এসএসসি ইসলাম শিক্ষা ৩য় অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম। যাকাত সমাজ থেকে অস্থিতিশীলতা ও বিশৃঙ্খলা দূর করে পারস্পরিক সৌহার্দ স্থাপন করে। সামাজিক নিরাপত্তা দানের পাশাপাশি সমাজের মানুষের মাঝে সম্পদের বৈষম্য দূর করে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যাতে সম্পদ শুধু তোমাদের অর্থশালীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়।” সুতরাং সমাজে যাকাত ব্যবস্থা চালু করে বৈষম্য দূর করে সাম্যের ভিত্তিতে জীবন গড়ে তোলাই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
এসএসসি ইসলাম শিক্ষা ৩য় অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ইবাদত বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ইবাদত আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো চূড়ান্তভাবে দীনতা-হীনতা ও বিনয় প্রকাশ করা এবং নমনীয় হওয়া। আর ইসলামি পরিভাষায় দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজ-কর্মে আল্লাহ তায়ালার বিধিবিধান মেনে চলাকে ইবাদত বলা হয়।
২. মানুষ কেন চতুষ্পদ জন্তু কিংবা তার চেয়ে অধম হয়ে যায়?
উত্তর: আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণিকুলের মধ্যে পার্থক্য হলো বিবেক-বুদ্ধি ও জ্ঞানের। যদি মানুষ সে বিবেক-বুদ্ধি ও জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর ইবাদত করতে না পারে তাহলে সে চতুষ্পদ জন্তু কিংবা তার চেয়েও অধম হয়ে যায়।
৩. হাক্কুল্লাহ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত অধিকার বা কর্তব্যকে হাক্কুল্লাহ বলে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মহান আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জন করার জন্য অনেক ধরনের ইবাদত করি। সেগুলোর মধ্যে কিছু ইবাদত শুধু আল্লাহ তায়ালার জন্য নির্দিষ্ট এগুলোই হলো হাক্কুল্লাহ। যেমন : সালাত, সাওম ও হজ ইত্যাদি।
৪. সালাতের ধর্মীয় গুরুত্ব সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর: একজন মুসলিমের দৈনন্দিন জীবনে সালাতের গুরুত্ব অপরিসীম। সালাত মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে বান্দা তার প্রভুর সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। সালাতের মাধ্যমে ইমান মজবুত হয়, আত্মা পরিশুদ্ধ হয়, মানুষকে খুব সকালে ঘুম হতে উঠতে অভ্যস্ত করে তোলে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সালাতের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুল (স) বলেছেন, যে ব্যক্তি মনোযোগসহ সালাত আদায় করে, কিয়ামতের দিন ঐ সালাত তার জন্য নূর হবে (তাবারানি)।
৫. সালাতের সামাজিক গুরুত্ব সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর: পবিত্র কুরআনের বহুস্থানে সম্মিলিতভাবে সালাত আদায় করার কথা বলা হয়েছে। সালাতের কারণে দৈনিক পাঁচবার মুসলমানগণ একস্থানে মিলিত হওয়ার সুযোগ পায়। একে অপরের খোঁজখবর নিতে পারে। সুখে-দুঃখে একে অপরের সহয়োগিতা করতে পারে। এতে তাদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয়।
৬. সালাতের পরিচয় ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সালাত আরবি শব্দ। এর ফার্সি প্রতিশব্দ হলো নামায। এর অর্থ দোয়া, ক্ষমা প্রার্থনা করা ও রহমত কামনা করা। যেহেতু সালাতের মাধ্যমে বান্দা প্রভুর নিকট দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে তাই একে সালাত বলে। ইসলাম যে পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত তার দ্বিতীয়টি হলো সালাত। মহান আল্লাহ মুমিনের উপর দৈনিক পাঁচবার সালাত ফরজ করেছেন।
৭. রমযান মাসে কী শিক্ষা পাওয়া যায়?
উত্তর: রমযান মাসে সিয়াম সাধনার ফলে সমাজের লোকদের মাঝে পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহমর্মিতা সৃষ্টি হয়। সাওম পালনকারী ক্ষুধার্ত থাকার ফলে ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণা যে কিরূপ পীড়াদায়ক হতে পারে তা সে উপলব্ধি করতে পারে। এতে অসহায় নিরন্ন মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতার ভাব জাগ্রত হয়। সুতরাং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাওমের শিক্ষা ও গুরুত্ব অপরিসীম।
৮. সাওমের ধর্মীয় গুরুত্ব লেখ।
উত্তর: সাওম একটি ফরজ ইবাদত। এর ধর্মীয় গুরুত্ব অপরিসীম। রমযান মাসে সকল সৎকাজের প্রতিদান আল্লাহ দশগুণ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেবেন। সাওমের প্রতিদান সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে, আল্লাহ তায়াালা বলেনÑসাওম আমার জন্য আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। (বুখারি)
যেহেতু সাওয়াবের আশায় আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাওম পালন করা হয় সেহেতু আল্লাহ তায়ালা রোযাদারের পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। যেমন, মহানবি (স) বলেছেন- “যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও সাওয়াবের আশায় রমযান মাসে রোযা রাখে, আল্লাহ তায়ালা তার পূর্বের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেন।” (বুখারি)। এটি একটি মৌলিক ফরজ কাজ। যদি কেউ তা অস্বীকার করে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।
৯. সাওমের নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে লেখ।
উত্তর: সাওমের মাধ্যমে আমরা অনেক নৈতিক শিক্ষা লাভ করতে পারি। সাওমের মাধ্যমে মানুষের মনে তাওকয়া ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর হয়েও মানুষ মহান আল্লাহর ভালোবাসা ও ভয়ে কিছুই পানাহার করে না ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি লাভ করে না।
আমরা তাকওয়া অর্জনের জন্য রমযান মাসে সিয়াম পালন করব। মানুষ লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ-ক্ষোভ ও কামভাবের বশবর্তী হয়ে অনেক মন্দ কাজে লিপ্ত হয়। সাওম মানুষকে এসব কাজ থেকে মুক্ত থাকতে শেখায়। সাওম হলো কোনো ব্যক্তি ও তার মন্দ কাজের মাঝে ঢালস্বরূপ। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন- সর্বোপরি সাওম পালনের মাধ্যমে দৈহিক, মানসিক ও আত্মিক প্রশান্তি অর্জিত হয়।
১০. যাকাতের মাধ্যমে কীভাবে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: আমাদের সমাজে ধনী ও গরিব উভয় শ্রেণির লোক রয়েছে। ধনী ও গরিবের মাঝে আর্থিক সমন্বয় সাধন করতে মহান আল্লাহ যাকাতের বিধান দিয়েছেন। যাকাত আদায় করলে সমাজের দুর্বল লোকেরাও আর্থিকভাবে সবল হয়ে উঠবে। ফলে ধনী ও গরিবের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি হবে। এতে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রতি বজায় থাকবে।
১১. যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব লেখ।
উত্তর: যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম। যাকাত সমাজ থেকে অস্থিতিশীলতা ও বিশৃঙ্খলা দূর করে পারস্পরিক সৌহার্দ স্থাপন করে। সামাজিক নিরাপত্তা দানের পাশাপাশি সমাজের মানুষের মাঝে সম্পদের বৈষম্য দূর করে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যাতে সম্পদ শুধু তোমাদের অর্থশালীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়।” সুতরাং সমাজে যাকাত ব্যবস্থা চালু করে বৈষম্য দূর করে সাম্যের ভিত্তিতে জীবন গড়ে তোলাই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
১২. যাকাতের ধর্মীয় গুরুত্ব কী?
উত্তর: যাকাতের ধর্মীয় গুরুত্ব অপরিসীম। এটি একটি ফরজ ইবাদত। কোনো মুসলমান যাকাত না দিলে সে আর পরিপূর্ণ মুসলমান থাকতে পারে না। আল্লাহ বলেন, “যারা যাকাত দেয় না এবং তারা পরকালও অস্বীকারকারী।’ যাকাত অস্বীকার করা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অস্বীকার করার শামিল। ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা) যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
আরও দেখো—ইসলাম শিক্ষা অধ্যায়ভিত্তিক বহুনির্বাচনী (MCQ) প্রশ্ন উত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের এসএসসি ইসলাম শিক্ষা ৩য় অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য মোট ১২টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক জ্ঞানমূলক, সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post