হঠাৎ জ্বর হওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকেরই রয়েছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে কিংবা শরীরে কোন রোগ বাসা বাধলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। যাকে আমরা জ্বর বলে থাকি। হঠাৎ করে জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তারপরও জ্বর না কমলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
জ্বর হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার কারণে জ্বর হলে তা দু-তিন দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, বাতজ্বর কিংবা টাইফয়েড জ্বর হলে জ্বর সারতে অনেক সময় নেয়। সেজন্য জ্বরের ধরন যেমন: ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, বাতজ্বর কিংবা টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ গুলো জেনে চিহ্নিত করতে হবে। তারপর সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণে জ্বর হলে ঘরোয়া উপায়েই সেই জ্বর কমানো সম্ভব। তার পাশাপাশি চিকিৎসা নিলে ২/৩ দিনের মধ্যে জ্বর হতে সেরে উঠা সম্ভব। তবে ডেঙ্গু কিংবা টাইফয়েড জাতীয় জ্বর হলে ঘরোয়া উপায়ে জ্বর কমানো সম্ভব হলেও একেবারে সেরে উঠা সম্ভব নয়।
জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
আমাদের ঘরে ও প্রাকৃতিক পরিবেশে ঔষধিগুণসম্পন্ন অনেক উপাদান পাওয়া যায়। যে উপাদানগুলো রূপচর্চা ও বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় ব্যবহার করতে পারি। চলুন তেমনই কিছু উপাদান ও উপায়ের কথা জেনে আসি। যেগুলো ব্যবহারে ঘরোয়াভাবেই জ্বর কমানো সম্ভব।
১. জলপট্টি দিন
জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। এমতাবস্থায় কপালে জলপট্টি দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। জলপট্টি দেওয়ার জন্য ছোট এক টুকরা কাপড় বা রুমাল নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে কপালের উপর রাখুন। ৮/১০ মিনিট পরে সেই জলপট্টি তুলে নিন। তারপর আবার পানিতে ভিজিয়ে কপালে রেখে দিন। এভাবে কয়েকবার করলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা কমে আসবে।
২. জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় তুলসী পাতার রস খান
জ্বরের সাথে সর্দি-কাশি ও মাথা ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতিতে আমরা, সর্দি-কাশির ঔষধ ও মাথা ব্যথার ঔষধ খেয়ে থাকি। এত ধরনের ঔষধের পরিবর্তে ঘরোয়াভাবে তুলসী পাতার রস ব্যবহার করে সবগুলো সমস্যা হতে বের হওয়া সম্ভব।
তুলসী পাতা ব্যবহারের জন্য প্রথমে ৭/৮ টি তুলসী পাতা নিয়ে গরম পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। ফুটানো শেষ হয়ে গেলে তাতে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে হবে। এভাবে দৈনিক দুই হতে তিনবার খেতে হবে।
৩. জ্বর কমাতে লেবু ও মধুর ব্যবহার
মধুতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। মধুর এই গুণের কারণে শরীরে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস দূরীভূত হয়। জ্বর কমাতে মধু ব্যবহারের জন্য প্রথমে এক চা চামচ মধু ও ১টি লেবুর অর্ধেক, এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে নিতে হবে। লেবু ও মধুর মিশ্রণযুক্ত এই পানি শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়ক।
৪. জ্বর কমাতে আদার ব্যবহার
আদায় রয়েছে অ্যান্টি-ভাইরাস ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এই উপাদানগুলো শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়ক। ১ কাপ পানিতে এক টুকরো আদা দিয়ে সেই পানি ফুটিয়ে নিন। ফুটানো হয়ে গেলে গরম পানিতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এই তরল উপাদান দিনে ৩-৪বার পান করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে আসবে।
৫. জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় রসুন ব্যবহার করুন
প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে রসুনও জ্বর কমাতে সহায়ক। রসুনের সাহায্য জ্বর কমাতে চাইলে ১ কোয়া রসুন বেটে অথবা কুচি কুচি করে কেটে ১ কাপ গরম পানিতে কয়েক মিনিটের জন্য রেখে দিন। তারপর সেই পানি পান করুন। স্বাদ ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য মধু মেশানো যেতে পারে।
শেষ কথা
বেশীরভাগ সময়েই জ্বর হলে তা ক্ষণিক সময়ের জন্য বা ২/৩ দিনের জন্য হয়ে থাকে। হঠাৎ জ্বর হলে, জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো অনুযায়ী কাজ করার মাধ্যমে জ্বর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব। তবে, জ্বরের তাপমাত্রা অধিক বেড়ে গেলে বা জ্বর একাধারে কয়েকদিন থাকলে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
Discussion about this post