জলপরী ও কাঠুরের গল্প ঈশপ : “সততার পুরস্কার” গল্পটি সততা ও নৈতিকতার গুরুত্ব বোঝায়। এতে এক সৎ কাঠুরিয়ার গল্প বলা হয়েছে, যে নিজের সত্যবাদিতার কারণে পুরস্কার পায়, এবং এক লোভী কাঠুরিয়ার গল্প, যে মিথ্যা বলার কারণে শাস্তি ভোগ করে।
প্রথম কাঠুরিয়া নদীতে কুড়াল হারিয়ে ফেললে কাঁদতে থাকে। জলপরী তার সততা দেখে খুশি হয়ে তাকে সোনার ও রুপার কুড়াল উপহার দেয়। অন্যদিকে, এক লোভী কাঠুরিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে কুড়াল ফেলে দিয়ে মিথ্যা বলে, ফলে সে নিজের কুড়ালও হারায়।
গল্পটি আমাদের সততা, লোভের পরিণাম ও নৈতিকতার শিক্ষা দেয়। এতে বোঝানো হয়েছে, সত্যবাদীরা পুরস্কৃত হয় এবং অসততা ও লোভ মানুষের ক্ষতি ডেকে আনে।
জলপরী ও কাঠুরের গল্প ঈশপ
আজ থেকে দুই হাজার দুই শত বছর পূর্বে ঈশপ গ্রিস দেশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন সামান্য ক্রীতদাস। তখনকার দিনে রোম ও গ্রিসে ক্রীতদাস প্রথা প্রচলিত ছিল। ক্রীতদাস হয়েও তিনি যে সাহিত্য রচনা করে গেছেন, তা চিরসুন্দর ও চিরস্থায়ী। তার ভাব যেমন গভীর, ভাষা তেমনি সহজ ও সরল। তাঁর প্রত্যেকটি গল্পের মধ্যে কিছু না কিছু মূল্যবান উপদেশ আছে। তাঁর নীতিমূলক গল্পগুলো বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
জলপরী ও কাঠুরের গল্পের শুরু এখানে
এক বনে এক কাঠুরিয়া রোজ কাঠ কাটতে যেত। ভারি গরিব সে। কাঠ বিক্রি করে যা রোজগার করত তাই দিয়ে কোনোরকমে খেয়ে-পরে দিন চলত তার। একদিন এক নদীর ধারে সে গেল কাঠ কাটতে। সেখানে গিয়ে একটা গাছে যেই কুড়াল দিয়ে ঘা মেরেছে, অমনি তার হাত ফসকে কুড়ালটা
গভীর পানির মধ্যে পড়ে গেল। খরস্রোতা নদী। তা ছাড়া তাতে কুমিরের ভয় ছিল ভয়ানক। নিরুপায় হয়ে কাঠুরিয়া সেই গাছের গোড়ায় বসে কাঁদতে লাগল।
সে এতই গরিব যে, তার আবার একটা কুড়াল কেনার মতো সামর্থ্য ছিল না। তাই গাছের গোড়ায় বসে সে ভাবতে লাগল। যত ভাবে ততই তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।
এমনি করে কিছুক্ষণ কেটে যাবার পর হঠাৎ এক জলপরী নদীর মধ্য থেকে উঠে এলো। সে তাকে প্রশ্ন করল, তুমি কাঁদছ কেন?
কাঠুরিয়া বলল, আমি বড় গরিব, আমার কুড়ালটা পানিতে পড়ে গেছে, তাই কাঁদছি।
জলপরী বলল, আচ্ছা তোমার কুড়াল আমি এনে দিচ্ছি, তুমি কেঁদো না। এই বলে সে তৎক্ষণাৎ নদীতে ডুব দিয়ে একখানা সোনার কুড়াল তুলে এনে জিজ্ঞাসা করল, এটা কি তোমার?
কাঠুরিয়া ভালো করে দেখে বলল, না।
সঙ্গে সঙ্গে জলপরী আবার পানির মধ্যে ডুব দিয়ে একটা রুপার কুড়াল নিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করল, তবে এটা কি তোমার?
এবারও কাঠুরিয়া বিশেষভাবে পরীক্ষা করে বলল, না, এটাও আমার কুড়াল নয়।
তখন জলপরী আবার ডুব দিয়ে একটা লোহার কুড়াল এনে তাকে দেখাল। কাঠুরিয়া সাথে সাথে নিজের কুড়ালখানি চিনতে পেরে খুশিতে বলে উঠল, হ্যাঁ, এটাই আমার কুড়াল।
জলপরী কাঠুরিয়ার এই সততা দেখে মুগ্ধ হলো। তখন সে তাকে তার নিজের কুড়ালটি তো ফিরিয়ে দিলই, উপরন্তু সোনা ও রুপার কুড়াল দুটিও তাকে উপহার দিল। কাঠুরিয়া খুব খুশি হয়ে যখন পরীকে ধন্যবাদ দিতে যাবে, তখন দেখে সে অদৃশ্য হয়ে পানির মধ্যে হারিয়ে গেছে।
সেই কুড়াল দুটি বাজারে বিক্রি করে কাঠুরিয়া অনেক টাকা পেল। তাতে তার খুব সুখে ও স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটতে লাগল।
এদিকে হলো কি, এই গল্পটি তার মুখ থেকে শোনার পর আর একজন কাঠুরিয়ার মনে বড়ো লোভজন্মাল। সে একদিন চুপিচুপি সেই নদীর ধারে গাছ কাটতে গিয়ে ইচ্ছে করে তার কুড়ালটা পানির মধ্যে ফেলে দিল। তারপর সেখানে বসে অভিনয় করে কাঁদতে লাগল।
তার কান্না শুনে আবার সেই জলপরী সেখানে উপস্থিত হলো। পূর্বের মতো এবারও প্রথমে একটি সোনার কুড়াল তুলে সে তাকে জিজ্ঞাসা করল, এটা কি তোমার?
সূর্যের আলো পড়ে সোনার কুড়াল ঝলমল করে উঠল। তাই দেখে কাঠুরিয়ার চোখ দুটি লোভে চকচক করে উঠল। সে সঙ্গে সঙ্গে বলে ফেলল, হ্যাঁ, এটাই আমার। তৎক্ষণাৎ জলপরী টুপ করে সেখানে ডুব দিয়ে কোথায় জানি চলে গেল। আর উঠল না।
লোভী কাঠুরিয়াটি হায় হায় করতে লাগল। সে নিজের কপালে নিজে চড় মারতে মারতে বলল, হায়! কেন মিথ্যা কথা বলতে গেলাম, তাই তো আমার এমন শাস্তি হলো। সোনার ও রুপার কুড়াল পাওয়া দূরে থাক, নিজের যে লোহার কুড়ালটি ছিল তাও হারালাম!
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
১. জেনে নিই।
সৎ মানুষকে সবাই ভালোবাসে। সততার পুরস্কার পাওয়া যায়। লোভ মানুষকে পতনের দিকে নিয়ে যায়। লোভী মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। কথায় বলে-লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।
২. নিচের শব্দগুলোর অর্থ জেনে নিই।
কুড়াল – কুঠার, কাঠ কাটার অস্ত্র।
কাঠুরিয়া – কুঠার দিয়ে গাছ বা কাঠ কাটা যার পেশা।
জলপরী – পানিতে বসবাসকারী পাখাযুক্ত কাল্পনিক সুন্দরী নারী।
সামর্থ্য – সংস্থান, সংগতি।
৩. প্রশ্নের উত্তর বলি ও লিখি।
ক. কাঠুরিয়া কেন কাঁদতে লাগল?
খ. জলপরী কাঠুরিয়াকে কী বলল?
গ. কাঠুরিয়ার সততা দেখে জলপরী কী করল?
ঘ. কীভাবে কাঠুরিয়ার অবস্থার পরিবর্তন হল?
৬. লোভী কাঠুরিয়া কী করল?
চ. লোভী কাঠুরিয়া কেন হায় হায় করতে লাগল?
৪. বিপরীত শব্দ লিখি।
গরিব, বিক্রি, কাঁদা, নিজ, সুখ, লোভ, শান্তি, মুগ্ধ
৫. সততা সম্পর্কে পাঁচটি বাক্য লিখি।
◉ আরও দেখুন: পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের সকল গল্প-কবিতার সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে জলপরী ও কাঠুরের গল্প ঈশপ আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post