শ্রদ্ধেয় সভাপতি, উপস্থিত সুধীমণ্ডলী, আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
বাংলাদেশের শহিদ দিবস বা একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই আমাদের জাতীয় জীবনে এ দিনের গুরুত্ব অপরিসীম। দিন আসে দিন যায়, মাস আসে মাস যায়, বছর আসে সেও হারিয়ে যায় কালের গর্ভে। কিন্তু জাতির জীবনে এমন কিছু দিন আছে, যা ভুলবার নয়- তা আসে মানুষকে চেতনাবোধে সমৃদ্ধ করতে। তেমনি একটি দিন হলো ভাষা আন্দোলনের এ মহান দিবস।
ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, এমন নজির বিশ্বের ইতিহাসে দ্বিতীয়টি আর নয়। মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে এতখানি আত্মত্যাগ আর কোনো জাতি করেনি। ভাষা আন্দোলন বাঙালিকে দিয়েছে আপন সত্তা আবিষ্কারের মহিমা। অসাম্প্রদায়িক গণচেতনার বলিষ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে এ দিনে। ভাষা শহিদের ম্মৃতি রক্ষার্থে শহিদ মিনার গড়ে উঠেছে।
একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলা ভাষাকে স্বমর্যাদায় আসীন করার বিচ্ছিন্ন সংগ্রাম নয়, আত্মচেতনা সমৃদ্ধ জাতীয় জাগরণের উন্মোষ মুহূর্ত। শোষকের বিরুদ্ধে ন্যায়ের, কূপমন্ডূকতা ও সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে উদার মানসিকতার, খণ্ডিত অধিকারের বিরুদ্ধে সামগ্রিক অধিকারের এবং অসুন্দরের বিরুদ্ধে সুন্দরের চিরন্তন সংগ্রামের স্মারক একুশ। একুশের মর্মবাণী মাথা নত না করা- সর্ববিধ অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার, শোষণ ও নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু রেখে প্রাণেরও জীবনের দাবিকে ঘোষণা করাই একুশে অঙ্গীকার।
একুশ প্রতি বছর আমাদের কাছে চায় সত্যের প্রতিষ্ঠা, একুশ আমাদের কাছে চায় মিথ্যার উৎখাত, একুশ আমাদের কাছে চায় সর্বস্তরের জীবনকে সুন্দর ও সুস্থ রাখার অঙ্গীকার। বুকের রক্তে ইতিহাস রাঙা একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীয় জীবনের মর্মমূলে গ্রোথিত করেছে দিয়েছে একটি চেতনা যা চির অম্লান। শাশ্বত সত্যরূপে চিহ্নিত অমর দিন আজ। যে দিনটি এদেশের ইতিহাসকে দিয়েছে পাল্টে এবং বিপ্লবী চেতনায় পরিবর্তিত করেছে আমাদের সংগ্রামী চিত্তকে।
বাংলাদেশের সমাজ-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে একুশে ফেব্রুয়ারি অতি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ জাতীয় চেতনার দিন। এ দিন আমাদের বাঙালি সমাজের ঐতিহ্য এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন। আমাদের অস্তিত্ব ও সাহসিকতার উদ্ধোধনি দিবস এবং বাঙালির সুপ্ত চেতনার মুক্তি আন্দোলনের দিন। একুশে ফেব্রুয়ারির সাথে অবিচ্ছেদ্য হয়ে আছে লাখো শহিদের নাম, যাদের ম্মৃতি ভাস্বর এবং অনন্তকালের পথপরিক্রমায় মৃত্যুহীন।
আমাদের স্বাধিকারের সংগ্রাম ও বাঙালি চেতনার উন্মেষের ইতিহাসের সঙ্গে শহিদ দিবসের ইতিহাস সম্পৃক্ত। তাই আমাদের জাতীয় জীবনে শহিদ দিবসের তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের যে মূল প্রেরণা ও উদ্দীপনা, ভাষাগত জাতীয়তাবাদের যে অনুভাবনা তার সূচনা একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা থেকেই। শহিদ দিবস বার বার আমাদের দিয়েছে সাহস ও সংগ্রামের দীক্ষা।
ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে শহিদ দিবস যেন একটি প্রতীক। ১৯৪৭ সালে যে পাকিস্তান সৃষ্টি হয় তার মূল ভিত্তি ছিল দ্বিজাতি তত্ত্ব। মুসলমান ও পাকিস্তান চেতনার দ্বরা বাঙালির ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার জন্য পাকিস্তানের তদানীন্তন শাসনচক্র এক গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে। তার প্রথম নগ্ন প্রকাশ ঘটে ১৯৪৮ সালে।
পাকিস্তানের স্রষ্টা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার জনসভায় ভাষণদানের সময়ে বলেন, “উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্টভাষা।” সেদিন সচেতন বাঙালি তরুণেরা এর প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। সরকার এরপর বাংলা ভাষাকে অবলুপ্ত করার জন্য নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। এরপর শুরু হয় সভা-সমাবেশ, ধর্মঘট ইত্যাদি। এক পর্যয়ে ১৪৪ দ্বারা উপেক্ষা করায় পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করা হয় সাধারণ জনতার উপর। গুলিতে একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি লুটিয়ে পড়েন শফিক, রফিক, জব্বার ও বরকতসহ আরো নাম না জানা তরুণ।
পরিবেশে বলা দরকার যে, ভাষা আন্দোলনের বীর শহিদরা রমনার রক্তিম কৃষ্ণচূড়া আর লক্ষ লক্ষ পলাশকে সাক্ষী রেখে বুকের তাজা রক্তে মাটি ভিজিয়ে এদেশের আপামর মানুষের মাতৃভাষার অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এজন্য আমাদের ভুললে চলবে না যে, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে ধ্রুবতারা, অন্ধকার সমুদ্রে পাঞ্জেরি।
একুশে ফেব্রুয়ারি এখন শুধু শহিদ দিবস নয়- আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস। শহিদের প্রাপ্য অধিকার আর্ন্তজাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই এরম মর্যাদা অক্ষুণ্ন ও অম্লান রাখতে আমরা চাই বাংলাদেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হোক।
এতক্ষন ধৈর্য ধরে আমার বক্তব্য শোনার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, এই লিংকে ক্লিক করে মে দিবস ভাষণ pdf ফাইল ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post