মুসলিমদের বছরে দু’টি ঈদ হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর অন্যটি হচ্ছে ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহা’য় পশু কুরবানী দেওয়া ওয়াজিব, অনেক আলেমের মতে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। প্রত্যেক ব্যক্তিকেই যে কুরবানী দিতে হবে এমনটা নয়। কেবল যে ব্যক্তির উপরে কুরবানী ওয়াজিব হয়েছে সে ব্যক্তিকেই কুরবানী দিতে হবে। তার জন্য কুরবানী কার উপর ওয়াজিব আমাদের এটি জানতে হবে।
হাদিসে এসেছে নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তির কুরবানীর সামর্থ্য থাকা সত্বেও কুরবানী করে না, সে যেন আমার ঈদগাহে উপস্থিত না হয়।” (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৩৫১৯)
কুরবানী ওয়াজিব হওয়া সত্বেও কুরবানী না দিলে হাদিসে তাকে নিন্দা করা হয়েছে।তাই যে সকল ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়েছে সে সকল ব্যক্তির উচিত কুরবানী দেওয়া।
কুরবানী কার উপর ওয়াজিব
আল্লাহ তায়ালা সামর্থ্যহীন ব্যক্তির উপরে কুরবানী চাপিয়ে দেননি। কোরআন ও হাদিসে এমন কিছু নিয়মের কথা বলা হয়েছে যার ক্ষেত্রে সেই নিয়মগুলো গ্রহণযোগ্য হবে কেবল সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে কুরবানী ওয়াজিব হবে।
সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ও প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলিম নর নারীর মধ্যে যে ব্যক্তির “১০ জিলহজ ফজর হতে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত” সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে।
নেসাবের মধ্যে যেসব সম্পদের হিসেব ধরা হবে: টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা, গহনা-অলঙ্কার, বসবাস বা নিজস্ব খাবার উৎপাদনের জমি ব্যতীত অতিরিক্ত জমি, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত বাড়ি থাকা, অপ্রয়োজনীয় সকল প্রকার আসবাবপত্র ও ব্যবসায়িক পণ্য নেসাবের মধ্যে হিসাবযোগ্য। উক্ত সম্পদ একবছর না থাকলেও শুধু ১০ জিলহজ হতে ১২ জিলহজ পর্যন্ত থাকলে কুরবানী দিতে হবে।
নেসাব পরিমাণ সম্পদ কতটুকু: স্বর্ণের ক্ষেত্রে নেসাব পরিমাণ সম্পদ হচ্ছে সাড়ে সাত ভরি, রুপারে ক্ষেত্রে নেসাব পরিমাণ সম্পদ হচ্ছে সাড়ে বায়ান্ন ভরি। টাকা-পয়সা কিংবা অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রে নেসাবের পরিমাণ হচ্ছে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার মূল্যের সমপরিমাণ টাকা-পয়সা বা সম্পদ থাকা।
নেসাব পরিমাণ সম্পদ কীভাবে হিসেব করবো: আজকের বাজার দরে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) তোলা রুপার মূল্য কত তা আগে জেনে নিন। তারপর আপনার সকল টাকা-পয়সা ও সম্পদ মিলিয়ে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্যের হয় কি না তা হিসেব করুন। যদি সকল সম্পদ মিলিয়ে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয় তাহলে আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
কুরবানী ওয়াজিব না হওয়া সত্বেও যেসকল ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব: কোন ব্যক্তির উপর যদি কুরবানী ওয়াজিব না হওয়া সত্বেও যদি সে ব্যক্তি কুরবানীর উদ্দেশ্য পশু ক্রয় করে তাহলে সে ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যাবে।
সবশেষে যা জানা দরকার
কুরবানী কার উপর ওয়াজিব এটি জানার পরে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়েছে কি না। যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়েছে তাদের ঈদুল আযহার নামাজ পড়ার পড়ে কুরবানী দিতে হবে। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “কোন ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগেই পশু কুরবানী দিলে, সেটি কুরবানী হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। সেটি তার নিজের জন্য জবাই হবে”। অবশ্যই নামাজ ও খুতবার পর পশু জবাই করা উচিত।
Discussion about this post