কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র ১ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : চিংড়ির পোনা সহজলভ্য, অল্প বিনিয়োগেই চিংড়ির খামার গড়ে তোলা যায় এবং সারা বছর চিংড়ি চাষ করা যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে বর্তমানে হেক্টরপ্রতি ফলন ৪৫০ কেজি থেকে ৬০০ কেজিতে উন্নীত করা সম্ভব।
আমাদের দেশে মাছ রপ্তানি আয়ের শতকরা ৫৮ ভাগ আসে চিংড়ি থেকে। চিংড়ির চাষ করে চাষির আয় ও কর্মসংস্থান ৩০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল ।
কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র ১ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : কোনো পুকুর বা জলাশয় হতে কম সময়ে অধিক মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যে যথাযথভাবে পুকুর প্রস্তুতকরণ, প্রজাতিভিত্তিক সঠিক সংখ্যক ও স্বাস্থ্যবান পোনা মজুদ, নিয়মিত সার প্রয়োগ ও পরিমিত সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ এবং পানির গুণাগুণ নিয়ন্ত্রণ ও উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাছ চাষ করাকে নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ বলে।
এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের ফলে অল্প জায়গায় ও কম সময়ে অধিক উৎপাদনের মাধ্যমে লাভবান হওয়া যায়।
২. মাছের সম্পূরক খাবার বলতে কী বুঝ?
উত্তর : অধিক উৎপাদনের জন্য প্রাকৃতিক খাদ্য যোগানের পাশাপাশি পুকুরের বাইরে থেকে মাছকে যে খাবার সরবরাহ করা হয় তাকে মাছের সম্পূরক খাদ্য বলে।
জীবনধারণ, শরীর গঠন ও বৃদ্ধির জন্য মাছ জলজ পরিবেশ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু প্রাকৃতিক খাদ্যে পরিপূর্ণ পুষ্টি সাধন হয় না। তাই প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য হিসেবে চাউলের কুঁড়া, গমের ভুসি, সরিষার খৈল ইত্যাদি প্রয়োগ করা হয়।
৩. নাইলোটিকা মাছ চাষের অপকারিতা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : নাইলোটিকার পোনা ছাড়ার ৩ মাসের মাথায় এরা প্রজনন ঘটায়। কাজেই নাইলোটিকার অতি প্রজনন একটি মারাত্মক সমস্যা।
পুকুরে স্বাভাবিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে খর্বাকার নাইলোটিকায় পুকুর ভরে যায় এবং মোট উৎপাদন ৫০-৭০ শতাংশে নেমে যায়। বিশেষ করে অব্যাহত চাষ পদ্ধতিতে এরূপ সংখ্যা বৃদ্ধি প্রকট সমস্যা।
৪. মাছ টিনজাতকরণের ২টি উদ্দেশ্য লেখো।
উত্তর : টিনজাতকরণের মাধ্যমে সাধারণত মাছ ৩-৪ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। মাছ টিনজাতকরণের উদ্দেশ্যে হলো-
১. উচ্চতাপ প্রয়োগের মাধ্যমে সকল ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা এবং তাদের এনজাইমের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়া।
২. মাছ বা খাদ্যের দেহস্থিত এনজাইমকে নষ্ট করার মাধ্যমে রাসায়নিক বিক্রিয়াজনিত পচন রোধ করা।
৫. কেন এবং কীভাবে মাছে পচন ধরে তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : পানি থেকে আহরণের ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যেই পচন ক্রিয়া শুরু হয়।
মাছের দেহের বিভিন্ন অংশে ব্যাকটেরিয়া থাকে। মাছ মরে গেলে এ ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়া প্রতিরোধ করতে পারে না। ফলে মাছে পচন ধরে, মাছ মারা যাওয়ার পরে নিঃসৃত এনজাইমের প্রভাবে মাছের কোষ ভেঙে যায় এবং মাছ পচতে শুরু করে। মাছ মারা যাওয়ার পর রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে কোষ ভেঙে যায় এবং মাছ পচতে শুরু করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে মাছ দ্রুত পচে। পরিবহনের সময় বরফ গলে বা অন্য কোনো ত্রুটি হলে মাছ পচে যায়।
৬. চিংড়ি চাষ কেন লাভজনক? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে চিংড়ির চাহিদা ও বাজারদর বেশি থাকায় চিংড়ি চাষ লাভজনক।
চিংড়ির পোনা সহজলভ্য, অল্প বিনিয়োগেই চিংড়ির খামার গড়ে তোলা যায় এবং সারা বছর চিংড়ি চাষ করা যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে বর্তমানে হেক্টরপ্রতি ফলন ৪৫০ কেজি থেকে ৬০০ কেজিতে উন্নীত করা সম্ভব। আমাদের দেশে মাছ রপ্তানি আয়ের শতকরা ৫৮ ভাগ আসে চিংড়ি থেকে। চিংড়ির চাষ করে চাষির আয় ও কর্মসংস্থান ৩০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল ।
৭. শুঁটকিকরণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : সূর্যালোক বা আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে (যেমন- সোলার ড্রায়ার) মাছকে শুকিয়ে সংরক্ষণ করাকে শুঁটকিকরণ বলা হয়। শুঁটকিকরণ পদ্ধতিতে তাজা মাছ থেকে ৮০–৮৫% পানি অপসারণ করা হয়, ফলে জীবাণু সংক্রমণ, বংশবৃদ্ধি এবং মাছের পচন ঘটাতে পারে না। ছোট মাছ শুঁটকিকরণের ক্ষেত্রে পরিষ্কার করা মাছকে ১০% লবণ পানিতে ১৫-২০ মিনিট ডুবিয়ে রেখে জীবাণুমুক্ত করা হয়। এগুলোকে পরবর্তীতে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করা হয়। বড় মাছ পরিষ্কার করার পর মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে কাটা হয়। এরপর রোদে শুকানো হয়। মাছ শুঁটকি করতে সর্বোচ্চ ১০ দিন সময় লাগে।
৮. উপকূলীয় অঞ্চল কেন চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ভূমির অভ্যন্তরে যতদূর পর্যন্ত সমুদ্রের পানি প্রবেশ করে তাকে উপকূলীয় অঞ্চল বলে ধরা হয়। চিংড়ি প্রধানত লোনা বা আংশিক লোনা পানিতে ভালো হয়। বাগদা চিংড়ি স্বাদু পানিতে অল্প সময় বেঁচে থাকতে পারে। অপরদিকে, গলদা চিংড়ির কোনো কোনো প্রজাতি আংশিক লোনা, আবার কোনো কোনো প্রজাতি স্বাদু পানিতে জন্মাতে পারে। তবে সকল গলদারই জীবনচক্রের প্রাথমিক পর্যায়ে লোনা পানির প্রয়োজন হয়। এজন্য, উপকূলীয় অঞ্চল চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী।
৯. টিনজাতকরণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : কোনো পচনশীল খাদ্যদ্রব্যকে সম্পূর্ণরূপে বায়ুশূন্য নিরাপদ পাত্রে আবদ্ধ অবস্থায় এবং সুনির্দিষ্ট তাপ ও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করে সংরক্ষণ করার পদ্ধতিকে টিনজাতকরণ বলে।
সাধারণত টিনজাতকরণের মাধ্যমে মাছ ৩-৪ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে উচ্চতাপ (২৫০° ফা. বা ১২১°সে তাপমাত্রায় ৫০-৬০ মিনিট) প্রয়োগ করে সকল ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস ও তাদের এনজাইমের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেওয়া হয়। ফলে খাদ্যদ্রব্যের রাসায়নিক বিক্রিয়াজনিত পচন রোধ হয়।
১০. মাছ চাষে শুধু প্রাকৃতিক খাদ্য যথেষ্ট নয় কেন?
উত্তর : দেহের বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার জন্য মাছ পুকুরের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ফাইটোপ্লাংকটন (উদ্ভিদকণা) ও জু-প্লাংকটন (প্রাণীকণা) খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু, মাছ চাষের ক্ষেত্রে অধিক উৎপাদন পাওয়ার জন্য পুকুরে অধিক ঘনত্বে পোনা ছাড়া হয়। এ অবস্থায় শুধু প্রাকৃতিক খাদ্য মাছের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটাতে পারে না। এমনকি সার প্রয়োগ করে প্রাকৃতিক খাদ্য বৃদ্ধি করলেও তা যথেষ্ট হয় না।
প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য দিতে হয়। সম্পূরক খাদ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের মাত্রা চাহিদা অনুযায়ী থাকে, যা মাছের দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি ঘটিয়ে অধিক মুনাফা অর্জনে সহোযোগিতা করে। অর্থাৎ, অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক উৎপাদন পাওয়ার জন্য মাছ চাষে শুধু প্রাকৃতিক খাদ্য যথেষ্ট নয়।
আরো দেখো: কৃষিশিক্ষা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
উপরে দেয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র ১ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post