চলো বৃত্ত চিনি ৭ম শ্রেণির গণিত ৮ম অধ্যায় : ছবিগুলো লক্ষ করো। প্রতিদিন আমরা এই ধরনের কিছু জিনিস দেখি ও ব্যবহার করি। ছোট বেলায় এই ধরনের কিছু বস্তু তৈরি করে খেলা-ধূলাও করেছি তাইনা? প্রত্যেকটি ছবিতেই একই ধরনের একটি জ্যামিতিক আকৃতি দেখা যাচ্ছে। ভেবে দেখতো এই ধরনের জ্যামিতিক আকৃতিকে কী বলা হয়? হ্যী ঠিকই ভাবছো? জ্যামিতিক আকৃতিটি বৃত্তাকার।
একটি পিন, একটি পেনসিল, দুইটি ছোট ছিদ্রসহ একটি আয়তাকার কাগজ সংগ্রহ করি। এবার নিচের চিত্র অনুযায়ী এগুলো ব্যবহার করে খাতায় একটি বক্ররেখা অঞ্জন করি। আমরা যদি একবার গোলাকারে পেনসিলটি ঘুরিয়ে আনি, তাহলে কেমন আকৃতি তৈরি হবে? আমরা যদি একবার পেনসিলটিকে গোলাকারে ঘুরিয়ে আনি, তাহলে একটি সুন্দর গোল আকৃতি পাব। এই গোল আকৃতিটিকে বৃত্ত বলা হয়।
চলো বৃত্ত চিনি ৭ম শ্রেণির গণিত ৮ম অধ্যায়
কাগজ কেটে বৃত্ত বানাই একটি সাদা বা রঙ্গিন কাগজের উপর কাপ বা থালা বা গ্লাস উপুর করে রাখি। এক হাত দিয়ে বস্তুটি চেপে ধরে অপর হাত দিয়ে একটি কলম বা সরু পেন্সিলের মাধ্যমে বস্কুটির গী ঘেষে নিচের চিত্রের মতো চারদিক ঘুরিয়ে দাগ দিই। এবার বস্তুটি সরিয়ে নিলে কাগজে একটি গোলাকার আবদ্ধ বক্ররেখা দেখা যাবে।
হলুদ কাগজে আকা গোলাকার আবদ্ধ বক্ররেখাটিকে আমরা বৃত্ত (circle) বলে থাকি। বৃত্তের কোনো শীর্ষবিন্দু থাকে না। তোমরা কী বলতে পারবে, কেন বৃত্তের শীর্ষবিন্দু থাকে না? আমরা জানি, ত্রিভুজের তিনটি, চতুর্ভূজের চারটি শীর্ষবিন্দু থাকে, তাই না? এভাবে পঞ্চভুজের পাঁচটি, ষড়ভুজের ছয়টি ইত্যাদি।
চলো বৃত্ত চিনি
অর্থাৎ বহভুজের বাহর সংখ্যা যত হবে তার শীর্ষবিন্দুর সংখ্যা ঠিক ততই হবে। কোনো বহুভূজের বাহুর সংখ্যা অসীম হলে তার শূর্ষবিন্দুর সংখ্যাও অসীম হবে। তখন বহুভূজটির বাহগুলো একটি আবদ্ধ বক্ররেখা বা বৃত্তে পরিণত হয়।
দড়ি ও পেরেক ব্যবহার করে মাটির উপর বৃত্ত বানাই দিশা দড়ি ও পেরেক ব্যবহার করে মাটির উপর বৃত্ত আকার সিদ্ধান্ত নেয়। দড়ির দুই প্রান্তে দুইটি পেরেক বেঁধে নেয়। এবার সে তার বন্ধু মিতাকে দড়ির এক প্রান্তে বাঁধা পেরেকটি মাটির সাথে চেপে ধরতে বলে। দিশা দড়ির অপর প্রান্তে বাঁধা পেরেকটি টেনে ধরে মাটির উপর একটি বৃত্ত তৈরি করে। তাদের তৈরি করা বৃত্তটি নিচের চিত্রের মতো।
দলগত কাজ:
কতগুলো ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের দড়ি ব্যবহার করে মাটিতে দিশার মতো বৃত্ত তৈরি করো। দলগুলোর নাম দাও। প্রত্যেক দলের তৈরি করা বৃত্তগুলো পর্যবেক্ষণ করো এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খাতায় লিখ।
- কোন দল সবচেয়ে ছোট বৃত্ত তৈরি করেছে এবং তাদের ব্যবহার করা দড়ির দৈর্ঘ্য কত মিটার?
- কোন দল সবচেয়ে বড় বৃত্ত তৈরি করেছে এবং তাদের ব্যবহার করা দড়ির দৈর্ঘ্য কত মিটার?
- দড়ির দৈর্ঘ্য বেশি হলে বৃত্তটির আকার কীরূপ হবে, যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করো।
এভাবে আঁকা বৃত্তগুলো একেবারে নিখুঁত নাও হতে পারে। তবে পেন্সিল-কম্পাস ব্যবহার করে আমরা নিখুঁতভাবে বৃত্ত অঞ্জন করতে পারি। সেক্ষেত্রে কম্পাসের কাঁটাটি কাগজের উপর চেপে ধরে অপর প্রান্তে সংযুক্ত পেন্সিলটি কাগজের উপর চারদিকে ঘুরিয়ে আনলেই একটি বৃত্ত আকা হয়ে যাবে, যেমনটি চিত্রে দেখানো হয়েছে।
এক্ষেত্রে কাগজের উপর যে বিন্দুতে কম্পাসের কাঁটাটি চেপে ধরেছ, সেই বিন্দুটিই হবে বৃত্তটির কেন্দ্র (centre)| তাহলে, পাশের চিত্রের 0 বিন্দু বৃত্তটির কেন্দ্র হবে আর যে বক্ররেখাটি বৃত্তকে আবদ্ধ করে রেখেছে তাকে বলা হয় পরিধি (circumference) এবার চলো O বিন্দু থেকে কাগজের উপর আঁকা আবদ্ধ বক্ররেখা অর্থাৎ বৃত্তটির দূরত্ব মেপে দেখি। এই দূরত্ব মাপার জন্য আবদ্ধ বক্ররেখাটির উপর কয়েকটি বিন্দু A, B, C নিয়ে কেন্দ্র থেকে বিন্দুগুলো পর্যন্ত রেখাংশগুলো আক।
এবার স্কেলের সাহায্যে OA, OB এবং OC রেখাংশগুলোর দৈর্ঘ্য পরিমাপ করো। কী লক্ষ করলে? দৈর্ঘ্যগুলো কি সমান? রেখাংশগুলোর প্রত্যেকটিই তোমার আকা বৃতটির ব্যাসার্ধ (radius)। সুতরাং আমরা বলতে পারি, আবদ্ধ বক্ররেখা বা বৃত্তের উপরস্থ যেকোনো বিন্দু বৃত্তটির কেন্দ্র থেকে সমদূরবর্তী এবং কোনো বৃত্তের সকল ব্যাসার্ধই পরস্পর সমান।
বৃত্তের ব্যাসার্ধ মাপি
পেনসিল-কম্পাস দিয়ে তুমি যখন খাতায় বৃত্ত আক, তখন খুব সহজেই বৃত্তটির কেন্দ্র চিহ্নিত ও ব্যাসার্ধ পরিমাপ করতে পারো। কিন্তু আমাদের চার পাশে ছোট-বড় অনেক বৃত্তাকার জিনিসপত্র দেখা যায় যাদের কেন্দ্র চিহ্নিত নাই বিধায় ব্যাসার্ধ সহজে পরিমাপ করতে পারি না। সেক্ষেত্রে পেনসিল-কম্পাস ছাড়াও বিকল্প ভাবে বৃত্তাকার বন্ধুর ব্যাসার্ধ পরিমাপ করা যাবে। জোড়ায় কাজ: বোতলের ছিপির ব্যাসার্ধ মাপি শিক্ষকের নির্দেশনা মতো দলের প্রত্যেকেই কমপক্ষে তিনটি করে একই মাপের ছিপি সংগ্রহ করে নিয়ে আসবে।
এবার ধারাবাহিকভাবে নিচের কাজগুলো করো:
ধাপ-১: কাগজের উপর ছিপিগুলো পাশাপাশি সাজাও। ছিপিগুলো প্রত্যেকটির সাথে প্রত্যেকটি যেন মিশে থাকে। সোজা বোঝার জন্য চিত্রের মতো দুই পাশে দুটো কাঠি দিয়ে আটকে দাও।
ধাপ-২: এবার যেখান থেকে ছিপি সাজানো শুরু হয়েছে এবং যেখানে ছিপি সাজানো শেষ হয়েছে সেই পর্যন্ত একটা স্কেলের সাহায্যে মেপে নাও। প্রাপ্ত ফলাফলটি খাতায় লিখে রাখো। মাপার সময় কাঠি বা বইয়ের এক ধারের সাহায্য নেয়া যেতে পারে ছিপিগুলো বসানো সোজা হয়েছে কিনা বোঝার জন্য।
ধাপ-৩: থেকে প্রাপ্ত ফলাফলকে ছিপির সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলেই প্রতিটি ছিপির ব্যাসের দৈর্ঘ্য পাওয়া যাবে। আর প্রতিটি ছিপির ব্যাসের অর্ধেকই হলো ব্যাসার্ধ।
বৃত্তের কেন্দ্র নির্ণয়
তুমি তোমার দৈনন্দিন জীবনে অনেক রকমের বৃত্তাকার জিনিপত্র ব্যবহার করো, যা দ্বারা তুমি চাইলে অতি সহজেই বৃত্ত আকতে পারবে। কিন্তু কেন্দ্র সহজে চিহ্নিত করা যায় না। তাইনা? কেন, ভেবে দেখেছো কী? চলো, কোনো বৃত্তের কেন্দ্র নির্ণয়ের কয়েকটি উপায় খুঁজি। ইতিমধ্যে সামির এবং মীরা বৃত্তের কেন্দ্র নির্ণয়ের দুইটি উপায় খুঁজে পেয়েছে। আরো কোনো উপায়ে বৃত্তের কেন্দ্র নির্ণয় করা যায় কিনা এবার তোমাকে চিন্তা করে বের করতে হবে। সামির ও মীরা দুজনেই বৃত্ত তৈরি করছে।
বস্তুর ভারসাম্য করণ
গণিত শিক্ষক রফিক স্যার মীরার কাছে জানতে চায় বৃত্তের কেন্দ্র কেন প্রয়োজন? মীরা তৎক্ষণাত উত্তর দিতে পারল না। স্যার বললেন কোনো সমস্যা নিই। এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য একটি খেলা খেললে কেমন হয়। খেলাটি কিন্তু খুবই মজার। খেলাটি হলো- তোমার একটা আঙুলের ডগায় তোমার খাবার থালা বা গোলাকার চাকতি নিচের চিত্রের মতো ধরে রাখতে হবে। প্রথমবার অন্তত ১০ সেকেন্ড রাখতে পারলেই হবে। তার আগে মাটিতে পড়তে দেওয়া যাবে না।
কী! ১০ সেকেন্ডের আগেই মাটিতে পড়ে গেল? আবার চেষ্টা করো। কয়েকবার চেষ্টার পর মীরা থালাটির কেন্দ্র খুঁজে পেল এবং থালাটি তার আঙুলের ডগায় ১০ সেকেন্ডের বেশি সময় রাখতে পারে। বার্ষিক ক্রিড়া অনুষ্ঠানে মাথায় হাঁড়ি নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতার কথা তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে। ব্যাপারটা একটু ভেবে দেখতো উপরের আছে কিনা?
একক কাজ: মীরার মতো তোমরা প্রত্যেকেই একবার চেষ্টা করে দেখতে পারো।
কাগজ কেটে লাটিম বানাই
বৃত্তের কেন্দ্র কেন প্রয়োজন চলো আরো একটি কাজের মাধ্যমে জেনে নিই। আমরা কাগজের লাটিম বানাই এবং কার লাটিম কত বেশি ঘুরে পরীক্ষা করে দেখি। দলগত কাজ: রফিক স্যারের নির্দেশনায় শ্রেণিতে চার সদস্যবিশিষ্ট কয়েকটি দল গঠন করা হলো। সামির, মীরা, আকাশ ও প্রিয়াঙ্কা (শাপলা) দলের সদস্য। স্যার শিক্ষার্থদের উদ্দেশ্যে বললেন – প্রথমে একটি কার্ডবোড বা অন্য কোনো শক্ত কাগজ নাও। কাগজে একটি বৃত্ত আক। এবার বৃত্তক্ষেত্ৰলটা কাঁচি দিয়ে কেটে নাও।
বৃত্ত আকৃতির কাগজের উপর একটা ছিদ্র করে তার মধ্যে দিয়ে একটা দেয়াশলাইয়ের কাঠি ঢুকাও। ব্যস তৈরি হয়ে গেল তোমাদের প্রত্যেকের লাটিম। ছবি দেখে তোমরা কী বলতে পারবে কার লাটিম বেশিক্ষণ ঘুরবে? নিজেরাই এরকম বিভিন্ন লাটিম তৈরি করে ঘুরিয়ে দেখো। দেয়াশলাইয়ের কাঠিটি বৃত্ত আকৃতির লাটিমের কোথায় থাকলে লাটিম সবচেয়ে বেশি সময় ঘুরবে বলতে পারো? কেন ঘুরবে দলে আলোচনা করো।
বৃত্তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল (Area of a Circle)
মীরা সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার স্কুলের সামনের মাঠটিও অনেক বড়। মাঠে প্রতিদিন সকালে সমাবেশ হয়। মাঠের ছোট ছোট সবুজ ঘাসগুলোর আলতো ছোঁয়ায় মীরার মনটা কেন জানি আনন্দে ভরে ওঠে। মাঠের পাশে ঠিক তার শ্রেণিকক্ষের দেওয়ালের সাথে যে বৃত্তাকার খোলা জায়গাটুকু আছে সেখানে একটি ফুলের বাগান করার কথা অনেক দিন ধরেই মীরা ভাবছিল।
একদিন সে ক্লাসের গণিত শিক্ষককে তার ইচ্ছার কথা জানায়। মীরার কথা শুনে ক্লাসের সহপাঠীরা একত্রে শিক্ষকের কাছে বাগান করার আবেদন করে। শিক্ষক তাঁর প্রিয় শিক্ষার্থীদের কথা শুনে খুব খুশি হয়। তিনি প্রধান শিক্ষক মহোদয়কে শিক্ষার্থীদের ইচ্ছার কথা বলেন এবং অনুমতি পেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ স্থানে যান। স্থানটি প্রায় ৭ মিটার ব্যাসার্ধে একটি বৃত্তাকার জায়গা।
তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, আমরা যদি এখানে ফুলের বাগান করি, আমাদের বাগানটিকে পরিচর্যা করতে হবে, সার দিতে হবে। সার কেনার জন্য প্রতি বর্গমিটারে কি পরিমাণ সার লাগবে তা জানতে হবে। তোমরা কি বলতে পারবে এই ধরনের ক্ষেত্রে আমাদের কী খুঁজে বের করতে হবে? জমিটির পরিধি না এলাকা? প্রায় সকল শিক্ষার্থীই এক সাথে বলে, আমাদের প্রথমে এলাকা বা জমির ক্ষেত্রফল বের করতে হবে। আমরা তা কীভাবে নির্ণয় করবো?
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির গণিত সকল অধ্যায়ের সমাধান
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, ওপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে তোমার চলো বৃত্ত চিনি ৭ম শ্রেণির গণিত ৮ম অধ্যায় সমাধান ২০২৪ সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post