কাবুলের শেষ প্রহর গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর : বর্তমান অংশটি লেখকের বিখ্যাত ভ্রমণ-কাহিনি ‘দেশে-বিদেশে’ গ্রন্থের শেষ পরিচ্ছেদের সংক্ষিপ্ত অংশবিশেষ। আফগান সরকারের শিক্ষা বিভাগে কাজ করার সময় লেখক কাবুলে অবস্থান করছিলেন। এ সময় তাঁর গৃহপরিচারক আবদুর রহমানের সঙ্গে গড়ে ওঠে এক গভীর মানবিক সম্পর্ক। গৃহকর্ম ছাড়াও লেখকের দেখভালের প্রতিও আবদুর রহমানের ছিল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।
কিছুদিন পর কাবুলে হঠাৎ অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে খাবার-দাবারসহ নিরাপত্তারও সংকট দেখা দেয়। এ সংকটে লেখক ও আবদুর রহমান অল্প খাবার ভাগ করে খেতেন। এ পরিস্থিতিতে দেশে ফিরে আসার জন্য লেখক বিমানের একটি আসন লাভ করেন। বিমানবন্দরে আবদুর রহমানের কাছ থেকে বিদায় গ্রহণের সময় আবেগঘন অবস্থার সৃষ্টি হয়। আফগানিস্তানে লেখকের উচ্চপদস্থ বহু বন্ধু থাকা সত্ত্বেও আবদুর রহমানকেই পরম বান্ধব বলে তিনি স্বীকৃতি দিয়েছেন।
কাবুলের শেষ প্রহর গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—১: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও :
ক. লেখক কাবুল ছেড়ে যাওয়ার সময় কীভাবে তাঁর প্রিয় শহর এবং মানুষের প্রতি অনুভূতি প্রকাশ করেন? তার এই অনুভূতি পাঠককে কী বার্তা দেয়?
খ. গল্পে লেখক এবং আবদুর রহমানের সম্পর্কের দিক থেকে আফগান সমাজের কিছু বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়। এই সম্পর্কের মাধ্যমে আফগান সমাজের কী দিক প্রকাশিত হয়েছে?
১ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. লেখক কাবুল ছেড়ে যাওয়ার সময়, শহরটির প্রতি তার অনুভূতি ছিল এক ধরনের নস্টালজিক এবং মিশ্র আবেগে ভরা। তিনি শহরটি ছাড়ার সময় বলেন, ‘এ নীরস নিরানন্দ বিপদসংকুল পুরী ত্যাগ করতে কোনো সুস্থ মানুষের মনে কষ্ট হওয়ার কথা নয়।’ কিন্তু এর পরেই লেখক উল্লেখ করেন যে, তার হৃদয়ে কিছু বিশেষ মানুষের প্রতি এক গভীর ভালোবাসা এবং সম্পর্ক রয়েছে, যাদের তিনি কখনো ভুলতে পারবেন না। এভাবেই তিনি কাবুলের মানুষদের প্রতি এক বিশেষ ভালোবাসা এবং সম্পর্কের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। বিদায়ের মুহূর্তে, তাঁর মনে হয়, ‘এঁদের সকলকে একসঙ্গে ত্যাগ করতে গিয়ে মনে হলো আমার সত্তাকে যেন কেউ দ্বিখ-িত করে ফেলেছে।’ এই অনুভূতি তাঁর মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং আন্তরিক বন্ধুত্বের চিত্র তুলে ধরে।
লেখকের এই অনুভূতি পাঠককে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়: যে ব্যক্তি প্রকৃত সম্পর্ক এবং আন্তরিকতা তৈরি করে, তার জন্য বিদায় নেওয়া সহজ নয়, যদিও পরিস্থিতি বা সময় তাকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। এই বার্তা থেকে আমরা বুঝতে পারি, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব এবং আন্তরিকতা মানুষের জীবনকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলে, এবং এমন সম্পর্কই একজনের জীবনে স্থায়ী প্রভাব রেখে যায়।
খ. লেখক এবং আবদুর রহমানের সম্পর্ক গল্পের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা আফগান সমাজের অনেক বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে। প্রথমত, এটি আফগান সমাজের মধ্যে আন্তরিকতা এবং মানুষের প্রতি সহানুভূতির এক বিশেষ দৃষ্টান্ত। আবদুর রহমান, একজন সাধারণ গৃহপরিচারক, তার অবস্থান থেকে খুবই নিষ্ঠার সাথে লেখকের প্রতি সেবা করেছে। তবে, তার সম্পর্ক শুধুমাত্র একজন কর্মচারী এবং তার কর্মক্ষমতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। আবদুর রহমানের মাঝে লেখক দেখেন এক গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা, যা সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস বা পদবীর বাইরে ছিল।
আফগান সমাজে ব্যক্তি এবং তার সম্পর্কের যে দিকটি দেখা যায় তা হল, এখানে মানুষ তার পেশা বা সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী মূল্যায়িত হয় না, বরং তার চরিত্র, আন্তরিকতা এবং সম্পর্কের মান অনুযায়ী তাকে মূল্যায়ন করা হয়। আবদুর রহমান, একজন গৃহপরিচারক, যে কখনোই উচ্চশিক্ষিত বা সামাজিক মর্যাদার কোনো উচ্চ পর্যায়ে ছিল না, তবুও তার ভালোবাসা এবং নিষ্ঠা লেখককে একটি অসাধারণ বন্ধুর মতো করে তুলে ধরেছিল। এটি আফগান সমাজের মধ্যে সম্পর্কের মানে ও মূল্যবোধের কথা বলে, যেখানে শ্রদ্ধা এবং বন্ধুত্বের ভিত্তি পারিবারিক সম্পর্ক বা সামাজিক অবস্থানের থেকে আরও শক্তিশালী হয়।
এছাড়া, আফগান সমাজে এক ধরনের আত্মত্যাগ এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রতি গুরুত্ব রয়েছে, যা গল্পে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। আবদুর রহমানের লেখকের প্রতি এত গভীর ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা তার ব্যক্তিগত জীবন এবং তার সমাজের প্রতি নিষ্ঠা এবং গভীর অনুভূতি প্রকাশ করে। আফগান সমাজে ‘মানুষ’ এবং ‘মানুষের মধ্যে সম্পর্ক’ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আর লেখক-আবদুর রহমানের সম্পর্কের মধ্য দিয়ে সমাজের এই মানবিক দিক প্রকাশিত হয়। এখানে, অবস্থান বা আর্থিক অবস্থান নয়, সম্পর্ক এবং অন্তর্দৃষ্টিই মূল ভূমিকা পালন করে।
এভাবে, এই সম্পর্ক আফগান সমাজের মধ্যে মানুষের মানবিকতা, বন্ধুত্ব এবং আন্তরিকতার মূল্য তুলে ধরে, যা আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক এবং উল্লেখযোগ্য।
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—২: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও :
ক. লেখক কেন বলেন যে ‘প্রত্যেক বিদায় গ্রহণে রয়েছে খণ্ড-মৃত্যু’? এর মাধ্যমে লেখক কী ধরনের অভ্যন্তরীণ অনুভূতির প্রকাশ করেছেন?
খ. কাবুল থেকে বিদায় নেওয়ার সময় লেখকের ব্যক্তিগত যন্ত্রণা ও আবেগের প্রকাশ কীভাবে গল্পের সার্বিক বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত?
২ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. লেখক ‘প্রত্যেক বিদায় গ্রহণে রয়েছে খণ্ড-মৃত্যু’—কথাটি বলেন যখন তিনি কাবুল ছাড়ার মুহূর্তে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে চান। এই বাক্যে লেখক মর্মার্থে বলেন, যে কোনো বিদায়, তা যতই সামান্য বা বড় হোক না কেন, মানুষের জন্য এক ধরনের অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। বিদায়ের মুহূর্তে যে সম্পর্কগুলো এবং স্থানগুলো মানুষের অন্তরে স্থান করে নিয়েছিল, তা একসময় চিরতরে হারিয়ে যায়। লেখক এই ‘খণ্ড-মৃত্যু’-কে অভ্যন্তরীণ অনুভূতির ক্ষয় বা ক্ষতির প্রতীক হিসেবে দেখেন। এটি মূলত সেই মুহূর্তগুলোর একটি প্রতীকী প্রতিফলন, যখন একত্রে থাকা সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার যন্ত্রণাকে ব্যক্ত করা হয়।
এটি লেখকের এক গভীর মানসিক অবস্থা বা অভ্যন্তরীণ অনুভূতি, যেখানে তিনি নিজের অস্তিত্বের অভ্যন্তরে একটি শূন্যতা বা ক্ষতির অনুভূতি অনুভব করেন। যখন কোনো মানুষ বা স্থান ছেড়ে চলে যায়, তার মধ্যে যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, মনস্তাত্ত্বিক চাপ এবং আবেগের স্রোত তৈরি হয়, তা এক ধরনের ‘মৃত্যু’ হয়ে ওঠে। এটি যেন জীবনের একটি অঙ্গ যে, কেউ এক স্থান, সম্পর্ক বা পরিচয় থেকে বিচ্ছিন্ন হলে তার অস্থিরতা এবং শূন্যতার অনুভূতি অনুভব করে। এই অনুভূতি লেখককে বলিয়ে দেয় যে, বিদায় নেবার মাধ্যমে মানুষ একটি অংশ হারায়, যেমন মৃত্যু কোনো প্রিয় ব্যক্তির বা চিরস্থায়ী কিছু হারানোর মতোই।
খ. কাবুল থেকে বিদায় নেওয়ার সময় লেখকের ব্যক্তিগত যন্ত্রণা এবং আবেগ গল্পের সার্বিক বিষয়বস্তুর সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এই গল্পের মূল প্রতিপাদ্য হল ছেড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা, স্মৃতির মূল্য এবং সম্পর্কের গভীরতা। লেখক কাবুল ছাড়ার সময় যে আবেগ এবং যন্ত্রণার সম্মুখীন হন, তা তার কাবুলের প্রতি ভালোবাসা, সেখানে কাটানো স্মৃতি এবং তার সঙ্গে জড়িত মানুষের প্রতি গভীর স্নেহের প্রতিফলন। গল্পের এক জায়গায় লেখক বলেন, ‘প্রত্যেক বিদায় গ্রহণে রয়েছে খণ্ড-মৃত্যু’, যা তার অনুভূতির গভীরতাকে প্রকাশ করে, যা কাবুল ত্যাগ করার সময় তার মনে সৃষ্টি হয়।
এই অনুভূতি কেবলমাত্র এক শহর বা স্থান ছাড়ার নয়, বরং এটি জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অবসানও। লেখক কাবুল থেকে বিদায় নেবার সময় সেখানকার মানুষদের, তাদের সঙ্গে কাটানো সময় এবং সম্পর্কের প্রতি এক গভীর শ্রদ্ধা অনুভব করেন। এই সম্পর্কের সঙ্গেই তার জীবনের সেরা স্মৃতিগুলো জড়িয়ে আছে। যখন কাবুল ত্যাগ করেন, তখন তিনি এই স্মৃতিগুলোর অভাব অনুভব করেন, যা তাকে এক ধরনের মানসিক শূন্যতার মধ্যে ফেলে দেয়। এই ব্যক্তিগত যন্ত্রণা গল্পের সার্বিক বিষয়বস্তুর সঙ্গে যুক্ত, কারণ এটি পাঠককে শিখিয়ে দেয় যে সম্পর্কের অমূল্যতা এবং মানুষের একে অপরকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেওয়ার গভীরতা কীভাবে একে অপরের জীবনে স্থায়ী প্রভাব ফেলে।
এছাড়া, লেখক তার জীবনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং সম্পর্কের মানসিক অবস্থা সঙ্গীতের মতো প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেছেন, যেখানে কাবুল তার জন্য শুধু এক শহর নয়, বরং জীবনের এক অধ্যায় এবং সেখানে কাটানো সময়গুলো এক অমূল্য ধন। সুতরাং, কাবুল থেকে বিদায় নেওয়ার সময় লেখকের ব্যক্তিগত যন্ত্রণা ও আবেগ গল্পের মাধ্যমে আফগানিস্তানে তার অভিজ্ঞতা, সম্পর্ক এবং বিদায়ের শূন্যতা বিষয়ক গভীর ভাবনা প্রকাশ করে।
আরও দেখো—অষ্টম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের আনন্দপাঠ বই থেকে কাবুলের শেষ প্রহর গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৩টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখানে দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও বাংলা বইয়ের গল্প-কবিতার সৃজনশীল, জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক এবং বহুনির্বাচনি সমাধানের জন্য উপরের লিংকটি অনুসরণ করো।
Discussion about this post