চন্দ্রগুপ্ত নাটকের প্রশ্ন উত্তর class 8 : সিন্ধু নদেরতটে সন্ধ্যাকালে শিবিরের সামনে সেকেন্দার, সেলুকস ও তাঁর কন্যা হেলেন দণ্ডায়মান। গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার বৈচিত্র্যময় ভারতবর্ষের ভূ-প্রকৃতি, নদনদী, বনরাজির সৌন্দর্য ব্যাখ্যায় মগ্ন। প্রসঙ্গক্রমে এই সবকিছু ছাড়িয়ে এক সৌম্য, গৌর, দীর্ঘ-কান্তি জাতির গৌরবে প্রশংসায় রত, যারা দীর্ঘদিন এই দেশ শাসন করছে।
তাদের মুখে শিশুর সারল্য, দেহে বজের শক্তি, চোখে সূর্যের দীপ্তি, বুকে ঝড়ের সাহস। যখন রাজা পুরুকে বন্দি করে তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন তাঁর প্রতি কীরূপ আচরণ প্রত্যাশিত পুরু উত্তর দেন—“রাজার প্রতি রাজার আচরণ!
চন্দ্রগুপ্ত নাটকের প্রশ্ন উত্তর class 8
১.হাতে কলমে
১. দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য কোথায় গিয়েছিলেন?
উত্তর : দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য বিলেতে গিয়েছিলেন।
২. তাঁর রচিত দুটি নাটকের নাম লেখো।
উত্তর : তাঁর রচিত দুটি নাটকের নাম হল – ‘সাজাহান’ ও ‘চন্দ্রগুপ্ত’
২. নীচের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর একটি বাক্যে লেখাে :
১. নাট্যাংশটির ঘটনাস্থল ও সময় নির্দেশ করাে।
উত্তর : দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশটির ঘটনাস্থল হল সিন্ধু নদীর তীরে অবস্থিত শিবিরের সম্মুখভাগ এবং সময় হল সন্ধ্যাকাল।
২. নাট্যাংশে উল্লিখিত ‘হেলেন’ চরিত্রের পরিচয় দাও।
উত্তর : দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ শীর্ষক নাট্যাংশে উল্লেখিত হেলেন হলেন ঐতিহাসিক চরিত্র সেলুকসএর কন্যা। হেলেনের সঙ্গে পরবর্তীকালে মৌর্যবংশের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্তের বিবাহ হয়েছিল।
৩. ‘রাজার প্রতি রাজার আচরণ!-উদ্ধৃতাংশের বক্তা কে?
উত্তর : দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশ থেকে উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হল রাজা পুরু।
৪. “জগতে একটা কীর্তি রেখে যেতে চাই”—বক্তা কীভাবে এই কীর্তি রেখে যেতে চান? ।
উত্তর : আলােচ্য উক্তিটির বক্তা ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের অধিপতি সেকেন্দার। তিনি বিচিত্র দেশ ভারতবর্ষের সৌম্য, গৌর, দীর্ঘকান্তি জাতির বৈচিত্র্যময় শৌর্যকে তাঁর মহানুভবতা, ক্ষমাধর্মের দ্বারা জয় করে একটি অক্ষয়কীর্তি রেখে যেতে চান।
৫. ‘সম্রাট, আমায় বধ না করে বন্দি করতে পারবেন না। বক্তাকে বন্দি করার প্রসঙ্গ এসেছে কেন?
উত্তর : গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার, যিনি সেকেন্দার হিসেবে পরিচিত, তাঁর শিবিরে শত্রুর গুপ্তচর হয়ে প্রবেশ করেছে। উদ্ধৃতাংশটির বক্তা চন্দ্রগুপ্ত। এই অপরাধে বক্তাকে বন্দি করার প্রসঙ্গটি এসেছে।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :
১. ‘কী বিচিত্র এই দেশ!’-বক্তার চোখে এই দেশের বৈচিত্র্য কীভাবে ধরা পড়েছে?
উত্তর : প্রখ্যাত নাটককার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত নাটকের আলােচ্য উক্তিতে বক্তা সেকেন্দার ‘বিচিত্র দেশ’ ভারতবর্ষের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ ও বিস্মিত। দিনে প্রচণ্ড সূর্য গাঢ় নীল আকাশকে দগ্ধ করে, আবার রাত্রে শুভ্র চাঁদ তার সমস্ত দগ্ধ জ্বালা নিবারণ করে স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নায় স্নান করিয়ে দেয়। অন্ধকার রাতে অগণ্য উজ্জ্বল জ্যোতিঃপুঞ্জে যখন আকাশ ঝলমল করে, তখন তিনি অবাক বিস্ময়ে তা দেখতে থাকেন।
বর্ষাকালে ঘন-কালাে মেঘ গুরুগম্ভীর গর্জনে প্রকাণ্ড দৈত্যসেনার মতাে সমস্ত আকাশ ঢেকে দিলে তিনি নিশ্ৰুপ হয়ে তার সেই ভীষণ রূপ প্রত্যক্ষ করেন। এই দেশের বিশাল নদ- -নদী ফেনিল উচ্ছ্বাসে, উদ্দাম বেগে বয়ে চলেছে। এর মরুভূমি স্বেচ্ছাচারের মতাে তপ্ত বালুরাশি নিয়ে খেলা করছে। এইভাবে তিনি এ দেশের বৈচিত্র্যময় অপরূপ সৌন্দর্য দেখে বিস্মিত ও আনন্দ লাভ করেন।
২. ‘ভাবলাম—এ একটা জাতি বটে।’– বক্তা কে? তাঁর এমন ভাবনার কারণ কী?
উত্তর : প্রশ্নোধৃত উক্তিটির বক্তা হলেন গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার ।
পরাজিত রাজা পুরুর নির্ভীক, নিষ্কল্প উচ্চারণ সেকেন্দারের মনে ভারতীয় রাজাদের প্রতি সমবােধ জাগায়। তিনি তাঁর স্বাধীনচেতা, সাহসী মানসিকতা দেখে শ্রদ্ধাবনত হন। উপলব্ধি করেন, এমন বীরদের বেশিদিন পদানত করে রাখা যাবে না।
বরং এমন মানসিকতাকে সম্মান জানানােই বিচক্ষণতার কাজ। রাজা পুরুর আচরণ, মানসিকতা, সাহস ইত্যাদি সম্রাট সেকেন্দারকে অত্যন্ত আকৃষ্ট করায় তাঁর প্রতি যথাযােগ্য সম্মান দেখাতেই সেনাপতি সেলুকসকে আলােচ্য কথাটি বলেছেন।
৩. ‘এ দিগবিজয় অসম্পূর্ণ রেখে যাচ্ছেন কেন সম্রাট?’—এ প্রশ্নের উত্তরে সম্রাট কী জানালেন?
উত্তর : সেলুকসের প্রশ্নের উত্তরে সম্রাট সেকেন্দার জানালেন, ভারতবর্ষের মতাে বিশাল, বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময় দেশে ‘শৌখিন দিগবিজয়’ সম্পূর্ণ করতে হলে প্রয়ােজন নতুন গ্রিক সৈন্যের। সুদূর ম্যাসিডন থেকে বহু রাজ্য, জনপদ তারা পদতলে দলিত করে এসেছে। ঝড়ের মতাে মহাশত্রু সৈন্যদলকেও তারা ধূমরাশির মতাে উড়িয়ে দিয়েছে।
নিয়তির মতাে অপ্রতিরােধ্য, হত্যার মতাে ভয়ংকর, দুর্ভিক্ষের মতাে নিষ্ঠুর সম্রাট সেকেন্দার তাঁর গ্রিক সৈন্য নিয়ে অর্ধেক এশিয়ায় তাঁর বিজয়পতাকা উড়িয়ে রাখলেও শতদ্রতীরে প্রথম তাঁর বিজয়রথ বাধাপ্রাপ্ত হল। |
৪. ‘ভারতবাসী মিথ্যা কথা বলতে এখনও শিখে নাই।’—বক্তা কে?কোন্ সত্য সে উচ্চারণ করেছে?
উত্তর : আলােচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন মগধের রাজ্যচ্যুত রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্ত।
গ্রিক সেনা আন্টিগােনাস চন্দ্রগুপ্তকে যখন আটক করে সেকেন্দারের কাছে নিয়ে যায়, তখন সেকেন্দার তাঁর অভিপ্রায় ও পরিচয় জানতে চাইলে, চন্দ্রগুপ্ত অকপটে সত্য জানান যে, তিনি মগধরাজ মহাপদ্মের পুত্র। তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ সিংহাসন অধিকার করে তাঁকে নির্বাসিত করে।
তিনি এর প্রতিশােধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে যুদ্ধের কৌশল আয়ত্ত করার চেষ্টায়
ছিলেন। এজন্য তিনি এক শিবিরের পাশে বসে নির্জন শুকনাে তালপাতার ওপরে সম্রাট সেকেন্দারের বাহির চালনা, ব্যুহ রচনা প্রণালী, সামরিক নিয়ম—যা তিনি মাসাধিক কাল ধরে সেনাপতি সেলুকসের কাছ থেকে শিখেছিলেন—সেগুলি লিখে নিচ্ছিলেন।
৫. আমার ইচ্ছা হলাে যে দেখে আসি…’—বক্তার মন কোন্ ইচ্ছে জেগে উঠেছিল? তার পরিণতিই কী হয়েছিল?
উত্তর : উক্তিটির বক্তা মগধের রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্ত। তিনি ম্যাসিডন অধিপতির অদ্ভুত বিজয়বার্তা শুনেছিলেন তিনি অর্ধেক এশিয়া পদতলে দলিত করে ভারতবরে এসেছেন। আর্যকুলশ্রেষ্ঠ পুরুকে পরাজিত করেছেন বক্তা চন্দ্রগুপ্ত সেই পরাক্রম, সেই লুকোনাে শক্তিকে প্রত্যক্ষ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, যার সংঘাতে আর্যের মহীবীর্যও বিচলিত হয়েছে। আসলে বক্ত৷ চন্দ্রগুপ্তের ইচ্ছে, তিনি তাঁর হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার করবেন। সম্রাট সেকেন্দারের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের আলাপবিনিময়ের ইচ্ছাপ্রকাশ তাঁর অদম্য জ্ঞানতৃষার প্রকাশক
সেই কারণে তিনি ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের সেনাপতি সেলুকাসের কাছে যুদ্ধবিদ্যা ও কৌশলশিক্ষা অর্জন করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি তাঁর অর্জিত সামরিক শিক্ষার মাধ্যমে তাঁর হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই চন্দ্রগুপ্তই মৌর্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নন্দ বংশের প্রতিপত্তি খর্ব করে মগধে মৌর্য বংশের ভিত্তি স্থাপন করেন। আলােচ্য প্রসঙ্গে সেই অনিবার্য ঐতিহাসিক পরিণতির সংকেতসূত্র তুলে ধরা হয়েছে।
৪. নীচের উদ্ধৃত অংশগুলির প্রসঙ্গ ও তাৎপর্য আলােচনা করাে :
১. ‘এ শৌর্য পরাজয় করে আনন্দ আছে।’
উৎস : দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ শীর্ষক নাট্যাংশ থেকে উদ্ধৃত পঙক্তিটির বক্তা ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের অধিপতি সেকেন্দার। )
প্রসঙ্গ : সম্রাট সেকেন্দার ভারতবর্ষের বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির রূপ, বনরাজি, পর্বতশ্রেণির সৌন্দর্য বর্ণনার পর এখানকার দীর্ঘ-কান্তি, সাহসী জাতির প্রশংসা প্রসঙ্গে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।
তাৎপর্য : সুবিশাল ম্যাসিডনের সম্রাট সেকেন্দার বিভিন্ন রাজ্য, জনপদ জয় করেছেন। অর্ধেক এশিয়া তাঁর পদানত। প্রকৃত সম্রাটের মতাে তিনিও একটি বীর, সাহসী জাতিকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে আত্মমর্যাদা ও আত্মগৌরব বােধ করেন। যে-জাতির মুখে শিশুর সরলতা, দেহে বজের শক্তি, চক্ষে সূর্যের দীপ্তি, বুকে অসীম সাহস, সেই জাতিকে পরাজিত করলেই প্রকৃত বীরত্বের প্রকাশ, প্রকৃত আনন্দ আস্বাদন করা যায় বলে তিনি মনে করেন।
২. ‘সম্রাট মহানুভব।’
উৎস : দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটক থেকে সংকলিত আলােচ্য উক্তিটির বকা সেনাপতি সেলুকস।
প্রসঙ্গ: বিজিত ভারতবর্ষীয় রাজা পুরুর দুর্জয় সাহস ও বলিষ্ঠ আত্মপ্রত্যয়ের পরিচয় পেয়ে সম্রাট সেকেন্দারের তাঁকে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গেই উপরিউক্ত উক্তিটির অবতারণা করা হয়েছে।
তাৎপর্য: বিজয়ী সম্রাট যদি বিজিত সম্রাটকে উপযুক্ত মর্যাদা, যথাযােগ্য সম্মান প্রদর্শন করেন এবং মানবিকতা ও সহমর্মিতার নিদর্শনস্বরূপ তাঁকে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দেন, তাহলে জগৎব্যাপী তাঁর এই অক্ষয়কীর্তি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। ম্যাসিডনের সম্রাট সেকেন্দারও পুরুকে রাজ্য ফিরিয়ে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে তাঁর সেই মহানুভবতার পরিচয় রেখেছেন, এবং তাঁর অক্ষয়কীর্তিকে অমর করে রেখেছেন। সম্রাট সেকেন্দারের উদারতা, সত্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা ও মানবিকবােধ ইত্যাদি গুণের জন্য তাঁকে যথার্থ মহানুভব বলা যায় ।
৩. ‘বাধা পেলাম প্রথম—সেই শতদ্রুতীরে।’
উৎস: আলােচ্য উদ্ধৃতাংশটি নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশ থেকে সংকলিত হয়েছে।
প্রসঙ্গ : সম্রাট সেকেন্দার গ্রিক সৈন্যের বীরত্ব তথা পৃথিবীব্যাপী তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তারের কাহিনি প্রসঙ্গে প্রশ্নোপ্ত মন্তব্যটি করেছেন।
তাৎপর্য : গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার বেরিয়েছিলেন শৌখিন দিগবিজয়ে। তাঁর ইচ্ছা, জগতে একটি কীর্তি রেখে যাওয়ার। সেই উদ্দেশে তিনি একের-পর-এক দেশ জয় করে চলেছিলেন। সুদূর ম্যাসিডন থেকে বহু রাজ্য, জনপদকে তিনি ঘাসের মতাে পায়ে মাড়িয়ে, ধুলাের মতাে উড়িয়ে দিয়ে অর্ধেক এশিয়াকে পদানত করে অবশেষে তাঁর দিগবিজয়ের পথে প্রথম বাধা পেলেন শতদ্রু নদীর তীরে এসে। উক্তিটির মধ্যে দিয়ে বক্তার বিজয়বাসনার উচ্চাশার পরিচয় পাওয়া যায়।
চন্দ্রগুপ্ত নাটকের প্রশ্ন উত্তর class 8
৪. ‘আমি তারই প্রতিশােধ নিতে বেরিয়েছি।’
উৎস: আলােচ্য উক্তিটি নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। উক্তিটির বক্তা হলেন রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্ত।
প্রসঙ্গ : সম্রাট সেকেন্দার চন্দ্রগুপ্তের কাছে গ্রিক সৈন্যদের সামরিক কৌশল ও যুদ্ধবিগ্রহের নীতি শেখার কারণ জানতে চাইলে, মগধের রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্ত তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা জানানাের প্রসঙ্গে প্রশ্নালােচিত মন্তব্যটির অবতারণা করেছেন।
তাৎপর্য : চন্দ্রগুপ্তকে তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ সিংহাসনচ্যুত করে নির্বাসিত করেছে। তাই হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার করার জন্যই চন্দ্রগুপ্ত গ্রিক সেনাপতি সেলুকসের কাছ থেকে গােপনে এবং তাঁর অজান্তেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এটিই তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
৫. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে :
১. নাট্যাংশটি অবলম্বনে ঐতিহাসিক নাটকের পরিবেশ সৃষ্টিতে নাটককারের দক্ষতার পরিচয় দাও।
উত্তর : নাটককার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ শীর্ষক নাট্যাংশে নাটককার চরিত্রচিত্রণ, ঘটনার বিন্যাস, মঞ্চসজ্জা, পরিচ্ছদ কল্পনা ও পরিবেশের যথাযথ পরিস্ফুটনে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আলােচ্য নাটকে ঐতিহাসিক চরিত্র সেকেন্দার, সেলুকস, চন্দ্রগুপ্ত, হেলেন প্রমুখের চরিত্র পরিস্ফুটনে নাটককার
ইতিহাসের কাহিনিকে যথাযথ অনুসরণ করেছেন। ঐতিহাসিক নাটকের চরিত্র ও ঘটনা ইতিহাসকে যেন ছাপিয়ে না-যায়, তার প্রতিও তিনি সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন। আলােচ্য নাটকে সেকেন্দারের জবানিতে ‘সত্য সেলুকস! কী বিচিত্র এই দেশ! এবং ভারতবর্ষীয় রাজা পুরুর সঙ্গে গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডারের যুদ্ধের যে-বর্ণনা লেখক দিয়েছেন, তা-ও ইতিহাস অনুসারী বলা যায়। সেই দিক থেকে ঐতিহাসিক নাটকের পরিবেশ সৃষ্টিতে আলােচ্য নাট্যাংশে লেখক তাঁর দক্ষতার নিদর্শন দিয়েছেন।
মঞ্চসজ্জার বিষয়েও নাটককার যথাযথ নির্দেশ দিয়েছেন। আলােচ্য নাট্যাংশে মসজ্জা ও নির্দেশনা বিষয়ে নাটককার স্থান হিসেবে সিন্ধু নদীতট, দূরের গ্রিক জাহাজশ্রেণি এবং কাল হিসেবে সন্ধ্যা নির্দেশ করেছেন। নদীতটে শিবির-সম্মুখে সেকেন্দার ও সেলুকস অস্তগামী সূর্যের দিকে চেয়েছিলেন। হেলেন সেলুকসের হাত ধরে তাঁর পার্শ্বে দণ্ডায়মান। সূর্যরশ্মি তাঁর মুখের ওপর এসে পড়েছিল।
এখানে নাটককার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ইতিহাসকে অক্ষুন্ন রেখে নাটকের পরিবেশ সৃষ্টিতে তাঁর কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। স্থান, কাল, নাটকের প্রেক্ষিত রচনাতেও তিনি তাঁর কুশলতার পরিচয় দিয়েছেন। সম্রাট সেকেন্দার যে ভারতবর্ষীয় রাজা পুরুর কাছে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং যুদ্ধজয়ের পরেও তিনি তাঁর রাজত্ব প্রত্যর্পণ করেন—সবকিছুতেই ইতিহাস রক্ষিত হয়েছে বলা যায় এবং এখানেই নাটককারের কৃতিত্ব।
২. নাট্যাংশে সেকেন্দার’ ও ‘সেলুকস’-এর পরিচয় দাও। সেকেন্দারের সংলাপে ভারত-প্রকৃতির বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ কীভাবে ধরা দিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর : সেকেন্দার : নাটককার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত নাট্যাংশের প্রধান চরিত্র হল সেকেন্দার। তিনি ম্যাসিডনিয়ার সম্রাট। তিনি জগতে অক্ষয় কীর্তিস্থাপনের উদ্দেশ্যে দিগবিজয় করতে বের হয়েছেন। তিনি ছিলেন এক মহানুভব সম্রাট। তাই ভারতবর্ষীয় সম্রাট পুরুর দৃঢ়চেতা মনের পরিচয় পেয়ে তিনি তাঁকে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছেন। সৈন্যাধ্যক্ষ তাঁর সামনেই স্পর্ধিত মনােভাব দেখালে, তাঁকে নির্বাসিত করেছেন। আবার গুপ্তচর সন্দেহে ধরে আনা চন্দ্রগুপ্তের বীরত্বে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন।
সেলুকস : দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হল সেলুকস। তিনি গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের সেনাপতি ও একান্ত অনুগত ছিলেন। সম্রাট পুরুকে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দিলে তিনি তা সম্রাটের মহত্ত্ব হিসেবেই দেখেছেন। তাঁর আত্ব মর্যাদাবােধ ছিল প্রখর। তাই আন্টিগােনস তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বললে তিনি তাঁকে শাস্তি দিতে তরবারি বার করেছিলেন।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য : গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার দিগবিজয়ে এসে ভারত প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় রূপ দেখে বিস্মিত হয়েছেন। দিনে প্রখর সূর্যকিরণ আকাশকে পুড়িয়ে দেয়, আবার রাতের শুভ্র চন্দ্রিমা তাকে ম্লান করে দেয় । অমাবস্যার রাতে অসংখ্য জ্যোতিঃপুঞ্জে আকাশকে ঝলমল করতে দেখে সম্রাট বিস্মিত হন। গুরুগম্ভীর গর্জনে প্রকাণ্ড দৈত্যসৈন্যের মতাে ঘন কৃয় মেঘ। আকাশ ঢেকে দেয়।
ভারতবর্ষের উত্তরে যে অভ্রভেদী তুষারাবৃত হিমাদ্রি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যে নদনদী ফেনিল উদ্দামে ছােটাছুটি করছে এবং যে মরুভূমি তপ্ত বালুকারাশি নিয়ে একলা রয়েছে, তা তিনি বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখেন। কোথাও তালবন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও বা বটবৃক্ষ থেকে স্নেহছায়া ঝরে পড়ছে।
আরো দেখো: ৮ম শ্রেণীর বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্নোত্তর
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, তোমাদের বাংলা বোর্ড বই থেকে চন্দ্রগুপ্ত নাটকের প্রশ্ন উত্তর class 8 উপরে আলোচনা করা হয়েছে। তোমরা চাইলে পিডিএফে এই সম্পূর্ণ নোটটি ডাউনলোড করে নিতে পারো। এর জন্য ওপরে দেওয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করো। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post