আজকাল বৃদ্ধ থেকে যুবক সকলেরই যে সমস্যাটি হতে শুরু করেছে তা হচ্ছে চোখে ঝাপসা দেখা। চোখে ঝাপসা দেখার কারণ অনেকগুলো রয়েছে। তবে এর মূল কারণ হচ্ছে আমাদের জীবন যাত্রার পরিবর্তন। আমরা যদি পুরোনো দিনের দিকে তাকায় তাহলে দেখতে পাবো তখনকার দিনের মানুষের চোখের সমস্যা খুব কম ছিলো। দিন দিন যার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন নতুন প্রজন্মের চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই জন্য মূলত আমরাই দায়ী। দিন দিন প্রযুক্তির অপব্যবহার ও প্রযুক্তির প্রতি আসক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা আমাদের চোখে দেখার ক্ষমতা হারাচ্ছি।
শুধু যে প্রযুক্তির জন্যই আমরা আমাদের চোখে দেখার ক্ষমতা হারাচ্ছি তা নয়। বরং, আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ ও শরীরের অপুষ্টিতার জন্য চোখের ঝাপসা দেখার সমস্যা হচ্ছে। চোখে ঝাপসা দেখার মতো সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে এসব সমস্যা থেকেও মুক্ত থাকতে হবে।
চোখে ঝাপসা দেখার কারণ
চোখে ঝাপসা দেখার অনেক কারণ রয়েছে। যুবকরা এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ হচ্ছে তাদের জীবনযাত্রার কারণে আর বৃদ্ধ কিংবা মধ্যবয়স্করা চোখে ঝাপসা দেখার বড় কারণ হচ্ছে শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রবেশ করা কিংবা চোখ তারা পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে না। এই কারণগুলো ছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের কারণ রয়েছে। চলুন সেগুলো জেনে আসা যাক-
১. জীবনযাত্রার পরিবর্তনের ফলে চোখে ঝাপসা দেখা
আজকালকার যুবক বৃদ্ধ সকলেই আধুনিক প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির উপকারী দিক যেমন রয়েছে তেমনই অপকারি দিকও রয়েছে। আজকার মানুষ প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যবহার করছে। অপ্রয়োজনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভির সামনে বসে থাকে। যার ফলে মানুষ চোখে ঝাপসা দেখে।
আধুনিক ডিভাইস এর ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় রশ্মি আমাদের চোখে পড়ে দিনের পর দিন আমাদের চোখের ক্ষতি করে যাচ্ছে। তাই আমাদের প্রয়োজন ব্যতীত এসব ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকা উচিত।
২. চোখে ঝাপসা দেখার কারণ পুষ্টিকর খাদ্য না খাওয়া
চোখে ঝাপসা দেখার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ হতে পারে পুষ্টিকর খাদ্য না খাওয়া। চোখকে তার কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য যথেষ্ট পুষ্টির প্রয়োজন হয়। কিন্তু আজকাল মানুষ ফাস্ট ফুডের দিকে ঝুঁকে গেছে। সবুজ শাক সবজি না খাওয়ার জন্য চোখও তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে না। যার ফলে আজকাল বাচ্চারাও চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেছে।
দৈনিক খাদ্য তালিকায় সুষম খাদ্য রাখতে হবে। তাহলেই বাচ্চারা পুষ্টিহীনতায় ভুগবে না এবং চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যায়ও পড়বে না।
৩. ক্ষতিকারক খাদ্যর দিকে ঝুঁকে পড়া
আজকাল ক্ষতিকারক খাদ্য দ্রব্য খাওয়া যেন ফ্যাশন হয়ে গিয়েছে। মানুষের অজান্তেই এটি চোখ ও শরীরের কত বড় ক্ষতি করে ফেলে মানুষ তা বুঝতেও পারে না। ক্ষতিকারক খাদ্যর তালিকায় সবার প্রথমেই রাখা যায় ফাস্ট ফুডকে। এসব খাদ্য অত্যাধিক হারে চিনি ব্যবহার করা হয়। তা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিশেষ করে এগুলো চোখের জ্যোতি আস্তে আস্তে কমিয়ে দেয়।
অনেকে ট্রান্সফ্যাট ও ধূমপানে করে থাকে। এগুলো খুবই ক্ষতিকর। এগুলো খেলে শুধু চোখের জ্যোতিই কমবে না বরং শরীরেরও বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করে থাকে।
৪. চোখ উঠলে চোখে ঝাপসা দেখা
চোখ উঠলে অন্যান্য লক্ষণের মতো চোখে ঝাপসা দেখাও একটি সমস্যা। যদি চোখ উঠে থাকে তাহলে চোখে ঝাপসা দেখার জন্য চিকিৎসা করে তেমন কোন লাভ পাওয়া যাবে না। চোখ উঠার কারণে চোখে ঝাপসা দেখলে আগে চোখ উঠার সমস্যা নির্মূল করার উপায় অনুযায়ী কাজ করতে হবে। চোখ উঠার সমস্যা নির্মূল হলেই চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
৫. চোখে ঝাপসা দেখার কারণ চোখে এলার্জি হওয়া
চোখে এলার্জি হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম। চোখে এলার্জি হলে চোখে চুলকানি হওয়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ খচখচ করা, চোখ ফুলে যাওয়াও চোখে ঝাপসা দেখার মতো সমস্যা হয়ে থাকে। এলার্জি হয়ে থাকলে এলার্জির ঔষধ খেয়ে দেখতে হবে। এলার্জির ঔষধ খাওয়ার পরেও সমস্য না কমে থাকলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
৬. রাতকানা রোগ হওয়া
ভিটামিন এ এর অভাবে রাত কানা রোগ হয়ে থাকে। রাতকানা হলে ব্যক্তি অল্প আলোতে ঝাপসা ঝাপসা দেখতে পায়। এই রোগের তীব্রতা বেড়ে গেলে ব্যক্তি অল্প আলোতে একদমই দেখতে পায় না। তাই রাতকানা রোগ রোধে তুলসী পাতার রস খেতে পারেন। যদি রাতকানা রোগ বেড়ে যায় তাহলে ডাক্তারের কাছে যান।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার কারণে শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাধে। শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি না থাকা ও বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হিসেবে চোখে ঝাপসা দেখা প্রকাশ পায়। তাই আমাদের উচিত বেশী বেশী করে রোগ প্রতিরোধ মূলক খাবার খাওয়া। রোগ প্রতিরোধ মূলক খাদ্যের তালিকায় আমরা কলা ও তেঁতুল রাখতে পারি। এগুলো খুবই কার্যকারী খাবার।
৮. বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ও রোগের কারনে চোখে ঝাপসা দেখা
উপরোক্ত কারনগুলো ছাড়াও অসুস্থতা জনিত ও শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার লক্ষণ হিসেবে চোখ ঝাপসা হয়ে আসার সমস্যা হয়। প্রথমত আমাদের উচিত কর্মক্ষম হয়ে রোগ থেকে দূরে থাকা। যদি তাও আমরা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকি তাহলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। শারীরিক যে সমস্যাগুলোর জন্য চোখে ঝাপসা দেখতে পাই তা হচ্ছে-
- রেটিনার রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া
- মস্তিষ্কের বিভিন্ন ধরনের জটিলতা
- রক্তে শর্করা কমে যাওয়া
- মাইগ্রেনের ব্যথা
- চোখে ছানি পড়া
- উচ্চ রক্তচাপ
- ডায়াবেটিস
সবশেষে যা জানা দরকার
যদি চোখে ঝাপসা দেখে থাকেন তাহলে প্রথমে চোখে ঝাপসা দেখার কারণ নির্ণয় করার চেষ্টা করুন। যদি কারণ নির্ণয় করতে পারেন তাহলে সেই অনুযায়ী ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা নেওয়ার চেষ্টা করুন। যদি সেই কারণের ঘরোয়া চিকিৎসা না থেকে থাকে তাহলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। যদি ঝাপসা দেখার কারণ নির্ণয় করা না যায় তাহলে অতিদ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
Discussion about this post