ডিজিটাল প্রযুক্তি ৭ম শ্রেণি শিখন অভিজ্ঞতা ৯ সেশন ২ : প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ তার প্রতিদিনের জীবন যাপন অনেক সহজ করছে, আরও উন্নত করছে। গত দিনের বাড়ির কাজ করতে গিয়ে আমরা কী একটি জিনিস কি লক্ষ্য করেছি যে, আমার আর ১০০ বছর আগের একজন মানুষের মধ্যে যে পার্থক্যগুলো রয়েছে, তার অধিকাংশই প্রযুক্তির পরিবর্তনের আরেকটি ব্যাপার লক্ষ্য করলে বুঝতে পারব, আমাদের দুজনের মধ্যে যে পরিবর্তনগুলো আমি দেখতে পেলাম সেগুলো অনেকাংশে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন।
সামাজিক পরিবর্তন হলো, সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তন হলো মানুষের জীবন আচরণের পরিবর্তন। যেমন, একসময় সবাই হাতে চালানো তাঁতের তৈরি পোশাক পরতো। হাতে চালানো তাঁতে কাপড় তৈরি করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়, যার কারণে এর দামও অনেক বেশি ছিল।
ডিজিটাল প্রযুক্তি ৭ম শ্রেণি শিখন অভিজ্ঞতা ৯ সেশন ২
যখন সুতা ও কাপড় তৈরির প্রযুক্তি আবিষ্কার ও ব্যবহার শুরু হলো, তখন অল্প সময়ে অনেক বেশি কাপড় উৎপাদন সম্ভব হয়ে গেল। মানুষও অনেক অল্প খরচে কাপড় কিনতে শুরু করল আর সুতির কাপড় ছাড়াও তারা সিনথেটিক (নাইলন, পলিয়েস্টার) কাপড়ের নানান রং ও ডিজাইনের কাপড় পরতে শুরু করল। পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে মানুষের আচরণের এই পরিবর্তন প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত।
এক সময় ভারতীয় উপমহাদেশে ধুতি বা লুঙ্গিজাতীয় পেশাকই ছিল পুরুষদের প্রধান পোশাক। ইংরেজরা এই অঞ্চল যখন শাসন করে, তখন তারা এখানকার পুরুষদের তাদের পোশাক ‘প্যান্ট’ পরতে উৎসাহী করে বা কখনো কখনো বাধ্য করে। একসময় এই প্যান্টই হয়ে যায় পুরুষদের জন্য আনুষ্ঠানিক পোশাক। আমরা এখন কাউকে ধুতি বা লুঙ্গি পরে স্কুল বা অফিসে যেতে দেখিনা মানুষের ভিন্ন ধরনের পোশাক পরার এই পরিবর্তন প্রযুক্তির চেয়েও রাজনৈতিক এবং শাসনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত।
কিছু কিছু প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আমাদের জীবনাচরণের মধ্যে এমন ভিন্নতা বা নতুনত্ব নিয়ে আসে যা আমাদের চমকে দেয়। অনেকে এই পরিবর্তন সহজে মেনে নিতে পারে না; আবার অনেকে পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। নিচে কিছু পরিবর্তন দেওয়া হলো। কিছু পরিবর্তন তুমি নিজের কল্পনাশক্তি কাজে লাগিয়ে চিন্তা করে লিখবে যে ভবিষ্যতে কী বা কেমন পরিবর্তন আমাদের জীবনে আসতে পারে।
আর পাশের দুই ঘরের মধ্যে এক ঘরে তুমি ওই পরিবর্তন সম্পর্কে মতামতো দেবে। তোমার যদি মনে হয় পরিবর্তনটি ইতিবাচক বা ভালো, তাহলে (√) আর যদি মনে হয় এটি ভালো পরিবর্তন নয় তাহলে (✕) দেবে। অন্য আরেকটি ঘরে তোমার পরিবারের সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য যেমন দাদা-দাদি, নানা- নানি তাদের মতামতো নিয়ে তুমি টিক বা ক্রস দেবে। বাড়িতে গিয়ে “পরিবারের প্রবীণ সদস্যের মতামত’গুলো তোমরা জেনে টিক বা ক্রস দিয়ে সর্বডানের ঘরটি পূরণ করবে।
পরিবর্তন
১. বাজার থেকে মাছ বা ফলমূল কিনতে প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার।
২. পড়াশোনা বুঝতে ইন্টারনেটের ব্যবহার।
৩. মঞ্চের পালাগান বা নাটকের পরিবর্তে ইন্টারনেটে বিনোদন নেওয়া।
৪. মাঠে খেলার পরিবর্তে মোবাইল ফোনে সেটে ভিডিও গেমস খেলা।
৫. উড়োজাহাজে করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া।
৬. ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভিডিও কলে কথা বলা।
৭. ইন্টানেটে ভিডিও দেখে কোনো রোগের চিকিৎসা করা।
৮. দেশি সংস্কৃতি বাদ দিয়ে বিদেশি সংস্কৃতিতে আগ্রহী হওয়া।
৯. সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত মগ্ন হওয়া।
১০. অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ তৈরি হওয়া।
১১. মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে টাকা প্রেরণ।
১২. মোবাইলের মাধ্যমে ঘরে বসে উপবৃত্তি, বয়স্ক ভাতাএবং বিধবা ভাতার টাকা হাতে পাওয়া।
১৩. নেশাজাতীয় দ্রব্যের অবাধ ছড়াছড়ি।
১৪. ঘরে বসে পরীক্ষার ফলাফল জানতে পারা।
আগামী সেশনের প্রস্তুতি
তোমার বাবা-মা বা অভিভাবকের সময় আর তোমার সময়ে জীবনযাপনের কী পার্থক্য তা তাদের সঙ্গে গল্প করে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবে এবং নিচের খালি জায়গায় লিখবে: (মূল বইয়ের ১৪৫ নম্বর পৃষ্ঠা)
আমার এবং আমার অভিভাবকের সময়ের জীবনযাপনের মধ্যে পার্থক্য:
উত্তর: আমার জন্ম ২০১০ সালে। সেই হিসেবে আমি বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তিতে পরিপূর্ণ একটি সময়ে বসবাস করছি। অপরদিকে আমার মা-বাবার জন্ম হয়েছিল বিংশ শতাব্দীতে। এর ফলে তাদের সাথে আমার জীবনযাপনের অনেক পার্থক্য রয়েছে। নিচে এগুলো তুলে ধরা হলো:
১. আমি আমার পড়াশোনার কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করি এবং যেকোন প্রশ্নের উত্তর ইন্টারনেট থেকে খুঁজে বের করতে পারি। অপরদিকে আমার মা-বাবার সময়ে ইন্টারনেট সহজলভ্য না থাকায় তারা এই সুবিধাটি পেতেন না।
২. আমি ইউটিউবে বিভিন্ন বিনোদনমূলক কনটেন্ট দেখি। অপরদিকে আমার মা-বাবা তখনকার সময়ে মঞ্চে পালাগান, জারিগান ইত্যাদি উপভোগ করতেন।
৩. আমি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করি। অপরদিকে আমার মা-বাবা চিঠি আদান-প্রদানের মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতেন।
৪. আমি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুহুর্তেই দেশের যেকোনো জায়গায় টাকা প্রেরণ করতে পারি। অপরদিকে আমার মা-বাবার সময়ে এমন উন্নত সেবা ছিল না।
৫. আমার সময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান বেশ উন্নত। এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রোগীর রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। যা আমার মা-বাবার সময়ে সম্ভব ছিল না।
এই পার্থক্যে কি প্রযুক্তির কোনো ভূমিকা আছে? থাকলে কী কী?
উত্তর: হ্যাঁ, এই পার্থক্যে প্রযুক্তির ভূমিকা রয়েছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন না হলে এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন সক্ষম হত না। গত প্রায় ৪০/৫০ বছরে বিশ্বের তথ্য-প্রযুক্তিতে এত নতুন নতুন উদ্ভাবন এসেছে যে, গত ৫০ বছর পূর্বে যা কল্পনাও করা যেত না, তা এখন মুহুর্তের মধ্যেই করা সম্ভব হচ্ছে। এমন কিছু প্রযুক্তির ভূমিকা হচ্ছে-
১. মোবাইল ব্যাংকিং: মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এখন অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের যেকোনো প্রান্তে টাকা আদান-প্রদান করা যায়।
২. ইন্টারনেট: ইন্টারনেটের মাধ্যমে পুরো পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের খবর ঘরে বসেই পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
৩. চিকিৎসা: চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিস্কার হওয়ায় এখন চিকিৎসা পদ্ধতি সহজ হয়ে উঠছে। নির্দিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই যেকোনো রোগের প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে।
আরো দেখো: ডিজিটাল প্রযুক্তি সবগুলো অধ্যায়ের উত্তর
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, ওপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে তোমার ডিজিটাল প্রযুক্তি ৭ম শ্রেণি শিখন অভিজ্ঞতা ৯ সেশন ২ উত্তর সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post