এসএসসি ইসলাম শিক্ষা ২য় অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : রাসুলুল্লাহ (স)-এর জীবদ্দশায় হাদিস লিখে রাখা নিষেধ ছিল। কেননা তখন আল-কুরআন নাজিল হচ্ছিল। এ অবস্থায় মহানবি (স)-এর হাদিস লিখে রাখলে তা আল-কুরআনের বাণীর সাথে সংমিশ্রণের আশংকা ছিল। তাই রাসুলুল্লাহ (স)-এর জীবদ্দশায় হাদিস লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করা হয়নি। তবে সাহাবিগণ মহানবি (স)-এর বাণীসমূহ মুখস্থ রাখতেন এবং রাসুলুল্লাহ (স) কোন সময় কী কাজ করতেন তা খেয়াল রাখতেন।
এসএসসি ইসলাম শিক্ষা ২য় অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ‘আমি মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি’—বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: ‘আমি মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি।’—এটি পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তীনের ৪নং আয়াত। মানুষ আল্লাহর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও সুন্দরতম সৃষ্টি আশরাফুল মাখলুকাত । মানুষকে সুন্দর আকৃতি ও চমৎকার গঠনে সৃষ্টি করে আল্লাহ অন্যান্য মাখলুকাত থেকে মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। অত্র আয়াতে এটাই বোঝানো হয়েছে।
২. হারাম বর্জনীয় কেন?
উত্তর: হারাম দ্রব্য আমাদের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় তা বর্জনীয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য যা কিছু অকল্যাণকর তাই হারাম ঘোষণা করেছেন। হারাম খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষ অন্যায়, অশ্লীলতা ও অসৎ চরিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়। মানবচরিত্রের সৎগুণাবলি নষ্ট হয়ে যায়। মানুষ ইবাদতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই বলা যায়, হারাম দ্রব্য আমাদের দেহ, মন ও মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হওয়ায় তা বর্জনীয়।
৩. খতমে নবুয়ত বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: খাতামুন শব্দের অন্যতম অর্থ সিলমোহর। কোনো কিছুতে সিলমোহর তখন অঙ্কিত করা হয় যখন তা পূর্ণ হয়ে যায়। সিলমোহর লাগানোর পর তাতে কোনো কিছু প্রবেশ করানো যায় না। নবুয়তের সিলমোহর হলো নবুয়তের পরিসমাপ্তির ঘোষণা। নবুয়তের দায়িত্বের পরিসমাপ্তি ঘোষণা। অর্থাৎ নতুনভাবে কোনো ব্যক্তি নবি হতে পারবে না এবং নবুয়তের ধারায় প্রবেশ করতে পারবে না। এটাই হলো খতমে নবুয়তের মূল কথা।
৪. কিয়াসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর
উত্তর: ইসলামি শরিয়তের পূর্ণঙ্গতার জন্য কিয়াসের গুরুত্ব অপরিসীম।
কিয়াস ইসলামি শরিয়তের অন্যতম উৎস। ইজমার পরই এর স্থান। মানবজীবন ও সমাজ সতত পরিবর্তনশীল। পরিবর্তন ও বিবর্তনের ধারায় জগতে নতুন নতুন সভ্যতা-সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটে। ফলে নতুন নতুন জিজ্ঞাসা, সমস্যা ও জটিলতার সৃষ্টি হয়, এ সমস্ত সমস্যার সমাধান সভ্যতা ও সংস্কৃতির আলোকেই করতে হয়। কুরআন ও হাদিসে শরিয়তের বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন এগুলোর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সর্বযুগে সর্বকালে সমস্ত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়। আর এ পদ্ধতির নামই কিয়াস। সুতরাং শরিয়তের পূর্ণাঙ্গতার জন্য কিয়াস অপরিহার্য।
৫. ইজমা শরিয়তের দলিল—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: শরিয়তের তৃতীয় উৎস হলো ইজমা। শরিয়তের কোনো বিষয়ে একই যুগের মুসলিম উম্মতের পুণ্যবান মুজতাহিদগণের ঐকমত্য পোষণ করাকে ইজমা বলা হয়। শরিয়তের দলিল হিসেবে ইজমার স্থান তৃতীয়। কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা সমর্থিত হলে ইজমা দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। দলিল হিসেবে ইজমা গ্রহণ করার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “আর তাঁদের কাজকর্ম সম্পাদিত হয় পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে।”
৬. আল-কুরআন কীভাবে নাজিল হয়?
উত্তর: আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কদরের রাতে গোটা কুরআন মজিদ লাওহে মাহফুজ থেকে ‘বায়তুল ইযযাহ’ নামক স্থানে নাজিল করেন। অতঃপর হেরাগুহায় ধ্যানমগ্ন থাকা অবস্থায় মহান আল্লাহ জিবরাইল (আ)-এর মাধ্যমে মুহাম্মদ (স)-এর প্রতি সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল করেন। এরপর বিভিন্ন সময় ও প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানবি (স)-এর জীবদ্দশায় মোট ২৩ বছরে সম্পূর্ণ কুরআন নাজিল হয়।
৬. সূরা আশ-শামসের শিক্ষা বর্ণনা কর।
উত্তর: সূরা আশ-শাসম থেকে আমরা যেসব শিক্ষা লাভ করতে পারি তা নিম্নরূপ :
১. আল্লাহ তায়ালাই আসমান, জমিন ও মানুষের স্রষ্টা।
২. তিনিই সূর্য, চন্দ্র, রাত, দিনের আবর্তন ঘটান।
৩. তিনিই মানুষের ভালো-মন্দ, সৎকর্ম-অসৎকর্মের জ্ঞান দান করেন।
৪. যে ব্যক্তি সৎকর্ম করবে সে সার্বিক সফলতা লাভ করবে।
৫. আর যে ব্যক্তি নিজকে পাপ-পংকিলতায় জড়িয়ে ফেলবে সে ব্যর্থ ও ধ্বংস হবে।
৬. আমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহের মধ্যে যারা অবাধ্য ছিল আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই তাদের শাস্তি প্রদান করেন। বস্তুত আল্লাহ তায়ালার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।
৭. সূরা আদ- দুহার একটি শিক্ষা লেখ।
উত্তর: সূরা আদ্-দুহা থেকে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শিক্ষা লাভ করি। তন্মধ্যে একটি শিক্ষা নিচে উল্লেখ করা হলো:
দুনিয়ার সকল কল্যাণ ও নিয়ামত আল্লাহ তায়ালার দান। এসব নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা সকলের কর্তব্য। যেমন : আল্লাহ তায়ালা আমাদের ইমান, কুরআন, ধন-দৌলত, জ্ঞান-বুদ্ধি ইত্যাদি নিয়ামত দান করেছেন। সুতরাং এসবের জন্য আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। এসব নিয়ামতের কথা মানুষের মাঝে প্রচার করতে হবে।
৮. সূরা আল-ইনশিরাহ-এর শিক্ষা বর্ণনা কর।
উত্তর: সূরা আল-ইনশিরাহ-এর শিক্ষা
১. যে ব্যক্তি সত্য ও ন্যায়ের জন্য চেষ্টা-সাধনা করে আল্লাহ তায়ালা তার অন্তরকে খুলে দেন; তাকে সৎপথ প্রদর্শন করেন।
২. আল্লাহ তায়ালাই মানুষের কষ্ট-যাতনা দূর করেন।
৩. মানুষের মান-সম্মান, খ্যাতি-মর্যাদা সবকিছুই আল্লাহ তায়ালার হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা সম্মান-মর্যাদা দান করেন।
৪. মানবজীবনে সুখ-দুঃখ থাকবেই। সুতরাং দুঃখ ও কষ্টে হতাশ হওয়া চলবে না। বরং ধৈর্যসহকারে এর মোকাবিলা করতে হবে।
৫. জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান। অতএব, এ সময়কে কাজে লাগাতে হবে। দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে হবে।
৬. পার্থিব প্রয়োজনীয় কাজ সমাধানের পর আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ও স্মরণে আত্মনিয়োগ করতে হবে। সকল কিছুতেই আল্লাহ তায়ালার প্রতি মনোনিবেশ করা তাঁর প্রিয় বান্দার বৈশিষ্ট্য।
৯. সূরা আত্-তীন পাঠ করে আমরা কী শিক্ষা লাভ করতে পারি?
উত্তর: সূরা আত-তীন পাঠ করে আমরা যে শিক্ষা লাভ করতে পারি নিচে তা উল্লেখ করা হলো :
১. মানুষ সৃষ্টিজগতের শ্রেষ্ঠ ও সুন্দরতম সৃষ্টি।
২. মানুষের সম্মান ও মর্যাদা সৎকর্মের ওপর নির্ভরশীল। অসৎকর্ম করলে মানুষ মনুষ্যত্বের স্তর থেকে পশুত্বের স্তরে নেমে যায়।
৩. সৎকর্মশীলগণ পরকালে অশেষ ও অফুরন্ত পুরস্কার লাভ করবেন।
৪. আল্লাহ তায়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক। শেষ বিচারের দিন তিনি সকল মানুষের কৃতকর্মের হিসাব নেবেন।
১০. সূরা আল-মাউনের শিক্ষা বর্ণনা কর।
উত্তর: সূরা আল-মাউন থেকে আমরা নি¤েœাক্ত শিক্ষা পেয়ে থাকি।
১. বিচার দিবসকে অস্বীকার করা খুবই জঘন্য কাজ। এটি কাফির-মুনাফিকদের কাজ।
২. ইয়াতিম ও দুস্থদের তাড়িয়ে দেওয়া নয়, বরং তাদের যথাসম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে।
৩. ইয়াতিম, নিঃস্বদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী সকলকে উৎসাহ দিতে হবে।
৪. কোনোক্রমেই সালাতে অবহেলা করা চলবে না। লোক দেখানোর জন্য সালাত আদায় করা যাবে না; বরং বিশুদ্ধ নিয়তে সঠিকভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সালাত আদায় করতে হবে।
৫. সালাতে উদাসীন ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে মহাধ্বংস।
১১. রাসুলুল্লাহ (স)-এর জীবদ্দশায় হাদিস লিখে রাখা নিষেধ ছিল কেন?
উত্তর: রাসুলুল্লাহ (স)-এর জীবদ্দশায় হাদিস লিখে রাখা নিষেধ ছিল। কেননা তখন আল-কুরআন নাজিল হচ্ছিল। এ অবস্থায় মহানবি (স)-এর হাদিস লিখে রাখলে তা আল-কুরআনের বাণীর সাথে সংমিশ্রণের আশংকা ছিল। তাই রাসুলুল্লাহ (স)-এর জীবদ্দশায় হাদিস লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করা হয়নি। তবে সাহাবিগণ মহানবি (স)-এর বাণীসমূহ মুখস্থ রাখতেন এবং রাসুলুল্লাহ (স) কোন সময় কী কাজ করতেন তা খেয়াল রাখতেন।
১২. নিয়ত সম্পর্কে হাদিসটির শিক্ষা বর্ণনা কর।
উত্তর: নিয়ত সম্পর্কিত হাদিসটি থেকে আমরা নিম্নোক্ত শিক্ষা পেয়ে থাকিÑ
১. কাজের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যকে নিয়ত বলা হয়।
২. নিয়তের উপরই কাজের সফলতা নির্ভর করে। অর্থাৎ নিয়ত যদি ভালো হয় তবে ব্যক্তি উত্তম প্রতিদান লাভ করবে। আর নিয়ত যদি খারাপ হয় তবে ভালো কাজ করলেও ব্যক্তি সাওয়াব লাভ করবে না।
৩. আল্লাহ তায়ালা মানুষের বাহ্যিক আমলের সাথে সাথে অন্তরের অবস্থাও লক্ষ্য করেন।
সুতরাং সকল কাজেই আমরা নিয়তকে বিশুদ্ধ রাখব। লোক দেখানোর জন্য বা পার্থিব কোনো লাভের আশায় সৎকর্ম করব না, বরং আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য কাজ করব।
আরও দেখো—ইসলাম শিক্ষা অধ্যায়ভিত্তিক বহুনির্বাচনী (MCQ) প্রশ্ন উত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের এসএসসি ইসলাম শিক্ষা ২য় অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য মোট ১২টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক জ্ঞানমূলক, সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post