দেশে কোমর ব্যথার রোগীর সংখ্যা কম নয়। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কারো বা হঠাৎ করেই কোমর ব্যথা শুরু হচ্ছে কারো ক্ষেত্রে এটি স্থায়ী সমস্যা হয়ে গেছে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ডাক্তার দেখানো জরুরী। অনেকে কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
কোমর ব্যথায় সবচেয়ে বেশী ভুগে চাকরিজীবী মানুষেরা। কেননা, সারাদিন একই ডেস্কে বসে থাকার ফলে শিরদাঁড়ায় অধিক চাপ পড়ে। তার পাশাপাশি শরীরচর্চা না করা, অলস জীবনযাপন, ওজন বেড়ে যাওয়া, একটানা দাঁড়িয়ে থাকা বা হাটার কারণেও কোমর ব্যথা হতে পারে।
কোমর ব্যথাসহ শরীরের বিভিন্ন সমস্যায় মূল কারণ হচ্ছে আমার অস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন। আমরা যদি আমাদের লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে পারি তাহলে কোমর ব্যথা সহ আরও অনেক সমস্যা হতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা
যদি, হঠাৎ করে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে তাহলে ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা করার মাধ্যমেই কোমর ব্যথা দূর করা সম্ভব। কোমর ব্যথা যদি পুরোনো হয়ে থাকে তাহলে ঘরোয়া উপায়ে কাজ করে কোমর ব্যথা হতে সাময়িক স্বত্বি পাওয়া গেলেও স্থায়ীভাবে কমানো সম্ভব নয়। কোমর ব্যথা একেবারে দূর করতে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শমতো ঔষধ খেতে হবে।
ঘরোয়াভাবে যেসকল পদ্ধতি অনুসরণ করে কোমর ব্যথা দূর করা সম্ভব–
১. কাজের ফাকে হাঁটা-হাঁটি করা: বেশীক্ষণ একই জায়গায় বসে না থাকা। একই জায়গায় বসে কাজ করার প্রয়োজন হলেও মাঝে মধ্যে হাঁটা-হাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করা।
২. কোমরে সেঁক দেওয়া: কোমর ব্যথা হলে ব্যথাযুক্ত স্থানে সেঁক দিলে স্বত্বি পাওয়া যায়। সেঁক দেওয়ার জন্য হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যথাযুক্ত স্থানে কিছুক্ষণের জন্য ধরে রাখতে হবে।
৩. নারকেল তেল ও কর্পূরের মিশ্রণ মালিশ করা: নারকেল তেল ও কর্পূর একই পাত্রে নেওয়ার পরে গরম করতে হবে। গরমকৃত তেল ঠাণ্ডা হয়ে গেলে ব্যথাযুক্ত স্থানে মালিশ করতে হবে। মুহূর্তের মধ্যে অনেকটা ব্যথা কমে যাবে।
৪. নীলগিরি তেল মালিশ করা: ইউক্যালিপটাস গাছের পাতা হতে তৈরি হয় নীলগিরি তেল। এই তেল এন্টিসেপটিক ও পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। ব্যথাযুক্ত স্থানে এই তেল মালিশ করলে আরাম পাওয়া যায়।
৫. পান পাতায়, ঘি দিয়ে সেঁক দেওয়া: কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি পদ্ধতি হচ্ছে পান পাতায় ঘি নিয়ে কোমরে সেঁক দেওয়া। পান পাতায় কিছুটা ঘি নিয়ে সেটি গরম করে কোমরের ব্যথাযুক্ত স্থানে সেঁক দিলে ব্যথা দ্রুত কমবে।
৬. সরিষার তেল ও রসুন দিয়ে মালিশ করা: শরীরে যেকোন ব্যথা কমাতে সহায়ক সরিষার তেল ও রসুনের মিশ্রণ। এটি উপাদানটি ব্যবহারের জন্য প্রথমে কিছুটা সরিষার তেল ও রসুন কুচি একত্রে করে তা গরম করতে হবে। গরমকৃত তেল ঠাণ্ডা করে ব্যাথাযুক্ত স্থানে মালিশ করতে হবে।
৭. গরম দুধ, হলুদ ও মধুর মিশ্রণ পান করা: দুধ, হলুদ ও মধু এই তিনটি উপাদানই কতটা পুষ্টিগুণসম্পন্ন তা সকলেরই জানা। রূপচর্চা হতে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় এই উপাদানটি কাজ আসে। ব্যথা কমানোর জন্য গরম দুধ, হলুদ ও অল্প মধু একত্রে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে পান করতে হবে।
৮. আদা চা পান করা: আদায় থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও পটাশিয়ামের মতো উপাদানগুলো শারীরের বিভিন্ন সমস্যায় কাজে আসে। নিয়মিত আদা চা পান করলে ব্যথাসহ শরীরের অনেক সমস্যা কমতে শুরু করবে।
শেষ কথা
উপরে কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করা হয়েছে। কোমর ব্যথায় সবগুলো পদ্ধতি একইসাথে অনুসরণ করা সম্ভব নয়। সেজন্য, হঠাৎ করে কোমরে ব্যথা শুরু হলে বিশ্রাম নিন। বিশ্রামের পাশাপাশি নীলগিরি তেল কিংবা ব্যথানাশক কোন উপাদান দিয়ে মালিশ করুন। মালিশ করা শেষ হলে গরম পানির সেঁক দিন। সম্ভব হলে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিন।
স্থায়ীভাবে কোমরব্যথা দূর করতে চাইলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, প্রতিনিয়ত শরীরচর্চা করতে হবে ও শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে হবে। তবেই স্থায়ীভাবে ব্যথা দূর করা সম্ভব।
Discussion about this post