শরীর মুটিয়ে যাচ্ছে? তাহলে তো আপনার ওজন কমানোর উপায় নিয়ে এখনই ভাবার উপযুক্ত সময়। যাদের শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ওজন চিকিৎসকরা তাদের সপ্তাহে ১ থেকে ২ পাউন্ড ওজন কমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নিরাপদে দেহের ওজন কমানোর উপায় অনেক আছে।
তবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য উপায়গুলোর মধ্যে রয়েছে উপযুক্ত ব্যালেন্স ডায়েট এবং শরীরচর্চা। অনেকেই শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ায় প্রিয় সব খাবার ডায়েট থেকে বাদ দেন। কিন্তু এতে কেবল আপনি অসন্তুষ্টই হবেন, শরীরের ওজন কমবে না।
ওজন কমানোর উপায় কি?
আজ কোর্সটিকায় আমরা জানবো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে কোন প্রকার ঔষধ ছাড়াই আপনি কিভাবে ওজন কমানে পারেন। এই নিয়মগুলো অনুসরণ করলে আপনার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় থাকবে না। তাহলে চলুন, শুরু করি।
১. সকালের নাস্তা বাদ দেবেন না
অনেকেই মনে করেন, প্রতিদিনের খাবার তালিকা থেকে থেকে সকালের নাস্তা বাদ দিলে শরীরের ওজন কমবে। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। প্রাতঃরাশ এড়িয়ে যাওয়া আপনাকে ওজন কমাতে সহায়তা করবে না। উল্টো এতে করে আপনি প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলো থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। তাই প্রতিদিন সকালে নাস্তা চালিয়ে যেতে হবে।
তবে শুধু সকালের নাস্তাই না, প্রতিদিনের অন্যান্য খাবারগুলোও যথা সময়ে খেতে হবে। দিনের বেলা নিয়মিত খাওয়া দ্রুত হারে ক্যালোরি নির্গত করতে সহায়তা করে। শুধু তাই না, নিম করে খাবার খেলে এটি আপনাকে চর্বি এবং চিনিযুক্ত উচ্চ খাবারগুলো গ্রহণের প্রবণতা থেকেও রক্ষা করবে।
২. প্রচুর পরিমাণে পানি খান
গবেষণায় দেখা গেছে যে, খাওয়ার আগে দুই গ্লাস পানি পান করা লোকেরা খাওয়ার আগে পানি পান করেন না এমন লোকের চেয়ে বেশি ওজন হ্রাস করে। The U.S. National Academies of Sciences, Engineering, and Medicine এর জরিপে বলা হয়েছে, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের প্রতিদিন অন্তত ৩.৭ লিটার পানি পান করা জরুরী। অপরদিকে একজন নারীর পানি গ্রহণের পরিমাণ ২.৭ লিটার।
৩. শাকসবজি এবং ফল খান
শাকসবজি এবং ফলের বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ওজন কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ফল ও শাকসবজিতে ফ্যাট কম থাকে এবং এগুলো আঁশ (ফাইবার) জাতীয় খাবার হওয়ায় এর মধ্যে ওজন হ্রাসের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদান রয়েছে।
এতে ক্যালোরি থাকলেও প্রচুর ফাইবার থাকে। গবেষণায় দেখা যায় যে সবজি এবং ফল খাওয়ার লোকেদের ওজন কম হয়। এই খাবারগুলো খুব পুষ্টিকর, তাই এগুলি খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার ফলে বিচিত্র ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ থাকে।
৪. উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার খান
প্রচুর পরিমাণে ফাইবারযুক্ত খাবার আপনাকে পরিপূর্ণবোধ করতে সহায়তা করতে পারে যা ওজন হ্রাস করার জন্য উপযুক্ত। এছাড়াও খাবার খাওয়ার পরে শরীরে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে আঁশ জাতীয় খাবার। বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ খাদ্য যেমন ফল এবং নিরামিষাশী, ওটস, আস্ত রুটি, বাদামি চাল, পাস্তা এবং সিম, মটর এবং মসুর জাতীয় খাবারে প্রচুর ফাইবার পাওয়া যায়।
এছাড়াও সবজীর মধ্যে কচুশাক, মিষ্টি আলুর শাক, কলমি শাক, পুদিনা পাতা, পুঁইশাক, মুলা শাক, ডাঁটা শাক, লাউ ও মিষ্টি কুমড়ার আগা-ডোগা শাকে প্রচুর আঁশ রয়েছে। তবে অপেক্ষাকৃত বেশি আঁশযুক্ত সবজির মধ্যে রয়েছে সাজনা, কলার মোচা, ঢেঁড়স, ডাঁটা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, গাজর, শিম, পটল, কচু, বেগুন, বরবটি ও মটরশুঁটি ইত্যাদি।
৫. কর্মঠ হওয়ার চেষ্টা করুন
শরীর সুস্থ্য ও স্বাভাবিক রাখতে পরিশ্রম সবথেকে বেশি গুরুত্ব বহন করে। আপনি যদি যথেষ্ট পরিশ্রম না করেন তবে খুব দ্রুত আপনার শরীরে ওজন বেড়ে যাবে। এর একটি খারাপ দিক হচ্ছে, আপনি যদি একবার বেশ মুটিয়ে যান, তাহলে সেখান থেকে রিকোভার করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম প্রচুর স্বাস্থ্য সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ডায়েট ক্যালোরিগুলো নির্গত হতে সহায়তা করতে পারে। যা আপনি কেবল বিভিন্ন প্রকার ডায়েট গ্রহণের মাধ্যমে করতে পারবেন না।
তবে অবশ্যই পরিশ্রম বা ব্যায়াম করার পূর্বে আপনার বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় আনতে হবে। আপনি কি ধরনের শরীরচর্চা করতে পারেন, তা সম্পর্কে আপনার চিকিৎসকের সাথে ভালো করে আলোচনা করুন।
৬. জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থাকুন
জাঙ্ক ফুড অতি মাত্রায় ফ্যাট, কোলেস্টরেল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান থাকে। তাই এ ধরনের খাবার যেমন: চকোলেট, বিস্কুট, ক্রিপস এবং কোমল পানীয় থেকে দূরে থাকুন। আপনি যদি এগুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে থাকেন, তবে ধীরে ধীরে তা ত্যাগ করার চেষ্টা করুন।
ক্ষতিকর এ সকল জাঙ্ক ফুডের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস যেমন ফল, আনসলেটেড রাইস কেক, ওট কেক, আনসাল্টেড বা আনস্টিভড পপকর্ন এবং ফলের রস বেছে নিতে পারেন।
এছাড়াও অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় বা মদ্যপান থেকেও বিরত থাকতে হবে। কেননা এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি যা খুব সহজেই আপনার ওজন বাড়াতে অবদান রাখতে পারে।
৭. কফি অথবা গ্রিন টি পান করুন
কফিকে অনেক সময়ই শরীরের জন্য খুব বাজেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। তবে জানেন কি গুণগত মান সম্পন্ন কফিতে রয়েঠে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে এর দ্বারা আপনি প্রচুর স্বাস্থ্য সুবিধা পেতে পারেন।
কফিতে থাকা ক্যাফিন মানব শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে ৩-১০% বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং ১০-২৩% পর্যন্ত চর্বি নির্গত করতে পারে। যা আপনার ওজন হৃাসে অনবদ্য ভূমিকা পালন করবে।
অপরদিকে কফির মতো গ্রিন টিরও অনেক উপকার রয়েছে, এর মধ্যে একটি হল ওজন হ্রাস। যদিও গ্রিন টিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফিন থাকে। তবে এটি ক্যাটচিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমন্বয়ে কাজ করে, যা চর্বি পোড়া বাড়ানোর জন্য ক্যাফিনের সাথে সিএনরজিস্টিকভাবে কাজ করে বলে মনে করা হয়।
►► আরো দেখো: কিডনি ভালো রাখার উপায় কী?
►► আরো দেখো: ৫ মিনিটে খুশকি দূর করার উপায়
►► আরো দেখো: ত্বকের যত্নে শশার ফেসপ্যাক ব্যবহার
শেষ কথা
অসংখ্য কৌশল অনুসরণ করে আপনার ওজন হ্রাস লক্ষ্য করতে পারেন। উপরের কয়েকটি টিপস হল খাঁটি ডায়েটরিযুক্ত, যেখানে আমরা আশজাতীয় খাবার গ্রহণ এবং চিনি ও উচ্চ ক্যালরোযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকতে বলেছি। এছাড়াও ওজন কমানোর জন্য আপনি ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। আপনি যদি এই কয়েকটি টিপস কার্যকর করেন তবে আপনার ওজন হ্রাসের লক্ষ্যে আপনি ভাল থাকবেন।
Discussion about this post