জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতাই হলো একমাত্র বিবেচ্য বিষয় বিতর্ক : শিক্ষার্থীরা দুটি দলে ভাগ হয়ে যাও। লটারির মাধ্যমে পক্ষ ও বিপক্ষ দল নির্বাচন করো। প্রতি দল থেকে আলোচনার মাধ্যমে তিন জন করে ভালো বক্তা নির্বাচন করো। ১ম, ২য় ও ৩য় বক্তা এবং দলনেতা কে হবে তা ঠিক করে নাও। বাকিরা সবাই নিজ দলের বক্তাদের জন্য তথ্য, যুক্তি ইত্যাদি সরবরাহ করো।
নিজ নিজ দলে আলোচনা করে তিন বক্তার জন্য বক্তব্যের স্ক্রিপ্ট বানাও। একটি ক্লাসে তোমরা আলোচনা করে স্ক্রিপ্ট তৈরি করবে। পরের ক্লাসে বিতর্কের আয়োজন করবে)
জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতাই হলো একমাত্র বিবেচ্য বিষয় বিতর্ক
সময় বন্টন: পক্ষ ও বিপক্ষ উভয় দল থেকে ৩ জন বক্তার প্রত্যেকেই ৪ মিনিট করে সর্বমোট ১২ মিনিট করে সময় পাবে (মোট সময় দুই দলের জন্য, ১২×২= ২৪ মিনিট)। উভয় দলের ৬ জনের বক্তব্য শেষ হলে দুই দল থেকে দলনেতা যুক্তি খণ্ডনের জন্য দুই মিনিট করে অতিরিক্ত সময় পাবে।
সময় সতর্ককারী: একজন সময় সতর্ককারীর দায়িত্ব নাও। প্রত্যেক বিতার্কিকের সময় শেষ হবার ১ মিনিট আগে সতর্ক সংকেত এবং সময় সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ সংকেত দিবে।
বিচারক: দুইজন শিক্ষক এবং তিনজন শিক্ষার্থী নিয়ে বিচারক প্যানেল তৈরি করো। শিক্ষার্থীরা অন্য ক্লাসেরও হতে পারে | তবে নিজেদের ক্লাসের শিক্ষার্থী হলে নিরপেক্ষতা বজায় রাখে এমন হতে হবে। নম্বর প্রদানের জন্য প্রত্যেক বিচারকের হাতে একটি ছক সরবরাহ করো (মূল বইয়ের ৮৪ নম্বর পৃষ্ঠায় নমুনা ছক রয়েছে)।
জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতাই হলো একমাত্র বিবেচ্য বিষয় বিতর্ক পক্ষ দল
তো শিক্ষার্থীরা, তোমরা দেখে নিলে আমাদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতাই হলো একমাত্র বিবেচ্য বিষয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার নিয়মাবলি। এবার চলো আমরা মূল বিতর্কে চলে যাই। নিচে পক্ষ-বিপক্ষ উভয় দলের নমুনা যুক্তি উপস্থাপন করা হল।
বক্তা-১ (মিম) সময়: ৪ মিনিট
উপস্থিত বিচারকমণ্ডলী, শিক্ষকবৃন্দ এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ; আসসালামু-আলাইকুম। ধন্যবাদ আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আজকের বিতর্কের বিষয়বস্তু হচ্ছে- ‘জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতাই হলো একমাত্র বিবেচ্য বিষয়।’ আমি এবং আমার দল এর পক্ষে।
আমি আমার বক্তব্যে এর পক্ষে অবস্থান তুলে ধরছি। জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতাই হলো একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। যোগ্যতা বলতে আমরা একজন ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক সক্ষমতাকে বুঝে থাকি। জীবনে কোনো কিছু অর্জন করতে গেলে একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিকে সামর্থবান হতে হবে।
কেউ যদি কোনো সফলতা অর্জন করতে চায়, আর এ জন্য সে যদি প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়, তাহলে তার জন্য সাফল্য অনিবার্য। তাই আমি আবারও আমার মতে পক্ষে সমর্থন জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি, জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতাই হলো একমাত্র বিবেচ্য বিষয়।
বক্তা-২ (শিফাত) সময়: ৪ মিনিট
উপস্থিত বিচারকমণ্ডলী, শিক্ষকবৃন্দ এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ; আসসালামু-আলাইকুম। ধন্যবাদ আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আজকের বিতর্কের বিষয়বস্তু হচ্ছে- ‘জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতাই হলো একমাত্র বিবেচ্য বিষয়।’ আমি এবং আমার দল এর পক্ষে।
আমি আমার বক্তব্যে এর পক্ষে অবস্থান তুলে ধরছি। সম্মানিত বিচারকম-লী, আমরা যাতে বিভ্রান্ত না হই, তাই আমার দলের প্রথম বক্তবা ইতোমধ্যেই যোগ্যতার সংজ্ঞায়ন করে গেছেন। আমি কেবল একটি উদাহরণের মাধ্যমে আমাদের সমর্থিত বিষয়বস্তুকে আরো জোরদার করব।
আমাদের দেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান সারাবিশ্বে তার ক্রিকেট মাধুর্যের জন্য জনপ্রিয়। আজ তিনি যে সাফল্যময় স্থানে রয়েছেন, এর জন্য তার যোগ্যতাই অনিবার্য ভূমিকা পালন করছে। তিনি তার যোগ্যতার মাধ্যমে দেশকে গৌরব এনে দিয়েছেন। আর তাই আমি আমার দলের বিষয়ের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি, জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতাই হলো একমাত্র বিবেচ্য বিষয়।
বক্তা-৩ (প্রজ্ঞা) সময়: ৪ মিনিট
উপস্থিত বিচারকমণ্ডলী, শিক্ষকবৃন্দ এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ; আসসালামু-আলাইকুম। ধন্যবাদ আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আজকের বিতর্কের বিষয়বস্তু হচ্ছে- ‘জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতাই হলো একমাত্র বিবেচ্য বিষয়।’ ইতোমধ্যেই আমার পূর্বের দুই বক্তা আজকে বিতর্কের বিষয়বস্তুর পক্ষে জোড়াল যুক্তি দিয়েছেন।
তাদের বক্তব্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আমি বলতে চাই, একমাত্র যোগ্যতাই পারে একজন মানুষকে পরিপূর্ণ সফলতা এনে দিতে। একজন ব্যক্তি তার যোগ্যতায় যেকোনো প্রতিবন্ধকতা দূরে রেখে সফলতার দিক এগিয়ে যেতে পারে। যোগ্যতার নির্দিষ্ট কোনো সীমারেখা নেই। একজন মানুষ বিভিন্ন দিক থেকে যোগ্য হতে পারেন এবং তার জীবনের গতিপথকে বদলে দিতে পারেন।
আমরা ইতিহাসে মহান যত শাসকদের দেখে থাকি, তারা প্রত্যেকেই তাদের যোগ্যতাবলে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন। তাই আমি শিক্ষকমণ্ডলীর কাছে জোর আহ্বান জানাচ্ছি, জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতাই হলো একমাত্র বিবেচ্য বিষয় এর পক্ষে বিজয়ী ঘোষণার জন্য।
জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতাই হলো একমাত্র বিবেচ্য বিষয় বিতর্ক বিপক্ষ দল
পক্ষ দলের ১ম বক্তার ৪ মিনিটের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে সঞ্চালকের নির্দেশক্রমে বিপক্ষ দলের ১ম বক্তা তার যুক্তি উপস্থাপন শুরু করবে। এভাবে পক্ষ দলের ১ জন/বিপক্ষ দলের ১ জন করে ৩ জন বক্তা তাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করবে। নিচে বিপক্ষ দলের ৩ জন বক্তার নমুনা যুক্তি উপস্থাপন দেখানো হল।
বক্তা-১ (শিরিনা) সময়: ৪ মিনিট
উপস্থিত বিচারকমণ্ডলী, শিক্ষকবৃন্দ এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ; আসসালামু-আলাইকুম। ধন্যবাদ আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আজকের বিতর্কের বিষয়বস্তু হচ্ছে- ‘জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতাই হলো একমাত্র বিবেচ্য বিষয়।’ আমি এবং আমার দল এর বিপক্ষে।
যোগ্যতাই মানুষের সফলতার একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না। কারণ, যদি কোনো মানুষের জীবনের লক্ষ্য ঠিক না থাকে, তাহলে সে কখনোই সফল হতে পারবে না। আবার কোনো ব্যক্তি তার জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারবে কিনা, তাও সামজিক এবং অর্থনৈতিক অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
মানুষ যদি সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না হয়, তাহলে সে যোগ্যতা থাকা সত্যেও সফল হতে পারে না। তাই বলা যায়, শুধুমাত্র যোগ্যতাই না, বরং জীবনের লক্ষ্য, সামজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানও মানুষের লক্ষ্য নির্ধারণে বিবেচ্য বিষয় হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বক্তা-২ (লাবণ্য) সময়: ৪ মিনিট
উপস্থিত বিচারকমণ্ডলী, শিক্ষকবৃন্দ এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ; আসসালামু-আলাইকুম। ধন্যবাদ আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আজকের বিতর্কের বিষয়বস্তু হচ্ছে- ‘জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতাই হলো একমাত্র বিবেচ্য বিষয়।’ আমি আমার বক্তব্যে এ বিষয়ের বিপক্ষে যুক্তিগুলো তুলে ধরছি।
আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এখনো অনেক দেশের মত উন্নত না। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণের বৃহৎ একটি অংশ বেকার অবস্থায় আছে। এদের মধ্যেই অধিকাংশই উচ্চ শিক্ষিত বেকার। অথচ যোগ্যতা থাকা সত্যেও এরা এদের প্রত্যাশিত কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। অথচ এরা যদি কারিগরি দক্ষতায় দক্ষ হতে পারে, তাহলে তারা নিজেদের স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে। তাই বলা যায়, শুধু যোগ্যতাই ব্যক্তিকে তার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে সাহায্য করতে পারে না।
বক্তা-৩ (রোদেলা) সময়: ৪ মিনিট
উপস্থিত বিচারকমণ্ডলী, শিক্ষকবৃন্দ এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ; আসসালামু-আলাইকুম। ধন্যবাদ আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আজকের বিতর্কের বিষয়বস্তু হচ্ছে- ‘জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতাই হলো একমাত্র বিবেচ্য বিষয়।’ ইতোমধ্যেই আমার দলের দুজন সদস্য এ বিষয়ের বিপক্ষে গ্রহণযোগ্য যুক্তিগুলো দিয়েছেন। আমি তাদের দেওয়া যুক্তির ধারাবাহিকতায় বলতে চাই, শুধুমাত্র যোগ্যতাই ব্যক্তি লক্ষ্য নির্ধারণের মানদণ্ড হতে পারে না।
একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি আরো পরিস্কার হয়ে যাবে। আমাদের দেশের বিভিন্ন খাত এখন দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ। এর ফলে একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবন শেষে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করলেও সেই যোগ্যতা অনুযায়ী চাকারী থেকে বঞ্চিত হয়। তাই বলা যায়, শুধু যোগ্যতাই নয়, দেশের মানুষের ইতিবাচক মূল্যবোধও মানুষের লক্ষ্য নির্ধারণে সাহায্য করতে পারে। আমি ও আমার দলের সদস্যরা জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতাই হলো একমাত্র বিবেচ্য বিষয় এর বিপক্ষে গ্রহণযোগ্য যুক্তি তুলে ধরেছি। তাই বিচারকমণ্ডলীকে আহ্বান করব, যুক্তিগুলো সঠিক বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমার দলকে বিজয়ী ঘোষণা করতে।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা সব অধ্যায়ের সমাধান
বিতর্কের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছি, যেকোনো কাজে সফল হওয়ার জন্য এ কাজটির প্রতি পছন্দ ও আগ্রহ যেমন থাকতে হবে, তেমনি যোগ্যতাও থাকতে হবে। কোনো কাজে আগ্রহ থাকলে প্রচেষ্টার মাধ্যমে যোগ্যতার উন্নয়ন করা সম্ভব। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাজের জন্য যোগ্যতা পূর্বশর্ত হিসেবে ভূমিকা রাখে।
শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post