আমরা যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠান বা সার্ভিস প্রোমোট করার জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করি, তাদের সবারই একটাই চাওয়া, গুগলে ওয়েবসাইটকে র্যাঙ্ক করানো। যাতে করে কেউ আমাদের সার্ভিস রিলেটেড কোন কিছু গুগলে সার্চ করলে নিজের ওয়বেসাইটটিই আগে চলে আসে।
কিন্তু ওয়েবসাইট এসইও করতে গিয়ে আমরা, বিশেষ করে নতুনরা কিছু ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলি। যার ফলে আমাদের ওয়েবসাইট গুগলে র্যাঙ্ক তো করেই না, বরং তা আমাদের ওয়েবসাইটের গুগলে র্যাঙ্ক করার সম্ভাবনা আরো নষ্ট করে দেয়।
আজ আমরা কোর্সটিকার পাঠকদের কাছে এমন কিছু প্রসেস তুলে ধরবো, যেগুলো কিনা ওয়েবসাইট এসইও তথা ওয়েবসাইটকে গুগল র্যাঙ্কে আনার জন্য একদমই করা উচিত নয়। পাশপাশি এর মারাত্মক কুফল সম্পর্কে ধারণা লাভ করবো।
প্রচুর অ্যাফিলিয়েট লিংক সংযুক্ত করা
যেসব পেজে অনেক অ্যাড ও অ্যাফিলিয়েট লিংক থাকে, এ ধরনের সাইটগুলো গুগলে কখনোই এসইও হয় না। এ ধরনের ওয়েবসাইটের লিংক করানোর ফলে সাধারণত লিংকটি রি-ডাইরেক্ট হয়ে অন্য কোনো ওয়েবসাইটে নিয়ে যায়। এর ফলে ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটের প্রতি বিরক্ত হয় এবং বিরূপ মনোভাব পোষণ করে। কাঙ্খিত তথ্য খুঁজে পেতে দেরি হওয়ায় খুব দ্রুতই একজন ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইট থেকে বের হয়ে যায়। এতে করে আপনার ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট বেড়ে যায়।
গুগল কোন সাইটকে র্যাঙ্ক করানোর জন্য শুধুমাত্র ভিজিটরের সংখ্যাই দেখে না। পাশাপাশি আপনার সাইটের বাউন্স রেটও দেখে। অর্থাৎ, একজন ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটে কত সময় ধরে ভিজিট করলো, তাও পর্যবেক্ষণ করে। সুতরাং ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহে বাধাগ্রস্থ হয় এমন অস্বাভাবিক লিংক বিল্ডিং করা যাবে না।
লিংকের অপব্যবহার করা
লিংকের অপব্যবহার ওয়েবসাইটের এসইওর ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাবে ফেলে। লিংকের অপব্যবহার বলতে আসলে ঠিক কি বোঝায়? এর অর্থ হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইটের লিংকের যথেচ্ছ ব্যবহার। আমরা অনেক সময়ই বেশি ভিজিটর পাওয়ার আশায় ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে, কমেন্ট সেকশনে কিংবা যে কোন অপ্রয়োজনীয় জায়গায় ওয়েবসাইটের লিংক পেস্ট করি।
এটা করাট সম্পূর্ণরূপে অনুচিত। এর ফলে আপনার ওয়েবসাইটের লিংক স্পাম হিসেবে গণ্য হবে। যা গুগলের চোখে আপনার ওয়েবসাইটের খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে ব্যপক ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও কোন থার্ড পার্টি থেকে লিংক ক্রয় করা উচিত নয়। এগুলো কেবলই ক্ষণস্থায়ী সমাধান । দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা ভোগ করতে হলে সব সময় অরগানিক ট্রাফিকের প্রতি মনযোগ দেয়া উচিত।
মাত্রাতিরিক্ত কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করা
আমরা অনেক সময়ই মনে করি যে, কনটেন্ট গুগলে র্যাঙ্ক করানোর জন্য অধিক পরিমাণে কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত। বিষয়টা আসলে ঠিক তা নয়। অধিক কি-ওয়ার্ড ব্যবহার গুগল র্যাঙ্কিং এ ভালো ফল এনে দেয় না। আপনার কনটেন্টের সাথে সম্পর্ক আছে এমন ৫ থেকে ৭ টি কি-ওয়ার্ড আপনার কনটেন্টকে র্যাঙ্ক করানোর জন্য যথেষ্ট।
আর এ জন্য আপনাকে আপনার কনটেন্টের পারফেক্ট কি-ওয়ার্ড খুঁজে বের করতে হবে। কনটেন্টের জন্য পারফেক্ট কি-ওয়ার্ড তৈরি করতে বা রিসার্চ করতে আপনি গুগল কি-ওয়ার্ড প্লানার ব্যবহার করতে পারেন।
ডুপ্লিকেট কনটেন্ট ব্যবহার করা
অনেকেই তাদের মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করতে ব্যর্থ হয়ে অন্যের ওয়েবসাইট থেকে কনটেন্ট ডুপ্লিকেট বা কপি করে। কেউ কেউ পুরো কনটেন্ট এর সম্পূর্ণ অংশই ডুপ্লিকেট করে, আবার কেউ বা একটা নির্দিষ্ট অংশ ডুপ্লিকেট করে। তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে ডুপ্লিকেট মানে ডুপ্লিকেট। এক কথায় যাকে বলে নকল।
গুগল যখন বুঝতে পারে যে, আপনি কোন ওয়েবসাইট থেকে কনটেন্ট ডুপ্লিকেট বা কপি করে ব্যবহার করেছেন, তখন গুগল ধরে নেবে আপনার ওয়েবসাইটটি কোন কোয়ালিটি সাইট নয়। এর অর্থ আপনার সাইট সার্চ ইঞ্জিনে ভালো র্যাঙ্ক হওয়ার সম্ভাবনা হারাবে।
►► আরো দেখুন: ওয়েবসাইট গুগলে র্যাঙ্ক করার ১০ নিনজা টেকনিক
এখানে উল্লেখ্য যে, গুগল যখন একই কনটেন্ট অনেকগুলো ওয়েবসাইটে পায়, তখন গুগল কিছু বিষয় এনালাইজ করে। গুগলের এনালাইজ করা বিষয়গুলোর মধ্যে ওয়েব পেজের বয়স অথবা ইনডেক্সিং টাইম হচ্ছে অনেক গুরুত্বপুর্ন একটি বিষয়। সুতরাং যে পেইজটি প্রথমে ইন্ডেক্স হয়েছে গুগল সেই পেইজটিকেই অরিজিনাল হিসেবে ধরে নেয়। আর এই এনালাইজ থেকে গুগল সিদ্ধান্ত নেয় কোন পেইজটি সেরা এবং গুগল সার্চ ইঞ্জিন সেই পেইজটিকেই তাদের সার্চ রেজাল্টে দেখায়।
ক্লোকিং এর আশ্রয় নেয়া
অনেক ওয়েবসাইট কিংবা কনটেন্ট মেকারদের মধ্যেই ক্লোকিং এর প্রবণতা দেখা যায়। অর্থাৎ, সার্চ ইঞ্জিনকে এক ধরনের কনটেন্ট আর ইউজারকে আরেক ধরনের কনটেন্ট দেখানো। এটা সম্পূর্ণরূপে একটি গর্হিত ও নীতিবিরুদ্ধ কাজ।
►► আরো দেখুন: ওয়েবসাইট SEO কি? SEO এর প্রয়োজনীয়তা কি?
এর ফলে আপনি হয়তো ক্ষণস্থায়ী কিছু ট্রাফিক পাবেন। কিন্তু আপনার ওয়েবসাইটে আসা ভিজিটর তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে না পেয়ে বিরূপ মনোভাব পোষণ করবে। যা আপনার ওয়েবসাইটকে র্যাঙ্কিং এ অনেক দূরে নিতে মূখ্য ভূমিকা পালন করবে।
অটোমেটিক জেনারেটেড কনটেন্ট ব্যবহার
অনেকেই আছেন যারা সময়ের অভাবে কিংবা অলসতা করে ইউনিক কনটেন্ট তৈরির পেছনে সময় দিতে চান না। ফলে তারা অনলাইনে অটোমেটিক কনটেন্ট জেনারেটরের দিকে ঝুঁকে পরেন। আপনাকে মনে রাখতে হবে, অটোমেটিক কনটেন্ট জেনারেটর কখনোই ভালো ফলাফল দেয় না। তারা আপনার জন্য যে কনটেন্ট জেনারেটেড করে দেয়, একই কনটেন্ট আরো হাজার জনকে দেয়। সুতরাং আপনার ওয়েবসাইটের সাথে তাদের ওয়েবসাইটের কনটেন্ট মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা অন্তত ৮৫ ভাগ।
তাই জেনারেটেড কনটেন্ট ব্যবহার না করে সর্বদা চেষ্টা করুন, নিজেই নিজের ওয়েবসাইটের জন্য কনটেন্ট লিখতে। আর আপনার যদি কনটেন্ট লেখার কোন অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কাউকে নিযুক্ত করুন।
আপনার ওয়েবসাইটের জন্য প্রফেশনাল এবং কোয়ালিটি কনটেন্ট তৈরি করতে যোগাযোগ করুন সারজান ফারাবীর সাথে।
আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আপনার ওয়েবসাইটকে গুগলে র্যাঙ্ক করাতে অবশ্যই ভালো কোন পথ খুঁজে বের করুন। এছাড়া কোর্সটিকায় আপনি আপনার ওয়েবসাইটকে এসইও করার অনেক টিপস পাবেন। এগুলো অনুসরণের চেষ্টা করুন। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন। এখানে আপনার সমস্যা সমাধানে রয়েছি আমরা অনেকে। আপনার জন্য শুভ কামনা।
Discussion about this post