প্রতিটি মুসলমানকে অন্যান্য ইবাদতের মতো ওযু করার নিয়ম সম্পর্কে জানা আবশ্যক। কেননা, ওযু ব্যতীত কোন ইবাদতই শুদ্ধরূপে আদায় করা সম্ভব না। প্রতিটি ইবাদত শুরুর পূর্বে ওযুর মাধ্যমে পাক-পবিত্র হয়ে ইবাদত শুরু করতে হবে। নয়তো, অধিকাংশ সময়ই ইবাদত গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
ওযু আরবি ভাষার শব্দ। বিশেষ নিয়ম-মোতাবেক শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, তারতিব তথা ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ধৌত করাই হচ্ছে ওযু। নামাজ পড়ার নিয়ম এর মধ্যে অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে ওযু। ওযুকে নামাজের চাবি বলা হয়েছে। ওযু ব্যতীত নামাজ আদায় করলে সেই নামাজ শুদ্ধভাবে আদায় হবে না।
ওযুর মধ্যে কিছু ফরজ, কিছু সুন্নত ও কিছু মুস্তাহাব পালন করত হয়। তবে, এগুলো পালনেও নিয়ম রয়েছে। যেমন: ওযুর ফরজ গুলো বাদ পড়লে ওযু ভেঙ্গে যাবে, অজান্তে ওযুর সুন্নত বাদ পড়ে গেলে সেই ওযু হয়ে যাবে তবে স্ব-ইচ্ছায় সুন্নত বাদ দিলে সেটা মাকরুহ, ওযুর মুস্তাহাব পালন না করলে ওযু হয়ে যাবে তবে পালন করা উত্তম।
ওযু করার নিয়ম
ওযুর অন্যতম একটি সুন্নত হচ্ছে তারতিব তথা ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ওযু করা। সেজন্য আমরা ওযুর নিয়ম গুলো ধারাবাহিকভাবে আপনাদের জানিয়ে দেবো।
ধারাবাহিকভাবে ওযুর নিয়ম হচ্ছে–
১. মনে মনে ওযুর নিয়ত করা। (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৫০৩৬)
২. ওযুর নিয়ত শেষে “বিসমিল্লাহ” বলা। (সহীহ তিরমিযী হাদিস: ২৫)
৩. ডান হাতে পানি নিয়ে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা ও হাতের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা। হাতে আংটি বা ঘড়ি থাকলে নড়া-চড়া করে হাত পর্যন্ত পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে। (আবু দাঊদ, হাদিস: ১০৮, সহীহ বুখারী, হাদিস: ১৫৯, তিরমিযী, হাদিস: ৭৮৮)
৪. মিসওয়াক করা। মিসওয়াক করা সম্ভব না হলে আঙ্গুল দিয়ে দাঁত ঘষে নিতে হবে। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪২)
৫. ডান হাতে পানি নিয়ে গড়াগড়া কুলি করা। (সহীহ বুখারী, হাদিস: ১৯১)
৬. ডান হাতে পানি নিয়ে নাকে পানি দেওয়া, ও নাক পরিষ্কার শেষে নাক ঝেড়ে নেওয়া। (সহীহ মুসলিম, হাদিস:৫৭৮)
৭. কপাল হতে মুখমণ্ডলের নিচ পর্যন্ত এবং বাম ও ডান কানের লতী পর্যন্ত সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল ধৌত করা। (সহীহ বুখারী হাদিস: ১৫৯; মিশকাত, হাদিস: ২৬৭)
৮. দাড়ি ঘন হলে দাড়ি খিলাল করতে হবে। থুতনির নিচ হতে দাড়ি খিলাল শুরু করতে হবে। (আবু দাঊদ, হাদিস: ১৪৫)
৯. পর্যায়ক্রমে প্রথমে ডান ও পরে বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা। (সহীহ বুখারী, হাদিস: ১৪০)
১০. উভয় হাত মাথার সামনে মাসেহ করতে করতে মাথার পিছন দিকে নিয়ে যাওয়া। একইসাথে ভেজা শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে কানের ভিতরের অংশ ও বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে কানের বাইরের অংশ তথা কানের পিঠ মাসেহ করতে হবে। (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৫৮২; সহীহ বুখারী হাদিস: ১৮৫; মিশকাত হাদিস: ৪১৩)
১১. মাথা মাসেহ শেষে ডান ও বাম পা টাখনু পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করে নিতে হবে। পা ধৌত করার সময় বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করতে হবে। (সহীহ বুখারী হাদিস: ১৮৫; আবু দাঊদ, হাদিস: ১৪৮)
১২. সবশেষে দোয়া পাঠ করে নিতে হবে।
১৩. প্রতিটি অঙ্গ ৩ বার করে ধোয়া উত্তম। তবে, এক কিংবা দু’বার করে ধৌত করলেও ওযু হয়ে যাবে। তিনবারের অধিক ধৌত করা পানি অপচয় ও সুন্নতের খেলাফ। (সহীহ বুখারী হাদিস: ১৫৭)
সবশেষে যা জানা দরকার
শুধু ওযু করলেই হবে না। বরং, ওযুর বিশুদ্ধতা রক্ষা করে ওযু করতে হবে। ওযুর বিশুদ্ধতা রক্ষা করে ওযু করতে চাইলে উপরে দেখানো ওযু করার নিয়ম অনুযায়ী ওযু করতে হবে। সেই সাথে খেয়াল রাখতে শরীরের প্রতিটি অঙ্গে যেন ভালোভাবে ভিজে। তবেই, শুদ্ধভাবে ওযু আদায় হবে।
Discussion about this post