কৃষিশিক্ষা ১ম অধ্যায় ব্যবহারিক : ব্যবহারিক লেখার সময় যা মনে রাখতে হবে
১. ধারণাতত্ত্ব : কী পরীক্ষা করা হবে এবং কোন তত্ত্বের ভিত্তিতে করা হবে।
২. প্রয়োজনীয় সমাগ্রী : কী কী সামগ্রী/যন্ত্রপাতি এ পরীক্ষার জন্য দরকার হবে।
৩. কাজের ধাপ : পরীক্ষা করার জন্য কীভাবে অগ্রসর হতে হবে।
২টি খাতা প্রস্তুত রাখো
১. কাঁচা খাতা : পরীক্ষাগারে পর্যবেক্ষণকৃত তথ্যাদি দ্রুত লিপিবদ্ধ করার জন্য।
২. পাকা খাতা : শিক্ষকের নিকট এবং চূড়ান্ত ব্যবহারিক পরীক্ষায় (এমএসসি) উপস্থাপনার জন্য প্রতিটি পরীক্ষণ পাকা খাতায় পরিষ্কারভাবে নিয়ম মোতাবেক লিখতে হবে। প্রয়োজনীয় চিত্রও খাতায় সুন্দর করে আঁকতে হবে।
পরীক্ষণের সময় অবশ্যই-১. কাঁচা খাতা, ২. পেন্সিল, ৩. ইরেজার এবং ৪. স্কেল হাতের কাছে রাখবে।
পরীক্ষণের সময় গভীর মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষণ করবে এবং প্রয়োজন অনুসারে তথ্যগুলো লিখবে।
পরীক্ষণের ফলাফল লিখবে এবং প্রয়োজনীয় চিত্র আঁকবে। পাকা খাতায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো উপস্থাপন করতে হবে :
১. পরীক্ষণ নং
২. পরীক্ষণের শিরোনাম
৩. পরীক্ষণের স্থান ও তারিখ
৪. ধারণাতত্ত্ব/মূলতত্ত্ব
৫. সূত্র (যদি থাকে)
৬. প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও উপকরণ
৭. কাজের ধাপ বা পরীক্ষা পদ্ধতি
৮. হিসাব (যদি থাকে)
৯. ফলাফল
১০. সাবধানতা এবং
১১. মন্তব্য, উপসংহার ও আলোচনা
কৃষিশিক্ষা ১ম অধ্যায় ব্যবহারিক
►► পরীক্ষণ নং- ১
পরীক্ষণের নাম : মাটির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে মাটি শনাক্তকরণ
তারিখ : ……………………….
মূলতত্ত্ব : কোন মাটিতে কোন ধরনের ফসল ভালো উৎপাদিত হয় সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হলে মাটির নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক।
পরীক্ষার উদ্দেশ্য
১. জমির ফসল উপযোগিতা নির্ণয় করা।
২. কাক্সিক্ষত বুনটে পরিণত করা।
৩. ফসল নির্বাচন করা।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: ১. মৃত্তিকা নমুনা; ২. পানিভর্তি ওয়াশ বোতল; ৩. কোদাল; ৪. খুরপি; ৫. পলিব্যাগ; ৬. কাগজ; ৭. পেন্সিল; ৮. ব্যবহারিক খাতা।
কাজের ধারা
ক. মৃত্তিকা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা :
১. কোদাল দিয়ে জমির ৫টি স্থান থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করলাম।
২. সংগৃহীত মাটি পলিব্যাগে ভর্তি করে রাখলাম।
৩. মাটিগুলো মাপ দিয়ে নিলাম এবং পলিব্যাগে রাখলাম।
৪. পলিব্যাগে নিচের তথ্যগুলো লিখে রাখলাম।
ক. নমুনা মাটি নম্বর-বি ৩২০
খ. নমুনা সংগ্রহের তারিখ- ১৪.০৩.২০১৫
গ. নমুনার স্থান- বসুন্ধরা, মৌজা- নতুনবাজার।
ঘ. মৃত্তিকার রূপ-ধূসর।
খ. বিভিন্ন ধরনের মাটি শনাক্ত করা :
১. প্রথমে মাটির নমুনা হতে একমুঠো মাটি হাতের তালুতে নিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি (১০-১২ মিলি) প্রয়োগে উত্তমভাবে কাই বানানোর চেষ্টা করলাম।
২. তারপর এ মাটিকে হাতের তালুতে মুষ্টিবদ্ধ করে বল, সোজা স্তবক, চক্র, ত্রিভুজ প্রভৃতি আকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করলাম।
৩. যদি কাই বানানো না যায় তাহলে নমুনার মাটি হবে বেলে মাটি।
৪. যদি ছোট ছোট কাই বানানো যায় কিন্তু বড় দলা বানানো না যায় তাহলে নমুনাকৃত মাটি হবে দোআঁশ মাটি।
৫. যদি আংটি বানানো যায় তাহলে হবে এঁটেল মাটি।
৬. যদি ফাটলযুক্ত আংটি বানানো যায় তাহলে হবে দোআঁশ এঁটেল মাটি।
৭. যদি মাটি দিয়ে রিবন বানাতে গেলে ভেঙে যায় তাহলে নমুনার মাটি হবে বেলে দোআঁশ মাটি।
৮. যদি মাটি দিয়ে রিবন বানানো যায় কিন্তু আংটি বানানো না যায়- তাহলে উক্ত মাটি হবে দোআঁশ এবং পলি দোআঁশ মাটি।
পর্যবেক্ষণ : নমুনা মাটি দ্বারা ছোট ছোট কাই বানানো সম্ভব হয়েছিল কিন্তু বড় দলা তৈরি করা যায়নি। অতএব উক্ত নমুনা মাটির প্রকৃতি হলো দোআঁশ।
পরীক্ষার সতর্কতা
১. মাটি সংগ্রহের পূর্বে জমির বন্ধুরতা ও অবস্থানের প্রতি লক্ষ রেখেছি।
২. পতিত জমি বা রাস্তার ধারের গাছের নিচের জমি থেকে মাটি নিয়েছি।
৩. সঠিক গভীরতা থেকে মাটি সংগ্রহ করেছি।
৪. প্লটের মাটি ভিজা বা কর্দমাক্ত ছিল না।
৫. জমিতে সার প্রয়োগের কমপক্ষে ৫-৭ সপ্তাহ পূর্বে নমুনা সংগ্রহ করেছি।
৬. কর্ষণ স্তরের গভীরতা লাঙল যতটুকু প্রবেশ করে ততটুকুই করেছি।
৭. কক্ষতাপে নমুনা মাটি শুকিয়ে নিয়েছি।
►► পরীক্ষণ নং- ২
পরীক্ষণের নাম : মাটির পাত্রে বীজ সংরক্ষণ
তারিখ : ……………………….
মূলতত্ত্ব : গ্রামবাংলায় মাটির কলস বা মটকায় ধান বীজ সংরক্ষণ বহুল পরিচিত একটি পদ্ধতি। এভাবে সংরক্ষণ করলে ইঁদুর, পাখি, ছত্রাক, আর্দ্রতা ইত্যাদির ক্ষতি থেকে বীজ রক্ষা করা যায়।
উদ্দেশ্য : বীজ থেকে সুস্থ, সবল ও সর্বাধিক চারা উৎপাদন।
প্রয়োজনীয় উপকরণ : ১. মটকা; ২. শুকনো ধান বীজ; ৩. মাটি বা আলকাতরা; ৪. ঢাকনা।
কাজের ধারা
১. প্রথমে গম বীজ ভালো করে শুকিয়ে আর্দ্রতা ১২% এর নিচে আনব।
২. এরপর ছায়ায় রেখে ঠাণ্ডা করব।
৩. কলসির চারপাশে ভালো করে আলকাতরা লাগাব।
৪. কলসিতে ঠাণ্ডা বীজ এমনভাবে ভর্তি করব যাতে কোনো জায়গা খালি না থাকে।
৫. এরপর কলসির মুখে ঢাকনা আটকিয়ে পূর্বে কাদা করা মাটি দ্বারা ঢাকনার চারপাশ লেপে দেব যাতে ভেতরে বায়ু প্রবেশ করতে না পারে।
৬. এরপর একটি শুকনো মাচায় কলসিটি সংরক্ষণের জন্য রেখে দেব।
ফলাফল : দীর্ঘদিন বীজগুলোর কোনো ক্ষতি হলো না।
পরীক্ষার সাবধানতা:
১. মটকা অনেক পুরুত্ব দিয়ে তৈরি হতে হবে।
২. মটকার মুখ ভালোভাবে বায়ুরোধী করতে হবে।
►► পরীক্ষণ নং- ৩
পরীক্ষণের নাম : মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরি
তারিখ : ……………………….
মূলতত্ত্ব : প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি মাছকে বাইরে থেকে যে অতিরিক্ত খাদ্য দেওয়া হয় তাই সম্পূরক খাদ্য।
উদ্দেশ্য : পুষ্টিসমৃদ্ধ সম্পূরক খাদ্য প্রদানের মাধ্যমে পুকুরে মাছের সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করা।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১. নির্ধারিত খাদ্য উপাদান: ফিশমিল, চিটাগুড়া, সরিষার খৈল, আটা, চালের কুঁড়া, পানি, ভিটামিন ও খনিজ লবণ।
২. আটাপেষা মেশিন
৩. মিক্সার মেশিন
৪. চালনি মেশিন
৫. মাপন যন্ত্র
কাজের ধারা
১. প্রথমে ভালো মানসম্পন্ন নির্ধারিত খাদ্য উপাদানসমূহ সংগ্রহ করতে হবে। উপাদানসমূহ প্রয়োজনে আটাপেষা মেশিনে বা ঢেঁকিতে ভালো করে চূর্ণ বা গুঁড়া করে নিতে হবে এবং চালনি দিয়ে চেলে নিতে হবে।
২. সূত্র অনুযায়ী খাদ্য উপাদানসমূহ একটি একটি করে মেপে নিয়ে মিক্সার মেশিনে বা একটি বড় পাত্রে ভালোভাবে মেশাতে হবে।
৩. মেশানো উপাদানগুলোতে পানি দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে মণ্ড তৈরি করতে হবে।
৪. এখন মণ্ড ছোট ছোট বলের মতো তৈরি করে ভেজা বা আর্দ্র খাদ্য হিসেবে মাছকে দিতে হবে।
৫. মাছকে সরবরাহকৃত খাবার পানিতে বেশি স্থিতিশীল রাখার জন্য বাইন্ডার হিসেবে আটা বা ময়দা বা চিটাগুড় ব্যবহার করা যায়। ভেজা বা আর্দ্র খাবার প্রতিদিন প্রয়োগের পূর্বে পরিমাণমতো তৈরি করতে হবে।
পরীক্ষার সতর্কতা
১. উপাদানসমূহকে ভালো করে গুঁড়া করতে হবে।
২. উপাদানসমূহকে ভালো করে মেশাতে হবে।
►► আরো দেখো: কৃষিশিক্ষা সকল অধ্যায়ের সাজেশন
শিক্ষার্থীরা, উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে কৃষিশিক্ষা ১ম অধ্যায় ব্যবহারিক PDF ফাইলে ডাউনলোড করে নাও। কোর্সটিকার সকল আপডেট পেতে আমাদের Facebook Page এ Like দিয়ে রাখো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post