এলার্জি থেকে চিরতরে মুক্তি এর পথ আমরা খুঁজি, কিন্তু এটি থেকে নিরাপদে থাকার উপায় আমরা ক’জনেই বা জানি? এলার্জিজনিত কারণে শরীরে চুলকানি এবং একটা পর্যায়ে গিয়ে ফোস্কা পর্যন্ত হতে পারে। চিকিৎসকরা এই রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার কারণে ক্রিম, লোশন বা অ্যান্টিবায়েটিক দিয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা ঠাণ্ডা কম লাগানো এবং এর ঘরোয়া প্রতিকারের ব্যবস্থাও বেঁধে দিতে পারে।
আজ কোর্সটিকায় আমরা এলার্জি থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজব। যদিও আমরা আপনাকে শতভাগ নিশ্চয়তা দিচ্ছি না যে, আমাদের এই টিপসগুলো আপনার জন্য সহায়ক হবেই। কারণ, এলার্জির প্রভাব মানুষের শরীরের হরমোন এবং অন্যান্য গঠনগত বিষয়ের ওপর দারুণভাবে পরিলক্ষিত হয়। তাই আমাদের এই পরামর্শগুলো একেক জনের শরীরে একেক মাত্রায় ফল দিতে পারে।
এলার্জি কি?
মানুষের শরীরে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত এক একটি রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। কোন কারণে এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ব্যত্যয় ঘটলে এলার্জি দেখা দেয়। এমনটি হয়ে থাকে যখন আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়, এমন প্রক্রিয়াকেও এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা প্রতিরোধের চেষ্টা করে। শরীকরে এলার্জির উপস্থিতী ঘটলে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন:
- চুলকানি হওয়া
- লালভাব দৃশ্যমান হওয়া
- শরীরের বিভিন্ন জায়গা ফোলা
- হাঁচি হওয়া
- নাক, চোখ বা মুখে চুলকানি
- সর্দি বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
- ত্বকে র্যাশ হওয়া
- ত্বকে শুষ্কতা দেখা দেয়া
উপরের লক্ষণগুলো ছাড়াও এলার্জিতে হাঁচি থেকে শুরু করে খাদ্য বা ঔষুধের উপর ভীষণ প্রতিক্রিয়া এমনকি শ্বাসকষ্টও হতে পারে। শরীরভেদে এলার্জি খুবই সামান্য অসুবিধা সৃষ্টি করে আবার কারও ক্ষেত্রে জীবনকে দুর্বিষহ করেও তুলতে পারে।
ঘরে বসে এলার্জি থেকে চিরতরে মুক্তি
এলার্জিজনিত সমস্যা দূর ও প্রতিকার করতে মানুষ বহুবছর ধরে প্রাকৃতিক সব উপায় ব্যবহার করে আসছে। যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উৎকর্ষের সাথে সাথে এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় হিসেবে আধুনিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আবিস্কৃত হয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়গুলো এখনো সমানভাবে কার্যকর এবং জনপ্রিয়। চলুন জানি, কিভাবে ঘরে বসেই এলার্জি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
১. নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখুন
প্রতিবার যখন আপনি বাইরে থেকে ঘরে ফেরেন, আপনি আপনার সাথে করে অনেক ধুলো-বালি এমনকি রোগ-জীবাণু নিয়ে আসেন। তাই স্কিন এলার্জি থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে ঘরে ফেরার পর ভালো করে হাতমুখ ধৌত করুন এবং সম্ভব হলে খুব ভালো করে গোসল সেরে নিন।
২. মাস্ক পড়ুন
যখনই বাইরে বের হবেন, মাস্ক পড়ুন। আমাদের এই অপরিচ্ছন্ন শহরের সব জায়গাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ধুলো-বালি। এই ধূলো প্রথমে নাকে যায় তারপরে হাচি এবং সর্দির সৃষ্টি করে। তাই মাস্ক পড়ে চলাচলের অভ্যাস তৈরি করুন।
সম্ভব হলে N95 মাস্ক পড়ুন, যা আপনার হাতের নাগালেই কোন ওষুধের দোকান বা সাধারণ দোকানে পাওয়া যায়। N95 মাস্ক আপনাকে ধুলো-বালির অন্তত ৯৫% ছোট কণাকে ব্লক করে দেবে।
৩. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে সমস্ত শিশু প্রচুর তাজা শাকসব্জী, ফল এবং বাদাম খায় – বিশেষত আঙ্গুর, আপেল, কমলা এবং টমেটো – তাদের অ্যালার্জির লক্ষণ কম। গবেষকরা এখনো এর কারণ খুুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এতে কোন সন্দেহ নেই যে, স্বাস্থ্যকর সুষম খাবার আপনার পুরো শরীরের জন্য ভাল। তাই প্রতিটি খাবারে কমপক্ষে একটি তাজা ফল এবং শাকসব্জী যুক্ত করুন।
৪. বেশি পরিমাণে পান করুন
পানির অপর নাম জীবন, একথা আমরা সবাই জানি। পানি শুধু আমাদের তৃষ্ণাই দূর করে না, এটি আমাদের খাদ্য পরিপাকে এবং শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
তবে শুধু সাধারণ পানিই না, আপনি চাইলে অন্যান্য কোমল পানীয় যেমন শরবত ও গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি পান করতে পারেন। এছাড়া এলার্জি দূর করতে ডাবের পানি অসামান্য ভূমিকা পালন করে। তাই সম্ভব হলে নিয়মিত ডাবের পানি পান করুন।
৫. বাষ্পযুক্ত পানি ব্যবহার করুন
এলার্জির অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর জন্য সাময়িক সময় থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য শ্বাসকষ্টে ভুগতে হয়। তবে বাষ্পযুক্ত পানি ব্যবহারের একটি প্রক্রিয়া আছে, যা আপনার বন্ধ নাককে স্বাচ্ছন্দ্য করতে পারে এবং সহজে শ্বাস নিতে সহায়তা করে।
প্রথমে একটি বলে উষ্ণ পানি (তবে খুব গরম নয়) নিয়ে নিয়ে তার ওপরে মাথা ঝুঁকে কিছুক্ষণ বসে থাকুন। পাশাপাশি পানি থেকে উড়ে যাওয়া বাষ্প আটকাতে আপনার মাথার উপরে একটি তোয়ালে রাখুন। এছাড়াও আপনি গরম পানি দিয়ে একবার গোসল সেরে নিতে পারেন।
৬. সিগারেটের ধোঁয়া এড়িয়ে চলুন
সিগারেটের ধোঁয়া থেকে নির্গত বিষাক্ত নিকোটিনযুক্ত গ্যাস আপনার আপনার সর্দি, চুলকানি, বন্ধ নাক এবং চোখের অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে। তাই ঘরে-বাইরে সিগারেটের ধোঁয়া এড়িয়ে চলুন এবং বাইরে কোথাও গেলে সর্বদা ধূমপানমুক্ত জায়গাগুলো তালিকায় রাখুন।
শুধু সিগারেটের ধোঁয়াই না, বরং অন্যান্য জ্বালানীগুলি এড়িয়ে চলুন যা আপনার লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। যেমন অ্যারোসোল স্প্রে এবং কাঠ জ্বলন্ত আগুনের জায়গা থেকে ধোঁয়া।
৭. মধু খান
এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মধু শরীরের জন্য কতটা উপকারী। বর্তমান সময়ে বিশেষজ্ঞগণ এলার্জি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মধু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তত্ত্ব অনুসারে প্রতিদিন খাটি মধু খাওয়া মানুষের এলার্জির প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে সক্ষম।
তাই সম্ভব হলে নিয়ম করে প্রতিদিন অন্তত একবার রাতে ঘুমানোর আগে আধা কাপ বা এক কাপ মধু খান। বাজারে কৃত্রিমভাবে তৈরি অনেক ভেজাল মধু পাওয়া যায়। এগুলো থেকে সদা বিরত থাকুন।
►► আরো দেখো: গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণগুলো কি?
►► আরো দেখো: সিজারের পরে সহবাস কিভাবে করবেন?
►► আরো দেখো: গর্ভবতী হওয়ার আগে ভুলেও যা করা যাবে না
►► আরো দেখো: নারীদের রূপচর্চার বই Free Download PDF
শেষ কথা
যদিও আমরা এখানে এলার্জির ঘরোয়া প্রতিকার কার্যকর হতে পারে এমন কিছু উপায় বললাম, তথাপি আপনার এলার্জির মাত্রা অনেক বেশি বা দীর্ঘদিন হলে আপনি খুব শিঘ্রই একজন বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন। আপনার এবং আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতির জন্য সবচেয়ে ভাল কি তা নিয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করুন।
কোর্সটিকার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সকল আপডেট পেতে আমাদের Facebook Page এ Like দিয়ে রাখুন। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করুন এই লিংক থেকে।
Discussion about this post