কাজলা দিদি যতীন্দ্রমোহন বাগচী : জসীমউদ্দীনের লেখা “কাজলা দিদি” কবিতাটি শোক, স্মৃতি ও ভালোবাসার মিশেলে রচিত। কবিতায় একজন শিশুর কাতর আকুতি ফুটে উঠেছে, যে তার প্রিয় দিদিকে খুঁজছে। সে মায়ের নীরবতা ও আচরণে বিভ্রান্ত, বুঝতে পারে না কেন দিদিকে আর কেউ ডাকে না।
শিশুটি প্রকৃতির নানা সৌন্দর্যের মধ্যে দিদির অনুপস্থিতি অনুভব করে এবং তার ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। চাঁদ, ঝিঁঝিঁর ডাক, ফুলের গন্ধ—সবকিছুই তার দিদির স্মৃতি জাগিয়ে তোলে। এই কবিতায় ভাই-বোনের স্নেহময় সম্পর্ক, বিচ্ছেদের বেদনা ও একাকিত্বের অনুভূতি গভীরভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
কাজলা দিদি যতীন্দ্রমোহন বাগচী
১৮৭৮ সালের ২৭শে নভেম্বর যতীন্দ্রমোহন বাগচী নদীয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কবিতা রচনা ছাড়াও ‘মানসী’ ও ‘পূর্বাচল’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। পল্লিপ্রীতি তাঁর কবিতার বৈশিষ্ট্য। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘লেখা’, ‘কেয়া’, ‘বন্ধুর দান’ ইত্যাদি। ‘কাজলা দিদি’ কবিতাটি ‘কাব্যমালঞ্চ’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। ১৯৪৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়।
কাজলা দিদি কবিতার শুরু এখানে
বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই
মাগো, আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে, নেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাই জ্বলে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই;
মাগো, আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে দিদিকে আর কেনই-বা না ডাকো,
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আমি যখন দিদি বলে ডাকি, তখন
ও-ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো,
আমি ডাকি, – তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল মা, দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে!
দিদির মতন ফাঁকি দিয়ে আমিও যদি লুকোই গিয়ে –
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে?
আমিও নাই দিদিও নাই কেমন মজা হবে!
ভুঁইচাঁপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল;
ডালিম গাছের ডালের ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
দিস না তারে উড়িয়ে মা গো, ছিঁড়তে গিয়ে ফল;
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবে কী মা বল!
বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই
এমন সময়, মাগো, আমার কাজলা দিদি কই ?
বেড়ার ধারে, পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোঁপে-ঝাড়ে;
নেবুর গন্ধে ঘুম আসে না- তাইতো জেগে রই;
রাত হলো যে, মাগো, আমার কাজলা দিদি কই ?
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
১. জেনে নিই।
ছোট্ট বোনটির সারাক্ষণের সাথি ছিল কাজলা দিদি। দিদি চিরদিনের জন্য তাদের ছেড়ে চলে গেছে, তা সে জানে না, বোঝে না। প্রতি মুহূর্তেই সে তার প্রিয় কাজলা দিদির জন্য অপেক্ষায় থাকে। সে কোথায় গেছে, কেন আসে না তা জানতে চায় মায়ের কাছে। মা উত্তর দিতে পারেন না। মুখ লুকিয়ে শুধু কাঁদেন।
২. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি, অর্থ বলি এবং নতুন বাক্য লিখি।
শোলক, জোনাই, দিদি, নেবু, ভূঁইচাঁপা, মাড়াস নে
৩. বিপরীত শব্দগুলো জেনে নিই।
দিন – রাত
ঘুম – জাগরণ
ঢাকা – খোলা
নতুন – পুরানো
জ্বলা – নেভা
৪. উপর থেকে ঠিক উত্তরটি বেছে নিই ও খাতায় লিখি।
নেবুর তলে / বাঁশবাগানে / শিউলিতলে / তাল তলায়
শিউলির ডালে / ভূঁইচাঁপার ডালে / আমের ডালে / ডালিমের ডালে
মা/ দিদি / দাদু / বাবা
ঝোঁপে-ঝাড়ে / গাছের ডালে/আঁধার রাতে / ঘরের মাঝে
নেবুর গন্ধে / ঝিঁঝির ডাকে / চাঁদের আলোতে / ফুলের গন্ধে
ক. কোথায় জোনাকি জ্বলে?
খ. বুলবুলি কোথায় লুকিয়ে থাকে?
গ. কে শোলক বলতেন?
ঘ. ঝিঁঝি কোথায় ডাকে?
ঙ. ঘুম আসে না কেন?
৫. প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
ক. কাজলা দিদি কোথায় গেছে?
খ. কখন কাজলা দিদির কথা বেশি মনে পড়ে?
গ. কাজলা দিদির কথা উঠলে মা আঁচল দিয়ে মুখ ঢাকেন কেন?
ঘ. পুতুলের বিয়ের সময় দিদির কথা মনে পড়ে কেন?
ঙ. আমিও নাই, দিদিও নাই, কেমন মজা হবে- এ কথা বলে কী বোঝানো হয়েছে?
চ. খুকি মাকে কেন শিউলি ফুলের গাছের নিচে সাবধানে যেতে বলেছেন?
ছ. ডালিম গাছের ফল ছিঁড়তে বারণ করেছে কেন?
৬. নিচের শব্দগুলো ঠিকভাবে সাজাই (যেমন- বাঁশবাগান)।
পুতুল | তলে |
থোকায় | ধারে |
পুকুর | বিয়ে |
নেবুর | ঘরে |
শোলক | থোকায় |
কাজলা | বাগান |
বাঁশ | বলা |
নতুন | দিদি |
৭. কবিতাটি বিরামচিহ্ন দেখে ও ভাব বজায় রেখে পড়ি।
◉ আরও দেখুন: চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বইয়ের সকল গল্প-কবিতার সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে কাজলা দিদি যতীন্দ্রমোহন বাগচী কবিতাটি আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post