জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা : বাংলাদেশে নানা ধরনের দুর্যোগ ঘটে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনটি হলো অগ্নিকাণ্ড, বন্যা ও ভূমিকম্প। প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও মানবসৃষ্ট কারণে অনেক সময় দুর্যোগ ঘটে থাকে। অগ্নিকাণ্ড একটি ভয়াবহ দুর্যোগ।
বাংলাদেশে অনেক সময় ঘরবাড়ি, শহরের বস্তি, দোকানপাট, কল-কারখানা, গার্মেন্টস এবং যানবাহনে আগুন লেগে দুর্ঘটনা ঘটে। এর ফলে সম্পদের প্রচুর ক্ষতি হয়ে থাকে। অনেক মানুষ সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডে মানুষ মারাও যায়। তাছাড়া পরিবেশেরও অনেক ক্ষতি হয়।
জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা
আগুন লাগার কারণগুলো জেনে নিই-
◇ অপ্রয়োজনে রান্নার চুলা জ্বালিয়ে রাখা
◇ জ্বলন্ত সিগারেট, বিড়ি, ম্যাচের কাঠি ইত্যাদি নিভিয়ে যথাস্থানে না ফেলা
◇ আগুন নিয়ে খেলা করা
◇ বাজি পোড়ানো
◇ মশার কয়েল, মোমবাতি, কুপিবাতি ও খোলা কেরোসিনবাতি ব্যবহারে সতর্ক না থাকা
◇ ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি
◇ নিয়ম না মেনে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা
◇ ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা
অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে করণীয়-
◇ রান্নার পর চূলা ভালোভাবে বন্ধ করা
◇ জ্বলন্ত সিগারেট, বিড়ি, দিয়াশলাইয়ের কাঠি ইত্যাদি ভালোভাবে নিভিয়ে যথাস্থানে ফেলা
◇ বৈদ্যুতিক ফিটিংসসমূহ নিয়মিত পরীক্ষা করা
◇ বাসায়, কারখানায় এবং গাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার নিয়মিত পরীক্ষা করা
◇ বাড়িতে অগ্নি নির্বাপণ সামগ্রী প্রস্তুত রাখা
◇ আগুন নিয়ে খেলাধুলা না করা।
আগুন লেগে গেলে করণীয়-
◇ অগ্নিকাণ্ড থেকে প্রথমে নিজেকে রক্ষা করতে হবে।
◇ বাড়িতে আগুন লেগে গেলে সাথে সাথে প্রতিবেশীদের সাহায্য চাইতে হবে।
◇ পরনের কাপড়ে আগুন লাগলে দৌড়াদৌড়ি না করে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে হবে। দেহের কোনো অংশ পুড়ে গেলে সেখানে প্রচুর পানি ঢালতে হবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
◇ ফায়ার সার্ভিসকে টেলিফোন করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জানাতে হবে।
◇ জরুরি সেবার জন্য ৯৯৯ নম্বরে টেলিফোন করতে হবে।
মমিন বাংলাদেশের একটি গ্রামে থাকে। সে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। টেলিভিশনে কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টি হতে পারে ঘোষণা করা হয়েছে। পরদিন থেকে টানা এক সপ্তাহ অবিরাম বৃষ্টি হতে থাকল।
জমির আধাপাকা ধান, সবজির ক্ষেত, রাস্তাঘাট সবকিছু পানির তলায় ডুবে গেল। মমিনের বাবা তাড়াহুড়ো করে পরিবার নিয়ে গ্রামের স্কুলের তিনতলা ভবনে আশ্রয় নিলেন। গ্রামের দক্ষিণ পাশের উঁচু বেড়িবাঁধে দুটি গরু রেখে আসলেন।
বাকি গবাদি পশু এবং অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে আসার আগেই বেড়িবাঁধ ভেঙে গেল। অনেক জিনিসপত্র বন্যার পানিতে ভেসে গেল। গ্রামের আরও অনেক পরিবার স্কুলভবনে আশ্রয় নিয়েছে। মমিনরা সেখানে আটকে থাকল।
তাদের খাবার এবং পানীয় জলের অভাব দেখা দিলো। গবাদি পশুর খাবারও শেষ হয়ে গেল। বন্যার দূষিত পানি পান করে অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলো। তাদের প্রয়োজনীয় ঔষধপত্রও ছিল না।
প্রতিবছর আমাদের দেশে অনেক এলাকায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাই একে সব সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। কিন্তু বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য কিছু প্রস্তুতি নিতে পারি।
প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার, খাবার পানি, কাপড়চোপড় ও ঔষধপত্র নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হবে। গবাদি পশুর প্রয়োজনীয় খাবারসহ বেড়িবাঁধ কিংবা কোনো উঁচু স্থানে রাখতে হবে। পড়ার বই-খাতা ও গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে বা নিরাপদে রাখতে হবে।
ভূমিকম্প
ভূমিকম্প একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটি যে কোনো সময় শুরু হতে পারে। এটি সাধারণত ৩০-৪০ সেকেন্ড স্থায়ী হয়ে থাকে। কোথাও শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে সেখানকার দালানকোঠা, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন লাইন ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ঘরবাড়ি ধসে পড়ে। ঘরবাড়ির নিচে চাপা পড়ে অনেক মানুষ আহত ও নিহত হয়। বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পাবার জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ভূমিকম্প শুরু হলে ছুটোছুটি করে ঘর থেকে বের হবার চেষ্টা করা উচিত নয়। এ সময় সিঁড়ি ও লিফট ব্যবহার করা যাবে না। বারান্দা বা ছাদ থেকে লাফ দেওয়া যাবে না। এ সময় দ্রুত শক্ত টেবিল, খাট বা এ জাতীয় আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে হবে। পাকা দালানে থাকলে বিমের নিচে দাঁড়াতে হবে।
একটি ভূমিকম্পের কিছুক্ষণ পর সেখানে আবারও ভূমিকম্প হতে পারে। তাই প্রথমবারের ভূমিকম্প থেমে গেলে ঘর থেকে দ্রুত বের হয়ে খোলা জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে।
বাড়ির বাইরে থাকা অবস্থায় ভূমিকম্প হলে উঁচু ভবন, দেয়াল, গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে খোলা স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। দেওয়ালের নিচে চাপা পড়লে বেশি নড়াচড়া করা যাবে না। ভূমিকম্প থামলে আওয়াজ করতে হবে, যাতে উদ্ধারকারীরা বুঝতে পারে।
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
ক. বাম পাশের সাথে ডান পাশের মিল করি।
বাম পাশ | ডান পাশ |
অগ্নিকাণ্ড | ঘরবাড়ি ধসে পড়ে |
বন্যা | ঘরবাড়ি, দোকানপাট পুড়ে যায় |
ভূমিকম্প | খাবার পানির সংকট দেখা দেয় |
খ. সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন।
১। আগুন লাগার কারণ লিখি।
২। ভূমিকম্পে কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে?
গ. বর্ণনামূলক প্রশ্ন।
১। বন্যার সময় আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে আমাদের কী কী প্রস্তুতি দরকার?
২। আমি কীভাবে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ করতে পারি?
◉ আরও দেখো: তৃতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সকল অধ্যায়ের সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় মূল বই থেকে ১৩শ অধ্যায় জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post