সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন-এ এক্সপার্ট হতে হলে প্রচুর পরিমাণ ডেডিকেশন এবং সময় ব্যয় করতে হয়। তবে সঠিক উপায় জানতে পারলে আরও দ্রুত সময়ে এই ফিল্ডে এক্সপার্ট হয়ে ওঠা যায়।
যেহেতু বাংলাদেশ এখন ফ্রিল্যান্স সেক্টরে দিন দিন বেশ ভালো করা শুরু করেছে, সেহেতু এই সেক্টরে অনেক নতুন নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে প্রতিদিন। তাদের অনেকে আবার সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন শিখতে আগ্রহী। কিন্তু সমস্যা হলো যেহেতু এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, তাই অনেকে খেই হারিয়ে ফেলেন।
আবার অনেকে আছেন আসলে এসইও অনেক ভালোবাসেন, মজা পান। তারাও ভাবেন, এই স্কিলকে কীভাবে প্রফেশনাল লেভেলে রূপ দেওয়া সম্ভব। তাই আপনাদের সবার কথা মাথায় রেখে আজকে আমরা বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করেছি। আশা করছি ভালো লাগবে।
আপওয়ার্ক তাদের পোস্টে মোস্ট ডিমান্ডেবল স্কিল-এর তালিকায় সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন-কে সাত নাম্বারে রেখেছে। যেখানে ডিমান্ডেবল স্কিলের প্রথম দিকে ক্রমান্বয়ে রয়েছে মেশিন লার্নিং, অটোমেশন, ডেটা অ্যানালিটিক্স স্কিল, মোবাইল অ্যাপলিকেশন সহ আরও অনেক কিছু।
এসইও শেখা অবশ্যই সময় সাপেক্ষ। যে কেউ চাইলে নিজেকে এসইও এক্সপার্ট বলে বসতে পারেনা। এই সেক্টরে যারা ভালো অবস্থানে রয়েছেন তাদের সকলের গড় অভিজ্ঞতা প্রায় ১০ বছরের কাছাকাছি।
তো এখন প্রশ্ন হলো তাহলে আমি কীভাবে ধীরে ধীরে একজন এসইও এক্সপার্ট হয়ে উঠতে পারব? হ্যাঁ, আজকে আমরা ১০টি পয়েন্ট তুলে ধরেছি, যার মাধ্যমে আপনি হয়ে উঠতে পারবেন একজন এসইও এক্সপার্ট। চলুন শুরু করা যাক।
১. এসইও-এর বেসিক ভালো করে আয়ত্ত করা
একজন দক্ষ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার হতে হলে আপনাকে সর্বপ্রথম সার্চ ইঞ্জিনের মৌলিক বিষয়গুলো আয়ত্ত করতে হবে। এখন অনেকে বলবেন, ভাই আমরা তো অলরেডি এসইও নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। এখন আর বেসিক শিখে কী হবে?
ভাইয়া/আপু, এসইও এক্সপার্ট হতে হলে আগে অবশ্যই বেসিক বিষয়গুলো নিয়ে পর্যাপ্ত পড়াশুনা করতে হবে। এই বেসিক-এর মধ্যে কি কি থাকতে পারে?
এসইও-এর বেসিক জানতে হলে আপনাকে এই তিনটি বিষয় সম্পর্কে আইডিয়া রাখতে হবে-
- কন্টেন্ট এবং ইউজারের ইনটেন্ট বুঝতে হবে। অর্থাৎ কি-ওয়ার্ডগুলো আসলে সার্চ-এর সঠিক ইনটেন্ট সার্ভ করছে কিনা বা ইউজার যা চাচ্ছে তা কন্টেন্টে পাচ্ছে কিনা।
- সার্চ ইঞ্জিন কীভাবে কাজ করে তার সম্পর্কে আইডিয়া নেওয়া।
- ওয়েবসাইট অপটিমাইজ করার জন্য কি কি টুলস প্রয়োজন হয় তা সম্পর্কে আইডিয়া নেওয়া।
এই কয়েকটি বেসিক যদি আয়ত্তে নিতে পারেন, তাহলে আপনারা যখন এই ইন্ডাস্ট্রিতে ধীরে ধীরে আরও পদার্পণ করবেন, তখন এক্সপার্টদের মতো করে চিন্তা করতে পারবেন। যদি বাংলায় পড়তে ভালোবাসেন তাহলে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন: নবীনদের জন্য গাইড পড়তে পারেন।
যারা অলরেডি এই সেক্টরে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে তাদের সাথে কাজ করতে গেলেও আপনাকে এই বিষয়গুলো নিয়ে আইডিয়া রাখতে হবে।
২. নিজের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা
যখন আপনি বেসিক বিষয়গুলো আয়ত্তে নেবেন, তখন সেগুলো অ্যাপ্লাই করতে হলে আপনার নিজস্ব একটি ওয়েবসাইটের অবশ্যই প্রয়োজন। কারণ বেসিক বিষয়গুলো কোনো প্রতিষ্ঠান আপনাকে অ্যাপ্লাই করে দেখতে দেবে না।
নিজের একটি ওয়েবসাইট থাকলে আপনি নিজেই সেগুলো অ্যাপ্লাই করে দেখতে পারবেন। এতে করে কেউ আপনাকে বাধা দেবে না।
একটা বিষয় অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন যে আপনি কখনও অন্যের ওয়েবসাইটে আন্দাজে এসইও করতে যাবেন না। প্রথমে নিজে প্র্যাকটিস করুন। তারপর সফল হলে অন্যের সাইটে গিয়ে কাজ করুন, অথবা ফ্রিল্যান্সিং করুন। তাতে আপনারই ভালো হবে।
এখন নিজে এসইও রুলস ফলাতে হলে তো নিজের ওয়েবসাইট থাকা চাই! নিজের একটি ওয়েবসাইট থাকলে সেখান থেকে বেসিক নিয়মগুলোতো শিখবেনই। সাথে এইচটিএমএল, সিএসএস-এর প্রাথমিক বিষয়গুলো আয়ত্তে নিতে পারবেন।
৩. ওয়ার্ডপ্রেস শেখা
বিশ্বে যতগুলো ওয়েবসাইট ক্রিয়েট হয়, তার মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ওয়েবসাইট তৈরি হয় ওয়ার্ডপ্রেসে। আর ওয়ার্ডপ্রেসের বেশকিছু প্লাগইন ব্যবহার করা যায়, যা আপনার ওয়েবসাইটের কাজকে আরও বেশি সহজ করে তুলবে। এছাড়াও এসইও’র ক্ষেত্রেও ওয়ার্ডপ্রেসের ভালো সুনাম রয়েছে। কারণ ওয়ার্ডপ্রেস সিএমএস বেশ এসইও ফ্রেন্ডলি।
৪. গুগল সার্চ কনসোল এবং অ্যানালিটিক্স নিয়ে আইডিয়া রাখা
গুগল সার্চ কনসোল এবং গুগল অ্যানালিটিক্স এক প্রকার ফান্ডামেন্টাল টুলস এসইও-এর জন্য। কারণ এই দুটো টুল দিয়ে এসইও-এর যাবতীয় অনেক কাজ করা যায়।
বিশেষ করে গুগল সার্চ কনসোল-এর মাধ্যম আপনার ওয়েবসাইটকে গুগলে ক্রল করতে সুযোগ করে দেওয়া, এবং সেগুলো সর্বদা মনিটরিং করা সম্ভব হয়। এছাড়াও আরও নানান রকম ফান্ডামেন্টাল কাজ এই সার্চ কনসোলের মাধ্যমে সম্পাদন করা যায়।
আর অপরদিকে গুগল অ্যানালিটিক্স-এর কাজ হলো সবকিছু সঠিকভাবে পরিমাপ করতে সাহায্য করা। অর্থাৎ আপনার সাইটে কতগুলো ট্রাফিক আসছে, কতক্ষণ যাবত অবস্থান করছে, কোন দেশ থেকে আসছে, কোন পেইজগুলো বেশি বেশি ভিউ হচ্ছে ইত্যাদি আপনি খুব সহজে পরিমাপ করতে পারবেন। একজন এসইও এক্সপার্ট হতে হলে আপনাকে অবশ্যই এই দুটো টুলে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
৫. প্রতিদিন এসইও নিয়ে অল্প অল্প পড়াশুনা করা
এসইও এমন একটি ইন্ডাস্ট্রি, যেখানে সবকিছু দ্রুত পরিবর্তিত হয়। তিন বছর আগে যেসকল ট্রিক্স দিয়ে আপনি ট্রাফিক জেনারেট করতে পারতেন, তা এখন আর কাজ নাও করতে পারে। যেহেতু গুগল সবসময় তাদের কোর আপডেটগুলো নিয়ে আসে, সেহেতু এই ইন্ডাস্ট্রি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়।
তবে বেশ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি নিজেকে আপডেট রাখতে পারবেন। যেমন সার্চ ইঞ্জিন জার্নাল, মজ ডট কম, এসইও রাউন্ড টেবিল, এসইএমরাশ ইত্যাদি। এছাড়া বাংলায় যদি জানতে পড়তে চান, তাহলে টেকভার্জবিডিতে চোখ রাখতে পারেন।
তবে আসল কথা হলো নিজেকে প্রতিনিয়ত এসইও নিয়ে আপডেট রাখতে হবে। এছাড়া আপনি এসইও’র নতুন ট্রেন্ড ধরতে পারবেন না।
৬. সার্চ ইঞ্জিন কীভাবে কাজ করে তা সম্পর্কে আইডিয়া নেওয়া
এসইও অনেক সময় মনে হয়, ভাগ্যের ওপর সবকিছু ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই না। কারণ আপনি অনেক সময় বুঝতেও পারেন না, কেন আসলে আপনার কন্টেন্ট র্যাঙ্ক করে আছে। কারণ হতে পারে, আপনি সার্চ ইঞ্জিন কীভাবে কাজ করে তা সম্পর্কে আইডিয়া রাখেন না।
সার্চ ইঞ্জিনগুলো কেন প্রতিষ্ঠিত হলো তা সম্পর্কে যদি ভালো আইডিয়া থাকে, তাহলে আপনি খুব সহজে ধরতে পারবেন সার্চ ইন্টেন্ট, রিলিভেন্সি, কন্টেন্ট কোয়ালিটি, লিংকস কী। কারণ এইরকম অনেক ম্যাট্রিক্স-এর মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিন র্যাঙ্ক নির্ধারণ করে থাকে যা ইউজারের প্রশ্নের বিপরীতে সঠিক উত্তর দিতে পারে।
তাই, একজন এসইও এক্সপার্ট হওয়ার পথে আপনাকে সার্চ ইঞ্জিন কীভাবে কাজ করে তা সম্পর্কে আইডিয়া রাখতে হবে।
৭. গুগল কোয়ালিটি রিডার্স গাইডলাইন সম্পর্কে আইডিয়া রাখা
গুগল সবকিছু রোবট দিয়ে নির্ধারণ করে না। তারা ম্যানুয়ালি চেক করার জন্য অনেক লোককে হায়ার করে। এই সকল লোকজন আপনার সাইটে প্রবেশ করে ম্যানুয়ালি একটা রেটিং দিতে, আসলে সাইটটি সহজ এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি কিনা। অথবা E-A-T ফলো করছে কিনা।
এই E-A-T হলো:
- Expertise
- Authoritativeness
- Trustworthiness
যদিও তাদের রেটিং-এ সরাসরি বড়সড় প্রভাব আপনার সাইটে দেখা যাবে না, কিন্তু তারপরও এই রেটিং গুগলকে আপনার সাইট সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করবে। তাই গুগল কোয়ালিটি রিডার্স গাইডলাইন সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা জরুরি।
৮. SERP-এ ভালোমতো নজর রাখা
সার্প বা সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজ হলো আপনি যখন গুগলে কোন প্রকার সার্চ করেন তা যেখানে দেখায় তা-ই সার্প। যেমন আপনি খেলার স্কোর জানতে চাইলে গুগল একরকম ফরম্যাটে শো করবে রেজাল্ট। আপনি যদি প্রোডাক্ট সম্পর্কে আইডিয়া নিতে চান, তাহলে অন্যভাবে দেখতে হবে। অথবা টপ টেন কিছু জানতে চান, তাহলে স্নিপেটে দেখাবে সর্ট করে।
এরকম আরও অসংখ্য ফিচার রয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি সার্প নিয়ে আইডিয়া পাবেন। এছাড়াও গুগল সার্প-এর ফিচার প্রতিনিয়ত আরও সুন্দর করে। আপনাকে সেগুলো সম্পর্কেও আইডিয়া রাখতে হবে। তাহলে আপনি লেটেস্ট ট্রেন্ড ধরতে পারবেন।
৯. টেকনিক্যাল এসইও নিয়ে আইডিয়া রাখা
টেকনিক্যাল এসইও আপনার সাইটকে আরও ভালোভাবে বুঝাতে সক্ষম হবে গুগলের নিকট। ফলে গুগল আরও ভালোভাবে সবকিছু ক্রল এবং ইন্ডেক্স করতে পারবে।
এছাড়াও টেকনিক্যাল স্কিলের মধ্যে রয়েছে ওয়েবসাইট মোবাইলের জন্য কতটা উপযুক্ত, সাইট স্পিড, স্ট্রাকচার ডেটা, জাভাস্ক্রিপ্ট সহ আরও অনেক কিছু। টেকনিক্যাল এসইও’র মাধ্যমে ফিচার স্নিপেট ব্যবহার করে অনেকে খুব সহজে জিরোতে র্যাঙ্ক করতে পারে বলে নজির রয়েছে।
১০. কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কে আইডিয়া রাখা
এই পার্টটি অবশ্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মাঝে অনেকে সাইট শুরু করে দিই কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজি ছাড়াই। অথচ গুগল কিন্তু কন্টেন্ট বেইসড সার্চ ইঞ্জিন। এখানে কন্টেন্ট-এর বিচারে সবকিছু হয়। গুগলের হামিংবার্ড, এবং র্যাঙ্ক ব্রেইন আসার পর থেকে সবাই বুঝে গেছে যে আসল প্রায়োরিটি ইউজারকে দিতে হবে। আপনার কন্টেন্ট যতবেশি ইউজারকে ভ্যালু দিতে পারবে তত বেশি আপনার অ্যাঙ্গেজমেন্ট বাড়বে।
কারণ গুগলে মানুষ এমনি এমনি সার্চ করেনা। যা সার্চ করে তার সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট যার কাছে আছে, তাকে গুগল সবসময় প্রায়োরিটি দিয়ে আসছে। তবে এর মাঝে অনেকের কন্টেন্ট ভালো হলেও সার্চ ইঞ্জিনগুলো কন্টেন্টকে যেভাবে চায়, সেভাবে সার্ভ করতে না পারার কারণে অনেকে রেইস থেকে ছিটকে পড়ে।
শুধু কন্টেন্ট দিলেই হবে না। সেটিকে সার্চ ইঞ্জিন-এর বোধগম্য হয়, এবং ইউজারের সার্চ ইন্টেন্ট পূরণ করে সে ব্যাপারেও আইডিয়া রাখতে হবে।
শেষ কথা
একজন এসইও এক্সপার্ট হতে হলে অনেক সময় দিতে হয় এই সেক্টরে। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারলেও অনেক কিছু আয়ত্তে নেওয়া সম্ভব। এছাড়া এই সেক্টরে ধারাবাহিকতা অন্যতম। এই সবকিছু ছাপিয়ে যদি ভালোভাবে সবকিছু আয়ত্তে নিতে পারেন, তবে আপনার জন্য অবশ্যই ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।
Discussion about this post