শিক্ষার্থীরা, কোর্সটিকায় আজকে আমি তোমাদের সাথে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ রচনা এই বিষয়টির ওপর আলোচনা করব। এই রচনাটি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান, গণঅভ্যুত্থান ২০২৪, ছাত্রজনতা গণঅভ্যুত্থান এবং জুলাই বিপ্লব ২০২৪ রচনা সহ বিভিন্ন নামে পরীক্ষায় আসতে পারে। তবে এখানে ভয়ের কিছুই নেই, যেকোন নামেই আসুক না কেন, মূল বিষয়বস্তু একই থাকবে। শুধুমাত্র নামটা পরিবর্তন করে ভেতরের আলোচনাগুলো লিখে দিলেই হবে।
জুলাই বিপ্লব ২০২৪ রচনা
অথবা—চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান
অথবা—গণঅভ্যুত্থান ২০২৪
অথবা—ছাত্রজনতা গণঅভ্যুত্থান
অথবা—জুলাই বিপ্লব
ভূমিকা
২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন হলো বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রচলিত ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত একটি আন্দোলন। ২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করার পর কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ সালে নতুনভাবে আলোচনায় আসে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে তোলা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে সংগঠনটি এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়, যা পরবর্তীতে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়।
আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
২০১৮ সালে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়, যা ছাত্রদের মধ্যে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। এই আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য ছিল প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে চলমান কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতা এবং শিক্ষার্থীদের চাপে, সরকার ৪৬ বছর ধরে চলা এই কোটাব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেয়। তবে, ২০২১ সালে এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে সাতজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। অবশেষে, ২০২৪ সালের ৫ জুন, হাইকোর্ট কোটাব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে। রায় প্রকাশের পরপরই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।
জুলাই বিপ্লব ২০২৪ বাংলাদেশ pdf
জুলাই মাসে আন্দোলন আরও তীব্র রূপ নেয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা “বাংলা ব্লকেড” সহ অবরোধ কর্মসূচি চালায়। এই সময়ে আন্দোলন দমাতে পুলিশের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের ফলে সংঘর্ষ ঘটে এবং রংপুরে আবু সাঈদ নামে একজন শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এই ঘটনাটি আন্দোলনকে আরও জোরালো করে এবং দেশজুড়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এরপর ঢাকাসহ সারাদেশে আন্দোলন সহিংহ হয়ে উঠে ও বিভিন্ন জায়গায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মতো সংগঠনের হামলায় অনেক হতাহত হয়। ফলে পরিস্থিতী নিয়ন্ত্রণে আনতে সারাদেশে কারফিউ জারি ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। আন্দোলন এত তীব্রতর হতে শুরু করে যে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়সহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সরকার কর্তৃক গণহত্যা
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়ে সরকার পুলিশ এবং ছাত্রলীগ বাহিনী দিয়ে ছাত্র-জনতা গণতহত্যা শুরু করে। এসময়ে ছাত্র থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারী, কেউ হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পায়নি। এমনকি শিশুরাও পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ হারায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির বিবৃতিমতে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত ১৫৮১ জন নিহত হয়েছে। আন্দোলনে ১২৭ শিশু প্রাণ হারায়, যা মোট মৃত্যুর ১৭ শতাংশ। শহীদ আবু সাঈদ এবং মীর মুগ্ধ নামে দুই আন্দোলনকারীর নির্মম মৃত্যু জাতির বিবেককে নাড়িয়ে দেয়।
এক দফা দাবী
আওয়ামীলীগ সরকারের দমন-নিপীড়ণ গণহত্যায় রূপ নিলে দেশের ছাত্র-জনতা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবী ঘোষণা করেন। এসমেয় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয়। ফলে “দফা এক, দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ” এবং “স্টেপ ডাউন হাসিনা” সহ বিভিন্ন শ্লোগানে রাজপথ কম্পিত হয়ে ওঠে। এই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আপামর জনতা অংশগ্রহণ করা ও ব্যাপক গণহত্যার মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন নিশ্চিত হওয়ায় একে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলেও অভিহিত করা হয়।
আওয়ামীলীগ সরকারের পতন
ঢাকায় আন্দোলন শুরু হলে সারা দেশ থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা আন্দোলনে যোগ দেয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাওয়ের সিদ্ধান্ত নেয়, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহারে রাজধানী আতঙ্কের শহরে পরিণত হয়। পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ্জামান শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। এক পর্যায়ে, গণহত্যার বিচারের ভয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। এই আন্দোলনের সফল সমাপ্তি দেশের জনগণের জন্য নতুন আশার সঞ্চার করে, এবং এটিকে জাতির দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে অভিহিত করা হয়।
উপসংহার
কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করে। সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়, যা সরকার বিরোধী রূপ নেয়। পুলিশের বর্বর হামলা এবং ব্যাপক হত্যাকাণ্ড আন্দোলনকে আরও উসকে দেয়, এবং এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে গণজাগরণ তৈরি হয়, যা দ্বিতীয় স্বাধীনতার নামে অভিহিত হয়। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি হয় যে, কোনো স্বৈরাচারী সরকারই জনগণের ন্যায দাবীর মুখে টিকে থাকতে পারে না।
আরও দেখো: অন্যান্য রচনার পিডিএফ সংগ্রহ করো
আশা করছি, জুলাই বিপ্লব ২০২৪ রচনা তোমাদের ভালোভাবে বোঝাতে পেরেছি। শিক্ষার্থীরা, একটা বিষয় খেয়াল রাখবে, ‘সরকার কর্তৃক গণহত্যা’ অংশে আমি উল্লেখ করেছি, এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ১৫৮১ জন নিহত হয়েছে। তবে এই নিহতের এই সংখ্যাটি পরবর্তীতে আপডেট হতে পারে। কারণ, সরকার নিহতের তালিকাটি প্রতিনিয়ত আপডেট করছে। সুতরাং তোমরা সর্বশেষ আপডেট তথ্যটি জেনে সংখ্যাটি বসিয়ে দেবে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post