জমিজমা সম্পর্কে জ্ঞানের স্বল্পতা থাকায় অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়েন। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে প্রচুর। আজ আমরা জমিজমা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জানবো। আশা করি এ তথ্যগুলো আপনার জমিজমা সংক্রান্ত জ্ঞান আরো বাড়িয়ে দেবে।
জমিজমা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
এখানে আমরা খতিয়ান (Record of Rights), পর্চা, মৌজা ও মৌজা ম্যাপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। পাশাপাশি তফসিল, দাগ নম্বর এবং এওয়াজ বদল সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যবহুল আলোচনা উপস্থাপনা করেছি। জমিজমার ক্ষেত্রে এ তথ্যগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা খুবই জরুরী। তাই নিচে তথ্যগুলো এক ঝলকে জেনে নিন।
খতিয়ান (Record of Rights)
একটি খতিয়ানে কোন এক মৌজার নির্দিষ্ট একজন মালিকের জমির বিবরণ থাকে। আবার একটি খতিয়ানে একাধিক মালিকের জমির বিবরণও থাকতে পারে। খতিয়ানে সাধারণত এর ক্রমিক নম্বর, জেলা ও মৌজার নাম লিপিবদ্ধ থাকে। এছাড়া একাধিক কলামে জমির মালিকের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, দাগ নং (Plot Number), জমির শ্রেণী, পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে।
পর্চা
পর্চা হলো খতিয়ানের হাতে লেখা বা Compose করা কপি বা খসড়া। যখন পৃথক একটি কাগজে এই খতিয়ানের অনুলিপি তৈরী করা হয় তখন তাকে পর্চা বলা হয়। পর্চা হাতে লিখে বা কম্পিউটারে কম্পোজ করে তৈরী হয়ে থাকে। এই অনুলিপি যখন রেকর্ড রুমের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষরিত হয় তখন তাকে নকল বা Certified Copy বলে।
তবে পর্চার বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন CS, SA ও RS পর্চা। CS, SA ও RS পর্চা হলো বিভিন্ন রেকর্ডের খসড়া বা অনুলিপি বা কপি। কাজেই পর্চা CS, SA ও RS বা মহানগরে জরিপের অর্থাৎ ৪ প্রকার হতে পারে। এছাড়া জরিপ চলাকালে প্রাথমিকভাবে হাতে লেখা একটি খসড়া বিবরণ যাচাইয়ের জন্য জমির মালিককে দেয়া হয়। একে মাঠ পর্চা বা হাত পর্চাও বলে।
যেখানে পর্চা পাবেন: পর্চা বা রেকর্ডের সহি মুহুরী নকল (Certified Copy) পাওয়া যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ডরুমে । নির্ধারিত ফীসহ আবেদন করলে রেকর্ড রুম থেকে পর্চা সরবরাহ করা হয়। তবে পর্চা কখনও কোন দালালের কাছ থেকে নিবেন না। এতে ভুল থাকতে পারে। কেবল ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষরসহ পর্চা আসল বা Authentic।
যে কারণে পর্চার প্রয়োজন: জমি সংক্রান্ত সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার জন্য পর্চার প্রয়োজন হয়। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিবরণ, জমির খতিয়ান-দাগ, অংশ, হিস্যা, শ্রেণী ইত্যাদি। বিশেষ করে জমি কেনা বেচার সময় পর্চা যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়। পর্চা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস, এসি (ল্যান্ড) অফিস বা রের্কডরুমে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
মৌজা
মৌজা জরিপ বা ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি একক। ভূমি জরিপের সময় সাধারণত একই রকম ভূ-প্রকৃতির ভৌগলিক এলাকা স্বতন্ত্রভাবে পরিমাপ করা হয়। কোন থানা বা উপজেলার এরকম স্বতন্ত্র ভৌগলিক এলাকা বা ভূ-খণ্ডই হলো মৌজা। মৌজার সুনির্দিষ্ট কোন আয়তন নেই। কয়েকটি গ্রাম একটি মৌজার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। আবার একটি গ্রামে একাধিক মৌজাও থাকতে পারে।
সাধারণত কোন একটি উপজেলা একাধিক মৌজায় বিভক্ত থাকে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় ‘মৌজা’ বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা। খতিয়ান বাদ দিলে মৌজার নাম উল্লেখ থাকে। উপজেলাধীন প্রত্যেক মৌজাকে একটি ক্রমিক নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এই নম্বরকে জে.এল নম্বর বলে। এটি স্থায়ী।
মৌজা ম্যাপ
খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপ দুটো মিলেই পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড। আসলে জরিপের সময় খতিয়ান বা জমির মালিকানার বিবরণ এবং জমির নকশা বা ম্যাপ এক সাথেই তৈরী করা হয়। কেবল জমির খতিয়ান দেখে জমি চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। এজন্য মৌজা ম্যাপ বা জমির নকশার প্রয়োজন হয়।
মৌজা ম্যাপ জমি চিহ্নিত করতে বা খুঁজে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এতে দাগ নম্বর দিয়ে জমি চিহ্নিত করা থাকে। ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমির পাশাপাশি রাস্তা, স্কুল, মসজিদ, পুকুর এবং ঈদগাহ ইত্যাদি পাবলিক প্রপার্টিও চিহ্নিত থাকে। মৌজা ম্যাপ পর্চার মতই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ডরুম থেকে সংগ্রহ করা যায়।
তফসিল
জমিজমার ক্ষেত্রে তফসিল বলতে আসলে ভূমির পরিচয়কে বুঝায়। জমিটি কোথায়, এর মালিক কে ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। তফসিলে জেলার নাম, উপজেলা বা থানার নাম, মৌজার নাম, জমির দাগ-খতিয়ান নম্বর ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ করা হয়। এতে অনেক সময় জমির পরিমাণ, শ্রেণী ও মালিকানার বর্ণনাও থাকে।
দাগ নম্বর
জমির ক্ষেত্রে দাগ কোন সরলরেখা বা বক্ররেখা নয়। দাগ হচ্ছে আসলে জমির Plot Number। একটি বিশালাকার জমিকে পরিমাপের মাধ্যমে একাধিক অংশে বিভক্ত করা হয়। এর প্রতিটি অংশ বা খণ্ডকে দাগ বা Plot বলে। জরিপের সময় এরকম প্রত্যেক খণ্ড জমিকে একটি নম্বর দ্বারা সূচিত করা হয়। এই নম্বরকেই দাগ নম্বর বলে।
এওয়াজ বদল
অনেক সময় পারস্পরিক ব্যবহারের সুবিধার্থে এবং উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে একজনের সম্পত্তির সাথে আর একজনের জমির দখল বদল বা বিনিময় করা হয়। এটাই এওয়াজ বদল। এরূপ ক্ষেত্রে, জমি বা সম্পত্তি পরস্পর ভোগ দখল করলেও স্বত্ত্ব বা মলিকানার হস্তান্তর হয় না। কেবলমাত্র দখল বদল হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না রেজিস্ট্রেশন করে জমির স্বত্ত্ব বদল করা হয়, ততক্ষণ ঐ জমি পূর্ব মালিকের নামেই থেকে যায়। মনে রাখতে হবে এওয়াজ বদল কেবলমাত্র ব্যবহার বা চাষাবাদের সুবিধার্থে করা হয়ে থাকে।
বিস্তারিত এই আর্টিকেলে আমরা জমিজমা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য উপস্থানের চেষ্টা করেছি। এ সম্পর্কিত আারো গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য জানতে এখানে ক্লিক করুন। আমরা আশা করছি এ তথ্যগুলো আপনার জন্য অনেক সহায়ক হবে। নিয়মিত এ সংকান্ত তথ্য পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারেন এই লিংক থেকে।
Discussion about this post