স্যালমোনেলা টাইফি নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে টাইফয়েড জ্বর হয়। এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে আক্রমণের ১০/৩০ দিন পর্যন্ত টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় না। পরে জ্বর আসতে শুরু করে এবং সাধারণ জ্বরের চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যে লক্ষণগুলোর সাহায্য আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের টাইফয়েড জ্বর হয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার কিংবা পানীয়র মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। মূলত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে জায়গা করে নিতে শুরু করে যার ফল হয় জ্বর ও বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ। যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী তাদের শরীরে এই ব্যাকটেরিয়া কোন ক্ষতিসাধন করতে না পেরে লুকায়িত অবস্থায় থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া বিশেষ করে পিত্তথলিতে অবস্থান করে। এবং সময় ও সুযোগ বুঝে এই ব্যাকটেরিয়া শরীরের ক্ষতিসাধন করতে শুরু করে।
টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ
স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশের ১০/৩০ দিন পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। তারপর তারা শরীরের ক্ষতি করতে শুরু করে। যার ফল হিসেবে প্রথমে শরীরে জ্বর আসতে শুরু করে। পরে জ্বরের তীব্রতা বাড়তে থাকে। এবং যতই দিন যেতে থাকে ততই লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে।
টাইফয়েড জ্বরের স্তর গুলো
টাইফয়েড জ্বর প্রথমে সাধারণ জ্বরের মতোই মনে হয় পরে ধীরে ধীরে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণগুলো প্রকাশের উপর ভিত্তি করে টাইফয়েড জ্বরকে তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়। প্রথম স্তর হচ্ছে সাধারণ জ্বর, দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে জ্বরের তাপমাত্রা অনেক বেশী বেড়ে যাওয়া এবং তৃতীয় স্তর হচ্ছে শরীর একেবারে ভেঙে পড়া ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা শুরু হওয়া।
টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ প্রথম স্তর
টাইফয়েড জ্বর প্রকাশ হওয়ার সময় সাধারণ জ্বরের মতো মনে হয়। তাই আমরা ধরতেই পারি না এটা কি টাইফয়েড জ্বর নাকি সাধারণ জ্বর। টাইফয়েড জ্বর হলে, টাইফয়েড জ্বরের সাথে মাথা ব্যথা, শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে হাত, পা ও পেট ব্যথা শুরু হয়। এভাবে জ্বর এক সপ্তাহরে মতো স্থায়ী হয়।
টাইফয়েড জ্বরের দ্বিতীয় স্তর
টাইফয়েড জ্বরের প্রথম স্তরে থাকাকালীন মানুষ বুঝতেই পারে না যে তার টাইফয়েড জ্বর হয়েছে। যার জন্য ভুল চিকিৎসায় জ্বর না কমে বরং টাইফয়েড জ্বর তার দ্বিতীয় স্তরে গিয়ে পৌছে। দ্বিতীয় স্তরে জ্বরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস কিংবা ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে। টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ গুলো দ্বিতীয় স্তরে সম্পূর্ণ প্রকাশ পায়। দ্বিতীয় স্তরে যে লক্ষণ প্রকাশ পায় সেগুলো হচ্ছে-
- মাথা ভারী হয়ে যাওয়া
- শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া
- জ্বরের সঙ্গে কাশি হওয়া
- পেটে ব্যথা বেড়ে যাওয়া
- শিশুদের ডায়রিয়া হয়ে থাকে
- ক্ষুধামন্দা হয়ে থাকে, ব্যক্তির রুচি কমে যাবে
- বমি-বমি ভাব লাগতে পারে, অনেক সময় বমিও হয়ে থাকে
- মাথাব্যথার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ও শরীর প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া
- পেটে ও পিঠে লালচে দাগ ও গোলাপি রঙের ফুসকুড়ি দেখতে পাওয়া যায়
এই ব্যাকটেরিয়া শরীরের পরিপাকতন্ত্রে বাসা বাঁধে। যার দরুন হতে পারে বদহজম হওয়ার মতো সমস্যা। যার ফলে ক্ষুদামন্দা হয়ে থাকে। হজম শক্তি বাড়ানোর উপায় জানা থাকলেই মূলত এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
এই লক্ষণগুলো দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে। অনেক ব্যক্তি ঠিকমতো চিকিৎসা নেওয়ার পরেও এই সময়ে সুস্থ হন না। কেননা, আপনার শরীরে টাইফয়েড অনেক আগেই বাসা বেধেছে। তাই অন্তত দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসা নেয়া শুরু করা উচিত।
কোন ব্যক্তি যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নিতে শুরু করে সে ব্যক্তি তত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়। দেরিতে চিকিৎসা নিতে শুরু করলে সুস্থ হতে আরও বেশী সময় লাগে। যার ফল হয় টাইফয়েড জ্বর তৃতীয় স্তরে চলে যাওয়া।
টাইফয়েড জ্বরের তৃতীয় স্তর
টাইফয়েড জ্বর এভাবে চলতে থাকলে এবং চিকিৎসা না নিলে অবস্থা গুরুতর থেকে গুরুতর হতে শুরু করে। যদিও অধিকাংশ ব্যক্তি প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরেই চিকিৎসা নেওয়া শুরু করে দেয়। তবে, কিছু এমনও ব্যক্তি আছে যারা চিকিৎসা নিতে অলসতা করে। যার ফল হয় পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা, অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ ও পিত্তথলিতে সংক্রমণ।
মূলত স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া যে স্থানে বাসা বাধে সে স্থানগুলোর ক্ষতি করতে শুরু করে। ঠিকসময়ে চিকিৎসা নিলে এ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। টাইফয়েড রোগের এই স্তর পর্যন্ত আসে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম।
শেষ কথা
উপরে টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ গুলো দেওয়া হয়েছে। উক্ত লক্ষণগুলো চোখে পড়লেই যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। কেননা, টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা যত দেরিতে নেওয়া হবে এই রোগের ব্যাকটেরিয়া শরীরের মধ্যে তত বেশী ক্ষতি করতে শুরু করে। শেষ পর্যায়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে শুরু করে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিন।
Discussion about this post