গরবিনী মা জননী সিকান্দার আবু জাফর : কবিতাটি ‘বাঙলা ছাড়ো’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। উপর্যুক্ত কবিতাটিতে পুণ্যবতী ভাগ্যবতী দেশমাতার গর্বিত হয়ে ওঠার কারণ অন্বেষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জীবনের সঙ্গে পরিবেশ-প্রকৃতির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।
শ্রমজীবী, কৃষিজীবী থেকে শুরু করে সব পেশাজীবী সন্তান এই মায়ের কোল জুড়ে থাকে। এই মাকে রক্ষা করার জন্য এই সন্তানরা শত কষ্ট সহ্য করে, তবে কোনো অন্যায়, অত্যাচার, অবিচারকে তাঁরা মেনে নিতে পারে না। মাকে বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনে তাঁরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতেও দ্বিধা করে না।
আবার এই মাকেও সন্তানের জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখতে হয়। সন্তানকে সাহস ও শক্তি জোগাতে হয়। দেশমাতৃকাকে সকল দুঃশাসন থেকে রক্ষার জন্য মায়ের সন্তানরা ঝাঁপিয়ে পড়ে।
গরবিনী মা জননী সিকান্দার আবু জাফর
তাঁরা যে কোনো দুঃসময়ে জেল জুলুম ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে নিজের সুখ শান্তি ও আলস্য পরিহার করে দেশের জন্য আত্মত্যাগ করতে দ্বিধা করে না। যুগের দাবি ও সময়ের দাবি রক্ষায় যে সন্তানরা সাহসের সাথে সংগ্রামের পথ বেছে নেয়, তাঁদের জন্য বাংলাদেশ সত্যিই গর্বিত। প্রকৃতপক্ষে বাংলার মাটি এই সাহসী ও সংগ্রামী জনতার ভিত্তিভূমি।
সিকান্দার আবু জাফর বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট কবি, নাট্যকার ও সাংবাদিক। জন্মেছেন সাতক্ষীরা জেলায়। জন্মসাল ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ। পাকিস্তানি শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। ‘প্রসন্ন প্রহর’, ‘তিমিরাস্তিক’, ‘বাঙলা ছাড়ো’ প্রভৃতি তাঁর কাব্যগ্রন্থ। ‘সিরাজ-উ-দ্দৌলা’ তাঁর বিখ্যাত নাটক। তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৯৭৫ সালে।
গরবিনী মা জননী কবিতার শুরু এখানে
ওরে আমার মা-জননী
জন্মভূমি বাঙলারে
তোর মত আর পুণ্যবতী
ভাগ্যবতী বল মা কে
কার চোখে মা নদীর কাজল
সবুজ তৃণের আঁচল বুকে
কার পায়ে মা ধুলোর নূপুর
সন্ধ্যা দুপুর বেজেই চলে।
রোজ ভোরে কে শিশির খোঁপায়
বকুল যুঁথীর গন্ধ মাখে
কার দুপুরের তন্দ্রা ভেজে
ক্লান্ত ঘুঘুর বিলাপ-জলে
কামার কুমোর জেলে চাষী
বাউল মাঝি ঘর-উদাসী,
কার ছেলেরা নিত্য হাজার
মরণ-মারের দণ্ড গোনে,
ছেলের বুকের খুন ছোপানো
কোন্ জননীর আঁচল-কোণে
দুর্ভাগিনী কার মেয়েরা
কান্নাফুলের নকশা বোনে ॥
সেই মাকে যার হাজার হাজার
মা-নাম-ডাকা পাগল ছেলে
মায়ের নামে ঝাঁপিয়ে পড়ে
ভয়ঙ্করের দুর্বিপাকে।
কার ছেলে মা উপড়ে ফ্যালে
বুলেট ফাঁসির শাসন-কারা
দুখের ধূপে সুখ পুড়িয়ে
কার ছেলে মুখ উজ্জ্বল রাখে ॥
তুই তো সে-মা
ও মা তুই তো রে সেই গরবিনী
রক্তে-ধোওয়া সরোজিনী
যুগ-চেতনার চিত্তভূমি
নিত্যভুমি বাঙলারে ॥
গরবিনী মা জননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন
মা দিবসে রত্নগর্ভা স্বীকৃত মায়েদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সাহেদা বেগমের বড় ছেলে সাজিদ অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন আমাদের মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। আমরা পিঠাপিঠি পাঁচ ভাই-বোন যখন খুব ছোটো, তখনই বাবাকে হারালাম। মাকে কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি।
দুঃখ-দারিদ্র্য-অভাব আমাদের নিত্য সঙ্গী ছিল। মা সব সময় আমাদেরকে খুশি রেখে, পড়াশুনা শিখিয়ে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তোমাকে শত সালাম মা। তোমার মুখের হাসির জন্য আমরা যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
ক. সন্ধ্যা দুপুর মার পায়ে কী বাজে?
খ. ‘রক্তে ধোওয়া সরোজিনী’ বলতে কী বোঝনো হয়েছে?
গ. সাজিদের মাধ্যমে ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতার কোন বিশেষ দিকটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে?- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপক ও ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতার বক্তব্য একই ধারায় প্রবাহিত।”- বিশ্লেষণ কর।
◉ আরও দেখুন: সপ্তম শ্রেণির সকল গল্প-কবিতার CQ-MCQ সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে সপ্তম শ্রেণির বাংলা বই থেকে গরবিনী মা জননী সিকান্দার আবু জাফর কবিতাটি আলোচনা করা হয়েছে। এই বইয়ের যে সৃজনশীল প্রশ্নগুলো রয়েছে, তার উত্তরও তোমরা কোর্সটিকায় পেয়ে যাবে। সৃজনশীল প্রশ্নের সমাধানের জন্য উপরের ‘সৃজনশীল সমাধান’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post