ক্যাডেট কলেজ ভর্তি, ক্যাডেট কলেজ ভর্তি 2021, ক্যাডেট কলেজ ভর্তি গাইড pdf, ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার গাইড pdf, ক্যাডেট কলেজ ভর্তি প্রশ্ন, ক্যাডেট কলেজ ভর্তি প্রস্তুতি ২০২০, ক্যাডেট কলেজ ভর্তি ফরম ২০২০, ক্যাডেট কলেজ ভর্তি বিজ্ঞপ্তি 2021, ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ২০২১, ক্যাডেট কলেজ ভর্তি গাইড pdf download, ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস ২০২১, ক্যাডেট কলেজ সাধারণ জ্ঞান
বাংলাদেশের ১২ টি ক্যাডেট কলেজ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। মানসম্মত শিক্ষার্জনের জন্য প্রতিবছরই দেশের লাখো মেধাবীরা ক্যাডেট কলেজে ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে থাকে। সারাদেশে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় ক্যাডেট কলেজগুলোই সবার পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকে।
কারণ, চমৎকার শিক্ষা পদ্ধতি, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম, বাধ্যতামূলক শারীরিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখছে এসব প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি এখানকার শিক্ষার্থীদের কোন অতিরিক্ত কোচিং করতে হয় না কিংবা প্রাইভেট পড়তে হয় না।
গত বছর ক্যাডেট কলেজ ভর্তিযুদ্ধে ৬ শত আসনের বিপরীতে ২২ হাজার শিক্ষার্থী লড়াই করে। যা তার পূর্বের বছরের চেয়ে প্রায় দুই হাজার বেশি। প্রতিটি আসনের বিপরীতে প্রায় ৩৭ জন অংশ নেয়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে তুমুল জনপ্রিয় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিযোগিতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আর তাই ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হয়ে পড়ালেখার সুযোগ পেতে হলে ভালো ও পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির বিকল্প নেই।
কোর্সটিকায় আজ আমরা ক্যাডেট কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা প্রস্তুনি নিয়ে আলোচনা করবো। পাশাপাশি কোন কোন বিষয়গুলো ভালো করে অধ্যয়ন করতে হবে, তা উল্লেখ করবো। আমরা আশা করি, আমাদের দেয়া এই সাজেশান্সগুলো ভালোভাবে অনুসরণ করলে তোমার ভর্তি পরীক্ষায় তা অবশ্যই ফলপ্রসূ হবে।
পরীক্ষার মানবণ্টন
ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় মূলত ৭ টি বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করা হয়। এগুলো যথাক্রমে বাংলা, ইংরেজী, গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং সাধারণ জ্ঞান। বাংলার জন্য ৬০ নম্বর বরাদ্দ। ইংরেজী ও গণিতের জন্য ১০০ করে মোট ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং সাধারণ জ্ঞান মিলিয়ে মোট ৪০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। সুতরাং সবগুলো বিষয় মিলিয়ে সর্বমোট ৩০০ মার্কেের একটি পরীক্ষা হতে চলেছে।
বাংলা প্রস্তুতি: ৬০ নম্বর
বাংলায় গদ্য ও পদ্য প্রস্তুতি নেয়ার জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ২০২০ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা বই পড়তে হবে। ব্যকরণের জন্যও নিতে হবে বিস্তর প্রস্তুতি। এক্ষেত্রে মূল পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বাজারে প্রচলিত অন্যান্য ব্যকরণ বইগুলো পড়া যেতে পারে।
নির্মিতি ও রচনারীতি:
১। ভাব-সম্প্রসারণ।
২। অনুচ্ছেদ লিখন/যুক্তিভিত্তিক অনুচ্ছেদ (১০-১৫ বাক্য)
৩। অনুধাবন।
৪। সারাংশ ও সারমর্ম।
ইংরেজী প্রস্তুতি: ১০০ নম্বর
English For Today For class-VI, Prescribed by the National Curriculum & Textbook Board for academic year 2020. ইংরেজী প্রস্তুতিতে প্রস্তুতির জন্য ষষ্ঠ শ্রেণীর ২০২০ শিক্ষাবর্ষের বোর্ড প্রণীত বইটি পড়তে হবে। গ্রামার সেকশনের জন্য নিচে উল্লেখিত বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে।
Writing Section:
1. Paragraph writing.
2. Story writing from given outline.
3. Comprehension.
4. Argumentative Essay.
গণিত প্রস্তুতি: ১০০ নম্বর
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ২০২০ শিক্ষাবর্ষের ৬ষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্য পুস্তক পড়তে হবে। গণিতে প্রস্তুতির বিষয়গুলো হচ্ছে:
১। স্বাভাবিক সংখ্যা ও ভগ্নাংশ।
২। অনুপাত ও শতকরা।
৩। পুর্ণসংখ্যা।
৪। বীজগণিতীয় রাশি।
৫। সরল সমীকরণ।
৬। জ্যামিতির মৌলিক ধারণা।
৭। ব্যবহারিক জ্যামিতি।
৮। তথ্য ও উপাত্ত।
৯। বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক অংক।
অন্যান্য প্রস্তুতি: ৪০ নম্বর
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ২০২০ শিক্ষাবর্ষের ৬ষ্ঠ শ্রেণির নিচে উল্লেখিত পাঠ্য পুস্তক পড়তে হবে।
১। সাধারণ বিজ্ঞান
২। বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
৩। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
বিশেষ দ্রষ্টব্য: সাধারণ জ্ঞানের জন্য বাংলাদেশ বিষয়াবলীর যেকোন বই পড়া যেতে পারে।
প্রতি বছর দেশের ১২টি কলেজে ৬০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়ে থাকে। ভর্তির ক্ষেত্রে মেধাই মূল বিবেচ্য বিষয়। কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হলেও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে কেউ কোটা সুবিধা পায় না। প্রতিটি বিষয়ে ভালো প্রস্তুতি নিয়ে তুমিও হতে পারো দেশসেরা ক্যাডেটদের মধ্যে অন্যতম একজন। আর এজন্য অবশ্যই ভালো প্রস্তুতির বিকল্প নেই।
ক্যাডেট বাছাই প্রক্রিয়া
প্রথমে লিখিত পরীক্ষারা মাধ্যমে মেধা তালিকা দেখে মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রার্থী বাছাই করা হয়। মৌখিক পরীক্ষা শেষে নির্বাচিত ক্যাডেটদের আইএসএসবিতে নিয়ে যাওয়া হয় মানসিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য। এরপর তারা ক্যাডেট কলেজগুলোয় ভর্তির সুযোগ পায়।
যেহেতু ক্যাডেট কলেজে ভর্তির হওয়ার জন্য প্রতিবছর প্রচুর প্রতিযোগিতা হয়, তাই ভর্তির ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর মেধাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। যদিও কোটা পদ্ধতি অনুরণ করা হয়, কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে কেউ কোটা সুবিধা পায় না।
খরচ
অভিভাবকদের আয়ের ওপর ভিত্তি করে ক্যাডেট শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ও থাকা-খাওয়ার খরচ নির্ধারণ করা হয়। সরকারি চাকরিজীবীদের সর্বনিন্ম ১৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা এবং বেসরকারি চাকরিজীবীদের সর্বনিন্ম ১৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক ফি দিতে হয় ক্যাডেট কলেজে।
কেন পড়বে ক্যাডেট কলেজে?
ক্যাডেট কলেজের প্রতিটি শিক্ষার্থী অত্যন্ত শৃংখলা ও অধ্যবসায়ের মধ্যে ক্লাস কার্যক্রম, ব্যক্তিগত অধ্যয়ন, খেলাধুলা, পিটি ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে বড় হয়। প্রায় প্রতিটি কলেজের ভেতরেই শিক্ষার্থীদের জন্য আছে সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা। সকাল সাড়ে ৬ টা থেকে রাত ১০ টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে ক্যাডেটরা।
সপ্তাহে ৪ দিন পিটি (শারীরিক ব্যয়াম প্রশিক্ষণ) ও ২ দিন ড্রিল করার মধ্যদিয়ে শুরু হয় দিনের। সকাল সাড়ে ৭ টায় নাস্তা খেয়ে ৮ টার মধ্যে ক্লাসে যেতে হয় প্রতিটি শিক্ষার্থীকে। সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত ক্লাসে আলোচনা চলে কারও কোনো পড়া বুঝতে সমস্যা আছে কিনা। সাড়ে ৮ টা থেকে ক্লাস শুরু হয়ে মিল্ক ব্রেকসহ (দুধসহ হাল্কা নাস্তা) চলে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। ১ টা ৪০ মিনিটে ডাইনিং হলে দুপুরের খাবার খেতে হয়। সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত নিজের আবাসিক হাউসে ফিরে বিশ্রাম নেয় ছাত্ররা। সাড়ে ৩ টার পর কলেজ মাঠে বাস্কেটবল, ভলিবল, সাঁতার, স্কোয়াশ, ফুটবল যে কোনো একটি খেলা বাধ্যতামূলক।
এরপর সাড়ে ৬ টায় শুরু প্রতিদিনের ব্যক্তিগত অধ্যয়ন। রাত ৮ টায় আবার ডাইনিং হলে সবাই একসঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে পড়ার টেবিলে ফিরে যায়। চলে রাত ১০ টা পর্যন্ত। ১০ টায় যার যার হাউসে ফিরে যায় সবাই। এই সময়টাতে প্রয়োজনে হল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় ক্যাডেটরা মোবাইল ফোনে বাসায় কথা বলতে পারে। রাত ১০ টা ৪০ মিনিটে একসঙ্গে নিভে যায় সব হাউসের বাতি। তার আগে বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগুজব বা পরদিন পরিধানের জন্য জামা-কাপড়-জুতো ঠিকঠাক করার সুযোগ দেয়া হয়।
►► আরো দেখো: ২০২১ সালে JSC, SSC এবং HSC এর সকল গুরুত্বপূর্ণ Paragraph
►► আরো দেখো: একটি প্যারাগ্রাফ দিয়ে সকল প্যারাগ্রাফ লেখার নিয়ম
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যেখানে সকাল থেকে রাত অবধি ক্লাস-কোচিং আর ব্যক্তিগত অধ্যয়নে ব্যস্ত থাকতে হয়, সেখানে কোচিং ছাড়াই মাত্র ৮ ঘণ্টার লেখাপড়ায় ক্যাডেটরা পরীক্ষায় এত ভালো ফল করছে। একটি সাধারণ স্কুল-কলেজে ক্লাসরুমে অনেক ছাত্রছাত্রী থাকে। কিন্তু ক্যাডেট কলেজের প্রতিটি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৩০ জন থাকে। ফলে শিক্ষক সবাইকে নিবিড়ভাবে পড়ানোর সুযোগ পান। কোনো ছাত্রের কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে ক্লাসের বাইরেও আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে।
ক্লাসের পর যাতে কোনো শিক্ষার্থীকে আর পড়তে না হয় সেটা মাথায় রেখে শিক্ষক এখানে পাঠদান করান। আর বাইরে বেশিরভাগ শিক্ষক পড়ান শিক্ষার্থীকে যাতে তার কাছে কোচিংয়ে যেতে হয় তা মাথায় রেখে।
Discussion about this post