জীবন বিনিময় কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : কবিতায় দৃপ্ত জয়োল্লাস বলতে নিজ জীবনের বিনিময়ে বাদশা বাবর পুত্র হুমায়ুনের জীবন ভিক্ষা চায় এবং যখন বুঝতে পারেন, দয়াময় আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেছেন, পুত্র হুমায়ূন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে তখন বাদশার নিরাশ হৃদয়ে যে আশার বা আশ্বাসবাণীর প্রতিক্রিয়ায় উল্লসিত ধ্বনি উচ্চারিত হয়, সেই ধ্বনিকেই ‘দৃপ্ত জয়োল্লাস’ বলা হয়েছে।
জীবন বিনিময় কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. কবি ‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় নীরবতাকে নিষ্ঠুর বলেছেন কেন?
উত্তর: কবি নীরবতাকে নিষ্ঠুর বলেছেন, কারণ বাদশা বাবর যখন হুমায়ুনের আরোগ্যের সম্ভাবনা জানতে চান, তখন চিকিৎসক ও দরবেশরা নীরব থাকেন।
এই নীরবতা আসলে একটি অমোঘ সত্যের ইঙ্গিত দেয়—হুমায়ুনের বাঁচার আর কোনো উপায় নেই। বাবর উত্তর পাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিলেন, কিন্তু কারো মুখে কোনো কথা না থাকায় তাঁর মনে গভীর শঙ্কা ও কষ্টের জন্ম নেয়। এই নিঃশব্দতা তাঁর জন্য তীক্ষè বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা কবি ‘নিষ্ঠুর’ বলে অভিহিত করেছেন।
২. ‘সুপ্তি মগন’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় ‘সুপ্তি মগন’ বলতে কবি স্তব্ধ-গভীর রজনিতে পৃথিবীর সকল প্রাণীর ঘুমে মগ্ন অবস্থাকে বুঝিয়েছেন।
গভীর রাতে সমস্ত বিশ্বপ্রকৃতি যখন ঘুমে অচেতন, তখন শুধু সম্রাট বাবরের চোখে ঘুম নেই। তিনি নীরব-নিস্তব্ধ গভীর রজনিতে নিভৃত গৃহকোণে অশ্রুসজল চোখে দুই হাত তুলে করুণাময়ের নিকট প্রার্থনারত প্রিয় পুত্রের রোগমুক্তি কামনায়। সেই অবস্থায় বাবর অনুভব করলেন বিশ্বপ্রকৃতির কানাকানি ধ্বনিত হচ্ছে। বাদশা বুঝলেন, তার প্রার্থনা কবুল হয়েছে। এই নীরব-নিথর অন্ধকার রাতে।
৩. ‘হৃষ্টচিত্তে গ্রহণ করিল শয্যা সে মরণের’—কীভাবে বাবর শয্যা গ্রহণ করলেন?
উত্তর: সম্রাট বাবরের প্রার্থনায় তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র আরোগ্য লাভ করলে স্নেহবৎসল পিতা বাবর হৃষ্টচিত্তে মরণশয্যা গ্রহণ করলেন।
কবি গোলাম মোস্তফার ‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় দিল্লির সম্রাট বাবরের পুত্র হুমায়ূন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। রাজ্যের সমস্ত বিজ্ঞ চিকিৎসক হুমায়ুনের রোগ নিরাময়ে ব্যর্থ হলে স্নেহবৎসল বাবর তাঁর নিজের জীবনের বিনিময়ে মহান আল্লাহর কাছে পুত্রের জীবন ভিক্ষা চাইলেন। পিতৃহৃদয়ের আকুল নিবেদন মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হলো। অতঃপর হুমায়ুন নতুন জীবনলাভ করার সাথে সাথে সম্রাট বাবর মৃত্যুশয্যায় শায়িত হলেন। এ মরণশয্যা তিনি হৃষ্টচিত্তে গ্রহণ করলেন।
৪. ‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় ‘দৃপ্ত জয়োল্লাস’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘দৃপ্ত জয়োল্লাস’ বলতে প্রদীপ্ত বা উদ্দীপিত হওয়ার মতো জয়ধ্বনিকে বোঝায়।
কিন্তু ‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় দৃপ্ত জয়োল্লাস বলতে নিজ জীবনের বিনিময়ে বাদশা বাবর পুত্র হুমায়ুনের জীবন ভিক্ষা চায় এবং যখন বুঝতে পারেন, দয়াময় আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেছেন, পুত্র হুমায়ূন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে তখন বাদশার নিরাশ হৃদয়ে যে আশার বা আশ্বাসবাণীর প্রতিক্রিয়ায় উল্লসিত ধ্বনি উচ্চারিত হয়, সেই ধ্বনিকেই ‘দৃপ্ত জয়োল্লাস’ বলা হয়েছে।
৫. বাদশা বাবর কেন গভীর ধ্যানে বসেছিলেন?
উত্তর: বাদশা বাবর আল্লাহর কাছে পুত্রের প্রাণ ভিক্ষার জন্য গভীর ধ্যানে বসেছিলেন।
বাদশা বাবরের পুত্র হুমায়ুন কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে রাজ্যের কোনো বিজ্ঞ চিকিৎসক, কবিরাজ, হেকিম, কেউ-ই তাকে সুস্থ করে তুলতে সক্ষম হয়নি। তখন নিরাশ বাদশাকে এক দরবেশ বললেন, তিনি যদি তার শ্রেষ্ঠ ধন আল্লাহকে উৎসর্গ করে খুশি করতে পারেন; তবে তার পুত্রের বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন ব্যাকুল বাদশা উপলব্ধি করলেন, তার শ্রেষ্ঠ ধন তার নিজ প্রাণ। তখন তিনি একটি নিরিবিলি ঘরে গভীর ধ্যানমগ্ন হলেন। আল্লাহর কাছে নিজের প্রাণ কোরবানির বিনিময়ে পুত্রের প্রাণ ভিক্ষা চাইলেন এবং পুত্রকে মৃত্যুমুখ থেকে এভাবে ফিরিয়েও আনলেন।
৬. বাদশার নিরাশ হৃদয়ে আশার দৃপ্ত জয়োল্লাস কখন ধ্বনিত হয়েছিল?
উত্তর: বাদশা বাবর যখন বুঝতে পারলেন, দয়াময় আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেছেন এবং পুত্র হুমায়ুন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে, তখন বাদশার নিরাশ হৃদয়ে আশার দৃপ্ত জয়োল্লাস ধ্বনিত হয়।
মুমূর্ষু হুমায়ূনকে সবাই যখন সুস্থ করে তুলতে ব্যর্থ, তখন দরবেশের পরামর্শ অনুযায়ী বাদশা বাবর নিজের শ্রেষ্ঠ ধন নিজ প্রাণ উৎসর্গ করে পুত্রকে বাঁচানোর প্রার্থনা করেন। তখন আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করেন। তখন তিনি পুলকিত হয়ে পুত্রের চারপাশে ঘুরতে থাকেন এবং তার নিরাশ হৃদয়ে আশার সঞ্চার হয়।
৭. উষার পূর্বাভাস বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: উষার পূর্বাভাস বলতে হুমায়ুনের রোগ মুক্তির লক্ষণ বোঝানো হয়েছে।
সম্রাট বাবরের পুত্র হুমায়ূন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। বিজ্ঞ চিকিৎসকগণ অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে তাঁর জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। এমন সময় এক দরবেশ জানালেন, সম্রাট যদি তার শ্রেষ্ঠধন উৎসর্গ করতে পারে, তবেই তার পুত্র জীবন লাভ করতে পারেন। সম্রাট বাবর উপলব্ধি করলেন নিজের জীবনের চেয়ে আর বেশি প্রিয় কিছু নেই। তিনি মহান আল্লাহর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ধনের বিনিময়ে পুত্রের জীবন ভিক্ষা চাইলেন। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করলে শাহজাদা হুমায়ুন ধীরে ধীরে সুস্থ হতে লাগলেন। তার এ রোগমুক্তির লক্ষণকেই কবি উষার পূর্বাভাস বলেছেন।
৮. ‘প্রস্তুত আমি দিতে সেই কোরবানি’ চরণের অর্থ বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: হুমায়ুনের জীবন বাঁচাতে সম্রাট বাবর তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ ধন দান করতে প্রস্তুত।
সম্রাট বাবরের পুত্র হুমায়ূন কঠিন রোগে আক্রান্ত। দিন দিন তাঁর অবস্থার অবনতিই হয়ে চলেছে। রাজ্যের অনেক বিজ্ঞ হেকিম-দরবেশ হুমায়ুনের জীবন বাঁচাতে ব্যর্থ হয়। এমন সময় এক দরবেশ এসে বাবরকে বলেন, বাবর যদি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ধন দান করতে পারে, তবে তার পুত্র বেঁচে উঠবে। একথা শুনে বাবর বলেন, ‘তাই যদি হয়, প্রস্তুত আমি দিতে সেই কোরবানি।’
৯. পুত্রের চিকিৎসা করাতে বাদশা বাধর সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন কেন?
উত্তর: বাদশা বাবর পুত্রের প্রতি গভীর স্নেহবাৎসল্যের কারণে তার সকল চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
একদা বাদশা বাবরের প্রিয় পুত্র হুমায়ুন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তার বাঁচার আশা হারিয়ে ফেলে। এতে পিতা বাবরের চারদিকে মরণ-অন্ধকার নেমে আসে। তিনি রাজ্যের যত বিজ্ঞ হেকিম, কবিরাজ ও দরবেশকে ডেকে এনে পুত্রের চিকিৎসার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। চিকিৎসা ও সেবাযতেœর একটুও ত্রুটি তিনি করেননি। পুত্রের জন্য বাবর এত কিছু করেছিলেন পিতার দায়িত্ব থেকে এবং সন্তানের প্রতি স্নেহের কারণে।
১০. ‘জীবন বিনিময়’ কথাটিতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘জীবন বিনিময়’ বলতে বোঝায় এক জীবনের পরিবর্তে অন্য জীবন দান বা প্রতিদান করা।
কবি গোলাম মোস্তফার ‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় ‘জীবন বিনিময়’ বলতে বোঝায় এক জীবনের পরিবর্তে অন্য জীবন দান বা প্রতিদান করা। সম্রাট বাবর। তাঁর পুত্র হুমায়ুনের জীবন রক্ষার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। নিজের জীবন উৎসর্গ করাকেই কবিতায় বিনিময় বলে অভিহিত করেছেন।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে জীবন বিনিময় কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post