কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র ২য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে কেঁচোর ভূমিকা ব্যাপক। মাটিকে আলগা, ফাঁপা ও নরম রাখে ফলে মাটির গভীরে আলো বাতাস ও পানি সহজে প্রবেশ করতে পারে। আবার ভার্মিকম্পোস্ট তৈরিতেও ব্যবহার করা হচ্ছে কেঁচো। এর বিষ্ঠায় বহুবিধ রাসায়নিক পদার্থ, উৎসেচক, নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী নাইট্রিফাইং ও অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়াসহ অনেক ধরনের জীবাণু ও উদ্ভিদ বৃদ্ধির সহায়ক ইনডোল যৌগ উপস্থিত থাকে। ফলে মাটিতে জৈব পদার্থ যুক্ত হয় পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ে এবং মাটি উর্বর হয়।
কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র ২য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. অণুজীব সার পরিবেশ-বান্ধব কেন?
উত্তর : ফসলের ফলন বৃদ্ধি এবং মাটির ঊর্বরতা বৃদ্ধি করে অণুজীব সার রাসায়নিক সার অপেক্ষা অধিক পরিবেশবান্ধব ভূমিকা পালন করে।
রাসায়নিক উপাদানমুক্ত অণুজীব সারে প্রায় সবটুকু উদ্ভিদ কর্তৃক শোষিত হতে পারে ফলে জমির ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরশীলতা কমে। অণুজীব সারে ক্ষতিকর কোনো উপাদান থাকে না এবং উৎপাদিত ফসলেও কোনো ক্ষতিকারক উপাদান থাকে না। মূলত ক্ষতিকর উপাদান না থাকা এবং রাসায়নিক সার কম প্রয়োজন হওয়ায় অণুজীব সার পরিবেশ বান্ধব।
২. জৈব পদার্থ কীভাবে মাটির ভৌত গুণাবলি উন্নত করে?
উত্তর : পচা আবর্জনা, সবুজ সার, গোবর, খৈল, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ‘ইত্যাদিকে জৈব পদার্থ বলা হয়। মাটির উর্বরতা এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে জৈব পদার্থের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ পদার্থটিকে বলা হয় মাটির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জৈব পদার্থ মাটির অণুজীবগুলোকে ক্রিয়াশীল করে, পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায়, মাটিতে হিউমাস সৃষ্টি করে যা মাটির উর্বরতার জন্য খুবই দরকারি। এভাবে জৈব পদার্থ মাটির গঠনকে উন্নত করার মাধ্যমে মাটির ভৌত গুণাবলি উন্নত করে।
৩. ভূমিক্ষয় মৃত্তিকায় কী প্রভাব ফেলে?
উত্তর : ভূমিক্ষয়ের কারণে মাটি থেকে কর্দমকণা, হিউমাস, জৈব পদার্থ প্রভৃতি অপসারণের ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। যার ফলে উদ্ভিদের খাদ্যোপাদানের অপচয় ঘটে উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়। এর ফলে ভূ-পৃষ্ঠ মৃত্তিকায় অণুজৈবিক কর্মকা- স্থিমিত হয়ে যায়। অতিরিক্ত ভূমিক্ষয়ের প্রভাবে গাছপালা মরে গিয়ে মাটি মরুভূমিতে রূপ নিতে পারে।
৪. সবুজ সার বলতে কী বোঝ?
উত্তর : শিম জাতীয় উদ্ভিদকে নির্দিষ্ট বয়সে সবুজ ও সতেজ অবস্থায় চাষের মাধ্যমে মাটির নিচে ফেলে পচানোর ব্যবস্থা করলে যে জৈব পদার্থসমৃদ্ধ বস্তুর সৃষ্টি হয় তাকে সবুজ সার বলে। সবুজ সার হিসেবে ব্যবহৃত উদ্ভিদগুলো হচ্ছে- ধইঞ্ঝা, শণ, বরবটি, ইপিল-ইপিল, মুগ, কলাই, অড়হর, খেসারি, সয়াবিন, আলফা আলফা ইত্যাদি। সবুজ সার জমিতে জৈব পদার্থ ও নাইট্রোজেনের যোগান বাড়ায়।
৫. মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে কেঁচোর ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে কেঁচোর ভূমিকা ব্যাপক। মাটিকে আলগা, ফাঁপা ও নরম রাখে ফলে মাটির গভীরে আলো বাতাস ও পানি সহজে প্রবেশ করতে পারে। আবার ভার্মিকম্পোস্ট তৈরিতেও ব্যবহার করা হচ্ছে কেঁচো। এর বিষ্ঠায় বহুবিধ রাসায়নিক পদার্থ, উৎসেচক, নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী নাইট্রিফাইং ও অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়াসহ অনেক ধরনের জীবাণু ও উদ্ভিদ বৃদ্ধির সহায়ক ইনডোল যৌগ উপস্থিত থাকে। ফলে মাটিতে জৈব পদার্থ যুক্ত হয় পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ে এবং মাটি উর্বর হয়।
৬. মাটির pH জানা প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মাটির pH হলো মাটিতে হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্বের ঋণাত্মক লগারিদম। এটি মাটির একটি রাসায়নিক ধর্ম যা এর উর্বরতাকেও নির্দেশ করে। সব মাটিতে সব ফসল ভালো হয় না। মাটির pH মানের (অম্লতা, ক্ষারকতা ও নিরপেক্ষতা) ওপর কোন ফসল ভালো জন্মাবে তা নির্ভর করে। কোন ফসল অম্লীয় মাটিতে ভালো জন্মে, যেমন- চা, কফি, লেবু ইত্যাদি। আবার কোন ফসল ক্ষারীয় মাটিতে ভালো জন্মে, যেমন নারিকেল, সুপারি, আখ ইত্যাদি। তবে অধিকাংশ ফসলই নিরপেক্ষ মাটিতে ভালো জন্মে। তাই মাটির pH মান জেনে সেই অনুযায়ী ফসল চাষ করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ কারণেই মাটির জানা pH জরুরি।
৭. মাটির বুনট বলতে কী বোঝ?
উত্তর : মাটির কণাসমূহ বিভিন্ন আকারের। যেমন- বালিকণা বড়, পলিকণা মাঝারি ও কর্দমকণা ছোট। মাটির কণাসমূহের বিভিন্ন আকারই হচ্ছে বুনট। মাটির একক কণার পারস্পরিক অনুপাত দ্বারা সৃষ্ট স্থূলতা বা সূক্ষ্মতাকে মাটির বুনট বলে। অর্থাৎ মাটির বালি, পলি ও কদম কণার তুলনামূলক আকার বা শতকরা অনুপাতকে মাটির বুনট বলে।
৮. মৃত্তিকা ও ফসল উৎপাদনে পানির ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মৃত্তিকা ও ফসল উৎপাদনে পানির ভূমিকা নিম্নরূপ :
১. মাটির জৈবিক ও অনুজৈবিক কার্যাবলি বৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রণ করে।
২. মাটির তাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. উদ্ভিদের কোষের সজীবতা রক্ষা করে।
৪. ফসলের গুণগতমান ও ফলন বাড়ায়।
৯. মাটির ক্ষারত্ব বলতে কী বোঝ?
উত্তর : মাটির দ্রবণে হাইড্রোক্সিল আয়নের (OH) ঘনত্ব বেশি হলে মাটিতে ক্ষারত্বের সৃষ্টি হয় অর্থাৎ কোনো মাটির অম্লমান ৭-এর বেশি হলে ঐ মাটিতে ক্ষারত্ব দেখা দেয়। ক্ষারত্ব সৃষ্টির জন্য হাইড্রোক্সিল আয়নের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষারজ উপাদান সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে। হাইড্রোক্সিল আয়নের সঙ্গে ক্ষারজ এসব উপাদান মিশে ক্ষারত্ব বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ মাটির
১০. ভূমি সংরক্ষণ কেন করা হয় ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার নামই ভূমি সংরক্ষণ। নিম্নলিখিত কারণে ভূমি সংরক্ষণ করা হয়-
i. গাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান মাটিতে সংরক্ষণের জন্য।
ii. মাটির উর্বরতা ও উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য।
iii. ফসলের গোড়া শক্তভাবে মাটিতে আটকে রাখার জন্য।
iv. অতিরিক্ত সারের প্রয়োজনীয়তা কমে।
v. মাটির অণুজীবের কার্যাবলি স্বাভাবিক রাখার জন্য।
আরো দেখো: কৃষিশিক্ষা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
উপরে দেয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র ২য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post