আজকাল প্রায়ই সব বয়সের পুরুষ ও মহিলাদের চুল পড়া এর মতো সমস্যা হতে শুরু করেছে। এত বেশী মানুষের চুল পড়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তির বিভিন্ন কারণে চুল উঠে। যে কারণে চুল উঠছে সেই কারণ খুঁজে বের করার জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করতে হবে। যা অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না। আমরা আপনাদের জন্য এমন কিছু চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধ এর নাম নিয়ে এসেছি যে ঔষধগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে চুল পড়া কমানো সম্ভব।
চুল পড়ার জন্য শত রকমের কারণ রয়েছে। তেমনই সেই শত রকমের কারণের জন্য শত রকমের চিকিৎসাও রয়েছে। অনেকেরই পক্ষে এই ধরনের চিকিৎসার খরচ ব্যয়-বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কিছু ঔষধ বের করেছেন যে ঔষধগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে নারী ও পুরুষ যে কারোরই চুল পড়া বন্ধ হওয়ার জন্য কাজে দিবে।
চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধ এর নাম
চুল পড়া বন্ধ করার জন্য শত রকমের ঔষধ রয়েছে। তবে সেই ঔষধগুলো সকলের জন্য কার্যকর না। কোন ব্যক্তির যে ঔষধ কাজে দিবে আবার কোন ব্যক্তির সে ঔষধ কাজে দিবে না। তবে এমন কিছু ঔষধ রয়েছে যে ঔষধগুলো যে কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কাজে দেয়।
চুল পড়া বন্ধ করার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত গবেষণা করা যাচ্ছে। তবে তারা কিছু ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন যে ঔষধগুলো যথেষ্ট কার্যকর। ইতিমধ্যে এই ঔষধগুলো ব্যবহার করে অনেকে উপকৃত হয়েছে। সেই ঔষধগুলো হচ্ছে-
১. মিনোক্সিডিল
২. ফিনাস্টেরাইড
৩. বিভিন্ন মাল্টিভিটামিন জাতীয় ঔষধ
উপরোক্ত ঔষধগুলোর মধ্যে মিনোক্সিডিল ও ফিনাস্টেরাইড হচ্ছে হরমোনাল জাতীয় ঔষধ। মাল্টিভিটামিন হচ্ছে বিভিন্ন ভিটামিন জাতীয় ঔষধ।
১. মিনোক্সিডিল
হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে রোগীরা সাধারণত এই ঔষধটি খেয়ে থাকে। এই ঔষধটি ট্যাবলেট ও তরল উভয় আকারেই পাওয়া যায়। যারা হাইপার টেনশন বা অন্যান্য রোগের কারণে ঔষধটি ব্যবহার করেন তারা এই ঔষধটি সরাসরি খেয়ে থাকেন।
বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধি ঠিক রাখতে ও মাথায় টাক পড়া কমাতে এই ঔষধ কাজ করে। পুরুষ ও মহিলা উভয়ই এই ঔষধ ব্যবহার করতে পারবে। তরল মিনোক্সিডিল মাথার চুল পাতলা হয়ে যাওয়া, পুরুষদের মাথায় টাক পড়া ও চুল পড়া বন্ধ করার মতো সমস্যায় ব্যবহৃত হয়।
মিনোক্সিডিল এর ব্যবহার: ঔষধটি চিকিৎসকের পরামর্শে অথবা ঔষধের গায়ে লেখা নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। দৈনিক অন্তত একবার এই ঔষধটি মাথার তালুর মধ্যে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে লাগাতে হবে। এভাবে চারমাস এক নাগাড়ে লাগাতে হবে। চার মাসের কম ব্যবহার করলে এই ঔষধ ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
মিনোক্সিডিল এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: তেলের মতো করে ব্যবহার করলে এই ঔষধ কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। তবে সরাসরি খেলে এই ঔষধ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই সরাসরি খেলে ডাক্তারের পরামর্শে খাওয়া উচিত। এই ঔষধের ক্ষতিকর প্রভাব সমূহ হচ্ছে-
- গর্ভাবস্থায় কিংবা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালে এই ঔষধ বাচ্চার উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
- শরীরের অন্যান্য অংশের চুল বৃদ্ধি পাওয়া। যেমন- মুখ হাত ও পিঠের।
- হৃৎপিণ্ডের হার মেনে নেওয়া
- ওজন বেড়ে যাওয়া
- বুকে ব্যথা হওয়া
- নিঃশ্বাসে অসুবিধা হওয়া
- ত্বক লাল হয়ে যাওয়া
- মাথা ব্যথা
এই ঔষধ খাওয়ার ফলে সবার যে একই সমস্যা হবে তা নয়। অনেকজনের অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। তাই আমরা সাজেস্ট করি এই ঔষধটি তেলের মতো করে ব্যবহার করুন। তার পাশাপাশি সরাসরি খেতে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এই ঔষধটি খান।
২. ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধ এর নাম ফিনাস্টেরাইড
ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধ এর নাম হচ্ছে ফিনাস্টেরাইড। পুরুষদের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রথমে মাথার সামনের অংশে চুল পড়া শুরু হয় এবং আস্তে আস্তে মাথায় টাক পড়ে যায়। মাথার সামনের অংশে চুল পড়া শুরু হলে কিংবা চুল পাতলা হওয়া শুরু হলে এই ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন।
ফিনাস্টেরাইড এর ব্যবহার: মিনোক্সিডিল এর মতো ফিনাস্টেরাইডও দুইভাবে ব্যবহার করা যায়। সরাসরি খেয়ে অথবা মাথার তালুতে ম্যাসাজ করার মাধ্যমে। তবে বাজারে ফিনাস্টেরাইড এর যেসব তরল ঔষধ পাওয়া যায় সেগুলোতে ফিনাস্টেরাইড এর পাশাপাশি মিনোক্সিডিলও মিশ্রিত থাকে।
সরাসরি এই ঔষধ খেতে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। তবে তরল ফিনাস্টেরাইড মাথায় ব্যবহার করতে পারেন। দৈনিক অন্তত একবার ব্যবহার করতে হবে এই ঔষধ। এভাবে ৬/১২ মাস ব্যবহার করার পরে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে।
ফিনাস্টেরাইড এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: ফিনাস্টেরাইড ঔষধ সরাসরি খেলে অনেক ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায়। তাই সরাসরি ঔষধ খেতে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে। এই ঔষধ খাওয়ার ফলে যা যা সমস্যা হয়ে থাকে-
- মাথা ব্যথা
- এলার্জি হওয়া
- চামড়াতে ফুসকুড়ি হওয়া
- বুকে ব্যথা
- এডিমা
- চর্মরোগ
সকলেরই যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিবে এমন নয়। তবে যাদের মূত্রাশয়ের সমস্যা, প্রোস্টেটে সমস্যা কিংবা মূত্রনালির সমস্যা আছে তাদের এই ঔষধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৩. বিভিন্ন মাল্টিভিটামিন জাতীয় ঔষধ
চুলের বৃদ্ধি সঠিকভাবে করার জন্য, চুল পড়া রোধ করার জন্য ও চুল যাতে তার কার্যক্রম সঠিকভাবে চালাতে পারে তার জন্য কিছু ভিটামিনের প্রয়োজন পড়ে। মাল্টিভিটামিন জাতীয় চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধ এর নাম সাধারণত বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। আপনারা উক্ত ভিটামিন জাতীয় যে কোন ধরনের ঔষধই খেতে পারেন। উক্ত ভিটামিনগুলো হচ্ছে-
- জিঙ্ক
- সেলেনিয়াম
- ভিটামিন ই
ভিটামিন ই খাওয়াও যায় আবার ক্যাপসূল গুলো থেকে তরল ঔষধটা বের করে মাথায় ব্যবহার করা যায়। এভাবে ৩/৪ মাস ব্যবহার করতে হবে। ভিটামিন ই ব্যতীত অন্যান্য ঔষধগুলো সরাসরি খাওয়াই ভালো।
চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি চুল রাখতে হবে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন। সেই সাথে নিতে হবে চুলের যত্ন। তাহলেই চুল পড়া বন্ধ হবে। চলুন এই বিষয়ে কিছু জেনে আসি।
চুল পড়া বন্ধের ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি আরও যা যা করতে হবে
চুল পড়া বন্ধের জন্য শুধু ঔষধ খেলেই হবে না। চুলের যত্নও নিতে হবে। তাহলেই চুল তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য ফিরে পাবে। আমরা যদি শুধু ঔষধই গ্রহণ করি কিন্তু কিন্তু চুলের যত্ন না নিয়ে থাকি তাহলে চুল পড়া বন্ধ হতে অনেক সময় লেগে যায়।
চুলের যত্ন হিসেবে প্রথমে আমাদের চুলের খুশকি ও উকুন দূর করে চুলকে পরিষ্কার রাখতে হবে। এজন্য প্রথমে খুশকি দূর করার উপায় ও উকুন দূর করার উপায় গুলো জানতে হবে। তারপর সেই অনুযায়ী কাজ করে চুল পরিষ্কার রাখতে হবে। তার পাশাপাশি নতুন চুল গজানোর উপায় গুলো জেনে নতুন চুল গজানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
সবশেষে যা জানা দরকার
চুল পড়া, মাথা টাক হয়ে যাওয়া ও চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা আজকাল প্রায়ই সকলেরই হতে শুরু করেছে। এমনটা হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আমাদের লাইফস্টাইল এর পরিবর্তন। আমাদের খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, দৈনন্দিন কার্যক্রম ও শরীরের যত্ন সবই অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। আগে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। তারপরও যদি দেখেন যে চুল পড়ে থাকে তাহলে চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধ এর নাম কি তা জেনে সেই অনুযায়ী কাজ করুন। ইনশাল্লাহ আপনার চুল পড়া কমে যাবে।
Discussion about this post