কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউট এর পরিসংখ্যান মতে বাংলাদেশে ২ কোটির বেশী কিডনি রোগী রয়েছে। প্রতিনিয়ত এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চলছে। রোগের শুরুতে শরীরে রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। আস্তে এই লক্ষণগুলো বাড়তেই থাকে। শুরুতে কিডনি রোগটি চিহ্নিত করতে না পেরে শেষ অবস্থায় এসে চিহ্নিত করতে পারলেও ততদিনে কিডনি দুটি গুরুতরভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
দেশে এত পরিমাণ কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ার কারণ মূল কারণ হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন। লাইফস্টাইল পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে কিডনি রোগের মতো আরও শত প্রকার রোগ হতে মুক্ত হওয়া সম্ভব। সেই সাথে কিডনি ভালো রাখার উপায় গুলো মেনে চলতে হবে। যে উপায়গুলোর মাধ্যমে কিডনির সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা সম্ভব।
কিডনি রোগের লক্ষণ
দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি অঙ্গ হচ্ছে কিডনি। কিডনি রোগের শুরুতে প্রাথমিক কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। অনেকে এই লক্ষণগুলোকে সাধারণ সমস্যা হিসেবে ধরে নেয়। রোগ যখন গুরুতর পর্যায়ে চলে যায় তখন লক্ষণগুলা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে যেসকল লক্ষণ প্রকাশ যায়–
১. প্রস্রাবের সময় ব্যথা ও জ্বালাপোড়া:
মূত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও ব্যথা হয়ে থাকে। এই সংক্রমণ মূত্রনালী হতে কিডনিতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সংক্রমণ কিডনিতে ছড়িয়ে পড়লে জ্বর ও কোমর ব্যথা শুরু হয়।
২. প্রস্রাবে রঙ গাঢ় হওয়া
কিডনি রোগের অন্যতম একটি লক্ষণ হলো প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হওয়া। কিডনিতে রোগ হলে– প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হওয়া, প্রস্রাব বেশী বা কম হওয়া, অনেক সময় প্রস্রাবের বেগ পেলেও প্রস্রাব না হওয়ার মতো সমস্যা হয়।
৩. কিডনি রোগের লক্ষণ রক্তমিশ্রিত প্রস্রাব হওয়া
অনেক কিডনি রোগীয় প্রস্রাব লাল বর্ণের হয়ে থাকে। প্রস্রাবের সাথে রক্ত মিশ্রিত হওয়ার কারণে প্রস্রাব এমন লালবর্ণ ধারণ করে। প্রস্রাব যদি লাল বর্ণ ধারণ করে তাহলে খুব দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
৪. দেহে ফোলাভাব তৈরি হওয়া
কিডনির মাধ্যমে শরীর হতে পানি ও বর্জ্য বের হয়। কিডনিতে রোগ হলে শরীরে গ্রহণকৃত পানি কিডনির মাধ্যমে বের হতে পারে না। ফলে সেই পানি শরীরের মধ্যেই থেকে যায়। এই পানির জন্য শরীরে ফোলাভাব তৈরি হয়।
কিডনির রোগ ব্যতীতও ফোলাভাব হতে পারে। যেমন: অ্যালার্জি বা অতিরিক্ত ঘুম। অ্যালার্জি বা অতিরিক্ত ঘুমের কারণে ফোলাভাব তৈরি হলে সেই ফোলাভাব খুব দ্রুত সেরে যায়। তবে কিডনি রোগ জনিত ফোলাভাব হলে সেই ফোলাভাব সহজে কমে না। শরীরে ফোলাভাব তৈরি হওয়ার এক সপ্তাহ পরেও সেটি না সারলে হতে পারে কিডনি রোগ।
৫. কিডনি রোগের লক্ষণ অনিদ্রা ও শ্বাসকষ্ট
কিডনিতে সমস্যা হলে শরীর হতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি বের হতে পারে না। এই পানি শরীরেই জমা থাকে। জমাকৃত পানি অনেক সময় ফুসফুসে জমা হয়। ফুসফুসে পানি চলে যাওয়ার কারণে বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট অনুভব হয়। ফুসফুসে পানি জমে থাকার কারণে সহজে ঘুমও হবে না।
৬. ক্লান্তি লেগে থাকা
কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে ব্যর্থ হলে রক্ত পরিশুদ্ধ হয় না। রক্তে বিষাক্ত ও অপ্রয়োজনীয় উপাদান বেড়ে যায়, সেই সাথে দেখা দিতে পারে রক্ত স্বল্পতাও। শরীরে রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া ও রক্তে বিষাক্ত উপাদান বেড়ে যাওয়ার কারণে সবসময় ক্লান্তিভাব, দুর্বলতা ও ওজন কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়।
শেষ কথা
উপরে কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করা হয়েছে। কিডনি রোগ হলে যে শুধু উক্ত লক্ষণগুলোই প্রকাশ পাবে এমনটা নয়। কিডনি রোগের আরও অনেক লক্ষণ রয়েছে। কিডনি রোগ হলে অধিকাংশ মানুষের যেসকল লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে, আমরা সেসকল লক্ষণগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি।
Discussion about this post