বাংলাদেশে এখন কিডনি রোগীর সংখ্যা ২ কোটির উপরে। প্রতিনিয়ত কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এত পরিমাণ কিডনি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা, অস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন, শরীর ও কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার গ্রহণ করা।
মানবদেহে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর অন্যতম একটি অঙ্গ হচ্ছে কিডনি। কিন্তু, আমরা অজান্তেই কিডনির ক্ষতি করে থাকি। লাইফস্টাইল ও খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন করার মাধ্যমে কিডনি রোগের মতো শত ধরনের রোগ হতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়ার ফলে শরীর সেই খাদ্য হজম করতে পারে না। হজম করলেও এক পর্যায়ে শরীরে বিষাক্ততা সৃষ্টি হয়। যার প্রভাব পড়ে কিডনিসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের উপর। শরীর ও কিডনির জন্য গ্রহণীয় খাদ্যসমূহ গ্রহণ করার মাধ্যমে শরীর ও কিডনির সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা সম্ভব।
কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার
কিডনি ভালো রাখার উপায় অনেকগুলোই রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে– কিডনির ও শরীরের ক্ষতি করে এমন খাদ্যগুলো বর্জন করা। ক্ষতিকারক খাদ্যগুলো বর্জন করলে কিডনি থাকবে ভালো।
কিডনির জন্য ক্ষতিকর এমন খাদ্যগুলো হচ্ছে–
১. একইসাথে অতিরিক্ত পরিমাণ মাংস খাওয়া
অন্যান্য খাদ্যের চেয়ে মাংস হজম হতে বেশী সময় নেয়। এই অতিরিক্ত মাংসই কিডনির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। এর ফলে কিডনিতে পাথর ও ইউরিক অ্যাসিডে তৈরি হতে শুরু করে। কিডনির ক্ষতি করতে না চাইলে অতিরিক্ত মাংস খাওয়া হতে বিরত থাকুন।
২. কম পানি পান করা
কিডনির মাধ্যমে শরীর হতে বর্জ্য অপসারণ হয় ও রক্তের ভারসাম্য বজায় থাকে। অধিকাংশ মানুষই পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ করেন না। এত করে বর্জ্য পদার্থসমূহ কিডনিতে জমা পড়ে থাকে ও রক্তে মিশে যেতে শুরু করে। এক পর্যায়ে কিডনিতে জটিল রোগ হতে শুরু করে।
৩. ব্যথানাশক ঔষধ খাওয়া
ব্যথানাশক ঔষধ দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য খাদ্য নয়। তবে অতিরিক্ত ব্যথানাশক ঔষধ হতে পারে কিডনির সমস্যার মূল কারণ। সামান্য ব্যথাতেই আমরা ব্যথানাশক ঔষধ ব্যবহার করি। গবেষণামতে, অনেকদিন যাবত ব্যথানাশক ঔষধ ব্যবহার করলে রক্তচাপ ও কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায়।
৪. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য খাবারের মধ্যে লবণ অন্যতম। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য তরকারি ও ভাতে সকলেই লবণ খেয়ে খায়েন। খেয়াল রাখবেন লবণ যেন অতিরিক্ত না হয়ে যায়। এই লবণই কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার গুলোর মধ্যে অধিক ক্ষতিকর। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ৫ গ্রামের বেশী লবণ খাওয়া কখনোই উচিত নয়।
জাঙ্ক ফুডে প্রচুর পরিমাণে লবণ দেওয়া হয়ে থাকে। জাঙ্ক ফুড কম খান। সম্ভব হলে জাঙ্ক ফুড খাওয়া বাদ দিয়ে দিন। জাঙ্ক ফুড খাওয়ার ফলে কিডনি, গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের মতো সমস্যার তৈরি করে। অধিক লবণ খাওয়ার কারণে কিডনি বিকল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
৫. কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার কলা
কলার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনই অপকারিতাও রয়েছে। কলাতে রয়েছে অধিক পরিমাণে পটাসিয়াম। অধিক পরিমাণে পটাসিয়াম গ্রহণ করলে আমাদের কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করে। যাদের ইতোমধ্যে কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেয়েছে তারা কলা খাওয়া হতে বিরত থাকুন।
৬. কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকস
এনার্জি ড্রিংকসে কোন পুষ্টিগুণ নেই। বরং, রয়েছে অধিক পরিমাণে চিনি। অধিক চিনি ও পুষ্টিগুণবিহীন এই খাদ্য খাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যাওয়া, হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, কিডনি রোগ ও দাঁতের সমস্যা হয়ে থাকে। কোমল পানীয়ের পরিবর্তে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন কোন পানীয় পানের চেষ্টা করুন বা দই খান।
৭. কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার অতিরিক্ত ভিটামিন সি
আমাদের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি এর প্রয়োজন হয়। অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন সি গ্রহণ করলে সেই উপাদান কিডনিতে গিয়ে জমা হয়ে থাকে। অনেকদিন যাবত এভাবে অতিরিক্ত পরিমাণ ভিটামিন সি গ্রহণ করলে কিডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে। ভিটামিন-সি এর চাহিদা পূরণের জন্য লেবু বা কমলালেবু খান তবে অতিরিক্ত পরিমাণ নয়।
শেষ কথা
কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার এর তালিকা’টা অনেক বড়। মূলত সকল অস্বাস্থ্যকর খাবারই শরীর ও শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের জন্য ক্ষতিকর। শরীর ও কিডনিকে ভালো রাখতে চাইলে এসকল অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জন করতে হবে। নয়তো শরীরে একটির পর একটি সমস্যা তৈরি হতেই থাকবে।
Discussion about this post