কুলি মজুর কাজী নজরুল ইসলাম : কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় কবি মানবসভ্যতার যথার্থ রূপকার শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের পক্ষে কলম ধরেছেন।
যুগ যুগ ধরে কুলি-মজুরের মতো লক্ষকোটি শ্রমজীবী মানুষের হাতে গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতা। এদেরই অক্লান্ত শ্রমে ও ঘামে মোটর, জাহাজ, রেলগাড়ি চলছে। গড়ে উঠেছে দালানকোঠা, কলকারখানা। এদের শোষণ করেই ধনিকশ্রেণি হয়েছে বিত্ত-সম্পদের মালিক।
কিন্তু যুগ যুগ ধরে সমাজে এই কুলি-মজুররাই সবচেয়ে বঞ্চিত ও উপেক্ষিত। এক শ্রেণির হৃদয়হীন স্বার্থান্ধ মানুষ এদের শ্রমের বিনিময়ে পাওয়া বিত্ত- সম্পদের সবটুকুই ভোগ করছে, অথচ এদের তারা মানুষ হিসেবে গণ্য করতেও নারাজ।
কুলি মজুর কাজী নজরুল ইসলাম
অন্যায়, শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, বিপ্লব ও দেশপ্রেমের উদ্দীপনাময় কবিতা লিখে বাংলার জনমনে যিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে নন্দিত আসন পেয়েছেন, তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
বহু বিচিত্র ও বিস্ময়কর তাঁর জীবন। ছেলেবেলায় লেটোর দলে গান করেছেন, রুটির দোকানের কারিগর হয়েছেন, যুদ্ধে যোগ দিয়ে সেনাবাহিনীর হাবিলদার হয়েছেন। ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে রাজদ্রোহের অপরাধে কারাবরণ করেছেন। তিনি পত্রিকাও সম্পাদনা করেছেন। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, সংগীত প্রভৃতি ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
তিনি যে শুধু বড়োদের জন্য লিখেছেন তা নয়, ছোটোদের জন্য লেখা তাঁর কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে- ‘ঝিঙেফুল’, ‘সঞ্চয়ন’, ‘পিলে পটকা’, ‘ঘুম জাগানো পাখি’, ‘ঘুম পাড়ানি মাসিপিসি’ এবং নাটক ‘পুতুলের বিয়ে’। নজরুলের কবিতা ও গান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। তাঁর রচিত ‘সন্ধ্যা’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘চল্ চল্ চল্’ গানটি আমাদের রণ-সংগীত। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি।
নজরুলের জন্ম ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ) বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। তিনি ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে আগস্ট (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ই ভাদ্র) ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
কুলি মজুর কবিতার শুরু এখানে
দেখিনু সেদিন রেলে,
কুলি বলে এক বাবু সাব তারে ঠেলে দিলে নিচে ফেলে!
চোখ ফেটে এল জল,
এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল ?
যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ঐ বাষ্প-শকট চলে,
বাবু সাব এসে চড়িল তাহাতে, কুলিরা পড়িল তলে।
বেতন দিয়াছ?
চুপ রও যত মিথ্যাবাদীর দল!
কত পাই দিয়ে কুলিদের তুই কত ক্রোর পেলি বল!
রাজপথে তব চলিছে মোটর, সাগরে জাহাজ চলে,
রেলপথে চলে বাষ্প-শকট, দেশ ছেয়ে গেল কলে,
বল তো এসব কাহাদের দান! তোমার অট্টালিকা
কার খুনে রাঙা? – ঠুলি খুলে দেখ, প্রতি ইটে আছে লিখা ।
তুমি জান নাকো, কিন্তু পথের প্রতি ধূলিকণা জানে
ঐ পথ, ঐ জাহাজ, শকট, অট্টালিকার মানে!
আসিতেছে শুভদিন,
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ!
হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,
পাহাড়-কাটা সে পথের দু-পাশে পড়িয়া যাদের হাড়,
তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,
তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি;
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,
তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!
কুলি মজুর কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন
১। এলাকায় একজন ভালো মানুষ হিসেবে চেয়ারম্যান আজমল সাহেবের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে, কিন্তু তাঁর ছেলে কারণে-অকারণে বাড়ির কাজের লোক, আশপাশের খেটে খাওয়া মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করে, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। চেয়ারম্যান ছেলেকে ডেকে বুঝিয়ে বলেন, তুমি যাদের আজ তুচ্ছ জ্ঞান করছ – সত্যিকার অর্থে তারাই আধুনিক সভ্যতার নির্মাতা, তাদের কারণেই আমরা সুন্দর জীবন যাপন করছি।
ক. ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় রেলপথে কোনটি চলে?
খ. ‘শুধিতে হইবে ঋণ’- কথাটির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলের আচরণে ‘কুলি-মজুর’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘চেয়ারম্যান সাহেবের মনোভাব ‘কুলি-মজুর’ কবিতার মূলভাবেরই প্রতিফলন’ বিশ্লেষণ কর।
◉ আরও দেখুন: সপ্তম শ্রেণির সকল গল্প-কবিতার CQ-MCQ সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে সপ্তম শ্রেণির বাংলা বই থেকে কুলি মজুর কাজী নজরুল ইসলাম কবিতাটি আলোচনা করা হয়েছে। এই বইয়ের যে সৃজনশীল প্রশ্নগুলো রয়েছে, তার উত্তরও তোমরা কোর্সটিকায় পেয়ে যাবে। সৃজনশীল প্রশ্নের সমাধানের জন্য উপরের ‘সৃজনশীল সমাধান’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post