আজকে প্রায়ই সকল বয়সী ব্যক্তিরাই চুল পড়ার মতো সমস্যায় ভুক্তভোগী। মাথা থেকে চুল পড়া স্বাভাবিক একটি স্বাভাবিক বিষয় কিন্তু সমস্যা বাধে তখন, যখন স্বাভাবিকের চেয়ে চুল পড়ার মাত্রা বেড়ে যায়। তার ফলে চুল পাতলা হতে শুরু করে ও মাথায় চুলের পরিমাণ অনেক কমে যায়। চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায় গুলোর মাধ্যমে চুল পড়া কমানো সম্ভব। আজকে আমরা সেগুলোই আলোচনা করবো।
চুল পড়া বন্ধ করার জন্য দুই ধরনের উপায় অনুসরণ করা যায়। একটি হচ্ছে চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধ খাওয়া অন্যটি হচ্ছে চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধ না খেলে কিংবা নিয়ম অনুযায়ী খাওয়ার পরেও শরীরে এর ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যার কারণে আজ অধিকাংশ মানুষ চুল পড়া বন্ধের জন্য প্রাকৃতিক উপায়গুলোর দিকে ধাবিত হচ্ছে।
চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায়
চুল পড়ার অনেক কারণ রয়েছে। তা হতে পারে জন্মগত ভাবে, লাইফস্টাইলের ফলে, অধিকহারে ক্যামিকেল ব্যবহার করার ফলে কিংবা ঠিকমত চুলের যত্ন না নেওয়ার কারণে। যে কারণেই চুল পড়া শুরু হোক না কেন আমাদের নিতে হবে চুলের যত্ন, লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে খাওয়া-দাওয়া ও ঘুম সময়মত করতে হবে, সেই সাথে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। উক্ত নিয়মগুলো পালন করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপায়গুলো অনুযায়ী নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তাহলেই চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব।
চুল পড়া এটি স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু যখন মূল সমস্যা তখন বাধে যখন নতুন চুল গজায় না ও চুল পড়ার পরিমাণ অনেক বেশী বেড়ে যায়। চুল পড়ার পরিমান কীভাবে কমাবেন তা আজকে এখানে জানানো হবে। তবে, তার পাশাপাশি যদি আপনার নতুন চুল কম গজায় তাহলে নতুন চুল গজানোর উপায় জেনে নতুন চুল গজানোও শুরু করতে হবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করে চুল পড়া কমাবেন।
১. অ্যালোভেরা জেল
যেকোন ধরনের স্কিন সল্যুশন, রূপচর্চা কিংবা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মতো সকল কাজে অ্যালোভেরা জেল প্রচুর কাজে লাগে। চুল পড়া বন্ধে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে চাইলে আগে চুল শ্যাম্পু করে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর হাতে অ্যালোভেরা জেল নিয়ে মাথার তালুতে ১০ মিনিট ভালোভাবে মালিশ করতে হবে। সপ্তাহে অন্তত দুদিন করে তিনমাস এভাবে ব্যবহার করতে হবে।
অন্য উপায়ে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারের নিয়ম: উক্ত উপায় ছাড়াও অ্যালোভেরা জেল আরও ভিন্ন উপায়েও ব্যবহার করা সম্ভব। তার জন্য অ্যালোভেরা জেল নিয়ে ব্লেন্ড করে মাথার ত্বকে এক ঘণ্টা লাগিয়ে রাখতে হবে। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। উক্ত উপায়ে মাথার ত্বকের চুলকানি, এলার্জি স্কিন ও চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব।
২. মেথি চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায়
মেথির মাধ্যমেও চুল পড়া কমানো সম্ভব। মেথির মাধ্যমে চুল পড়া কমাতে চাইলে একটি বাটিতে অল্প পরিমান মেথি নিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরের দিন তা ব্লেন্ডারে পেস্ট করে সরাসরি চুলে ও মাথার তালুতে ভালোভাবে লাগাতে হবে। উক্ত উপায়ে সপ্তাহে অন্তত দুদিন মেথি ব্যবহার করতে হবে। এভাবে তিন মাস লাগানোর পরে চুল পড়া কতটুকু কমেছে তা বোঝা সম্ভব।
৩. নিম পাতার ব্যবহার
চুলের পরিচর্যায় অনেক আগে থেকে নিম পাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিম পাতায় উচ্চমাত্রায় ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। স্ক্যাল্পে অতিরিক্ত পরিমাণে তেল উৎপাদন হলে চুলে খুশকির পরিমান অনেক বেড়ে যায়। যারা প্রাকৃতিক উপায়ে মাথার চুল পড়া কমাতে চাইছেন ও খুশকি দূর করার উপায় জানতে চাচ্ছেন তাদের জন্য নিম পাতা হতে পারে দারুন কার্যকরি।
নিম পাতার ব্যবহারের নিয়ম: নিম পাতা ব্যবহার করার জন্য ১৩-১৫ টি নিমপাতা নিয়ে ভালোভাবে বেটে সেই পাতাগুলোর রস বের করতে হবে। নিমপাতার এই রসের সাথে নারিকেল তেল ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই মিশ্রণটিকে অল্প পরিমাণ গরম করে নিতে হবে। গরম করা হয়ে গেলে সপ্তাহে ৩ দিন এই তেল ব্যবহার করুন। এই তেলটি ১০/১৫ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এভাবে অন্তত ৩ মাস ব্যবহার করতে হবে।
অন্য উপায়ে নিম পাতা ব্যবহারের নিয়ম: উক্ত উপায় ছাড়াও আরও একটি উপায়ে নিমপাতা ব্যবহার করা যায়। তার জন্য প্রথমে এক লিটার পানিতে ১৫/২০টি নিমপাতা ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর এই পানিটি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। এই পানিটি ব্যবহার করার জন্য প্রথমে শ্যাম্পু করে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর এই নিমপাতার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে অন্তত একবার এই নিমপাতার পানি দিয়ে চুল ধুতে হবে। এভাবে ৪ মাসের মত ব্যবহার করতে হবে। তাহলে চুলের গোঁড়া শক্ত হয়ে চুল পড়ার হার কমবে।
৪. নারকেলের দুধ ও তেল
নারকেলে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নারকেল হতে পারে চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম। যা হাতের কাছেও পাওয়া যায়। নিয়মিত নারকেলের তেল মাথায় দিলে চুল পুষ্টি পাবে সেই সাথে চুল পড়াও বন্ধ হবে।
নারকেল তেলে ব্যবহারের নিয়ম: বাজারে অনেক ধরনের নারকেলের তেল কিনতে পাওয়া যায়। তবে সেগুলো শতভাগ খাটি নাও হতে পারে। তাই বাসাতেই নারিকেল তেল কীভাবে বানাতে হয় সেটি শিখে নিজের বানানো তেলই মাথায় ব্যবহার করা উচিত। এভাবে দুমাস ব্যবহার করলে মাথার চুল পড়া অনেকটা কমানো সম্ভব।
নারকেলের দুধ ব্যবহারের নিয়ম: প্রথমে একটি নারকেল ভেঙে নিতে হবে। তারপর আলাদা একটা পাত্রে হাফ কেজির মতো পানি গরম করতে হবে। নারিকেলগুলো মিক্সারে নিয়ে মিহি করে নিতে হবে, সেই গরম পানিতে নারকেল ছেড়ে দিতে হবে। সবশেষে সেই মিশ্রণ থেকে নারকেলের গুড়ো ও সাদা তরলটুকু সুতি কাপড়ের মাধ্যমে ছেকে আলাদা করতে হবে। এরপর সেই সাদা তরলটি সংরক্ষণ করতে হবে এবং সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করতে হবে। একনাগাড়ে দুমাস ব্যবহার করলে আশা করি অনেকখানি পার্থক্য লক্ষ্য করা যাবে।
৫. পেঁয়াজের রস চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায়
চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পেঁয়াজের রস। মাথার চুলের বিভিন্ন সমস্যায় পেঁয়াজের রস খুবই কাজে দেয়। স্ক্যাল্পের ইনফেকশন কমাতে, নতুন চুল গজাতে ও চুল পড়া কমাতে পেঁয়াজের রস খুবই কাজ করে। প্রথমে ২/৩ টি পেঁয়াজ নিয়ে তার সবটুকু রস বের করতে হবে। সেই রস মাথায় তালুতে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে লাগাতে হবে সেই সাথে চুলে ও চুলের ডগাতেও এই রস লাগাতে হবে। এই রস লাগানোর পরে এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে দুদিন ব্যবহার করতে হবে এবং সর্বাধিক কার্যকারিতার জন্য এক নাগাড়ে ২ মাস ব্যবহার করতে হবে।
৬. জবা ফুলের ব্যবহার
চুলের বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় জবা ফুল খুবই কার্যকর প্রভাব ফেলে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খুশকি দূর করে, চুলকে ঘন করে, চুল পড়া রোধ করে এবং চুল ভেঙে যাওয়া রোধ করে। জবা ফুলের সাহায্য চুল পড়া রোধ করতে চাইলে ১০ টি জবা ফুল ও ১০ টি জবাফুলের পাতা নিয়ে আধা কাপ নারকেলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ফুটাতে হবে। তারপর সেই তেল ঠাণ্ডা করে সংরক্ষণ করতে হবে।
সংরক্ষণকৃত তেল সপ্তাহে দুদিন চুলে ও মাথার তালুতে ভালোভাবে লাগাতে হবে। লাগানোর এক ঘণ্টা পরে তা আবার শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। শ্যাম্পু ব্যবহার করা সময় খেয়ার রাখবেন সেই শ্যাম্পুতে যেন সালফেট না থাকে।
শেষ কথা
চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায় কিংবা ক্যামিকেলই ব্যবহার করার উপায়ই অনুসরণ করুন না কেন। সবার প্রথমে নিজের চুলের যত্ন নিতে হবে। চুলের মধ্যে খুশকি, ইনফেকশন কিংবা উকুন হয়ে থাকলে, খুশকি, ইনফেকশন কিংবা উকুন দূর করার উপায় গুলো আগে জানতে হবে। সেগুলো জেনে নিজের চুলকে পরিষ্কার পরিচ্ছন রাখতে হবে। তাহলেই হবে চুল পড়া রোধ। নয়তো একটির পরে অন্যটি সমস্যা লেগেই থাকবে।
Discussion about this post