কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুস্থ থাকার জন্য লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে হবে। পরিবর্তন আনতে হবে দৈনিক কাজ-কর্ম ও খাবারে। কিডনি রোগীর খাবার তালিকা এমন হতে হবে যেন রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বৃদ্ধি না পায়। সঠিক পদ্ধতিতে খাবার নির্বাচন ও ডাক্তারের নির্দেশনা মোতাবেক চললে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
কিডনি রোগীর রক্তে ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণ, ইউরিয়া/ ইউরিক এসিডের পরিমাণ, রক্ত/ইউরিনে এলবুমিনের পরিমাণ, রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ও বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে খাদ্যতালিকা নির্বাচন করতে হবে।
কিডনি রোগীর জন্য সঠিক খাদ্য নির্বাচনে ব্যর্থ হলে রোগীর সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কিডনি রোগীর জন্য খাদ্য নির্বাচন করতে হবে। কিংবা, ডাক্তারের সহায়তা নিয়ে রোগীর বর্তমান অবস্থার উপর ভিত্তি করে খাদ্যতালিকা নির্বাচন করতে হবে।
কিডনি রোগীর খাবার তালিকা
কিডনি ভালো রাখার উপায় গুলোর মধ্যে উত্তম উপায় হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন-যাপন করা। সেই সাথে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। তবে যারা ইতোমধ্যে কিডনির বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তাদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অতি জরুরী। নয়তো কিডনির সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
কিডনি রোগী যেসকল খাবার খেতে পারবে–
১. কার্বোহাইড্রেট
কিডনি রোগীদের জন্য কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যকে সবচেয়ে প্রথমে প্রাধান্য দেওয়া হয়। শরীরের ক্যালোরি চাহিদার অধিকাংশই কার্বোহাইড্রেটের মাধ্যমে পূরণ হয়ে থাকে। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যের অন্যতম উৎস হচ্ছে– ভাত, চালের গুঁড়ো, চালের রুটি, ময়দা, সুজি ও সেমাই।
২. শরীরের ওজনভেদে ক্যালরিযুক্ত খাবার নির্বাচন
কিডনি রোগীদের সাধারণ ব্যক্তির চেয়ে ক্যালরির পরিমাণ বেশী প্রয়োজন হয়। কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীকে তার শরীরের প্রতি কেজি ওজনের বিপরীতে ৩০-৩৫ কেজি কিলোক্যালরি খাবার খেতে হবে।
৩. প্রোটিন | কিডনি রোগীর খাবার তালিকা
কিডনি রোগীদের প্রোটিন জাতীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রণ রাখাটা খুব জরুরী। কিডনি রোগীদের প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের ভিত্তিতে ০.৫-০.৮ গ্রাম প্রোটিন খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।
কিডনি রোগীদের জন্য গ্রহণীয় প্রোটিন জাতীয় খাবার: দুধ, দই, মুরগির মাংস, মাছ ও ডিমের সাদা অংশ।
কিডনি রোগীদের জন্য বর্জনীয় প্রোটিন জাতীয় খাবার: গরু, খাসির মাংস, কলিজা, সিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি, বাদাম ও ডাল।
৪. সবজি ও ফল
কিডনি রোগীর রক্তে পটাশিয়াম, ফসফরাস, ইউরিক এসিডের মাত্রার উপর ভিত্তি করে সবজি ধরন ও সবজির পরিমাণ নির্ভর করে। কিডনি রোগীর রক্তে যদি পটাসিয়ামের মাত্রা বেশী থাকে তাহলে পটাশিয়ামের মাত্রা কম রয়েছে এমন সবজি ও ফল খেতে হবে। আবার কিডনি রোগীর রক্তে যদি পটাশিয়ামের মাত্রা কম থাকে তাহলে বেশী পটাশিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে। পটাশিয়ামযুক্ত সবজিগুলো হচ্ছে-
উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত সবজি ও ফল: কলা, আলু, টমেটো, পালংশাক, শসা, খেজুর, ফলের রস, পালংশাক, শুকনা ফল ও ডাবের পানিতে অধিক পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে।
তুলনামূলক কম পটাশিয়ামযুক্ত সবজি ও ফল: আঙুর, জাম, তরমুজ, নাশপাতি, পেয়ারা ও আপেলে তুলনামূলক কম পটাশিয়াম থাকে।
শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা না জানা থাকলে কম পটাশিয়ামযুক্ত সবজি ও ফলগুলো খান। শরীরে পটাসিয়ামের মাত্রা অধিক পরিমাণে বেড়ে গেলে কিডনি রোগ আরও বেড়ে যেতে পারে।
৫. তরল ও পানীয় জাতীয় খাদ্য | কিডনি রোগীর খাবার তালিকা
কিডনি রোগীদের জন্য তরল জাতীয় খাদ্য ও পানি নিয়ন্ত্রণে রাখাটা খুবই জরুরী। সারাদিনে যেসকল পানীয় পান করা হয় সেগুলোও তরলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত যেমন: দুধ, চা কিংবা শরবত। শরীরের হিমোগ্লোবিন, সোডিয়াম, ইজিএসআর এর মাত্রার উপর নির্ভর করে কোন ব্যক্তি কতটুকু তরল জাতীয় খাদ্য খেতে পারবে।
কিডনি রোগের ধরনের উপর নির্ভর করে ১-২ লিটার পানি করতে বলা হয়। কিডনি রোগীদের জন্য অতিরিক্ত পানি খাওয়াও ক্ষতিকর আবার কম পানি খাওয়া ক্ষতিকর। সেজন্য, কিডনি রোগী সারাদিনে কতটুকু পানি পান করবে তা ডাক্তারের কাছ হতে জেনে নিতে হবে।
শেষ কথা
উপরে আপনাদের জন্য কিডনি রোগীর খাবার তালিকা শেয়ার করা হয়েছে। কিডনি রোগীরা শুধু উপরের খাবারগুলো খেতে পারবে এমনটা নয়। বরং, পুষ্টিগুণ বজায় রেখে তারা যেকোন ধরনের খাদ্য খেতে পারবে। নির্দিষ্ট পরিমাণে খাদ্য খাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, অস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন পরিহার করতে হবে, দৈনিক হাঁটা-চলা ও শরীর চর্চা করতে হবে। তবেই কিডনিসহ শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো সুস্থ থাকবে।
Discussion about this post