গ্যাসের সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ এর নাম খোঁজ করে না, এমন মানুষ খুব কমই আছে। গ্যাস্ট্রিক রোগ এখন এতটাই কমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে এর জন্য এখন আর মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে চায় না, ঘরে কাছের ফার্মেসি থেকেই গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ এর নাম জেনে কিনে নেয়।
গ্যাস্ট্রিক প্রকৃতপক্ষে কোনো রোগ নয়, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ কিছু বদভ্যাসের কারণে হয়ে থাকে। তবে অন্য যেকোন রোগের চেয়েও এটা মাঝে মাঝে খারাপ আকার ধারণ করতে পারে। তাই এর প্রতিকার জানার আগে গ্যাস্ট্রিক হওয়ার কারণ জানা অতীব জরুরী।
গ্যাস্ট্রিক হওয়ার কারণ কি?
পরিপাকতন্ত্রের বেশকিছু রোগের মধ্যো গ্যাস্ট্রিক অন্যতম। পরিপাকতন্ত্রের মূল কাজ হচ্ছে আমরা যেসব খাবার খাই, তা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য রসের মাধ্যমে ভেঙে হজম করানো। হজম এর অর্থ হচ্ছে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাবার ভেঙে ছোট ছোট অংশ হিসেবে পরিপাকতন্ত্র থেকে রক্তে প্রবেশ করানো।
আর যখন আমাদের পরিপাকতন্ত্র খাদ্য হজমের এই প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে করতে পারে না, তখনই আমাদের পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয়; যা মূলত আমরা গ্যাস্ট্রিক নামে জেনে থাকি। বদহজম বা গ্যাস্ট্রিক হলেই গলা জ্বালা করে, ঢেকুর ওঠে, বুকে বা পিঠে ব্যথা করে এবং কারো কারো ক্ষেত্রে মাথায় যন্ত্রণার মতো লক্ষণগুলো দেখা দেয়।
গ্যাস্ট্রিক হওয়ার পেছনে কিছু বদঅভ্যাস রয়েছে:
- সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা এবং নাস্তা না করা।
- অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া বা তেলজাতীয় খাবার খাওয়া।
- মশলাদার খাবার খাওয়া
- খুব বেশি অ্যালকোহল পান করা
- দীর্ঘ মানসিক চাপ
গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ এর নাম
গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় বহুল প্রচলিত একটি ঔষধ হচ্ছে রেনিটিডিন। রেনিটিডিন সাধারণত পেটে গ্যাসের সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিংবা প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ সংস্থা এফডিএ রেনিটিডিন ঔষধ নিয়ে একটি সতর্কবার্তা জারি করে। তারা জানায়, দীর্ঘদিন নির্দিষ্ট মাত্রায় রেনিটিডিন গ্রহণ করলে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। যদিও মানবদেহে এখনও এর প্রতিক্রিয়া সুনির্দিষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়নি।
তবে রেনিটিডিন ছাড়াও গ্যাস্ট্রিক নিরাময় করতে আরো বেশকিছু ঔষধ বাজারে প্রচলিত রয়েছে। এই ঔষধগুলো হচ্ছে সেকলো, এক্সিলক ২০, ইসুটিন ২০, ওপি ২০, নিউ ট্রাক , ওর ট্রাক, সার্জেল, মাক্সপ্রো, লোসেকটিল, ফিনিক্স ২০, রাবিপ্রাজল, এন্টারসিড, এবং ইসোমিপ্রাজল বিপি।
উপরে উল্লিখিত সবগুলো গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ প্রায় একইভাবে কাজ করে। তবুও দীর্ঘদিন ধরে এর কোনটিই সেবন করা উচিত নয়।
গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক উপায়
আপনি কি জানেন, শুধু ঔষধই নয়, ঘরোয়া কিছু উপায় আছে যেগুলি প্রয়োগ করলে জ্বালাময় ই গ্যাস দূরে রাখা সম্ভব? গ্যাস্ট্রিক খুব সাধারণ একটি সমস্যা হলেও অন্য যেকোন রোগের চেয়েও এটা মাঝে মাঝে খারাপ আকার ধারণ করতে পারে। তাই সে পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আজই এর প্রতিকার জেনে নিন।
- কলা: সারাদিনে অন্তত দুইটি কলা খান। পেট পরিষ্কার রাখতে ও খাদ্য পরিপাকে কলার ভূমিকা অপরিসীম।
- জিরা: জিরে পেটের গ্যাস দূরীকরণে অত্যন্ত ফলপ্রসু। আখের গুড়ের সাথে ৫০ গ্রাম জিরা মিশিয়ে ১০ গ্রাম করে পাঁচটি বড়ি তৈরি করে নিন। এগুলো তিনে তিনবার করে খেলে গ্যাসের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।
- ঠাণ্ডা দুধ: আমরা সাধারণত গরম দুধ পান করে থাকি। তবে পাকস্থলির গ্যাসট্রিক নিয়ন্ত্রণ করে ঠাণ্ডা দুধ বেশ কার্যকরী।
- দারুচিনি: হজমের জন্য খুবই কার্যকরী প্রাকৃতিক একটি উপকরণ হচ্ছে দারুচিনি। এক গ্লাস গরম পানিতে অর্ধেক চামচ দারুচিনির শরবত করে দিনে ২ থেকে ৩ বার খেলে গ্যাস দূরে থাকবে।
- আদা-মধু: আদা বেটে রস করুন মধুর মিশ্রণ করে দুপুর ও রাতের খাবারের আগে খেয়ে নিন। সম্ভব হলে একটু আদা চিবিয়েও খেতে পারেন
- দই: ব্যাকটেরিয়া হলো গ্যাস্ট্রিক সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতিদিন একটু করে দই খেলে পেটের ব্যাকটেরিয়া দূর হবে।
- পানি: প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে একদম খালি পেটে পুরো পেট ভর্তী করে পানি পান করুন। এভাবে ৩ সপ্তাহ পার করলেই উত্তম ফল পাবেন।
►► আরো দেখুন: গর্ভবতী হওয়ার আগে করণীয় ও সাবধানতা
►► আরো দেখুন: গর্ভবতী মায়েরা প্রথম ৩ মাসে যা খাবেন
►► আরো দেখুন: গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ
►► আরো দেখুন: গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ জেনে নিন
শেষ কথা
এই আর্টিকেলে আপনি গ্যাস্ট্রিক হওয়ার কারণ, ঔষধ এবং এটি থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে জানলেন। প্রথমদিকেই সচেতন না হলে পরবর্তীতে গ্যাস্ট্রিক থেকে আলসার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদি গ্যাস্ট্রিকের প্রতিকার পেতে সবাই ঔষধকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তবে এতে সাময়িক মুক্তি মিললেও এই অভ্যাসটি আসলে ক্ষতিকর।
তাই নিজের খাবার-দাবারের প্রতি নজর রাখুন। এখানে উল্লেখিত খাবারগুলো নিয়মিত খাওয়া শুরু করুন। তাহলে দেখবেন আপনাকে আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগতে হবে না। পাশাপাশি মুক্তি পাবেন গ্যাস্ট্রিকের ক্ষতিকর ট্যাবলেটের বাজে প্রভাব থেকেও।
Discussion about this post