কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র ৩য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : শর্করা জাতীয় খাদ্য হজমে সমস্যা হলে রক্তে এসিটোন বা কিটোন নামক বিষাক্ত দ্রব্য জমা হয়ে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এই বিষক্রিয়ার ফলে কিটোসিস রোগ হয়। বাচ্চা প্রসবের পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ রোগ হয়। এ রোগে আক্রান্ত পশুর কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দেখা দেয়। এছাড়া ওজন কমে যায়, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয় এবং মাংসপেশীর খিঁচুনিসহ আরও অনেক লক্ষণ দেখা দেয়।
কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র ৩য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. গাছের ট্রেনিং এর উপকারিতা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : কোনো গাছকে একটি উপযুক্ত আকার, আকৃতি ও কাঠামোদানের জন্য গাছের ডাল, শাখার সংখ্যা ও অবস্থান নিয়ন্ত্রণই হলো বৃক্ষের ট্রেনিং। ট্রেনিং করলে গাছের কাঠামো শক্ত হয় ফলে গাছ ঝড়-তুফানে ভেঙে পড়ে না। এছাড়া, ট্রেনিং উন্নতমানের ব্যবহারযোগ্য কাঠের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে নির্দিষ্ট স্থানে বেশি সংখ্যক গাছ লাগানো যায়।
২. আয় বৃদ্ধিতে গবাদিপশুর ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : গবাদিপশু আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গবাদিপশুর মাংস ও মাংসজাত দ্রব্য এবং দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য বিক্রি করে প্রচুর আয় করা যায়। গবাদিপশু বিক্রি করে এককালীন অনেক টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে পশুসম্পদ হতে প্রাপ্ত কাঁচামাল ব্যবহার করা হয় যা, পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে আয় বৃদ্ধি করে। এভাবে, গবাদিপশু আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
৩. গ্রেডিং আপ বা ক্রমোন্নতি বলতে কী বোঝ?
উত্তর : উন্নত জাতের পশুর সাথে অনুন্নত জাতের পশুর প্রজননের পর প্রজন্ম ধরে প্রজনন ঘটিয়ে ক্রমাগত পশুর জাতের উন্নয়ন সাধনকে বলে ক্রমোন্নতি বা গ্রেডিং আপ। সাধারণত বিদেশি ভালো গুণসম্পন্ন বিশুদ্ধ জাতের ষাঁড়ের সাথে দেশি গাভির ৭ প্রজন্ম পর্যন্ত প্রজনন করানো হলে প্রায় বিশুদ্ধ ও উন্নত গুণসম্পন্ন পশু তৈরি হয়। ক্রমোন্নতি প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে উন্নত জাতের পশুর বৈশিষ্ট্য/গুণাগুণ সহজেই নতুন প্রজন্মের পশুর মধ্যে আনা সম্ভব হয়।
৪. হে তৈরির জন্য কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে?
উত্তর : সবুজ ঘাসে ফুল আসার সময় একে রোদে শুকিয়ে পশুর জন্য তৈরিকৃত খাদ্যই হলো ‘হে’ । হে তৈরির সময় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
হে-এর পাতা ঝরা রোধ করতে হয় কারণ পাতা কা-ের চেয়ে অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ। বৃষ্টির পানিতে ভেজানো যাবে না। জলীয় অংশের পরিমাণ ১৫-২০% এর বেশি হওয়া যাবে না। ‘হে’ তৈরির জন্য ফুল আসার সময় কা- নরম থাকা অবস্থায় ঘাস কাটতে হয়। ঘাসে শিশির থাকা অবস্থায় কাটা যাবে না। শুকানোর সময় পাতা যেন চূর্ণ-বিচূর্ণ না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হয়।
৫. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গৃহপালিত পশুর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পশুজাত পণ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আমাদের দেশ থেকে গরু, মহিষ ও ছাগলের চামড়া রপ্তানি করা হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য হতে মোট দেশজ উৎপাদনে পশুসম্পদের অবদান ৪.৩১%। পশু-পাখির খাদ্য এবং সার হিসেবে শিং, ক্ষুর ও হাড়ের ব্যবহারের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ডেইরি খামারে এর চাহিদা রয়েছে। পশুর রক্ত শুকিয়ে খাদ্য তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এছাড়াও দুধজাত দ্রব্যাদি এবং মাংস হিমাগারে বা টিনজাত করে বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে।
৬. ছাগলের স্টল ঘর বলতে কী বোঝ?
উত্তর : প্রতিটি ছাগলকে যে ঘরে পৃথক পৃথক খোপে বা কক্ষে রাখা হয় তাকে স্টল ঘর বলে।
লে ঘরে দুগ্ধবতী, গর্ভবতী ও প্রসবকালীন সময়ে ছাগী খুব আরামে থাকতে পারে। প্রতিটি উন্নত দুগ্ধবতী ছাগীর জন্য ২০ ৩০ বর্গফুট এবং দেশি ছাগীর জন্য ১০-১১ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন। পাঠার স্টল ঘর ছাগীর স্টল ঘর থেকে দূরে রাখা হয়। প্রতিটি স্টলে আলো-বাতাস থাকা উচিত। স্টল ঘরের পিছনে একটু ঢালু থাকা ভালো যাতে মলমূত্র অপসারণের জন্য ড্রেনের ব্যবস্থা করা সহজ হয়।
৭. কিটোসিস রোগ কেন হয়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : গবাদিপশুর রক্তে গ্লুকোজের অভাব হলে কিটোসিস রোগ হয় । শর্করা জাতীয় খাদ্য হজমে সমস্যা হলে রক্তে এসিটোন বা কিটোন নামক বিষাক্ত দ্রব্য জমা হয়ে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এই বিষক্রিয়ার ফলে কিটোসিস রোগ হয়। বাচ্চা প্রসবের পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ রোগ হয়। এ রোগে আক্রান্ত পশুর কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দেখা দেয়। এছাড়া ওজন কমে যায়, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয় এবং মাংসপেশীর খিঁচুনিসহ আরও অনেক লক্ষণ দেখা দেয়।
৮. মহিষের খাদ্য ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনার প্রধান বিবেচ্য বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : মহিষের খাদ্য ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনা প্রধানত দেহের ওজন, জাত ও পালন উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে বিবেচিত হয়ে থাকে। সঠিক মাত্রায় উৎপাদন পেতে হলে মহিষের জন্য পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য জরুরি। এদের খাদ্য পুষ্টি ব্যবস্থাপনার প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলো আঁশযুক্ত ও দানাদার খাদ্য অন্তর্ভুক্তকরন। সাধারণত প্রতি ১০০ কেজি ওজনের একটি মহিষের জন্য ২.০-২.৫ কেজি শুষ্ক পদার্থের প্রয়োজন। মোট শুষ্ক পদার্থের তিন ভাগের দু’ভাগ আঁশযুক্ত খাদ্য এবং তিন ভাগের এক ভাগ দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। আবার, মোট আঁশযুক্ত খাদ্যের তিন ভাগের এক ভাগ তাজা আঁশযুক্ত খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৯. পশুরস্নেহ জাতীয় খাদ্যোপাদানের কাজ লেখো।
উত্তর : প্রাণীদেহে শক্তি উৎপাদনকারী খাদ্য উপাদান হলো স্নেহ পদার্থ বা চর্বি।
এই পদার্থ পশুর চামড়ার মসৃণতা রক্ষা ও চর্মরোগ প্রতিরোধ করে, শরীরে তাপ উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ করে। মাংসের স্বাদ ও উপযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পশমের নিচে মোমের মতো আবরণ তৈরি করে। প্রাণিকোষ গঠনে সাহায্য করে এবং ভিটামিন ‘এ’, ‘ডি’, ‘ই’ ও ‘কে’ ধারণ করে প্রাণীদেহে সরবরাহ করে।
১০. ছাগলের রোগ দমনে গৃহীত পদক্ষেপগুলো কী কী?
উত্তর : ছাগলের রোগ দমনে কিছু বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। রোগ দমনের জন্য ছাগলের ঘর, খাদ্য ও পানির পাত্র জীবাণুনাশক ওষুধ দিয়ে ধুতে হয়। বিভিন্ন বয়স অনুযায়ী ছাগলকে আলাদা আলাদা ঘরে পালন করতে হয়। কোনো ছাগলের মধ্যে অসুস্থতার লক্ষণ দেখামাত্র তাকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। মৃত ছাগলকে খামার হতে দূরে গর্ত করে মাটি চাপা দিতে হয় এবং ছাগলকে নিয়মিত কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হয়।
আরো দেখো: কৃষিশিক্ষা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
উপরে দেয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র ২য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post