এসএসসি ইসলাম শিক্ষা ১ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : নবুয়ত ও রিসালাতের শিক্ষা মানুষকে শান্তি ও শৃঙ্খলার দিকে পরিচালনা করে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের সকল কাজকর্ম আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত পথে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। নবুয়ত ও রিসালাতের চেতনা মানুষের মধ্যকার সমস্ত খারাপ অভ্যাস, অশ্লীলতা ও মন্দকর্মের চর্চা দূর করে দেয়। মানুষ সৎ ও সুন্দর জীবনযাপনে উৎসাহিত হয়। মানুষ নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত হয়।
নবুয়ত ও রিসালাত মানুষকে নবি-রাসুলগণের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে। নবি-রাসুলগণ ছিলেন নিষ্পাপ এবং সকল সৎগুণের অধিকারী। তাঁদের আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের জীবন ও চরিত্র উত্তম হয়। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়। মানবসমাজে পশুত্বের পরিবর্তে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে।
এসএসসি ইসলাম শিক্ষা ১ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. আখিরাতে বিশ্বাস করা অপরিহার্য কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আখিরাতে বিশ্বাস করা অপরিহার্য। কারণ, এটি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসগুলোর একটি এবং এটি মানুষের নৈতিকতা ও জীবনযাপনে গভীর প্রভাব ফেলে।
আখিরাত হলো পরকাল, যেখানে মানুষের সব কর্মের বিচার হবে এবং তার প্রাপ্য প্রতিদান দেওয়া হবে। যারা সৎকর্ম করে, তারা জান্নাতে পুরস্কৃত হবে, আর যারা পাপাচারে লিপ্ত, তারা শাস্তি ভোগ করবে। এই বিশ্বাস মানুষকে ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী ও মানবিক হতে উদ্বুদ্ধ করে এবং অন্যায় ও পাপ থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে। আখিরাতে বিশ্বাস থাকলে মানুষ দুনিয়ার লোভ-লালসা থেকে দূরে থেকে সৎভাবে জীবনযাপন করে, যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়।
২. ‘তাওহিদের স্বরূপ’ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আল্লাহ তায়ালাকেই সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা ও ইবাদতের যোগ্য এক ও অদ্বিতীয় সত্তা হিসেবে বিশ্বাসের নামই তাওহিদ। পবিত্র কুরআনের সূরা ইখলাসে আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং তাওহিদের স্বরূপ ব্যাখ্যা করে বলেছেন-‘বলুন’ হে নবি (স), তিনি আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ, কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি। তাঁর সমকক্ষও কেউ নেই।’
৩. ইমান কীভাবে মানুষের মানবিকতার বিকাশ সাধন করে?
উত্তর: মানবিক মূল্যবোধ বিকাশে ইমানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইমান নানাভাবে মানুষের মানবিকতার বিকাশ সাধন করে থাকে। যেমন :
i. ইমানের মূলকথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’। এ কালিমায় বিশ্বাসী ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো সৃষ্টির সামনে মাথা নত করে না বা আত্মসমর্পণ করে না। ফলে মানুষের মর্যাদা সমুন্নত হয়, মানবিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়।
ii. ইমান মানুষকে সত্য ও সুন্দরের পথে পরিচালনা করে এবং নৈতিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করে। তাই মুমিন ব্যক্তি সর্বদাই মানবিকতা ও নৈতিকতার ধারক হয়।
iii. ইমান মানুষকে দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহির ব্যাপারে সতর্ক করে। এজন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট জবাবদিহির ভয়ে মুমিন ব্যক্তি সব ধরনের অমানবিক ও অনৈতিক কার্যকলাপ হতে দূরে থাকে।
৪. ‘মুমিন ব্যক্তি মানবিকতা ও নৈতিকতার ধারক’Ñ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ইমান মানুষকে সত্য ও সুন্দরের পথে পরিচালনা করে এবং নৈতিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করে। মুমিন ব্যক্তি সর্বদাই মানবিকতা ও নৈতিকতার ধারক হয়। অন্যায়-অত্যাচার ও অনৈতিক কার্যকলাপ ইমানের সম্পূর্ণ বিপরীত। পূর্ণাঙ্গ মুমিন ব্যক্তি কখনই মানবিকতা ও মনুষ্যত্বের বিপরীত কাজ করতে পারে না। বরং মুমিন ব্যক্তি সবসময়ই নীতি-নৈতিকতা ও মানবিকতার আদর্শ অনুসরণ করে। সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব, সহযোগিতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি সদ্গুণাবলির চর্চা করে।
৫. তাওহিদের প্রভাব বর্ণনা কর।
উত্তর: তাওহিদ হলো আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদে বিশ্বাস। মানব জীবনে এ বিশ্বাসের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। তাওহিদে বিশ্বাস মানুষকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ করে দেয়। কেননা আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা। তাওহিদে বিশ্বাসের মাধ্যমে মানুষ এ সত্যকে স্বীকার করে নেয়। মানুষ এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা আদায় করে।
৬. ‘আল্লাহ’ শব্দের বিশ্লেষণ কর।
উত্তর: ‘আল্লাহ’ শব্দের মধ্যেই তাঁর তুলনাহীন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। ‘আল্লাহ’ আরবি শব্দ। পৃথিবীর কোনো ভাষাতেই এ শব্দের কোনো প্রতিশব্দ নেই। এর কোনো একবচন; বহুবচন নেই। এ শব্দের কোনো স্ত্রীলিঙ্গ বা পুংলিঙ্গ নেই। এ শব্দটি একক ও অতুলনীয়। আল্লাহ তায়ালা তদ্রƒপই। তিনি তাঁর সত্তা ও গুণাবলিতে একক ও অদ্বিতীয়। তাঁর সমতুল্য বা সমকক্ষ কিছুই নেই।
৭. কুফর মানবজীবনে কী পরিণতি বয়ে আনে?
উত্তর: মানবজীবনে কুফরের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কুফরের ফলে শুধু দুনিয়াতেই নয়, বরং আখিরাতেও মানুষকে শোচনীয় পরিণতি বরণ করতে হবে। যেমন :
১. কুফর মানুষের মধ্যে অবাধ্যতা ও অকৃতজ্ঞতার জন্ম দেয়।
২. সমাজে পাপাচার বৃদ্ধি পায়।
৩. কুফর মানবসমাজে অনৈতিকতার প্রসার ঘটায়।
৪. কাফির আল্লাহর বিধিবিধান ও আদেশ-নিষেধের কোনো পরোয়া না করায় আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।
৫. কাফিররা জাহান্নামে অনন্তকালের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে।
৮. আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরক কোন কোন ধরনের হতে পারে?
উত্তর: আল্লাহ তায়ালার সাথে চার ধরনের শিরক হতে পারে। যথা :
১. আল্লাহ তায়ালার সত্তা ও অস্তিত্বে শিরক করা। যেমন : ঈসা (আ)-কে আল্লাহর পুত্র মনে করা।
২. আল্লাহ তায়ালার গুণাবলিতে শিরক করা। যেমন : আল্লাহ তায়ালার পাশাপাশি অন্য কাউকে সৃষ্টিকর্তা বা রিযিকদাতা মনে করা।
৩. সৃষ্টি জগতের পরিচালনায় কাউকে আল্লাহর অংশীদার বানানো। যেমন : ফেরেশতাদের জগৎ পরিচালনাকারী হিসেবে মনে করা।
৪. ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার সাথে কাউকে শরিক করা। যেমন: আল্লাহ ব্যতীত কাউকে সিজদাহ করা, কারও নামে পশু জবাই করা ইত্যাদি।
৯. মুনাফিকরা সমাজের মানুষের নিকট কীভাবে জীবন কাটায়?
উত্তর: মুনাফিকরা অন্যান্য খারাপ ও অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। পার্থিব লোভ-লালসা ও স্বার্থ রক্ষায় তারা মানুষের অকল্যাণ করতেও পিছপা হয় না। তারা পরনিন্দা ও পরচর্চা করে। ফলে সমাজে সন্দেহ ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। মুনাফিকরা ভেতরে এক আর বাইরে অন্য রকম হওয়ায় লোকজন তাদের বিশ্বাস করে না। বরং সন্দেহ ও ঘৃণার চোখে দেখে। সমাজের মানুষের নিকট তারা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়ে জীবন কাটায়।
১০. নবি-রাসুলগণের গুণাবলি সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর: নবি-রাসুলগণ ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। সকল সৎ গুণাবলি তাঁরা অনুশীলন করতেন। তাঁরা ছিলেন নিষ্পাপ; অত্যন্ত সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ। দয়া, ক্ষমা, ধৈর্য ইত্যাদি সবধরনের মানবিক গুণাবলি তাঁদের চরিত্রে বিদ্যমান ছিল। মিথ্যা, প্রতারণা, পরনিন্দা, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি খারাপ স্বভাবের লেশমাত্র তাঁদের চরিত্রে কখনোই ছিল না। বরং তাঁরা ছিলেন সৎ স্বভাবের জন্য মানবজাতির অনুপম আদর্শ।
১১. মানবজীবনে নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশে রিসালাত কীভাবে ভূমিকা পালন করে?
উত্তর: নবুয়ত ও রিসালাতের শিক্ষা মানুষকে শান্তি ও শৃঙ্খলার দিকে পরিচালনা করে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের সকল কাজকর্ম আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত পথে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। নবুয়ত ও রিসালাতের চেতনা মানুষের মধ্যকার সমস্ত খারাপ অভ্যাস, অশ্লীলতা ও মন্দকর্মের চর্চা দূর করে দেয়। মানুষ সৎ ও সুন্দর জীবনযাপনে উৎসাহিত হয়। মানুষ নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত হয়।
নবুয়ত ও রিসালাত মানুষকে নবি-রাসুলগণের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে। নবি-রাসুলগণ ছিলেন নিষ্পাপ এবং সকল সৎগুণের অধিকারী। তাঁদের আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের জীবন ও চরিত্র উত্তম হয়। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়। মানবসমাজে পশুত্বের পরিবর্তে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে।
১২. আসমানি কিতাবের বিষয়বস্তু উল্লেখ কর।
উত্তর: আল্লাহ তায়ালা আসমানি কিতাবসমূহে নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন। যেমন :
ক. আল্লাহ তায়ালার সত্তাগত পরিচয়।
খ. আল্লাহ তায়ালার গুণাবলির বর্ণনা।
গ. নবি-রাসুলগণের বর্ণনা।
ঘ. পূর্ববর্তী জাতিসমূহের বিবরণ।
ঙ. অবাধ্য ও কাফিরদের পরিণতির বিবরণ।
চ. হালাল-হারামের বর্ণনা।
ছ. বিধি-বিধান সংক্রান্ত বিবরণ।
জ. শাস্তি ও সতর্কীকরণ বিষয়ে আলোচনা।
ঝ. উপদেশ ও সুসংবাদ সম্পর্কে বিবরণ।
ঞ. আকিদা সংক্রান্ত বিষয়সমূহের বিবরণ।
ট. পরকাল সংক্রান্ত বিষয়সমূহের বিবরণ ইত্যাদি।
আরও দেখো—ইসলাম শিক্ষা অধ্যায়ভিত্তিক বহুনির্বাচনী (MCQ) প্রশ্ন উত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের এসএসসি ইসলাম শিক্ষা ১ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য মোট ১২টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক জ্ঞানমূলক, সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post