জাগো তবে অরণ্য কন্যারা অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : পারিপার্শ্বিক আঘাতের ফলে বর্তমান পৃথিবীতে সবুজের প্রাচুর্য নেই। ফলে ফুল-ফসলে ভরা শ্যামলিমা নেই, কারও কণ্ঠে গান নেই, চারদিকে হাহাকার। তাই কবির কণ্ঠেও কোনো গান নেই। পৃথিবীকে আবার জাগরিত করতেই কবি অরণ্য কন্যাদেরকে জেগে উঠতে বলেছেন।
জাগো তবে অরণ্য কন্যারা অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ‘বৃক্ষের বক্ষের বহ্নিজ্বালা’—বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘বৃক্ষের বক্ষের বহ্নিজ্বালা’—বলতে বোঝানো হয়েছে প্রকৃতির প্রতি মানুষের অবিবেচক আচরণের ফলে বৃক্ষের মনে জাগ্রত ক্ষোভ ও যন্ত্রণা। মানুষ নিজের স্বার্থে নির্বিচারে বন উজাড় করছে, বৃক্ষ নিধন করছে, যা প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে। এই অবস্থা দেখে কবি কল্পনা করেছেন যে, বৃক্ষের বুকেও যেন এক প্রকার দহন সৃষ্টি হয়েছে, তারা যেন প্রতিবাদে ফেটে পড়তে চায়। প্রকৃতি যখন ধ্বংসের মুখে পড়ে, তখন বৃক্ষের বুকেও দুঃখ ও ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে—এই দহনকেই কবি ‘বৃক্ষের বক্ষের বহ্নিজ্বালা’ বলে অভিহিত করেছেন।
২. ‘ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি’ বলতে কবি এমন মানুষের অভিব্যক্তি বুঝিয়েছেন, যারা প্রকৃতির বিপর্যয়ের ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বৃক্ষ নিধন ও পরিবেশের ক্ষতির কারণে মানুষের খাদ্য ও মানসিক প্রশান্তি কমে যাচ্ছে, ফলে তারা উদ্বিগ্ন এবং ভীত হয়ে পড়ছে। গাছপালা কেটে ফেলা, বন উজাড় করা এবং পরিবেশ ধ্বংসের কারণে মানুষের অস্তিত্বই সংকটে পড়েছে। ‘ক্ষুধার্ত’ শব্দটি তাদের শারীরিক অভাব এবং ‘ভয়ার্ত’ শব্দটি তাদের ভীতি, অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্কের অনুভূতি তুলে ধরে। কবি এই অভিব্যক্তির মাধ্যমে পরিবেশের প্রতি মানুষের অযতœ এবং প্রকৃতির ওপর অবিচারের পরিণতি প্রদর্শন করছেন, যা মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
৩. ‘জাগাও মুমূর্ষু ধরা-প্রাণ’—কথাটা বলা হয়েছে কেন।
উত্তর: ‘জাগাও মুমূর্ষু ধরা-প্রাণ’—চরণটি দ্বারা মুমূর্ষু পৃথিবীতে পুনর্জাগরণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
পৃথিবীতে আগের মতো ফুলের ফসল হয় না। কবির কণ্ঠে গান জাগে না। খাদ্যের অভাবে মানুষ হিংস্র হয়ে ওঠে। তাদের দৃষ্টি প্রাণহীন, বৃক্ষের বুকে বহ্নিজ্বালা। পৃথিবীর এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে কবি বৃক্ষদের কাছে আহ্বান করেছেন, তারা যেন জাগরণের মাধ্যমে ধরার মুমূর্ষু প্রাণের জাগরণ ঘটায়। প্রশ্নে উল্লিখিত চরণ দ্বারা এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে।
৪. মাটি অরণ্যের পানে চায় কেন?
উত্তর: মাটি অরণ্যের দিকে চেয়ে থাকার কারণ হলো—অরণ্যে ফুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে, ফল হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা মাটিকে প্রাচুর্য দিতে পারে।
পৃথিবীর যেখানে অরণ্য বেশি থাকে, সেখানে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। আর বৃষ্টি হলেই মাটি প্রাণ ফিরে পায়। প্রাণ ফিরে পাওয়ার নিমিত্তেই মাটি অরণ্যের দিকে চেয়ে থাকে। কিন্তু অরণ্যের অবস্থাও দৈন্য। সেখানে সবুজের প্রাচুর্য নেই। ফুলের সমারোহ নেই।
৫. কবি অরণ্য কন্যাদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন কেন?
উত্তর: পৃথিবীতে সবুজের সংকট সৃষ্টি হওয়ার কারণে কবি অরণ্য কন্যাদের জেগে উঠতে বলেছেন।
পারিপার্শ্বিক আঘাতের ফলে বর্তমান পৃথিবীতে সবুজের প্রাচুর্য নেই। ফলে ফুল-ফসলে ভরা শ্যামলিমা নেই, কারও কণ্ঠে গান নেই, চারদিকে হাহাকার। তাই কবির কণ্ঠেও কোনো গান নেই। পৃথিবীকে আবার জাগরিত করতেই কবি অরণ্য কন্যাদেরকে জেগে উঠতে বলেছেন।
৬. মৌসুমি ফুলের গান কবির কণ্ঠে আর জাগে না কেন?
উত্তর: কবির কণ্ঠে গান না জাগার কারণ হলো অবাধে বৃক্ষনিধনের ফলে চারদিকের হাহাকার আর শুষ্ক পরিবেশ।
পরিবেশের দৈন্যের কারণে কবির কণ্ঠে মৌসুমি ফুলের গান আর জাগে না। মানুষ প্রতিনিয়ত বৃক্ষনিধন করছে। দিনের পর দিন এ বৃক্ষনিধন বেড়েই চলছে। চারদিকে অবাধ বৃক্ষনিধনের কারণে পরিবেশ আজ হুমকির সম্মুখীন। সবুজের সমারোহ ম্লান হয়ে গেছে। চারিদিকে শুধু রুক্ষতা আর শূন্যতা। কোথাও প্রাণের চিহ্ন নেই। এসব দেখে কবির মন হাহাকার করে ওঠে। তাই মৌসুমি ফুলের গান আর কবির কণ্ঠে জাগে না।
৭. কবিকণ্ঠে মৌসুমি ফুলের গান জাগে না কেন
উত্তর: কবির কণ্ঠে মৌসুমি ফুলের গান জাগে না, কারণ পরিবেশে এক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের অবাধ বৃক্ষনিধন এবং বন উজাড়ের ফলে প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং জীবনের রঙ হারিয়ে গেছে। পৃথিবী এখন শুষ্ক, প্রাণহীন এবং মৃতপ্রায়। প্রকৃতির এই অবস্থা কবির মনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে, ফলে তাঁর মধ্যে আগের মতো গান বা আনন্দ জাগে না। এই হাহাকার এবং শূন্যতার পরিবেশে, যেখানে ফুল আর ফসলের অস্তিত্ব নেই, কবি আর আগের মতো মৌসুমি ফুলের গান গাইতে পারেন না। পরিবেশের সংকট কবির কণ্ঠে গান জাগানোর পথ রুদ্ধ করেছে।
৮. ‘ফুলের ফসল নেই’—চরণটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘ফুলের ফসল নেই’—চরণটি দ্বারা বৃক্ষের দৈন্য অবস্থাকে বোঝানো হয়েছে।
ফুল-ফসলের জন্য শক্তির প্রয়োজন। সবুজের প্রাচুর্যের প্রয়োজন। কিন্তু পারিপার্শি¦ক নির্মম আঘাতে সবুজ প্রাচুর্য হারাচ্ছে, বৃক্ষ নিষ্প্রাণ ও নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। বৃক্ষ যদি সতেজ হয়, তবে ফুল এবং ফসলও ভালো হয়। আর বৃক্ষ যদি জীর্ণ কাতর হয়, তবে ফুল-ফসল হয় না। আলোচ্য চরণ দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে।
৯. ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’—লাইনটি দ্বারা কবি অরণ্য কন্যাদের তথা বৃক্ষদের জেগে উঠতে বলেছেন।
পরিবেশের বিপর্যয়ে চারদিকে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। ফুলের ফসল নেই, মানুষের মনে সুখ নাই। তাই কবির কণ্ঠেও মৌসুমি ফুলের গান নাই, প্রকৃতিতে ফুল ও ফসলের সম্ভার কমে যাওয়ায় মানুষের অস্তিত্ব হুমকির আশঙ্কায় মানুষ ভীত। তাই কবি বৃক্ষ কন্যাদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন পৃথিবীকে আবার সবুজে শ্যামলে ফুলে-ফলে ভরিয়ে দিয়ে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য মূলত বৃক্ষ কন্যাদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে কবি মানুষের প্রতিই আহ্বান জানিয়েছেন।
১০. কবি কেন আত্মার জন্য আনন্দ আনতে বলেছেন?
উত্তর: আত্মা আনন্দ ছাড়া নির্জীব হয়ে পড়ে। এ জন্যই কবি আত্মার জন্য আনন্দ আনতে বলেছেন।
আমাদের শরীর ঠিক রাখতে হলে যেমন খাদ্য এবং ভিটামিন প্রয়োজন, তেমনি আত্মার প্রয়োজন আনন্দ। কারণ আনন্দকে বলা হয় আত্মার খাদ্য। এজন্যই কবি আত্মাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আনন্দ আনতে বলেছেন।
আরও দেখো—অষ্টম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা বই থেকে জাগো তবে অরণ্য কন্যারা অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখানে দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও বাংলা বইয়ের গল্প-কবিতার সৃজনশীল, জ্ঞানমূলক, বর্ণনামূলক এবং বহুনির্বাচনি সমাধানের জন্য উপরের লিংকটি অনুসরণ করো।
Discussion about this post