এসএসসি ইসলাম শিক্ষা ৪র্থ অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : মানবসেবা বলতে মানুষের সেবা করা, পরিচর্যা করা, যতœ নেওয়া ও সাহায্য-সহযোগিতা করা ইত্যাদিকে বোঝায়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সেবা করা, ভালোবাসা, সাহায্য-সহযোগিতা করা মানবসেবার অন্তর্ভুক্ত। মানবসেবা হলো হাক্কুল ইবাদতের অন্যতম দিক।
এসএসসি ইসলাম শিক্ষা ৪র্থ অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. দুশ্চরিত্র ও রূঢ় স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না কেন?
উত্তর: দুশ্চরিত্র ও রূঢ় স্বভাবের মানুষ পশুর চেয়েও অধম। তার মধ্যে নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের বিন্দুমাত্রও পাওয়া যায় না। নিজ স্বার্থ রক্ষার জন্য মানবিক আদর্শসমূহকে বিসর্জন দিয়ে সে অন্যায়, অত্যাচার ও অশালীন কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। ফলে শান্তি, নিরাপত্তা, সামাজিক ঐক্য, সংহতি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এবং সমাজে অরাজকতা ও অশান্তি বিরাজ করে। এজন্যই মহানবি (স) বলেছেন, দুশ্চরিত্র ও রূঢ় স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
২. ঘুষ গ্রহণকারীর সাথে ঘুষদাতা শাস্তিপ্রাপ্ত হবে কেন?
উত্তর: ঘুষ গ্রহণকারীর সাথে ঘুষদাতাও শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। কারণ উভয়ই ইসলামি শরিয়তের বিধান অমান্য করে। ইসলামে ঘুষ গ্রহণ ও প্রদান উভয়ই হারাম বা অবৈধ। মহানবি (স) বলেছেন, ‘ঘুষদাতা ও ঘুষখোর উভয়ই জাহান্নামি।’ বাস্তব ক্ষেত্রে ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ই তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অন্যায় ও দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। তাই উভয়কেই শাস্তি পেতে হবে।
৩. ফিতনা ফাসাদ বলতে কী ঝুঝায়?
উত্তর: ফিতনা-ফাসাদ বলতে বিশৃঙ্খলা-বিপর্যয় সৃষ্টি বোঝায়। অর্থাৎ সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ অবস্থার বিপরীত অরাজক পরিস্থিতিই ফিতনা-ফাসাদ। মানবসমাজে ভয়ভীতি, অত্যাচার, অনাচার ইত্যাদির মাধ্যমে নানা বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। এরূপ অস্থিতিশীল পরিস্থিতিই ফিতনা-ফাসাদ। সন্ত্রাস, ছিনতাই, রাহাজানি, গুম, খুন, অপহরণ, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি ফিতনা-ফাসাদের অন্তর্ভুক্ত।
৪. ইমান ও ইসলামের সম্পর্ক বুঝিয়ে লিখ।
উত্তর: ইমান হলো ইসলামি শরিয়তের যাবতীয় বিধিবিধান অন্তরে বিশ্বাস করে মুখে স্বীকার করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। আর ইসলাম অর্থ আনুগত্য করা, আত্মসমর্পণ করা ইত্যাদি। আল্লাহ তায়ালার প্রতি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁর কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করা, তাঁর যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলা এবং হযরত মুহাম্মদ (স)-এর দেখানো পথ অনুসারে জীবনযাপন করাই হলো ইসলাম।
৫. আমানত রক্ষা করতে হবে কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আমানত রক্ষা করা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ হওয়ায় তা রক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ আমানত রক্ষা করা আখলাকে হামিদাহর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার মালিকের নিকট পত্যর্পণ করতে। এটা মুমিনের লক্ষণ। কারণ মহানবি (স) এর হাদিসে আছে যার মধ্যে আমানতদারি নেই তার ইমান নেই। ইসলামি জীবন দর্শনে আমানত রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুমিন হতে হলে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমানত রক্ষা করতে হবে।
৬. ওয়াদা পালন করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ওয়াদা পালন আখলাকে হামিদাহর অন্যতম গুণ এবং ওয়াদা পালন করা ছাড়া পূর্ণাঙ্গ মুমিন হওয়া যায় না বিধায় একজন মুমিন অবশ্যই ওয়াদা পালন করবে। কারও সাথে কোনোরূপ প্রতিশ্রুতি দিলে, অঙ্গীকার করলে বা কাউকে কোনো কথা দিলে তা যথাযথভাবে রক্ষা করাকে ওয়াদা পালন বলে। মানবজীবনে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এর কারণে সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হয়। যে ব্যক্তি ওয়াদা পালন করে তাকে সবাই ভালোবাসে। তার প্রতি সকলের আস্থা ও বিশ্বাস থাকে। সমাজে সে শ্রদ্ধা ও মর্যাদা লাভ করে। ইসলামি জীবন দর্শনে ওয়াদা পালন করা আবশ্যক। আর এ প্রেক্ষিতে ওয়াদা পালন করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
৭. আমানত রক্ষার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আমানত রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার মালিকের নিকট প্রত্যর্পণ করতে।’ আমানত রক্ষা করা মুমিনের জন্য আবশ্যক। মহানবি (স) বলেছেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারি নেই, তার ইমান নেই।’ সুতরাং ইসলামি জীবনদর্শনে আমানত রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৮. শালীনতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: শালীনতা অর্থ মার্জিত, সুন্দর ও শোভন হওয়া। কথা-বার্তা, আচার-আচরণ ও চলাফেরায় ভদ্র, সভ্য ও মার্জিত হওয়াকেই শালীনতা বলা হয়। শালীনতা বহু নৈতিক গুণের সমষ্টি। ভদ্রতা, নম্রতা, সৌন্দর্য, সুরুচি, লজ্জাশীলতা ইত্যাদি গুণাবলির সমন্বিত রূপের মাধ্যমে শালীনতা প্রকাশ পায়।
৯. আখলাকে যামিমাহ বলতে কী বোঝ?
উত্তর: আখলাকে যামিমাহ অর্থ নিন্দনীয় স্বভাব। মানবচরিত্রের নিন্দনীয় স্বভাবগুলোকে আখলাকে যামিমাহ বলা হয়। মিথ্যা, প্রতারণা, ঠাট্টা-বিদ্রƒপ, বিশ্বাসঘাতকতা, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, পরনিন্দা, পরচর্চা, অপচয়, কৃপণতা, ক্রোধ, গর্ব-অহংকার ইত্যাদি মন্দ স্বভাব আখলাকে যামিমাহর অন্তর্ভুক্ত।
১০. আখলাকে হামিদাহ জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আখলাকে হামিদাহ হলো মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মানুষ তার মনুষ্যত্বের সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত হতে পারে তার মানবীয় মৌলিক গুণাবলি, উত্তম মানবকিতা, নৈতিকতার আদর্শের কারণে। সৎ চরিত্রবান ব্যক্তি যেমন সমাজের চোখে ভালো, তেমনি মহান আল্লাহর কাছেও প্রিয়। এ প্রসঙ্গে মহানবি (স) বলেন—‘আল্লাহ তায়ালার নিকট সেই লোকগুলোই অধিক প্রিয়, চরিত্রের বিচারে যে উত্তম।’ (ইবনে হিব্বান) অতএব, উত্তম চরিত্রবান ব্যক্তি আল্লাহর কাছে উত্তম হওয়ার কারণে মানুষের জীবনে আখলাকে হামিদাহ শ্রেষ্ঠ সম্পদ।
১১. মানবসেবা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: মানবসেবা বলতে মানুষের সেবা করা, পরিচর্যা করা, যতœ নেওয়া ও সাহায্য-সহযোগিতা করা ইত্যাদিকে বোঝায়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সেবা করা, ভালোবাসা, সাহায্য-সহযোগিতা করা মানবসেবার অন্তর্ভুক্ত। মানবসেবা হলো হাক্কুল ইবাদতের অন্যতম দিক।
১২. ‘লজ্জাশীলতার পুরোটাই কল্যাণময়’—হাদিসটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: পবিত্রতা ও শালীনতার অন্যতম শর্ত হলো লজ্জাশীলতা। লজ্জাশীলতা মানুষকে শালীন হতে সাহায্য করে। লজ্জাশীল মানুষ পরকালে সাফল্য লাভ করবে। মহানবি (স) বলেন— ‘লজ্জাশীলতার পুরোটাই কল্যাণময়।’ (মুসলিম) লজ্জাশীলতা যেকোনো খারাপ আচরণ ও কর্মকা- থেকে মানুষকে রক্ষা করে, জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায়। ইহকালে যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে।
আরও দেখো—ইসলাম শিক্ষা অধ্যায়ভিত্তিক বহুনির্বাচনী (MCQ) প্রশ্ন উত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের এসএসসি ইসলাম শিক্ষা ৪র্থ অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য মোট ১২টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক জ্ঞানমূলক, সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post