ঘুরে আসি সোনারগাঁও : “শিক্ষা সফর” শিরোনামের এই গদ্যাংশে শিক্ষার্থীদের একটি আনন্দময় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণিত হয়েছে। লেখাটিতে ঐতিহাসিক স্থান সোনারগাঁও সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষক হাসান স্যারের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে সোনারগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
সেখানে গিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা, যেমন গোয়ালদি মসজিদ, পানাম নগর, ও লোকশিল্প জাদুঘর পরিদর্শন করে। সোনারগাঁওয়ের ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং শিল্প ঐতিহ্যের গুরুত্ব লেখায় ফুটে উঠেছে। শিক্ষামূলক ও বর্ণনামূলক এই লেখা পাঠকদের ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে কৌতূহলী করে তোলে এবং শিক্ষাসফরের গুরুত্ব তুলে ধরে।
ঘুরে আসি সোনারগাঁও
জানুয়ারির মাঝামাঝি। শীতের সকাল। কুয়াশার আবরণ ভেদ করে সূর্য কেবল উকি দিচ্ছে আকাশে। এর মধ্যে সবাই পৌঁছে গেছে স্কুলে। সাবিহা, নমিতা, কবির, সুবীর সবাই। হাসান স্যার তো আগেই এসে গেছেন।
সবাই যাবে শিক্ষা সফরে। ঐতিহাসিক সোনারগাঁও যাবে তারা। কী আনন্দ, কী উল্লাস সবার মনে!
সাবিহা ভাবছিল সোনারগাঁও আসলে দেখতে কেমন? এটা কি সোনা দিয়ে মোড়া কোনো গ্রাম? হঠাৎ তার চিন্তায় ছেদ পড়ল। হাসান স্যার সবাইকে বাসে ওঠার জন্য তাড়া দিলেন। সবাই সুশৃঙ্খল হয়ে বাসে বসল। হাসান স্যার এবার ঢাকার একটি ম্যাপ ঝুলিয়ে দেখালেন, বললেন-“এই দেখ, সোনারগাঁও। ঢাকা থেকে সোনারগাঁয়ের দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। এটা নারায়ণগঞ্জ জেলায়।
ঢাকার দক্ষিণ-পূর্বে এই প্রাচীন নগরী সোনারগাঁওয়ের অবস্থান।”
সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছিল হাসান স্যারের কথা। তিনি জানালেন, “আমরা গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফেলে এসেছি। এবার আমাদের বাস চলছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পথে। কাচপুর ব্রিজ পার হয়ে একটু গেলেই সোনারগাঁও।”
দেখতে দেখতে বাস এসে পৌঁছাল সোনারগাঁও। সোনারগাঁওয়ের মাটিতে পা দিয়েই সাবিহার মন খুশিতে ভরে উঠল। চারদিকে সবুজ গাছপালা আর শীতের সকালের মিষ্টি রোদ্দুর। প্রথমেই তাদের চোখে পড়ল একগম্বুজ বিশিষ্ট একটা প্রাচীন মসজিদ। স্যার বললেন, এটা হচ্ছে গোয়ালদি মসজিদ। মোঘল স্থাপত্যশৈলীর অপূর্ব নিদর্শন রয়েছে এ মসজিদে। তবে এটা তৈরি হয়েছিল মোঘলরা বঙ্গদেশে আসারও আগে।
হাসান স্যার আরও জানালেন, প্রাচীনকালের সমৃদ্ধ নগর সুবর্ণগ্রাম। পরে এর নাম হয় সোনারগাঁও। ঢাকার আগে সোনারগাঁও ছিল দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার রাজধানী। ঈশা খাঁ ছিলেন এই অঞ্চলের শাসক।
সোনারগাঁওয়ের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এলাকা পানাম নগর। এ যেন নগরের মধ্যে আরেক নগর! সাবিহার ভাবতে আর বেড়াতে বেশ ভালোই লাগছে।
এখানে একটা মাত্র রাস্তা। তার দুই পাশে সারি সারি প্রাচীন দালান। দালানগুলো খুব উঁচু নয়। সবই দোতলা। প্রায় একশো বছরেরও আগের তৈরি। এখানেই ধনী ব্যবসায়ীরা বসবাস করতেন। সোনারগাঁও তখন ছিল মসলিন কাপড় তৈরির প্রসিদ্ধ স্থান। সোনারগাঁওয়ে তৈরি মসলিনের বিশ্বজোড়া খ্যাতি ও কদর ছিল। পরে সুতি কাপড়ের প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে এটি। কিন্তু এদেশে ইংরেজরা আসার পর দেশি কাপড়ের কদর কমে যায়।
তখন বিলিতি কাপড় আসা শুরু করে এদেশে। বন্ধ হয়ে যায় এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য। এ শহরের পুরোনো দালানগুলো বাংলার অভূতপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর সাক্ষী। আমাদের সংস্কৃতির নিদর্শন হিসেবে যেন সগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সবশেষে আমাদের শেষ গন্তব্য সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর দেখার পালা।
একটি দেশের শিল্প-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের যাবতীয় নিদর্শন জাদুঘরেই সংরক্ষিত থাকে। সোনারগাঁওয়ের জাদুঘরে ঢুকতে ঢুকতে সবুজের স্নিগ্ধ পরশে সাবিহার মনটা ভরে গেল। কী চমৎকার একটা লেক! শান্ত পুকুর আর গাছগাছালিতে ভরা চারপাশ।
প্রথমেই সবাই ঢুকে পড়ল লোকশিল্প জাদুঘরে। জাদুঘরটা সাধারণ জাদুঘর নয়, লোকশিল্পের জাদুঘর। আমাদের গ্রামীণ মানুষের তৈরি জিনিসপত্রকে বলে লোকশিল্প। হাসান স্যারই কথাটা বুঝিয়ে দিলেন। যে বাড়িতে জাদুঘরটা করা হয়েছে তার আদি নাম বড় সর্দারবাড়ি।
দারুণ কারুকাজ করা এর প্রবেশপথ। কত্তো জিনিস যে আছে দেখবার, শিখবার! কাঠের তৈরি জিনিস, মুখোশ, মৃৎপাত্র, মাটির পুতুল, বাঁশ-লোহা-কাঁসার তৈরি নানা জিনিস, অলংকার ইত্যাদি দেখে সবাই বিস্মিত। কী সুন্দর জামদানি শাড়ি আর কী বাহার ওই নকশিকাঁথার!
সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী জয়নুল আবেদিন। তাঁর সংগ্রহশালায় গিয়ে আরও মুগ্ধ সবাই। তিনি ছিলেন অনেক বড় শিল্পী।
সূর্য তখন পশ্চিমে ঢলে পড়েছে। এবার ঐতিহাসিক সোনারগাও থেকে ওদের ফেরার পালা। বাসের জানালা দিয়ে অস্তগামী সূর্যের ছবি দেখতে দেখতে ওরা ফিরে এল ঢাকা। এ স্মৃতি সবার মনে গাঁথা থাকবে অনেক দিন।
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
ঐতিহাসিক, গম্বুজ, বঙ্গদেশ, স্থাপত্য, নিদর্শন, শাসনকর্তা, অঞ্চল, সমৃদ্ধ, প্রসিদ্ধ, মসলিন, বিলিতি, অভূতপূর্ব, অস্তগামী, স্মৃতি, লোকশিল্প, বিস্মিত, বাহার, ম্যাপ, কদর, খ্যাত
২. প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
ক. সোনারগাঁও কোথায় অবস্থিত?
খ. গোয়ালদি মসজিদ কী জন্য বিখ্যাত?
গ. পানাম নগর কী জন্য প্রসিদ্ধ?
ঘ. লোকশিল্প কাকে বলে?
ঙ. লোকশিল্প জাদুঘর কেন দরকার?
চ. জাদুঘর বলতে কী বুঝি?
ছ. সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা কে?
৩. ঠিক উত্তরটিতে টিক (✔) চিহ্ন দিই।
ক. ঘুরে আসি সোনারগাঁও গল্পে শিক্ষা সফরে সবাই কোথায় যাচ্ছিল-
১. যাত্রাবাড়ি
২. সোনারগাঁও
৩. পাহাড়পুর
৪. চট্টগ্রাম
খ. লোকশিল্প জাদুঘরের প্রবেশ পথটি কেমন –
১. দারুণ কারুকাজ করা
২. সাধারণ
৩. অনেক পুরোনো
৪. নতুন
গ. মসলিন কাপড়ের জন্য প্রসিদ্ধ স্থান
১. নারায়ণগঞ্জ
২. সোনারগাঁও
৩. গুলিস্তান
৪. নওগাঁ
ঘ. ঢাকার আগে সোনারগাঁও ছিল-
১. পূর্ব বাংলার রাজধানী
২. দক্ষিণ বাংলার রাজধানী
৩. দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার রাজধানী
৪. উত্তর বাংলার রাজধানী
ঙ. দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন
১. ঈশা খাঁ
২. তিতুমীর
৩. আলীবর্দি খাঁ
৪. নবাব আহসানউল্লাহ
চ. ঢাকা থেকে সোনারগাঁওয়ের দূরত্ব-
১. ২৭ কিমি
২. ২২ কিমি
৩. ২৫ কিমি
৪. ২৮ কিমি
৪. বাম পাশের শব্দাংশের সাথে ডান পাশের ঠিক শব্দাংশ মিলিয়ে পড়ি ও লিখি।
সমৃদ্ধ এলাকা | গোয়ালদি |
প্রাচীন মসজিদ | লোকশিল্পের প্রতিষ্ঠাতা |
মসলিন কাপড় | সোনারগাঁও-এর শাসনকর্তা |
জয়নুল আবেদিন | জগৎ জোড়া খ্যাত |
ঈশা খাঁ ছিলেন | পানাম নগর |
৫. আমার নিজের গ্রাম বা শহরের কথা সংক্ষেপে বর্ণনা করি।
৬. একই অর্থ বোঝায় এরকম কয়েকটি শব্দ শিখি।
ফুল – পুষ্প, কুসুম, মঞ্জরী, প্রসূন, পুষ্পক
পানি – জল, বারি, সলিল, নীর, অম্বু
পৃথিবী – জগৎ, ধরণী, ধরিত্রি, ভুবন, বসুন্ধরা
নদী – তটিনী, গাং, প্রবাহিণী, কল্লোলিনী
পতাকা – কেতন, ঝান্ডা, নিশান, বৈজয়ন্তী, ধ্বজা
৭. বিপরীত শব্দ লিখি।
সকাল – বিকাল
যাওয়া –
আনন্দ –
মিষ্টি –
রোদ –
প্রথম –
৮. কর্ম অনুশীলন।
ক. মনে করো, একজন বিদেশির সাথে তোমার পরিচয় হয়েছে। তিনি আগে কখনো বাংলাদেশে আসেননি। তিনি বাংলাদেশের আচার, অনুষ্ঠান, সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানার জন্য কোথায় যাবেন, তা তোমার কাছে জানতে চাইলেন। সেক্ষেত্রে তুমি তাকে কোথায় যাওয়ার পরামর্শ দেবে এবং কেন?
খ. নিচের যেকোনো একটি বিষয় নিয়ে ৮টি বাক্য লিখি।
সোনারগাঁও, জাদুঘর, স্মৃতিসৌধ, শহিদ মিনার
◉ আরও দেখুন: চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বইয়ের সকল গল্প-কবিতার সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে ঘুরে আসি সোনারগাঁও ভ্রমণ কাহিনীটি আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post