ডিজিটাল প্রযুক্তি ৭ম শ্রেণি শিখন অভিজ্ঞতা ৫ সেশন ১ : মানুষ দৈনন্দিন জীবনে কত রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়! কিছু সমস্যার হয়তো নিয়মিত সম্মুখীন হতে হয় এবং সেটার সমাধান করতে হয়। আবার কিছু সমস্যা হয়তো নিয়মিত আসে না, কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ উদয় হয়!
আবার আমাদের সবার জীবনে কিন্তু একই রকম সমস্যার আগমন হয় না! আগে যেকোনো সমস্যা মানুষকে নিজ হাতে সমাধান করতে হতো। এখন সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। ফলে মানুষের জীবন আগের চেয়ে আরামদায়ক হচ্ছে। আমরা এই শিখন অভিজ্ঞতায় দেখব কীভাবে আমাদের প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারি।
ডিজিটাল প্রযুক্তি ৭ম শ্রেণি শিখন অভিজ্ঞতা ৫ সেশন ১
বিভিন্ন প্রযুক্তির মধ্যে রোবট এখন জনপ্রিয় হচ্ছে। কারণ, রোবট দিয়ে মানুষের প্রয়োজনীয় অনেক সমস্যার সমাধান খুব সহজেই করা যায়। রোবটকে কাজ করার জন্য নির্দেশ মানুষই শিখিয়ে দেয়। আমরা এর আগে ষ্ঠ শ্রেণিতে আ্যালগরিদম নিয়ে কাজ করেছিলাম । এবারে আমরা ত্যালগরিদম থেকে প্রবাহচিত্র তৈরি করব, তারপর সেই প্রবাহচিত্র থেকে রোবটের বোঝার উপযোগী সুডো কোডে রূপান্তর করব।
সুডো কোড সম্পর্কে আমরা এখনও জানি না, কিন্তু এই শিখন অভিজ্ঞতা সম্পন করার পর জেনে যাব। আচ্ছা, কেমন হয় যদি আমরা নিজেরাই এক একটি রোবট হয়ে যাই? রোবটের জন্য তৈরি করা সুডো কোডের নির্দেশ কি আমরা নিজেরাও বুঝতে পারব? এই শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা নিজেরা রোবট সেজে সেই রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করব।
সেশন ১ হরেক রকম বাস্তব সমস্যা
যেকোনো সমস্যা যেটা নিজেদের জীবনে মানুষ সম্মুখীন হয় সেটাই একটি বাস্তব সমস্যা। “মেঘা” নামের একটি মেয়ে ও তার সহপাঠীরা এরকম একটি বাস্তব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। আসো আমরা মেঘার গল্প থেকে সেটি জেনে নিই-
মেঘা সপ্তম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী। একদিন ক্লাসের বিরতির সময় মেঘা উদাস বসে কিছু ভাবছিল। তখন মেঘার বন্ধু জিসান এসে বলল, ‘কি রে সবাই গল্প করছে, আর তুই একা বসে বসে কী ভাবছিস?’ তখন মেঘা বলল “আচ্ছা সবাইকেই জানাব, সবাইকে আমার কাছে আসতে বলো ।” মেঘার সব সহপাঠী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মেঘা কী বলবে শোনার জন্য। তখন মেঘা শুরু করল, “আমি আজ ভোরে শীতে কাঁপতে কাঁপতে সোয়েটার পরে বিদ্যালয়ে আসছিলাম। তোরা তো জানিস
কয়েক দিন ধরে কেমন ঠাণ্ডা পড়ছে! এমন সময়ে দেখলাম দু’জন মানুষ, তাদের গায়ে কোনো গরম কাপড় নেই! ঠাণ্ডায় অনেক কষ্ট হচ্ছিল ওনাদের । আমাদের আশপাশে কত মানুষ আছে যাদের গরম কাপড় কেনার আর্থিক সামর্থ্য নেই! প্রতিবছর শীতকালে তারা কত কষ্ট করেন। আমরা কি এই সমস্যা সমাধানে কিছুই করতে পারি না?
এই কথা শুনে মেঘার এক বন্ধু রিয়া বলল, “এটা তো আমি কখনও ভাবিনি। আমরা তো চাইলে একটা শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি করতে পারি। তাহলে বেশকিছু মানুষ উপকৃত হবে যাদের এমন গরম কাপড় প্রয়োজন ।
মেঘা শুনে খুশি হয়ে বলল, “তাহলে তো আমাদের এখন বের করা উচিত এই কাজটা আমরা কীভাবে করব আর সেখানে আমাদের কী কী চ্যালেঞ্জ থাকবে।
এবার আরেক বন্ধু হাশেম বলল, “সবার আগে চ্যালেঞ্জ হলো আর্থিক। আমাদের বেশকিছু গরম কাপড় জোগাড় করতে হবে। এ জন্য আমরা একটা প্রচারণা করতে পারি। যেন যাদের আর্থিক সামর্থ আছে তারা টাকা দিয়ে অথবা তাদের বাসায় থাকা পুরোনো ব্যবহারের উপযোগী শীতবস্ত্র দিয়ে আমাদের এই উদ্যোগে সাহায্য করতে পারেন”
এ কথা শুনে বন্ধু নেহা বলল “দেখ হাশেম আমি তোর সঙ্গে একমত। কিন্তু আমাদের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সামাজিক অবস্থার কথা চিন্তা করা। সবার তো গরম কাপড় প্রয়োজন হবে না। আমরা ঠিক কাদের জন্য এই শীতবস্ত্র বিতরণ করব?
অর্থাৎ সমাজের কোনো অংশের মানুষের জন্য আমাদের এই কর্মসূচি হবে সেটা নির্ধারণ করার জন্য আমাদের একটা জরিপ করতে হবে। সেই জরিপ থেকে আমরা বের করব সমাজের কোনো মানুষগুলোর গরম কাপড়ের অভাব আছে, তাই এই সমস্যার সমাধানে কাজ করার সময় একটা সামাজিক নির্ভরশীলতাও আছে।
যেদিন আমরা বিতরণ করব, সেদিনের আবহাওয়া তথা পরিবেশের কথাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আমরা আগে থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে রাখব, যেন সেদিন বৃষ্টির বা অন্য কোনো কিছুর সম্ভাবনা আছে কি না, সেটা জেনে প্রস্তুত থাকতে পারি। নইলে তো পুরো শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি বিঘ্ন হতে পারে!”
মেঘা এবারে বলল, “বন্ধুরা আমি এখন খুব খুশি। সকালে যেই সমস্যা নিয়ে আমি এত কষ্ট পাচ্ছিলাম, আমরা সবাই মিলে আলোচনা করে সেটা সমাধান করার জন্য উপায় বের করে ফেলেছি। এখন আমাদের হাতে অনেক কাজ। সবাই মিলে দায়িত্ব ভাগ করে নিই, কে কোনো কাজ করবে । আশা করি, আমরা এই কাজে সফল হবই!”
উপরে আমরা মেঘা ও তার বন্ধুদের শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি নিয়ে জানতে পারলাম। ওরা যখন এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তখন ওদের সমস্যা সমাধানের জন্য পাঁচটি দিক নিয়েও ভাবতে হয়েছে। এগুলো হলো- অর্থনৈতিক, সামাজিক, ব্যবহারিক, কারিগরি ও পরিবেশগত দিক।
সত্যি বলতে যেকোনো বাস্তব সমস্যার ক্ষেত্রেই এ রকম বেশকিছু দিক বা চ্যালেঞ্জের সম্মুণীন আমরা হতে পারি। তবে সব বাস্তব সমস্যার ক্ষেত্রেই পাঁচটি দিকই থাকবে এমন কিন্তু নয়! কোনো সমস্যা হয়তো শুধু একটি দিকের উপর নির্ভরশীল, কোনোটি হয়তো একাধিক দিকের উপর নির্ভরশীল।
তবে আমরা এখন থেকে যেকোনো সমস্যা নিয়ে কাজ করার সময়ে সেটি এই পাঁচটি দিকের সঙ্গে নির্ভরশীল কি না, সেটি যাচাই করে নেব, তাহলে সমাধান করতেও সুবিধা হবে। এবারে একটি কাজ করি, নতুন একটি সমস্যা নিয়ে ভাবি। ধরি, নতুন একটি অপরিচিত জায়গায় আমরা ঘুরতে যাব। এক্ষেত্রে কোনো কোনো দিকের উপর আমাদের ছকে লিখে ফেলি-
মূল বইয়ের অনুশীলনীর সমাধান
অপরিচিত জায়গায় ঘুরতে গেলে যেসকল দিক থেকে আমাদের নির্ভরশীলতা তৈরি হয়: (মূল বইয়ের ৭৫ নম্বর পৃষ্ঠা)
নির্ভরশীলতার দিক: উপরোক্ত সমস্যার জন্য নির্ভরশীলতার ৫টি দিকের ওপর কাজ করতে হবে।
অর্থনৈতিক: ঘুরতে গেলে অর্থ লাগে। তাই অপরিচিত নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার আগে অবশ্যই অর্থনৈতিক দিকটি চিন্তা করতে হবে। কারণ, অপরিচিত জায়গায় কেমন খরচ হবে, তা আমরা জানি না।
সামাজিক: অপরিচিত নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য ঘোরার সামাজিক অবস্থা আছে এমন জায়গায় যেতে হবে। যেখানে গেলে সমাজের মানুষের সমস্যা হবে, এমন জায়গায় যাব না।
ব্যবহারিক: অপরিচিত নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার আগে আমাদের চিন্তা করতে হবে, সেখানে গিয়ে আমরা কোথায় ঘুরব, কী খাব, কোথায় থাকব ইত্যাদি।
কারিগরি: অপরিচিত নতুন জায়গায় যাওয়ার পর, সেখানে কী কী দর্শনীয় স্থান দেখেছি, তা আমার ছোট ডায়রিতে লিখে রাখব। যাতে করে বুঝতে পারি আর কী কী দেখা বাকি আছে।
পরিবেশগত: অবশ্যই পরিবেশগত দিক খেয়াল রাখতে হবে। যেমন সেই জায়গার আবহাওয়া কেমন, কেমন দুর্যোগের পূর্বাভাস আছে কিনা, তা জানতে হবে।
আরো দেখো: ডিজিটাল প্রযুক্তি সবগুলো অধ্যায়ের উত্তর
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, ওপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে তোমার ডিজিটাল প্রযুক্তি ৭ম শ্রেণি শিখন অভিজ্ঞতা ৫ সেশন ১ উত্তর সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post