টুনুর কথা : টুনু ছিল কিশোরগঞ্জ জেলার কেন্দুয়া গ্রামের এক সাধারণ ছেলে। নয় ভাইবোনের মধ্যে সে ছিল বড়ো। তার বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যেত ব্রহ্মপুত্র নদী। সারাদিন সে নদী, কাশবন, উড়ে যাওয়া পাখি, নৌকা ও প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখত এবং ছবি আঁকত। তার মা তার আঁকা ছবি দেখে খুব খুশি হতেন।
ছবি আঁকায় পড়াশোনা করার স্বপ্ন নিয়ে টুনু কলকাতার আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে চায়। ১৬ বছর বয়সে বাড়ির কাউকে না জানিয়ে সে কলকাতা গিয়ে স্কুলটি দেখে আসে। পরে মা তাঁর গহনা বিক্রি করে ছেলেকে সেখানে ভর্তি করান। টুনু অনেক কষ্টের মধ্যেও ক্লাসের সেরা ছাত্র হয়ে ওঠে।
টুনুর কথা
বাবা-মা তাকে আদর করে টুনু নামে ডাকতেন। তার বাড়ি ছিল কিশোরগঞ্জ জেলার কেন্দুয়া গ্রামে। নয় ভাইবোনের মধ্যে সে ছিল সবার বড়ো।
ছেলেটির বাড়ির পাশ দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদী বয়ে গেছে। সে সারাদিন নদী দেখত, নদী তীরের কাশবন দেখত, নদীর উপর উড়ে যাওয়া পাখি দেখত, গুনটানা নৌকা দেখত; আর দেখত
পথঘাট, গাছপালা, আকাশ ও ফসলের মাঠ। ছেলেটা এসব দেখত আর ছবি আঁকত। ছবি আঁকতে তার খুব ভালো লাগত। পাখির ছবি, নদীর ছবি, নৌকার ছবি, জেলেদের মাছ ধরার ছবিসহ আরও কত ছবি! ছবি এঁকে এঁকে সে তার মাকে দেখাত। মা তার ছবি দেখে খুব খুশি হতেন। তার খুব ইচ্ছা ছবি আঁকার উপর পড়াশোনা করবে।
সে জানতে পারল, কলকাতা শহরে একটা সরকারি আর্ট স্কুল আছে। তখন তার বয়স ১৬ বছর, দশম শ্রেণির ছাত্র। সে একদিন বাড়ির কাউকে না বলে আর্ট স্কুল দেখতে কলকাতা চলে গেল। ফিরে এসে বাবা-মার কাছে বায়না ধরে বসল, সে কলকাতার আর্ট স্কুলে ভর্তি হবে। ছেলের আবদারে বাবা-মা চিন্তায় পড়ে গেলেন।
নয় ভাইবোনের মধ্যে ছেলেটি ছিল সবার বড়। তার বাবা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর। সরকারি বেতনে এতবড় পরিবার চালাতে তাঁদের হিমশিম অবস্থা। তবু ছেলের আগ্রহ ও জেদকে উপেক্ষা করতে পারলেন না মা। তিনি তাঁর গহনা বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন।
কলকাতায় অনেক কষ্টে তার দিন কাটতে লাগল। কিন্তু সে ছিল ক্লাসের সেরা ছাত্র। আর্ট স্কুলের সব শিক্ষক তাকে খুব পছন্দ করতেন। আর্ট স্কুলের পরীক্ষায় সে সবার চেয়ে ভালো করল। সেই ছেলেটিই পৃথিবী বিখ্যাত শিল্পী জয়নুল আবেদিন। তাঁকে আমরা শিল্পাচার্য নামে ডাকি।
পড়াশোনা শেষ করে তিনি কলকাতা আর্ট কলেজেই শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর ছবির খবর ছাপা হতে থাকে। একবার সারা ভারতের ছবির প্রদর্শনীতে তিনি সোনার মেডেল পুরস্কার পান।
তখন বাংলা ১৩৫০ সাল। সে বছর অনেক বড়ো দুর্ভিক্ষ হয়। জয়নুল আবেদিন তখন দুর্ভিক্ষের ছবি আঁকেন, অনেক অনেক ছবি। সেইসব ছবি দেখে দেশ-বিদেশের মানুষ এদেশের দুর্ভিক্ষের কথা জানতে পারে।
১৯৭০ সালে তিনি দুটি বিখ্যাত ছবি আঁকেন। একটির নাম ‘নবান্ন’ এবং আরেকটির নাম ‘মনপুরা-৭০’। ‘নবান্ন’ ছবিতে তিনি এদেশের গ্রামবাংলার মানুষের জীবনযাত্রা ফুটিয়ে তোলেন। আর ‘মনপুরা-৭০’ ছিল ঘূর্ণিঝড়ের ছবি। ১৯৭০ সালে এদেশে অনেক বড়ো ঘূর্ণিঝড় হয়। ‘মনপুরা-৭০’ ছবিতে তিনি সেই ভয়ংকর ঝড়ের রূপ আঁকেন। এছাড়া ‘বিদ্রোহী’, ‘মই টানা’, ‘গুন টানা’, ‘গাঁয়ের বধূ’ ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত ছবির নাম।
তখন বাংলাদেশে আর্ট স্কুল ছিল না। তিনি ১৯৪৮ সালে ঢাকায় এসে একটা আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ১৯৫৮ সালে সেই স্কুলটিকে ঢাকা আর্ট কলেজে রূপ দেন। সেই আর্ট কলেজটাই এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট।শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৯শে ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৬ সালের ২৮শে মে মৃত্যুবরণ করেন।
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি এবং অর্থ বলি।
ঘূর্ণিঝড়, গুনটানা, দুর্ভিক্ষ, নবান্ন, বিদ্রোহী
২. শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করি।
ক. জয়নুলের বাড়ির পাশ দিয়ে _______ নদী বয়ে গেছে।
খ. ১৯৭০ সালে তিনি দুটি বিখ্যাত ছবি _______ ও _______ আঁকেন।
গ. ‘মনপুরা-৭০’ _______ ছিল ছবি।
ঘ. ১৯৪৮ সালে ঢাকায় তিনি _______ প্রতিষ্ঠা করেন।
ঙ. শিল্পাচার্য মৃত্যুবরণ করেন _______ সালে।
৩. জয়নুল আবেদিনের সংক্ষিপ্ত জীবনী রচনা করি।
নাম —
জন্মসাল ও জন্মস্থান —
শৈশব —
কলেজের নাম —
তাঁর আঁকা বিখ্যাত ছবি —
তাঁর গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান —
মৃত্যুর তারিখ —
৪. বাম অংশের সঙ্গে ডান পাশের তথ্যগুলো মিলিয়ে পড়ি।
বাবা-মা জয়নুলকে আদর করে | ১৯৪৮ সালে |
জয়নুল কাউকে না বলে কলকাতা যান | ১৩৫০ সালে |
দেশে বড় রকমের দুর্ভিক্ষ হয় | বিদ্রোহী, নবান্ন, মনপুরা-৭০ |
তাঁর বিখ্যাত ছবি | টুনু বলে ডাকতেন |
ঢাকায় আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন | ১৬ বছর বয়সে |
৫. প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
ক. জয়নুল আবেদিনের জন্ম কোথায়?
খ. ১৩৫০ সালে জয়নুল কিসের ছবি আঁকেন?
গ. ‘নবান্ন’ ছবিতে কী ফুটে উঠেছে?
ঘ. কত সালে তিনি আর্ট স্কুলকে কলেজে রূপ দেন?
ঙ. জয়নুলের বিখ্যাত ছবিগুলো কী কী?
৬. বড়ো হয়ে কী হতে চাও, সে সম্পর্কে পাঁচটি বাক্য লিখি।
◉ আরও দেখুন: চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বইয়ের সকল গল্প-কবিতার সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে টুনুর কথা গল্পটি আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post