কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বলতে কৃষিতে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি, যেমন-পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, থ্রেসার মেশিন ইত্যাদি ব্যবহার করাকে বোঝায়। বর্তমানে অধিকাংশ কৃষকই জমি চাষে লাঙল বা পশুর পরিবর্তে ট্রাক্টর ব্যবহার করেন।
কারণ একটি লাঙল দিয়ে দিনে যেখানে ১-২ বিঘা জমি চাষ করা যায়, সেখানে একটি ট্রাক্টর দিয়ে প্রায় ২০ বিঘা জমি চাষ করা যায়। এক সময় কৃষকরা হাত দিয়ে বীজ বপন করত, কিন্তু বর্তমানে বীজ বপনের কাজে ড্রাম সীডার ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ, কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার করাই হলো কৃষি যান্ত্রিকীকরণ।
কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মৎস্য সম্পদ কীভাবে ভূমিকা রাখে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : দেশে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে দরিদ্র মৎস্যজীবীদের আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে অতিরিক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ১১% লোক মাছ উৎপাদন, আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের সাথে জড়িত (সূত্র : মৎস অধিদপ্তর, ২০১৭)। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিগত চার বছরে এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৬ লক্ষাধিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি বা বেসরকারিভাবে মাছের উৎপাদন বাড়িয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে হ্যাচারি, নার্সারি, খামার ইত্যাদি স্থাপনের মাধ্যমেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাই বলা যায়, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মৎস্য সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. পশুকে সুষম খাদ্য প্রদানের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : যে খাদ্যে পশুর প্রয়োজনীয় সকল অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান।
উপযুক্ত পরিমাণে ও অনুপাতে থাকে তাকে পশুর সুষম খাদ্য বলে। পশু সুষম খাদ্য দেওয়া হলে পশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। পশুর মাংস ও দুধ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। পশু হতে প্রাপ্ত দ্রব্যের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। কম সময়ে বড় আকারের সুস্থ ও সবল গরু পাওয়া যায়।
৩. ক্ষুদ্র ঋণ দরিদ্র ভূমিহীনদের জন্য আশির্বাদস্বরূপ- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : গ্রামীণ অর্থনৈতিক কাজের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্পপরিমাণে যে ঋণ দেওয়া হয় তাকে ক্ষুদ্র ঋণ বলে।
দেশে এমন অনেক দরিদ্র মানুষ আছে যারা অল্প পরিমাণ অর্থ ঋণ করার যোগ্যতা রাখেন। তারা সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করে মহাজনের উচ্চ সুদের ঋণের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন। ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করে গ্রামের দরিদ্র মহিলারা ছাগল, ভেড়া বা গরু কিনে উৎপাদিত মাংস এবং দুধ বিক্রি করতে পারেন। এভাবে তারা তাদের নিজস্ব কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারেন। তাই বলা যায়, ক্ষুদ্র ঋণ দরিদ্র ভূমিহীনদের জন্য আশির্বাদস্বরূপ।
৪. সুষম খাদ্যের অভাব এদেশে পোল্ট্রি শিল্পের অন্যতম সমস্যা-ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : যে খাদ্যে শর্করা, আমিষ, স্নেহ পদার্থ, ভিটামিন, পানি ও খনিজ লবণ এ ছয়টি উপাদান প্রয়োজনীয় পরিমাণে ও আনুপাতিক হারে বিদ্যমান থাকে তাকে সুষম খাদ্য বলে।
হাঁস-মুরগি পালনে মোট ব্যয়ের ৬৫-৭০ ভাগ ব্যয় হয় খাদ্য বাবদ। আর এ খাদ্য গুণগত মানসম্পন্ন না হলে হাঁস-মুরগির দৈহিক বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যাহত হবে। কিন্তু বাংলাদেশে হাঁস-মুরগির খাদ্য উৎপাদনের পর্যাপ্ত খাদ্যমিল প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে এসব খাদ্যের প্রাপ্যতা পর্যাপ্ত নয় এবং দামও অনেক বেশি। এছাড়া প্রাপ্ত খাদ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভেজাল মিশ্রিত থাকে। তাই সুষম খাদ্যের অভাব বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের অন্যতম একটি সমস্যা।
৫. কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বলতে কৃষিতে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি, যেমন-পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, থ্রেসার মেশিন ইত্যাদি ব্যবহার করাকে বোঝায়।
বর্তমানে অধিকাংশ কৃষকই জমি চাষে লাঙল বা পশুর পরিবর্তে ট্রাক্টর ব্যবহার করেন। কারণ একটি লাঙল দিয়ে দিনে যেখানে ১-২ বিঘা জমি চাষ করা যায়, সেখানে একটি ট্রাক্টর দিয়ে প্রায় ২০ বিঘা জমি চাষ করা যায়। এক সময় কৃষকরা হাত দিয়ে বীজ বপন করত, কিন্তু বর্তমানে বীজ বপনের কাজে ড্রাম সীডার ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ, কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার করাই হলো কৃষি যান্ত্রিকীকরণ।
৬. কৃষি উৎপাদন সমবায় সমিতি বলতে কী বোঝ?
উত্তর : কৃষি উৎপাদনে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত সমবায়কে কৃষি উৎপাদন সমবায় সমিতি বলে।
উৎপাদন বৃদ্ধি, সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন, স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ (বীজ, সার, কীটনাশক প্রভৃতি) সরবরাহ, পশু সম্পদ উন্নয়ন প্রভৃতি উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য এই প্রকার সমবায় সমিতি গঠিত হয়। যেমন— ফসল, শাকসবজি, পোল্ট্রি, গবাদিপশু উৎপাদন সমবায় সমিতি।
৭. ফসল খামার বলতে কী বোঝ?
উত্তর : ফসল খামার হলো ফসল উৎপাদন ব্যবস্থার একটি স্থাপনা যেখানে খামারের বিভিন্ন উপাদানের সুষ্ঠু সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কৃষিপণ্য উৎপাদন করা হয়।
ফসল খামার বাড়ির আশপাশের খালি জায়গা, উঁচু ভিটা, মাঝারি নিচু জমিতেও করা যায়। অভিজ্ঞ কৃষকের পরামর্শ নিয়ে ঋতুভিত্তিক সারা বছরের চাষ পরিকল্পনা করলে প্রায় সারা বছরই এই সকল খামার থেকে ফসল পাওয়া যেতে পারে, যা থেকে কৃষক আয় করতে পারে।
৮. ফার্মিং এর মূল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : খামারকরণ বা ফার্মিং একটি উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান, যা প্রাকৃতিক উৎসসমূহ ব্যবহার করে ফসল, মাছ, পাখি, পশু প্রভৃতি উৎপাদন করে।
ফার্মিং এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উৎপাদিত পণ্য স্বল্পমূল্যে উৎপাদন করে অধিক মূল্যে বিক্রয় করা। অর্থাৎ, ফার্মিং হচ্ছে এক ধরনের ব্যবসা। এ ব্যবসায় লাভ করার উদ্দেশ্যে খামারে সবসময় লাভজনক হয় এমন পণ্য নির্বাচন, উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানো, যথাসময়ে ফসল লাগানো, পর্যাপ্ত পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ এবং গুণগত মান উন্নয়ন করা যায়।
৯. বিভিন্ন উৎস থেকে দরিদ্র মানুষ ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করে কেন?
উত্তর : বাংলাদেশের পল্লী এলাকার মানুষ যেসব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত তার মধ্যে কৃষিকাজ, পশুপালন, মৎস্য চাষ, কুটির শিল্প ও ইত্যাদি অন্যতম। এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য প্রয়োজন অর্থসংস্থান। পল্লীর বেশিরভাগ দরিদ্র মানুষের পক্ষে নিজস্ব উৎস স থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা সম্ভব হয় না বিধায় তারা ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করে।
১০. কৃষি সমবায় বলতে কী বোঝ?
উত্তর : কৃষিকাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে সীমিত সংখ্যক কৃষক একত্রিত হয়ে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট আইনের আওতায় যে সমবায় গড়ে তোলে তাকে কৃষি সমবায় বলে।
ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন, স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ (বীজ সার, কীটনাশক ইত্যাদি) সরবরাহ, পশু সম্পদের উন্নয়ন প্রভৃতি উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য কৃষি সমবায় গড়ে তোলা হয়। এছাড়া কৃষি সমবায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও ন্যাযমূল্যে বিক্রির মাধ্যমে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চত করে।
আরো দেখো: কৃষিশিক্ষা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
উপরে দেয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post