ঝর্ণার গান কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : ঝর্ণার চলার পথটি পুলকিত গতিময়। স্তব্ধ পাথরের বুকে সে আনন্দের চিহ্ন রেখে ছুটে চলে। এই জলধারার যে সৌন্দর্য তা তুলনারহিত। পাথরের বুকে আঘাত হেনে ঝর্ণা ছন্দের দোলা ও মনোহর সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটায়। এই দৃশ্য সহজেই সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষের মনকে হরণ করে নেয়।
ঝর্ণার গান কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ‘শঙ্কা নাই, সমান যাই’—ঝর্ণা এ কথা বলেছে কেন?
উত্তর: পাহাড়ের বাধাকে উপেক্ষা করে ঝর্ণা আপন বেগে ছুটে চলে বলে ঝর্ণা আলোচ্য কথাটি বলেছে।
শিথিল পাহাড়ের গা বেয়ে ঝর্ণা আনন্দিত চিত্তে ছুটে যায়। পথে ঝুম পাহাড় ঝর্ণাকে ঘাড় বাঁকিয়ে ভয় দেখায়। কিন্তু ঝর্ণা তাতে ভীত না হয়ে একই গতিতে ছুটে চলে। পাহাড়ের শঙ্কাকে পরোয়া না করে ঝর্ণা নিজের চলমানতা বজায় রাখে-এই প্রসঙ্গটিই উঠে এসেছে আলোচ্য চরণে।
২. ‘আমরা চাই মুগ্ধ চোখ’—ঝর্ণা এ কথা বলেছে কেন?
উত্তর: সৌন্দর্যপিপাসুর সঙ্গ লাভ করার জন্য ঝর্ণার প্রত্যাশার কথা প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণে।
ঝর্ণার সৌন্দর্য তুলনারহিত। এর চলার পথটি যেমন আনন্দে ঘেরা তেমনি পথের চারপাশের সৌন্দর্যও অপূর্ব। তা দেখে সৌন্দর্যপিপাসুর মনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। মুগ্ধ চোখে তারা চেয়ে থাকে ঝর্ণার দিকে। এমন বিহ্বল ও প্রশংসাসূচক দৃষ্টির প্রত্যাশার কথা বলা হয়েছে আলোচ্য চরণে।
৩. ‘সুন্দরের তৃষ্ণা যার, আমরা ধাই তার আশেই।’—কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: সৌন্দর্যপিপাসুদের সঙ্গ লাভের জন্য ঝর্ণার আগ্রহের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে আলোচ্য চরণে।
ঝর্ণার চলা গতিময়, নির্ভয়। তার চলার পথে সে সৃষ্টি করে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। ঝর্ণার প্রত্যাশা, তার সৌন্দর্যে সকলে মুগ্ধ হবে। যারা তাকে দেখবে তাদের চোখে থাকবে মুগ্ধ দৃষ্টি। নিসর্গপ্রেমী সত্তার মনে ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টির জন্য ঝর্ণা বিরামহীন ছুটে চলে।
৪. ‘পাতকুয়ায় যাক না সেই’—ঝর্ণা কেন এ কথা বলেছে?
উত্তর: বিশুদ্ধ জল পাওয়ার জন্য যারা আগ্রহী ঝর্ণা তাকে পাতকুয়ায় যেতে বলেছে।
শুদ্ধতার চেয়ে ঝর্ণার বেশি মনোযোগ সৌন্দর্যের দিকে। কণ্ঠে যার তৃষ্ণা সে বিশুদ্ধ পানি চায়। ঝর্ণার সৌন্দর্যের তুলনায় সে ঝর্ণার পানির শুদ্ধতার প্রতি বেশি আগ্রহী। কিন্তু ঝর্ণা এ ধরনের মানসিকতার ব্যক্তিদের সঙ্গ লাভে উৎসাহী নয়। তাদেরকে সে পাতকুয়া থেকে জল সেঁচে তৃষ্ণা মেটাতে বলেছে।
৫. ‘দুল দোলাই মন ভোলাই।’—চরণটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: আলোচ্য চরণে ঝর্ণার চলায় ছন্দ ও সৌন্দর্য সৃষ্টির বিষয়গুলো প্রকাশ পেয়েছে।
ঝর্ণার চলার পথটি পুলকিত গতিময়। স্তব্ধ পাথরের বুকে সে আনন্দের চিহ্ন রেখে ছুটে চলে। এই জলধারার যে সৌন্দর্য তা তুলনারহিত। পাথরের বুকে আঘাত হেনে ঝর্ণা ছন্দের দোলা ও মনোহর সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটায়। এই দৃশ্য সহজেই সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষের মনকে হরণ করে নেয়।
৬. ‘শিথিল সব শিলার পর’—বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: ‘শিথিল সব শিলার পর’—বলতে কবি বোঝাতে চেয়েছেন নির্জীব, নিস্তব্ধ পাথরের ওপর দিয়ে ঝরনার ছুটে চলা ও তার আনন্দমুখর গতিবিধি।
পাহাড়ের গায়ে থাকা পাথরগুলো স্থির ও নিশ্চল, তারা কোনো শব্দ করে না, কোনো আন্দোলনও করে না। কিন্তু সেই স্তব্ধতার মাঝে ঝরনার প্রবাহ এনে দেয় চঞ্চলতা, সজীবতা ও সুরেলা ধ্বনি। ঝরনার জলের স্পর্শে পাথরগুলোও যেন প্রাণ ফিরে পায়। কবিতার ঝরনাটি সব বাধা অতিক্রম করে, হাসতে হাসতে, নাচতে নাচতে, গান গাইতে গাইতে ছুটে চলে। তার উচ্ছ্বাসময় চলার সাথে পাথরগুলোর নিরবতা একটি দারুণ বৈপরীত্য সৃষ্টি করে, যা প্রকৃতির এক অপূর্ব সৌন্দর্য প্রকাশ করে।
৭. ঝুম পাহাড় চোখ পাকিয়ে ভয় দেখায় কেন?
উত্তর: ঝুম পাহাড় যেন ঝরনার অবিরাম বয়ে চলার গতি, তার চঞ্চলতা দেখে তাকে থামাতে চায়। তার পুলকিত গতিকে সতর্ক করতে ও তার চঞ্চলতাকে থামাতে তাই চোখ পাকিয়ে ভয় দেখায়।
ঝরনা বয়ে চলে অবিরাম। নৃত্যরত অবস্থায় নানা সুমধুর সুরে গান গাইতে গাইতে সে ধেয়ে চলে। কারও তোয়াক্কা করে না। কারও ভয় নেই তার। সে তার উত্পত্তিস্থল থেকে বহুদূরে চলে যায়। পাহাড় যেন তা পছন্দ করতে পারে না। পাহাড়ের নির্জনতাকে ভঙ্গ করছে বলে, পাহাড় থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বলে পাহাড় চোখ পাকিয়ে তাকে ভয় দেখায়। ঝরনার চঞ্চল, পুলকিত গতিকে বাধা দিতে, স্তব্ধতার মধ্যে ঝরনার এই শব্দকে থামাতেই ঝুম পাহাড় চোখ পাকিয়ে ভয় দেখায়।
৮. ‘চপল পায় কেবল ধাই।’—চরণটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: চরণটির মাধ্যমে ঝর্ণার উচ্ছল ও বিরামহীন ছুটে চলাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
পাহাড় থেকে সৃষ্ট ঝর্ণা পাহাড়ের গা বেয়ে উদ্দাম গতিতে ছুটে চলে। তার চঞ্চল, আনন্দমুখর চলার মাঝে বাধা হতে পারে না কিছুই। দিনরাত সে নৃত্যরত রমণীর মতো কেবলই ছুটে চলে।
৯. ‘ভয় দ্যাখায়, চোখ পাকায়’—চরণটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ঝর্ণার চলার পাহাড়ি পথ যেন ঝর্ণার সামনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়—আলোচ্য চরণের বক্তব্যে এটিই প্রকাশ পেয়েছে।
ঝর্ণা যেন মুক্ত প্রাণের প্রতীক। পাহাড়ের বুক চিরে চঞ্চল পায়ে ছুটে আসে। পথে পাহাড় এঁকে বেঁকে বাধা সৃষ্টি করে। কবির ভাষায় পাহাড় যেন এভাবে ঝর্ণাকে ভয় দেখাতে চায়। যদিও ঝর্ণা তাতে ভীত না হয়ে আপন গতি বজায় রাখে।
১০. ‘ঝর্ণা একা দিবস-রাত, সাঁঝ-সকালে চলে’-বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ঝর্ণা একা দিবস-রাত, সাঁঝ-সকাল চলে বলতে ঝর্ণার অবিরাম ছুটে চলাকে বোঝানো হয়েছে।
ঝর্ণা হচ্ছে পর্বত থেকে নেমে আসা সাদা জলরাশি। ঝর্ণার কোনো বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই। ধেয়ে চলাই তার ধর্ম। দিনরাত-সাঁঝ-সকাল অর্থাৎ বাধাহীন, বিরামহীনভাবে পতিত হচ্ছে সে।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে ঝর্ণার গান কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post