আমরা অনেকেই অবসরে গল্প লিখতে পছন্দ করি। আর আমাদের সেই পছন্দটি এবার পরীক্ষার খাতায় প্রয়োগ করতে হবে। খুদে গল্প লেখার নিয়ম hsc জেনে তুমি উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা ২য় পত্রের খুদে গল্প অংশের উত্তর লিখতে পারবে। এর ফলে পূর্ণাঙ্গ মার্ক ওঠানো সম্ভব হবে।
শিক্ষার্থীরা, যদিও এটি খুবই সহজ একটি টপিক। কিন্তু পূর্বের শ্রেণিতে অভিজ্ঞতা না থাকায় তোমাদের জন্য টপিকটি একেবারেই নতুন। ফলে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে যাও, যে কিভাবে খুদে গল্প থেকে উত্তর করবে। তোমার মধ্যে যদি সৃজনশীলতা থাকে, তাহলে তুমি খুব সহজেই এই টপিকের উত্তর করতে পারবে।
খুদে গল্প লেখার নিয়ম hsc
কোর্সটিকায় আজকের এ আলোচনায় আমরা খুদে গল্প কী, খুদে গল্প লেখার নিয়ম hsc এবং আরো বিস্তারিত অনেক কিছু জানব। পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা উপযোগি ২৩টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর তোমাদের সাথে শেয়ার করবো। যা তোমরা পিডিএফ ফাইলে সংগ্রহ করতে পারবে। তাহলে চলো, শুরু করি।
খুদে গল্প কী?
গল্প একটি সৃজনশীল সাহিত্য মাধ্যম। জীবন অভিজ্ঞতার বর্তমান ও শিল্পময় অনুভূতির প্রকাশই হল গল্প। গল্প বলতে গিয়ে অথবা লিখতে গিয়ে পারিপার্শ্বিক জগতের বিভিন্ন ঘটনাকে অবলম্বন করতে হয়। মানব জীবনের নানা ঘটনা বা কাহিনী যখন আমাদের মননে বা মস্তিষ্কে নানা রকম অনুরণন সৃষ্টি করে তখন তা ভাষায় প্রকাশিত হয়ে গল্পের রূপ নেয়। গল্পের সাধারণত জীবনের কোন না কোন ঘটনা বা কাহিনীর পরিস্ফুটন হয়ে থাকে।
ইংরেজিতে খুদে গল্প বা অনুগল্পকে Mini short story বলা যেতে পারে। এই জাতীয় গল্প লেখা মোটেও সহজ কাজ নয়। কল্পনাশক্তি, ভাষার উপর অসামান্য দখল এবং চমৎকারিত্ব সৃষ্টির কৌশল ক্ষুদে গল্প লেখার জন্য গল্পকারের আয়ত্তে থাকতে হবে। ক্ষুদে গল্প এক ধরনের ক্ষুদ্র গল্প। ক্ষুদ্র শব্দের আভিধানিক অর্থ ছোট। সেই অর্ধেক ক্ষুদে গল্পটি ছোট গল্প বলা যাবে না। কারণ ছোট গল্পের আকৃতি ও প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের যে সমাবেশ তা খুদে গল্পে স্পষ্ট হয়ে ওঠে না।
ছোটগল্পে যেমন বিষয়বস্তুর বৈচিত্রের প্রকাশভঙ্গি স্বতন্ত্র চরিত্র ঘটনা গঠনশৈলী ইত্যাদি বিষয় পাওয়া যায়। কিন্তু খুদে গল্পে তা অনেক কিছুই পাওয়া যায় না। ক্ষুদে গল্প ছোটগল্পের চেয়ে আরো ছোট। খুদে গল্প আকৃতিতেই নয় অপরাপর বৈশিষ্ট্যের দিক থেকেও ছোট। কথক বা উত্তম পুরুষের জবানীতে গল্পের বিষয়ে বর্ণনা বা উপস্থাপন খুদে গল্পের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
কারো সাথে দেখা হলে অল্প কথায় তাকে কোন গল্প শোনানো বা তার কাছ থেকে কোন গল্প শোনার গল্পই হচ্ছে খুদে গল্প। খুদে গল্পের ভাষা যথাসম্ভব সহজ সহজ সরল সাবলীল হওয়া দরকার। মূলত কাহিনী বর্ণনার ভাষা ও সংলাপের ভাষার মধ্যে পার্থক্য বজায় রাখতে হবে।
খুদে গল্প লেখার নিয়ম
ক্ষুদে গল্প লেখার ক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দেশনা মেনে চললে ভালো মানের খুদে গল্প লেখা যায়। যেমন-
১. ক্ষুদে গল্প লেখার আগে যে বিষয়ে কাহিনী সূত্র বা সংকেত অবলম্বন করে লিখতে হবে সে বিষয়ে মনের মধ্যে কাহিনীর একটি খসড়া তৈরি করে নিতে হবে।
২. যদি গল্প লেখার অভ্যাস করতে হয় তাহলে সবার আগে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করতে হবে।
৩. ক্ষুদে গল্প লেখার সময় কাহিনীটিকে জটিল না করাই ভালো। এ ধরনের গল্পে কোন চরিত্র যাতে ভিড় না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৪. ক্ষুদে গল্পের শুরু থেকেই পাঠকের মনে কৌতুহল সৃষ্টি করে রাখতে হবে। যাতে করে গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠকের পড়ার আগ্রহ থাকে।
৫. খুঁজে গল্পের পরিবেশ রচনার জন্য ঘটনা ঘটার জায়গা, সময়, আবহাওয়া ও পরিবেশ ইত্যাদি উল্লেখ করা প্রয়োজন।
৬. ক্ষুদে গল্পের চরিত্র অনুযায়ী ভাষা প্রয়োগ করতে হবে।
৭. সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ক্ষুদে গল্প লিখনের ক্ষেত্রে তিন ধরনের বিষয়ে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সেগুলো হলো- ১. বিষয়সূত্র অবলম্বনে, ২. সংকেত সূত্র অবলম্বনে, ও ৩. কোন নীতিবাক্য অবলম্বনে।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ খুদে গল্প
১. ‘স্মৃতির মণিকোঠায়’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
২. ‘হায়েনার আনাগোনা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
৩. ‘কোনো এক হরিপদ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
৪. ‘একজন বিপ্লবীর মা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
৫. ‘লাল চুড়ি’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
৬. ‘হঠাৎ মেঘে ঢাকা সূর্য’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
৭. ‘মৌনতা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
৮. ‘ধরাতলে নরাধম’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
৯. ‘মাদকের ছোবল’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১০. ‘সন্তানস্নেহ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১১. ‘বিজয়’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১২. ‘পরিবেশ দূষণ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১৩. ‘গ্রামে ফেরা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১৪. ‘যানজট’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১৫. ‘মিথ্যাবাদীর শাস্তি’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১৬. ‘দুর্ঘটনা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১৭. ‘রক্তঝরা ফাগুন’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১৮. ‘শব্দদূষণ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১৯. ‘পানি দূষণ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
২০. ‘আমার শৈশব স্মৃতি’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
২১. ‘প্রতিবন্ধী শিশু’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা কর।
২২. ‘শিশু নির্যাতন’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখো।
২৩. ‘রক্তদানের পুণ্য’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
অনুশীলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খুদে গল্প
১. ‘স্মৃতির মণিকোঠায়’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
স্মৃতির মণিকোঠায়
’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আত্মরক্ষার জন্য একটু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছি। কোথাও মিলছে না। যেখানে যাই সেখান থেকেই লোকজন অন্য কোথাও পালিয়ে যাচ্ছে। আমরা পঁচিশজন মানুষ। পাঁচজন সমর্থ পুরুষ ছাড়া বাকি সবাই নারী-শিশু। শেষ পর্যন্ত আমরা ভারতের পথে পা বাড়ালাম। ছোট্ট একটা নৌকাতে আমরা সবাই ভীতসন্ত্রস্ত। কখন পাকিস্তানি বর্বরদের শিকারে পরিণত হই।
কিংবা তাদের দোসর, দালাল – রাজাকারদের হাতে লাঞ্চিত হই, ভাবনার শেষ নেই। মা আমাদের ভাই বোনদের ডেকে বললেন, আমরা নৌকা থেকে নেমে হেটে ভারতে যাবো। যদি পথে কোনো বিপদ হয়, যদি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যাই, তাহলে তোমরা আমাদের জন্য দাঁড়াবে না। যেদিকে পারও পালাবে। আমরা নৌকা থেকে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তখন একজন লোক এসে খবর দিল এই চরে নামা ঠিক হবে না।
এখানে ডাকাতের বসবাস। তারা প্রচন্ড হিংস্র, আগে মানুষ হত্যা করে, পরে তাদের শরীর থেকে হাতড়িয়ে টাকা, গয়না জিনিসপত্র তুলে নেয়। তবু আব্বা সবাইকে নিয়ে নামলেন। আমাদের সবার কাছেই কমবেশি টাকা পয়সা ছিল। মহিলাদের কাছে অল্পস্বল্প গহনাও ছিল। চরে নামার পর এক বৃদ্ধের সঙ্গে আব্বার আলাপ হলো। সেই বৃদ্ধ আমাদেরকে ভারতে যেতে সাহায্য করবেন বলে আব্বাকে জানালেন। কিন্তু নৌকা থেকে সবাই খালি হাতে প্রথমে ঐ বৃদ্ধের বাড়িতে যেতে হবে। সেখান থেকে তিনি তার লোকের মাধ্যমে আমাদের ভারতে পাঠিয়ে দিবেন। আমরা ভয়ে জড়সড়।
কিন্তু আব্বা তার শর্ত মেনে নিয়ে রাজি হলেন। এর মধ্যে ঐ লোকটি এসে জানিয়ে গেল- ঐ বৃদ্ধ লোকটি এখানকার ডাকাত দলের সর্দার। চাইলে ভালোও করতে পারেন, আবার মন্দও করতে পারেন। চরে নেমে আমরা বৃদ্ধের বাড়ির উদ্দেশ্য চললাম। আমাদের বুকের কাঁপন থামেনি, ঘনঘন পানির পিপাসা হচ্ছে। সঙ্গে যা ছিল তা ফুরিয়ে গেছে। বৃদ্ধের কাছে পানি চাইলাম। বৃদ্ধ পাশের বাড়িতে ঢুকতেই সর্দার, সর্দার বলে সবাই তাকে আদাব / নমস্কার করল, সে শুধু বলল- এরা আমার মেহমান, দূর থেকে এসেছে। তৃষ্ণা পেয়েছে।
জি সর্দার বলে ছুটে গিয়ে কলসিসহ পানি নিয়ে এলো তিনজন। তখন ভয় আরও বেড়ে গেল। তবু পানি খেলাম। অনেকটা পথ আসার পর বাড়িতে এলাম। রাস্তা থেক উঠে একটা ঘর, একটা উঠোন। তারপর একটা বড় ঘর। এর বেশি কিছু আজ মনে নেই। আমরা সবাই সেই বড় ঘরটায় চৌকিতে বসলাম। বৃদ্ধ লোকটি আমাদের নির্ভয়ে থাকতে বললেন। একটু পর আমাদের খাবার দেয়া হলো। ক্ষুধার্ত অবস্থায় ভালো ভালো খাবার পেয়ে ভয় গেলাম ভুলে। সবাই পেট পুরে খেলাম। বৃদ্ধ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তার লোকদের হুকুম দিলেন আমাদের ভালোভাবে খাওয়ানোর জন্য।
তিনি আব্বাকে অনুরোধ করলো অন্তত একদিন তার বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে তারপর ভারতে যেতে। কিন্তু আব্বার রাজি হলেন না। তার আপ্যায়নের জন্য আব্বা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগ প্রকাশ করলেন। ডাকাত সর্দার নিজেও আবেগে কেঁদে ফেললেন। তারপর চোখ মুছে বললেন, শেখ সাহেব সেদিন বলেছিলেন, তোমাদের যার যা কিছু আছে তা নিয়ে প্রস্তুত থাকো। সে থেকেই আমরা এই চরে প্রস্তুত হয়ে আছি ঐ পাকিস্তানি বর্বর হানাদারদের নিশ্চহ্ন করতে। যদি কখনো তারা এই পথে আসে তা হলে একজনকেও জীবিত ছাড়বো না ইন শাহ আল্লাহ। আমরা সবাই নিজের অজান্তেই বলে উঠলাম জয় বাংলা।
তারপর আমরা সবাই হাসিমুখে বিদায় নিলাম । বৃদ্ধ আমাদের জন্য চার পাঁচজন লোক ঠিক করে দিলেন এবং কীভাবে আমাদের ভারতে পৌঁছে দিবেন তা তাদের বুঝিয়ে দিলেন। ভারতে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয় পেলাম। বাবা তার সঙ্গীদের সাথে আবার সেই পথে বাংলাদেশে এসে যুদ্ধ করলেন। ঐ ডাকাত সর্দারকে আর খুঁজে পাননি। সেখানকার ঘরবাড়িগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই দুরব¯’ার মধ্যে এমন মহানুভবতা, খাবার, আশ্রয়, পথের দিশা দানকারী সেই ব্যক্তির কথা আমরা ভুলতে পারিনা। তিনি যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন আমাদের স্মৃতির মণিকোঠায়।
২. ‘হায়েনার আনাগোনা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
হায়েনার আনাগোনা
ধরে নেওয়ার মাসখানের পর জীবিত ফিরে এলো দেলোয়ার। সেদিন স্বামীর জন্য মিলিটারিদের পা জড়িয়ে ধরেছিল অন্তঃসত্ত্বা কমলা। হায়েনারা তার কান্না বন্ধ করেছিল। লাথি দিয়ে ফেলে একটি গুলির শব্দে। দশ বারো বছরের ছেলেটি আড়াল থেকে সব দেখে নিঃশব্দে পালিয়েছিল। অক্ষত অবস্থায় দেলুকে ঘরে ফিরতে দেখে গ্রামবাসী অবাক হলো। সবার কাছেই ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য মনে হলো।
সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল দেলুর দিকে। তার ছেলে রহমত এসে জানতে চায় কী করে বেঁচে এলো বাবা? দেলু ছেলের জোরাজুরিতে বলে, ‘আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে রেখেছিল লম্বা একটা ঘরে। সেখানে অনেক লোক। প্রতিদিন সেখান থেকে দু’জন করে বাইরে নিয়ে গুলি করে মারত। আমরা জানালা দিয়ে দেখতাম। আমার পাশের লোকটিকে আগের দিন মেরে ফেলেছে। ভাবলাম এবার আমার পালা, সেদিন আর কেউ এলো না। পরদিন সকালে দেখলাম ডানদিকের দুজনকে নিয়ে যাচ্ছে। একজন বয়স্ক, অন্যজনের বয়স কম।
হয়তো বাবা ছেলে কিংবা দুই বাবা অথবা কেউ কারও কিছু নয়। তারা ছেলেটিকে চোখ বেঁধে ফেলল। বয়স্ক লোকটি চোখ বাঁধতে দিল না। বাইরে নিয়ে গিয়ে ছেলেটির মুখে নল ঢুকিয়ে গুলি করল। আর বয়স্ক লোকটিকে ব্রাশ ফায়ারে উড়িয়ে দিল। শার্ট ফুটো ফুটো হয়ে উড়ছে।… ছেলে তাড়া দিয়ে বলল- ‘সে ঘটনা নয়, তুমি বাঁচলে কী করে সেটা বলো?’ – দেলু ছেলের কথায় উত্তর দিল না, চুপ থাকল। দুজন খাল পাড়ের রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছে। কারও মুখে কথা নেই। ছেলে বাবার হাত ধরে ঝাঁকি দিয়ে তার মনোযোগ আকর্ষণ করে বলল- দক্ষিণ পাড়ার আমজাদ চাচার কথা তোমার মনে আছে বাবা? ঐ যে আমার সাথে পড়ে আমির-আসিরের আব্বা। সে বাড়ি থেকে বের হয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিল।
সেখানে তাকে গুলি করেছে। সারারাত মসজিদের ভেতর লাশ পড়েছিল, সকালবেলা গ্রামের লোকজন তাকে ওখানেই কবর দিয়েছে। দেলোয়ার তখনও চুপ করে আছে। ছেলে বাবার হাত ধরে নিজের বাড়ির অভিমুখে এগিয়ে চলছে। তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। কিন্তু কোনো বাড়িতে সাঁঝের বাতি জ্বলছে না। দূর থেকে একটা গন্ধ আসছে, বকুল ফুলের গন্ধ। ছেলেও কিছু বলছে না। আর একটু এগিয়ে সে বকুল ফুলের গাছটা চোখে পড়ল রহমতের। গাছটার কাছে গিয়ে ছেলে বলল- নিশিকান্তকে তোমার মনে আছে বাবা, ঐ যে নিশিকান্ত, সুন্দর, চোখগুলো বড় বড়।
নিশির এক দাদি ছিল দু’চোখে ছানি পড়া, সংসারে আর কেউ ছিল না। সেই নিশিকে এই গাছটাতে গেঁথে মেরেছে। বুড়ি দাদি রোজ গাছের নিচে এসে বসত আর চেঁচাত ‘কী রে নিশি গাছ থেকে নামবি নে…’। তার পর যে কোথায় চলে গেল সে বুড়ি, কেউ জানে না। নিশি গাছটায় বহুদিন গেঁথেছিল। দূর থেকে দেখা যেত দু হাত ছড়ানো, নিশি সমস্ত পাড়াটার দিকে চেয়ে আছে। দেলোয়ার ছেলে রহমতের কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। গাছটার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে হাঁটতে লাগল।
তখন অন্ধকার হয়ে এসেছে, দূর থেকে একটা আলো এগিয়ে আসছে তাদের দিকে, গাড়ির হেডলাইট, রহমত বুঝতে পারল- বাবাকে তাড়া দিয়ে বলল, বাবা পালাও মিলিটারি। রহমত দেখল তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে। ততক্ষণে গাড়িটা আরো কাছাকাছি এসে পড়েছে। দেলোয়ার শার্টের নিচে কোমরে পেঁচানো পাকিস্তানের চান তারা পতাকা শূন্যে মেলে ধরল। বাবার বেঁচে থাকা আর ফিরে আসার রহস্য জেনে হাফপ্যান্টের পকেট থেকে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল সবুজের পতাকা বের করে বুকের উপর মেলে ধরে রহমত। বলল জয় বাংলা, জয় বাংলা। সাথে সাথে কতগুলো গুলির শব্দ। তারপর সব নিস্তব্ধ।
আরো দেখো: ২২টি দিনলিপি (PDF)
শিক্ষার্থীরা, আমরা খুব সহজভাবে তোমাদের খুদে গল্প লেখার নিয়ম hsc বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এখানে আমরা নমুনা হিসেবে ২টি খুদে গল্প তুলে ধরেছি। তবে তোমরা পিডিএফ উত্তরমালায় মোট ২৩ পরীক্ষা উপযোগি খুদে গল্প সংগ্রহ করতে পারো। এর জন্য উপরে দেওয়া বাটনটিতে ক্লিক করো।
ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post