এসএসসি ইসলাম শিক্ষা ৫ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : হযরত আলি (রা) ইসলামের প্রায় প্রত্যেকটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। খায়বার যুদ্ধে হযরত আলি (রা) বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে কামুসদুর্গ দখল করেন। এ কারণেই রাসুল (স) হযরত আলি (রা)-কে আসাদুল্লাহ বা আল্লাহর সিংহ উপাধিতে ভূষিত করেন। উল্লেখ্য যে, এ যুদ্ধে হযরত আলি (রা) দুর্গের একটি বিশালাকার দরজাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন।
এসএসসি ইসলাম শিক্ষা ৫ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. মহান আল্লাহ মহানবি (স)-কে কেন প্রেরণ করেন?
উত্তর: আল্লাহ তায়ালা মহানবি (স)-কে পথপ্রদর্শক হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। মহানবি (স) এর আবির্ভাবের পূর্বে আরবের মানুষ চরম বর্বরতা ও অজ্ঞতার মাঝে লিপ্ত ছিল। তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল চরমভাবে অধঃপতিত। তারা অসংখ্য মূর্তি তৈরি করত এবং মূর্তির পূজা করত। গোত্রের ভিন্নতার পাশাপাশি তাদের মূর্তিও ভিন্ন ভিন্ন ছিল। তারা পবিত্র কাবাঘরে ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন করেছিল। কালের এ চরম অবক্ষয়ের কারণে একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে আল্লাহ তায়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স)-কে প্রেরণ করলেন।
২. কবিতা সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর অভিমত কী?
উত্তর: হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর কিতাবের কোনো কিছু বুঝতে না পার তবে তার অর্থ আরবদের কবিতায় তালাশ কর। কারণ কবিতা তাদের জীবনালেখ্য।’
৩. মহানবি (স) হিলফুল ফুযুল গঠন করেছিলেন কেন?
উত্তর: শৈশবকাল হতেই মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) ছিলেন সত্যবাদী ও শান্তিকামী। সিরিয়া হতে ফিরে এসে তিনি ফিজার যুদ্ধের বিভীষিকা দেখলেন। পাঁচ বছর এ যুদ্ধ স্থায়ী ছিল। হযরত মুহাম্মদ (স) এ যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন নি। তবে যুদ্ধের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। এ যুদ্ধে বহু মানুষ আহত ও নিহত হয়। তাতে তাঁর কোমল হৃদয় কেঁদে উঠে। আহতদের আর্তনাদ শুনে তিনি অস্থির হয়ে পড়েন। শান্তিকামী মানুষ হিসেবে এ অশান্তি তাঁর সহ্য হলো না। তাই তিনি আরবের শান্তিকামী যুবকদের নিয়ে ‘হিলফুল ফুযুল’ (শান্তি সংঘ) গঠন করেন।
৪. মহানবি (স) কীভাবে নবুয়তপ্রাপ্ত হন?
উত্তর: হযরত খাদিজা (রা)-এর সাথে বিবাহের পর হযরত মুহাম্মদ (স) মক্কার অদূরে হেরা পর্বতের গুহায় গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। দীর্ঘদিন ধ্যানে মগ্ন থাকার পর ৪০ বছর বয়সে ৬১০ খ্রিষ্টাব্দের পবিত্র রমযান মাসের ২৭ তারিখ রাতে হযরত জিবরাইল (আ) তাঁর নিকট ওহি নিয়ে আসেন এবং তিনি নবুয়তপ্রাপ্ত হন। জিবরাইল (আ) বললেন, ‘পড়ুন! আপনার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন (সূরা আলাক, আয়াত ১)’। উত্তরে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) বললেন, ‘আমি পড়তে জানি না’। জিবরাইল (আ) তাঁকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘পড়ুন!’ তিনি বললেন, ‘আমি পড়তে জানি না’। এভাবে তিনবার প্রিয়নবি (স)-কে জড়িয়ে ধরলেন। অতঃপর তৃতীয়বারের সময় তিনি পড়তে সক্ষম হলেন।
৫. মদিনা সনদ কী? বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: মদিনা সনদ হলো মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান। হযরত মুহাম্মদ (স) মদিনায় বসবাসরত সকল জাতিকে এক করে সেখানে একটি ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা নেন। এ কাজ করতে গিয়ে তিনি সকল গোত্রের নেতাদের সাথে বৈঠক করে একটি লিখিত সনদ প্রণয়ন করেন, যা ইসলামের ইতিহাসে ‘মদিনা সনদ’ নামে খ্যাত।
৬. মক্কা বিজয়ের কাহিনী সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর: ষষ্ঠ হিজরিতে মক্কার কুরাইশরা মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) ও মুসলমানদের সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধি করে। কুরাইশরা সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করলে রাসুল (স) ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে দশ হাজার মুসলিম বাহিনী নিয়ে মক্কা অভিমুখে অভিযান করেন। মক্কার অদূরে হযরত মুহাম্মদ (স) তাঁবু স্থাপন করেন। কুরাইশরা মুসলিমদের এই বাহিনী দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হলো। বিনা রক্তপাতে ও বিনা বাধায় মুসলিম বাহিনী মক্কা বিজয় করল। পবিত্র কুরআনে মক্কা বিজয়কে ফাতহাম মুবীন বা প্রকাশ্য বিজয় বলা হয়েছে।
৭. হযরত আবু বকর (রা)-এর সময় কী কী সমস্যা দেখা দিয়েছিল?
উত্তর: হযরত আবু বকর (রা)-এর সময় মুসলিম রাষ্ট্রে কতিপয় সমস্যা দেখা দেয়। কেউ কেউ মিথ্যা নবুয়তের দাবি করে, কতিপয় লোক যাকাত দিতে অস্বীকার করে, আবার কতিপয় লোক ইসলাম ত্যাগ করে। হযরত আবু বকর (রা) অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এসব মোকাবিলা করে ইসলাম ও মুসলমানগণকে বিশৃঙ্খলা হতে রক্ষা করেন।
৮. হযরত উমর (রা)-এর শাসননীতি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: ইসলামের ইতিহাসে হযরত উমর (রা)-এর শাসনব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। হযরত মুহাম্মদ (স) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামি প্রজাতন্ত্রের শাসন প্রণালিতে হযরত উমর (রা) কুরআন ও হাদিসের নির্দেশ মোতাবেক পরিপূর্ণ রূপদান করেন এবং প্রজাতন্ত্রকে ইসলামের মূলমন্ত্র সাম্য ও গণতন্ত্রের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন। হযরত উমর (রা) ইসলামের রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থার প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। জনগণের সমর্থন ও কল্যাণের দিকে সবিশেষ লক্ষ রেখে এবং সকল এলাকার পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তিনি এক অনন্য সাধারণ শাসনব্যবস্থা কায়েম করেন।
৯. ইসলামে হযরত উসমান (রা)-এর অবদান উল্লেখ কর।
উত্তর: হযরত উসমান (রা) ইসলাম ও মানবতার সেবায় অকাতরে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করেন। মদিনার অধিবাসীদের পানির অভাব দূর করার জন্য তিনি ১৮০০০ (আঠার হাজার) দিনার ব্যয় করে একটি কূপ ক্রয় করে তা ওয়াকফ করে দেন। মদিনায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি মদিনাবাসীদের মাঝে ত্রাণ হিসেবে খাবার বিতরণ করেন। মসজিদে নববিতে মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় তিনি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খরচে মসজিদ সম্প্রসারণ করেন। তাবুক যুদ্ধে দশ হাজার সৈন্যের ব্যয়ভার তিনি গ্রহণ করেন এবং এক হাজার উট দান করেন। এ ছাড়াও তিনি সাতটি ঘোড়া ও এক হাজার দিনার মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স)-এর দরবারে দান করেন। তিনি পবিত্র কুরআন সংকলন করেন।
১০. মহানবি (স) হযরত আলি (রা)-কে আসাদুল্লাহ উপাধি দেন কেন?
উত্তর: হযরত আলি (রা) ইসলামের প্রায় প্রত্যেকটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। খায়বার যুদ্ধে হযরত আলি (রা) বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে কামুসদুর্গ দখল করেন। এ কারণেই রাসুল (স) হযরত আলি (রা)-কে আসাদুল্লাহ বা আল্লাহর সিংহ উপাধিতে ভূষিত করেন। উল্লেখ্য যে, এ যুদ্ধে হযরত আলি (রা) দুর্গের একটি বিশালাকার দরজাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন।
১১. ইমাম বুখারি (র)-এর পরিচয় দাও।
উত্তর: ইমাম বুখারি (র)-এর নাম মুহাম্মদ, উপনাম আবু আব্দুল্লাহ, পিতার নাম ইসমাঈল, দাদার নাম ইবরাহিম। উপাধি ‘আমিরুল মু’মিনুন ফিল হাদিস’ (হাদিস বর্ণনায় মু’মিনদের নেতা)। তিনি ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতির লালন কেন্দ্র বুখারা (বর্তমান রাশিয়ায়) নগরীতে ১৯৪ হিজরি ১৩ শাওয়াল, ৮১০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুলাই, শুক্রবার জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালেই তাঁর পিতা ইন্তিকাল করেন। মায়ের স্নেহ ও ভালোবাসায় তিনি বড় হন।
১২. ইমাম আবু হানিফা (র) কীভাবে ইন্তিকাল করেন?
উত্তর: তৎকালীন বাগদাদের খলিফা আল মানসুর ইমাম আবু হানিফা (র)-কে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নিতে প্রস্তাব দিলে তিনি তা গ্রহণ করেননি। ফলে তাঁকে জেলখানায় আবদ্ধ করে রাখা হয়। অতঃপর ১৫০ হিজরি মোতাবেক ৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দে খলিফার নির্দেশে প্রয়োগকৃত বিষক্রিয়ার প্রভাবে এই মহান মনীষী ইন্তিকাল করেন।
আরও দেখো—ইসলাম শিক্ষা অধ্যায়ভিত্তিক বহুনির্বাচনী (MCQ) প্রশ্ন উত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের এসএসসি ইসলাম শিক্ষা ৫ম অধ্যায় অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য মোট ১২টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক জ্ঞানমূলক, সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post