জীবন ও জীবিকা ৭ম শ্রেণি ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান : সমস্যা যত বড়ই হোক-না কেন, তার সমাধান রয়েছে। কোনো কোনো সমস্যা নিজে নিজেই সমাধান করা যায়। আবার কোনো কোনো সমস্যা এমন রয়েছে যে, তা সমাধানের জন্য দলগত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়।
দলগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনেক কঠিন কাজকেও সহজে সমাধান করা যায়। যেমন- পিঁপড়া অতি ক্ষুদ্র প্রাণী হলেও, তারা দলগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনেক বড় জিনিস বা খাদ্যবস্তু গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে।
জীবন ও জীবিকা ৭ম শ্রেণি ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান
তেমনি মানুষও যদি কোনো কঠিন কাজ বা অসাধ্য সমস্যাকে সমাধান করতে চায়, সেক্ষেত্রে দলগত বুদ্ধি ও প্রচেষ্টায় কাজটির সঠিক সমাধান সহজ হয়ে যাবে। এজন্য আমাদের প্রত্যেককেই দলগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। কবির ভাষায় :
“মিলেমিশে সবার বুদ্ধি করি আদান-প্রদান
তাতেই হবে সব সমস্যার সহজ সমাধান।”
সমস্যা-১ : শিপ্রা সব বিষয়েই একটু খামখেয়ালি এবং উদাসীন। সে গত পরশু স্কুল থেকে বাসায় না ফিরে তার এক বান্ধবীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে চলে যায়। তার বাবা নেই, তবে আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভালো। মা তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে এসময় অস্থির হয়ে উঠেন। শিপ্রা রাত নটায় বাড়ি ফিরে এলে মায়ের সঙ্গে অনেক কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মা খেপে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, তিনি শিপ্রাকে আর স্কুলে যেতে দেবেন না। শিল্পাও খেপে দিয়ে বলে, সে আর কোনোদিন স্কুলে যাবে না। বান্ধবীদের সাথেও কোনো যোগাযোগ রাখবে না। (জীবন ও জীবিকা বই: পৃষ্ঠা ১০০)
প্রশ্ন : শিপ্রার বন্ধু হিসেবে আমরা কীভাবে তাকে সাহায্য করতে পারি?
উত্তর : সিম্ভাব্য উদ্যোগ : আগ্রহ নিয়ে উভয়ের কথা শোনা; পড়াশোনা বন্ধ করে দিলে তার প্রভাব কী হতে পারে নিয়ে আলোচনা করা; শিল্পায় আচরণ কীভাবে পরিবর্তন করা যায়, মা কীভাবে শিপ্রাকে সহযোগিতা করতে পারেন ইত্যাদি।
আমি সম্পা, শিপ্রার সাথে ৭ম শ্রেণিতে পড়ি। আমার আরও কয়েকজন বন্ধু আছে। সোনিয়া, তানিয়া, শিউলী, জলি, রুমা ও লক্ষ্মী। আমরা ৭ জন খুব ভালো বন্ধু। হঠাৎ যখন আমরা শুনি শিল্পার বাসায় এ সমস্যার কথা তখন আমরা বাকি ৬জন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিই শিপ্রার বাসায় যাব। বাসায় গিয়ে আমরা কীভাবে এ সমস্যার সমাধান করব তা আলোচনা করলাম। প্রথমেই শিপ্রার বাসায় গিয়ে শিপ্রা ও তার মায়ের কথা মনোযোগ সহকারে শুনব। কোন জায়গায় সমস্যা আগে খুঁজে বের করব।
তারপর শিপ্রার মাকে খুব ভালোভাবে বোঝাতে হবে যে পড়াশুনা বন্ধ করার ক্ষতিকর দিক কী হতে পারে। এ ব্যাপারে আমরা একজন সম্মানিত শিক্ষককে সঙ্গে নিতে পারি, যাকে শিপ্রার মা অনেক সম্মান করেন। কারণ ছোট বলে আমাদের কথা হয়তো এত গুরুত্ব দিবেন না। সুন্দরভাবে বোঝানোর পর আমরা শিপ্রার সঙ্গেও আলোচনা করব। তাকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে বলব। তাকেও শিক্ষা জীবনের গুরুত্ব ও শিক্ষা বন্ধ করে দিলে তার কী ক্ষতি হবে তা বোঝাবো।
আমাদের সঙ্গে আমাদের সম্মানিত শিক্ষকও থাকবেন। যিনি শিপ্রার কিছু আচরণগত সমস্যার কথা তুলে কীভাবে পরিবর্তন হতে পারে তার পরামর্শ দিবেন। এ ব্যাপারে তার মাকেও আরও সচেতন হতে হবে। মায়ের কী দায়িত্ব এ বিষয়েও আমাদের সম্মানিত শিক্ষক বুঝিয়ে বলবেন। ভালোভাবে বোঝাতে পারলে শিপ্রার মা শিপ্রাকে আবার পড়াতে পাঠাবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা আমাদের বন্ধু শিপ্রাকে আবার আমাদের সাথে পাব।
সমস্যা-২ : সজীব খুব মেধাবী শিক্ষার্থী। কিন্তু আজকাল সে লেখাপড়ায় ভীষণ অমনোযোগী হয়ে উঠেছে। যতক্ষণ বাসায় থাকে শুধু টিভি দেখে, মোবাইল ফোন, টিভি অথবা কম্পিউটারে গেম খেলে। বাবা-মায়ের সঙ্গে একেবারেই কথা বলে না। বাসায় মেহমান এলে তাদের সঙ্গে কথা বলে না। সে খাবার খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলেও প্রচন্ড রেগে যায়।
বাড়িতে ছোট বোনের সঙ্গেও অকারণে দুর্ব্যবহার করে। গোসল ও খাওয়ার কোনো নিয়ম মানছে না। সজীবের বাবা অনেকভাবেই তাকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। স্কুল থেকেও তার নামে আজকাল অভিযোগ আসছে। পাশেই স্বপনদের বাড়ি। স্বপন সজীবের সঙ্গে একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে। সজীবের মা প্রায়ই স্বপনদের বাড়িতে এসে সজীবের ব্যাপার নিয়ে অনেক দুঃখ প্রকাশ করেন। এবং কান্নাকাটি করেন। (জীবন ও জীবিকা বই: পৃষ্ঠা ১০১)
প্রশ্ন : প্রতিবেশী হিসেবে এই পরিস্থিতিতে কীভাবে আমরা সজীব ও তার পরিবারকে সহায়তা করতে পারি?
উত্তর : আমার নাম স্বপন। সজীবের প্রতিবেশী এবং বন্ধু। সজীব খুব মেধাবী ছাত্র হলেও ইদানীং সে একদমই অমনোযোগী। তাই তার মা এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। সজীবের সমস্যাটি একটি জটিল সমস্যা। তাই এ নিয়ে আমরা কয়েকজন বন্ধু হিমেল, জনি, রাজিব, রুবেল ও এমিলি । একত্র হই। এ ব্যাপারে ফলপ্রসূ কিছু আলোচনা করি।
আলোচনার মাধ্যমে আমরা ঠিক করলাম যে, আমরা প্রথমে সজীবের বাসায় যাব। এর বদলে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করব এবং তার কথা (সুখ, দুঃখ, হতাশা, অভিমান) মনোযোগ দিয়ে শুনব। পরে সজীবকে সুন্দর করে বুঝাবো সে যা করছে তা ওর ভবিষ্যতের জন্য খারাপ হবে। প্রয়োজনে আমাদের ক্লাসের সম্মানিত ইংরেজি শিক্ষক সুরজ স্যারকে সঙ্গে নিব। সুরুজ স্যার অত্যন্ত জ্ঞানী, হাসিখুশি, সুন্দর বাচনভঙ্গি ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন শিক্ষক।
সজীবসহ আমরা সবাই তাকে অত্যন্ত সম্মান করি। স্যারসহ আমরা সবাই মিলে সজীবকে বোঝালে সজীব অবশ্যই তা বুঝবে এবং আবার পড়ায় মনোযোগী হবে বলে আশা করি। এছাড়া গ্রামের কিছু মুরুব্বি ও গণ্যমাণ্য ব্যক্তিকেও প্রয়োজনে আমাদের সাথে নিব। কারণ সবাই মিলে কথা বললে বিশেষ করে গ্রামের মুরুব্বি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং শিক্ষকের কথা সজীব অবশ্যই শুনবে। আমরা আশা করি, সজীব আবার তার পড়াশোনায় মনোযোগী হবে এবং বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার কারণ দূর করবে।
সমস্যা ১ ও সমস্যা ২ এর জন্য নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের রিহার্সেল হিসেবে কয়েকটি কথোপকথনের দৃশ্য সাজাও। দলে ভাগ হয়ে শিপ্রা ও সজীবের সঙ্গে কথোপকথনের কয়েকটি স্ক্রিপ্ট বানাও এবং তা ভূমিকাভিনয় করে দেখাও। (জীবন ও জীবিকা বই: পৃষ্ঠা ১০২) (বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই উত্তরটি পিডিএফ উত্তরমালায় দেখানো হল।)
নিজেদের বিদ্যালয় বা পরিবার বা নিজেদের বিল্ডিং বা পাড়া বা এলাকার কোনো একটি সমস্যা খুঁজে বের কর। উক্ত সমস্যাটি সমাধানের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন কর। সমস্যার সমাধানের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়নের পদক্ষেপ বা উদ্যোগ গ্রহণ কর। সমস্যার সমাধান করে পুরো ঘটনা বা অভিজ্ঞতার বর্ণনা (স্টোরিলাইন) উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন লেখ। (জীবন ও জীবিকা বই: পৃষ্ঠা ১০৭)
উত্তর : আমার নাম রবিন। আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। আমাদের স্কুলের নাম থলিয়ারা শাহজাহান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। আমাদের শ্রেণিকক্ষে বিশুদ্ধ খাবার পানির সুব্যবস্থা নেই। এ সমস্যাটি সমাধানের লক্ষ্যে আমি এবং আমার পাঁচজন বন্ধু মিলে শ্রেণিশিক্ষকের সহায়তায় একটি দল গঠন করেছি। দলের অন্য বন্ধুরা হলো আলী আহসান, আল আমিন, মুস্তাফিজ, গাজী সোহেল এবং সৈয়দ জামান। নিচে সমস্যা সমাধানের পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলো তুলে ধরছি-
সমস্যার নাম : শ্রেণিকক্ষে খাবার পানি না থাকা।
সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও উদ্যোগ গ্রহণ : আমাদের শ্রেণিকক্ষে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা না থাকা আমাদের কাছে একটি বড় সমস্যা। তবে এ সমস্যাটি আমরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে খুব সহজে সমাধান করতে পারি। এজন্য প্রথমেই আমরা সলিউশন ফ্লুয়েন্সির ছয়টি ধাপ অনুসরণ করব। যেমন- ১ম ধাপে সমস্যাটি চিহ্নিত করব। ২য় ধাপে সমস্যার উৎস খুঁজে বের করব। ৩য় ধাপে সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য একাধিক সমাধান নিয়ে ভাবব।
৪র্থ ধাপে সমস্যা সমাধানের একাধিক উপায় থেকে যাচাই-বাছাই করে একটি উপায় বেছে নিয়ে নকশা তৈরি করব। ৫ম ধাপে তৈরি করা নকশার পুরো অবয়ব (স্টোরিলাইন) উন্মুক্ত করব। সর্বশেষে ষষ্ঠ ধাপে তৈরি করা নকশার সাথে আমাদের আগের কোনো অভিজ্ঞতা তুলনা করে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সমস্যার সমাধান করে প্রতিবেদন তৈরি : আমরা ছয় বন্ধু মিলে আমাদের শ্রেণিকক্ষের খাবার পানির সমস্যা সমাধান করেছি। এ কাজে আমাদের শ্রেণিশিক্ষক মো. আক্তার হোসেন স্যার সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। নিচে পুরো ঘটনা বা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরছি-
শ্রেণিকক্ষে খাবার পানির ব্যবস্থাকরণ
আমরা থলিয়ারা শাহজাহান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছি। আমাদের স্কুলে একটি টিউবওয়েল থাকলেও সেটা থেকে ঠিকমতো পানি উঠত না। এছাড়া আমাদের শ্রেণিকক্ষেও পানি পানের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এ সমস্যাটি সমাধানের জন্য আমরা ক্লাসের ৩৫জন শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে ৬ জনের একটি দল গঠন করি। এ ব্যাপারে শ্রেণিশিক্ষক আমাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করেন। প্রথমে আমাদের সমস্যাটি নিয়ে নিজেরা পরামর্শ করি।
পরে এলাকার মেম্বার এবং স্থানীয় কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তির সাথে আলোচনা করি। যেহেতু টিউবওয়েলের সমস্যা রয়েছে, তাই সেটা মেরামতের জন্য কিছু অর্থ সংগ্রহের প্রয়োজন ছিল। এক্ষেত্রে স্থানীয় মেম্বার এবং কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রয়োজনীয় অর্থ গিয়ে আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন। পরবর্তীতে আমরা টিউবওয়েল মেরামত করে আমাদের শ্রেণিকক্ষসহ প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে খাবার পানির সরবরাহ নিশ্চিত করেছি। এজন্য আমরা প্রত্যেক শ্রেণিকক্ষের জন্য একটি করে বড় পানির জার এবং দুটি স্টিলের গ্লাসের ব্যবস্থা করেছি।
সেই সাথে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে দুজন করে চারটি দল তৈরি করে দিয়েছি, যারা সাতদিন করে প্রতিমাসে নিজেদের ক্লাসে খাবার পানির সরবরাহ নিশ্চিত করবে। এ কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পেরে আমাদের খুব ভালো লাগছে। যারা আমাদের কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রত্যেকের কাছে আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
প্রতিবেদক
রবিন
সপ্তম শ্রেণি, রোল নং ৩
থলিয়ারা শাহজাহান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
থলিয়ারা, ভাটপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা সব অধ্যায়ের সমাধান
উপরে দেওয়া ‘উত্তরমালা’ অপশনে ক্লিক করে জীবন ও জীবিকা ৭ম শ্রেণি ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post