সকলেই নিজের চেহারা সুন্দর করতে চায়। আর তাই চেহারা সুন্দর করার উপায় নিয়ে অনেকের মনে আগ্রহের সীমা থাকে না। আপনি হয়তো অনলাইনেও কিভাবে নিজের চেহারা সুন্দর করতে হয় এই বিষয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ সমস্যার বেশকিছু সমাধান নিয়ে এসেছি।
জন্মগতভাবেই আমরা একেক জন একেক রকমের রং পেয়ে থাকি। যেমন- কেউ ফর্সা, কেউ বা শ্যামলা, আবার কেউ হয়তো কালো। ত্বকের রং যদি কালো হয়, তাহলে এটি নিয়ে অনেকেই মন খারাপ করে থাকেন। আবার যে একটু ফর্সা, সে চায় যদি আরো একটু উজ্জ্বল ত্বক পাওয়া যেত! অর্থাৎ কালো থেকো ফর্সা, সবার মধ্যেই নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রবণা রয়েছে।
চেহারা সুন্দর করার উপায়
জন্মগতভাবে ফর্সা ত্বক পেলেও রোদে পুড়ে বা ধুলা বালির উপদ্রবে সেই রংটা আর থাকে না। তাই ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য অনেক রকমের কেমিকাল বা ক্রিম ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এসব ক্রিম কেমিক্যাল যুক্ত হওয়ায় আমাদের ত্বকের জন্য খুব বেশি একটা উপকারী নাও হতে পারে।
তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা চেহারা সুন্দর করার এমন কিছু প্রাকৃতিক উপায় নিয়ে আলোচনা করব, যা অনুসরণ করলে আপনার চেহারায় হারানো জেল্লা ফিরে আসতে বাধ্য। ঘরে বসেই এই কৌশলগুলো চেষ্টা করা সম্ভব। কেননা, চেহার সুন্দর করার এসব প্রাকৃতিক উপকরণ আপনি হাতের কাছেই পেয়ে যাবেন।
১. পেঁপে এবং ডিমের মাস্ক
পেঁপে এবং ডিম দিয়ে এক অসাধারণ মিশ্রণ তৈরি করা সম্ভব যা মাস্ক হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার চেহার উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলা যায়। নিয়মিত পেঁপে-ডিমের মাস্ক ব্যবহারে ত্বক আস্তে আস্তে ফর্সা হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ডিমের প্রোটিন আমাদের শরীরের ত্বককে টানটান রাখতে সাহায্য করে।
পেঁপে-ডিমের মাস্ক তৈরির উপকরণ:
- ৩ চামচ পেঁপের রস
- ২ চামচ দই
- ৪ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার,
- ৩ চামচ আমন্ড অয়েল
- গ্লিসারিন ও একটি ডিমের সাদা অংশ
প্রথমে গ্লিসারিন ও ডিম বাদে বাকি যে সকল উপকরণ রয়েছে সেগুলো একটি পাত্রে ভালো করে মিশিয়ে নিন। একটা ঘন পেস্টের মতো তৈরি হলে এটিকে ২ ঘণ্টার মত ফ্রিজে রেখে দিন। ঘণ্টা দুয়েক পর পেস্টটি বের করে এর সাথে গ্লিসারিন ও ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।
এরপর এ মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে নিন এবং ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মত রাখুন। ২৫ মিনিট পরে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলুন। ব্যাস… এভাবে নিয়মিত করতে থাকুন। ডিমের প্রোটিন এবং পেঁপের ভিটামিনের সমন্বয়ে আপনার মুখশ্রী বৃদ্ধি পাবে। একমাসের মধ্যেই আপনি এর ইতিবাচক ফল পাবেন।
২. বেসন ও লেবুর রসের প্যাক
বেসন ত্বকের জন্য বেশ উপকারী একটি উপকরণ। সারাবিশ্বে রূপচর্চার জন্য বেসনের তৈরি বিভিন্ন মাস্কের প্রচলন রয়েছে। বেসনের পাশাপাশি লেবু ব্যবহার করলে এটি ত্বককে পরিষ্কার ও দাগমুক্ত রাখতে বেশ সাহায্য করে। বেসন ও লেবু খুব সহজলভ্য উপাদান হওয়ায় আপনি খুব সহজেই হাতের কাছে পেয়ে যাবেন।
কীভাবে করবেন চমৎকার এ প্যাকটি? একটি পাত্রে ৩ চামচ বেসন, ২ চামচ লেবুর রস, ১ চামচ হলুদ গুড়া এবং সামান্য পরিমাণে গোলাপজল নিন। সবগুলো উপকরণ পাত্রের ভেতরে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। ব্যাস… হয়ে গেল। বেসন ও লেবুর রসের প্যাক তৈরি।
এখন এটিকে মুখে মাখুন এবং মিশ্রণটি শুকানোর জন্য কিছুটা সময় অপেক্ষা করুন। এরপরে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকে ব্যবহার করা হলুদ আপনাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেবে এবং লেবুর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকে কোন রকমের দাগ হতে দেবে না ।
৩. মধু ও লেবুর রসের প্যাক
লেবুর অসংখ্য গুণের মধ্যে অনত্যম গুণ হচ্ছে, ত্বকের যত্নে লেবু খুবই উপকারী। এটি ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই লেবুর রস আমাদের মুখ পরিস্কার রাখার জন্য অনেক কার্যকরী। তবে লেবুর রস শুধু মুখে লাগিয়ে রাখলেই হবে না, জানতে হবে এর সঠিক পদ্ধতি।
আপনি মধু ও লেবুর রসের সংমিশ্রণে দারুণ একটি প্যাক তৈরি করতে পারেন। বর্তমানে সারাবিশ্বেই নারীদের রূপচর্চায় মধু ও লেবুর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২ চামচ লেবুর রস এবং ২ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে মাখুন। এরপর অন্তত ২০ মিনিট অপেক্ষা করে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এ মিশ্রণে মধু ত্বক উজ্জল করবে এবং লেবুর প্রাকৃতিক উপাদান ত্বককে আরও ফর্সা করে তুলবে।
ত্বকের পরিচর্যায় লেবুর আরো ব্যবহার:
- ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সমপরিমাণ শসার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন।
- ১টি লেবুর অর্ধেক রস এবং তার সঙ্গে ১০ টেবিল চামচ দুধ মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মুখে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন এবং ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
- লেবুর রস, কমলা লেবুর রস এবং ডিমের সাদা অংশ একত্রিত করে ত্বকে লাগাতে পারেন। এটি ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কম করার পাশপাশি উজ্জ্বল বাড়ায়।
- হাত ও পায়ের রুক্ষভাব দূর করতে লেবুর রসের সঙ্গে একই পরিমাণ চালের গুড়া মিশিয়ে ভালভাবে হাতে পায়ে লাগিয়ে নিন। এতে ত্বক আগের চেয়ে অনেক বেশী কোমল হবে।
►► আরো দেখুন: ত্বকের যত্নে শশা ব্যবহার
৪. টমেটো এবং মধুর প্যাক
মুখে রোদে পোড়া দাগ এবং অতিরিক্ত কালো হয়ে যাওয়া খেবে টমেটো এবং মধুর প্যাক রক্ষা করতে পারে। টমেটোতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল। যা ত্বককে গভীর থেকে সুরক্ষা দেয়। এছাড়া ও এর ভিটামিন সি, লাইকোপিন-এর মতো অনেক গুণ রয়েছে।
প্রথমে একটি পাকা টমেটো এবং ৪ চামচ মধু একটি পাত্রে রেখে চটকে নিন। এরপরে মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে মুখমণ্ডল বেশ তরতাজা লাগবে। তবে শুধু এভাবেই নয়, সঠিক নিয়ম মেনে টমেটোর আরো কিছু ফেস প্যাক মুখে লাগাতে পারেন। যেমন-
- টমেটো ও লেবুর ফেস প্যাক
- টমেটো ও জোজোবা তেল
- টমেটো ও চিনির ফেস প্যাক
- টমেটো ও ওটস
ওপরে উল্লেখিত টমেটোর প্রতিটি প্যাকই ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো আপনার চেহারার ডার্ক সার্কেল, ব্রণ ও স্কিনের বিভিন্ন দাগ দূর করে ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল করতে পারে।
৫. রূপচর্চায় কাঠবাদাম
ত্বককে আগের থেকে কোমল করে দিতে কাঠবাদাম (Almond) এর তুলনা নেই। পাশাপাশি এটি ত্বকের মৃত কোষ গুলোকে দূর করে দেয় এবং আগের থেকে আরো বেশি পরিমাণে উজ্জ্বল করে। ৪-৫ টি কাঠবাদাম সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে এগুলোকে গুঁড়া করুন এবং বাটার মিল্কের সাথে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন।
মিশ্রণটি ১০ থেকে ১২ মিনিট পর্যন্ত ত্বকে লাগিয়ে রাখুন এবং শেষে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তবে আপনি যদি বাটার মিল্ক ব্যবহার করতে না চান, তাহলে কাঠবাদামের সাথে মধু কিংবা টক দইও ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এই উপাদানগুলোও ত্বকের জন্য বেশ কার্যকরী।
চেহারা নষ্ট হওয়ার কারণ কি?
প্রিয় পাঠক, ওপরের আলোচনায় আমরা আপনার চেহারা সুন্দর করার উপায় সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। কিন্তু একইসাথে চেহারা নষ্ট হওয়ার কারণগুলো সম্পর্কেও আপনার জানা উচিত। এর ফলে আপনি বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারবেন।
দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজে আমরা এত বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে, আমাদের ত্বকের যত্ন নেওয়ার বিষয়টি আমরা ভুলে যাই। আর এ কারণে আমাদের চেহারা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। আবার অনেক সময় নিজেদের কিছু বাজে অভ্যাসের কারণেও চেহারার সৌন্দয্য কমে যায়। এগুলো সম্পর্কে এক নজরে জেনে নিন-
সঠিক পরিমাণে না ঘুমানোর অভাব: চেহারা নষ্ট হওয়ার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হচ্ছে অপর্যাপ্ত ঘুম। সঠিক পরিমাণে না ঘুমালে চোখের নিচে কালো দাগ দেখা যায় এবং চেহারায় ক্লান্তির ছাপ লক্ষ্য করা যায়। তাই দেহের ক্লান্তি দূর করতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান। এটি আপাকে প্রাণবন্ত রাখবে এবং চেহারার উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে দেবে।
তাপমাত্রার তারতম্য: শীতের সময় ঠাণ্ডা কমাতে অনেক বেশি গরম আবহাওয়ায় থাকা ত্বকের উজ্জ্বলতায় বাজে প্রভাব ফেলে। একইভাবে গরমেও এসির খুব বেশি ঠাণ্ডা হাওয়ায় দীর্ঘসময় থাকলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। বিভিন্ন ঋতুর প্রাকৃতিক তাপমাত্রা আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত লাগানো উচিত। এতে ত্বকের স্বাভাবিক মাত্রা নষ্ট হবে না এবং সৌন্দর্যও লোপ পাবে না।
ধূমপান এবং মাদকগ্রহণ: ধূমপান খুবই বাজে এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক একটি অভ্যাস। পাশাপাশি অতিরিক্ত পরিমাণে তামাক এবং অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য গ্রহণে চেহারার সৌন্দয্য আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যায় এ ধরনের বদ অভ্যাসের কারণে অতি দ্রুত চেহারার তারুণ্য হারিয়ে যায় যা পুনরায় ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
বেশি পরিমানে চিন্তা: আমাদের সকলেরই জীবনে কমবেশি সমস্যা রয়েছে। তবে আপনি যদি কেবলই এগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে থাকেন, এর একটি স্পষ্ট ছাপ আপনার চেহারার ওপর ফুটে ওঠে। আর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কিংবা অবসাদগ্রস্ত মানুষ দেখলেই বোঝা যায়। তাই চেহারার উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সব সময় প্রাণোজ্জ্বল থাকুন।
যা করা যাবে না
রাতারাতি ফর্সা হওয়ার জন্য বাজারে অনেক কেমিকালযুক্ত পণ্য আছে। কেমিকালযুক্ত বিষাক্ত এসব প্রসাধনী আপনাকে ৭ দিনের মধ্যে ফর্সা হয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখাবে। কিন্তু এসব পণ্যের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারিত হবেনা না। মনে রাখবেন, যে প্রসাধনী ৭ দিনে ফর্সা করে দেবে, তা আপনরার ত্বকের দফারফা করে দেবে।
অনেকেই নামহীন এসব ক্ষতিকারক প্রোডাক্ট ব্যবহার করে আজীবনের জন্য চেহারা নষ্ট করে ফেলেছে। অনলাইনে অনেক ভিডিও রয়েছে, যেগুলো রিসার্স করলে আপনি এসব বিউটি প্রোডাক্টের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই কেমিকালযুক্ত এসব পণ্য কিনে নিজের ত্বকের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করবেন না।
শেষ কথা
চেহার আল্লাহ প্রদত্ত এক অমূল্য নেয়ামত। আজকের এই দীর্ঘ আলোচনায় আমরা আপনাকে চেহারা সুন্দর করার উপায় সম্পর্কে জানিয়েছি। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সব কৌশল সম্পর্কে ধারণা দিয়েছি, যাতে করে আপনারা ঘরে বসেই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের পরিচর্চা করতে পারেন।
সবশেষে আপনাদের জন্য পরামর্শ থাকবে বাজারে প্রচলিত কেমিকালযুক্ত প্রসাধনী না ব্যবহার করে প্রাকৃতিক উপকরণগুলো প্রয়োগ করুন। এতে আপনার ত্বক সুস্থ্য থাকবে এবং তারুণ্য বজায় থাকে দীর্ঘদিন।
Discussion about this post